www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বপ্না - একটি মেয়ের কাহিনী (১ম খন্ড)

সে অনেকদিন আগেকার কথা । একদিন তার বাবামা স্বপ্ন দেখে তাদের নতুন পাকারবাড়ি হয়েছে। তারপরেই তার জন্ম হয় । বাবামা তাই তার নাম রাখে স্বপ্না । সাত ভাইবোন তার । বড় দুজন দিদি, তার পরে একদাদা । তাই স্বপ্নার জন্মের পরই তার বাবা নতুন পাকার বাড়ি বানাতে শুরু করে । তাদের স্বচ্ছল পরিবার । ধানিজমি, পুকুর আর গোয়ালে গরু ভর্তি সংসার হলেও কি হবে নগদ টাকার অভাব ছিল তাদের । নতুন বাড়ি বানাতে গিয়ে একটু অর্থ কষ্টে পড়তে হয় তার বাবাকে । কিন্তু তার বাবা বর্তমানের লোকের অভ্যাস মতো বাজারে ঋণ করে আড়ম্বর জীবনযাত্রা “ধার করে ঘি খাওয়া” একদম পছন্দ করতেন না । তিনি ছিলেন আশবাদী মানুষ, সৎ এবং কঠোর পরিশ্রমী । না পাওয়ার ক্ষোভ বা দুঃখ ছিলনা তাঁর মনে । সবাইকে পরিষ্কার করে কথা বলতে ভালবাসতেন । কারোর প্রতি অভিমান ছিল না তাঁর । মনে কখনো রাগ পুষে রাখতেন না । তাই সমাজকে দেখতেন আপনকরে আর কাজ করতেন সকলের ভালোর জন্য । সদা হাসিখুশি, তিনি ছিলেন পরোপকারী সমাজবন্ধু এক চাষীভাই ।

তখনকার দিনে প্রতিদিন বাজার বসত না । হাট হতো সপ্তাহে দুদিন । বাড়িতে মিষ্টি বানিয়ে হাটে যেত পসরা নিয়ে । সেই দোকানের সামান্য রোজগারে এতবড় পাকাবাড়ি করা সম্ভব ছিলনা । সপ্তাহের অন্যদিনে তাঁর জানা নানান কাজ করে পয়সা উপার্জন করতে লাগলেন সেই থেকে । গ্রামাঞ্চলে তিনি ছিলেন সর্বকাজে পন্ডিত । জালবুনন থেকে আরম্ভ করে মাছধরা বাঁকি বোনা, জুন-হেসাতির চাটাই বুনন থেকে খড়ের ও টালিরঘর বানানো, ইট-পাঁজরের আগুন দেওয়া, জমি-মাপার কাজ থেকে গ্রামীন বিচার সালিশীতে অংশ নেওয়া, সবই । এমনকি গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে রান্না করার পুজারী হিসেবে সবাই ডাকত । পাকারবাড়ি বানাতে গিয়ে রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করতে-করতে নিজেও একজন রাজমিস্ত্রী বনে গেলেন । তাই নিজের হাতে সব করতে আর গড়তে তিনি পারতেন এবং সবই যত্ন করে শিখেছিলেন । গ্রামে-গঞ্জে স্কুলের অভাবে বেশিদূর তিনি পড়াশোনা করতে পারেননি বটে কিন্তু জানার ইচ্ছা ছিল প্রবল । তাই সমস্ত বিষয়ে গ্রামে ছিলেন সিদ্ধহস্থ । তিনি সকলকে বিভিন্ন বিষয়ে উদাহরণ দিতেন খনার বচনে । বহু গুনী কবির কবিতা ছড়া ছিল তাঁর ঠোটস্থ । বিভিন্ন সময় তিনি সংস্কৃত শ্লোক বলতেন তাই তাঁকে গ্রামের লোক ভালোবেসে বলত খনার-বচন পন্ডিত । তাঁর স্ত্রী ছিলেন দেবী অন্নপূর্ণার দ্বিতীয় রূপ । কর্মে অসম্ভব পটু আর খুবই পরিশ্রমী । গো-সেবা করতেন, অনেক গরু ছিল গোয়ালে । অত্যন্ত কমসময়ে নানান ব্যঞ্জন রান্না করতে পারতেন । অতগুলি ছেলেমেয়ে আর সংসারের কর্ম নিয়ে মগ্ন থাকতেন তিনি । দুঃখ, কষ্ট, ক্ষোভ-অভিমান আর অবসাদ তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি কখনো । তিনি ছিলেন রূপে গুনে কর্মে অদ্বিতীয়া রমনী । গরিব দুঃখীর দুঃখে তাঁর প্রাণ কাঁদত । ভিখারীদের ভিক্ষার চালের সঙ্গে ভাত ও মুড়ি দিতেন। সবাই তাঁকে আশির্বাদ করে যেত । বলতো সাক্ষাত ভগবতী । এমনি এক পরিবারে জন্ম স্বপ্নার ।

মায়ের কাছে সব কাজ শিখেছিল স্বপ্না । রান্নাকরা থেকে গরুর সেবা আবার স্কুলে যাওয়া থেকে মাঠে চাষের কাজ, সবই । প্রতিদিন গরুনিয়ে যেতে হত মাঠে । তাতে ওর পড়াশোনার ক্ষতি হত । এমনিতে ও পড়াশোনায় একটু কাঁচা ছিল । তবুও পড়তেও হত অন্য ভাইবোনদের মত । মায়ের সাথে ঘরকন্না সব কাজে তার ইচ্ছা ছিল বেশি তাই পড়ায় বেশি মন বসত না । অন্য ভাইবোনদের মত দেখতে অতটা সুন্দরী ছিলনা, ওর গায়ের রংটা ছিল শাঁওলা । তাই স্বপ্না সকলের সেবা করে ভালবাসা পাওয়ার চেষ্টা করত । ঘরে অনেক ছেলেমেয়ে আর তাদের ফাই-ফরমাশিতে অনেক কাজ তাই ওর পড়াশোনায় বুদ্ধি কম দেখে মাও তাকে বেশি বকাঝকা করত না বরং সংসারের কাজে হাত লাগাতে বেশি উত্সাহ দিত । দু-একবার ক্লাসে ফেল করে সে সবে অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছে ।

ইতিমধ্যে দুজন বড়দিদির বিয়ে হয়ে গেছে । তাদের বেশ বড় বাড়িতে বিয়ে দিয়েছে তার বাবা । দিদিদের ছেলেমেয়ে হওয়ার সময় স্বপ্নাই যেত বাচ্চাসেবা করার জন্য । বাচ্চাদের খাওয়ানো, গান-গেয়ে ঘুম করানো এমনকি তাদের কাঁথা-কাপড় পরিষ্কার করা পর্য্যন্ত সব কিছু । পড়াশোনা ভালো ভাবে করত না তাই সকল ভাইবোন মিলে ওকে খাটাতো । বাড়িতে যে যা কাজ করতে বলত সে সবই করত মনের আনন্দে। তাই কোনো দুঃখ কষ্ট ছিলনা তার মনে । এমনি করে ১৬টা বসন্ত কেটে গেল স্বপ্নার ।

এবারে তারই বিয়ের পালা । এখনকার মত পাত্রপাত্রী বাজার, রেজিস্ট্রি অফিস, দৈনিক পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন কিংবা ওয়েবসাইটে হরেক রকমের মনপসন্দ করা ছবির বাহারি মেলা ছিলনা । তখন গ্রামে ছেলে কিংবা মেয়ে বড় হলে উপযুক্ত পাত্রপাত্রীর খোঁজ নিয়ে আসতো মধ্যস্থ বাবুরা । তারা সকালে আসতো ছাতা নিয়ে । কন্যাদায়গ্রস্থ গৃহস্থের বাড়িতে জমিয়ে বেশ গল্প করত, দুপুরে ভালো ভালো খাওয়ার খেত, বিকেল পর্য্যন্ত থেকে পাত্রপাত্রীর সব খবরাখবর দিয়ে তবেই যেত । এমনি একটি খবর আনলো স্বয়ং পাত্রের মামা । তিনি স্বপ্নার ও দুর্সম্পর্কীয় আত্মীয় । পাত্রের ভাইবোন বলতে সে শুধু একা আর ঘরে কমবয়সী বিধবা মা । ছেলেটি লম্বা ও ফর্সা, দেখতে রাজপুত্তুর । তাদের বিয়ের পণের কোনো দাবি দাওয়া নেই । শুধু একটাই দাবি মেয়েটি যেন কর্মঠ হয় । এক কথায় বিয়ে পাকা । স্বপ্না স্বপ্ন দেখে - ঘোড়ায় চড়ে তাকে কোনো এক দেশের রাজপুত্তুর এসেছে বিয়ে করতে । “রাজার হবে রানী - কখনো পয়সাকড়ি কম হবেনি” । সাধের স্বপ্নের ঘোড়ার গাড়ি আর আসেনি । পশ্চিমে তখন ভালো রাস্তাঘাট হয়নি । স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিয়ে হলো স্বপ্নার । নতুন বউ হয়ে চলে গেল নৌকায় । স্কুলের বাত্সরিক পরীক্ষার সময় বিয়ে অনুষ্ঠান হওয়ায় তাই সঙ্গে কোনো ভাইবোন ছাড়তে গেলনা ।

........ চলবে
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৬৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৯/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মাহফুজুর রহমান ২০/০৯/২০১৫
    ধন্যবাদ
  • কিশোর কারুণিক ১১/০৯/২০১৫
    ভাল
  • সাইদুর রহমান ১১/০৯/২০১৫
    সুন্দর গল্প।
  • ইমরান কবির রুপম ১১/০৯/২০১৫
    বাকিটার অপেক্ষায় রইলাম
    • ধন্যবাদ ।
      ২য় খন্ড প্রকাশ করেছি, আমন্ত্রন জানাই । ভাল থাকুন, শুভকামনা রইল ।
      • ইমরান কবির রুপম ১২/০৯/২০১৫
        এখনি দেখছি
 
Quantcast