www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধান ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
দেশের নাগরিক হিসেবে সকলেরই রয়েছে মৌলিক অধিকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১ কোটি ৭০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে একটি রাষ্ট্রের উন্নতি, অগ্রগতি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেন।
এর দুই বছর পর গত ২২ নভেম্বর২০১৫ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা, ২০১৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন। এর যথাযথ বাস্তবায়ন স্বাস্থ্য, শিক্ষা যাতায়াত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুযোগ সৃষ্টিতে এবং উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
প্রতিবন্ধী মানুষের আশা হচ্ছে বর্তমান সরকার তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণে আরও সচেষ্টভাবে ভূমিকা রাখবেন। কেননা এখনও লক্ষ করা যায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ বিভিন্ন কারণে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রবেশগম্যতা তথা নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে সর্বত্র চলাচল সর্বপরি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার ও সচেতন জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ শুধু নিতে জানে না তারাও সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবার সুযোগ পেলে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।
জ্বলন্ত উদাহরণ-৩৪তম বিসিএসে মাহবুবুর রহমান নামে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে র্যাম্প ও বহুতল ভবন হলে লিফ্টের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
শ্রেণী কক্ষ বা পরীক্ষার হল উপরের তলায় হলে তা একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য উপযোগী নয়। প্রতিবন্ধী বলে কাউকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়। তারাও মানুষ এবং মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের এগিয়ে আসা।
প্রতিবন্ধী শব্দটি এটি কোনও ব্যক্তির পরিচয় নয়। তারপরও লক্ষ করা যায় প্রতিবন্ধী দিবস, প্রতিবন্ধীদের অধিকার ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দিবস, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ইত্যাদি। এ বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াদের সংবাদ প্রকাশ করার এবং সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন হবার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শুধু বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করলেই চলবে না সাথে সাথে তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
২০১৬-২০১৭অর্থ বছরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করেছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের তহবিলে আরো ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন বর্তমান সরকার। যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পাশা-পাশি তা বন্টন ব্যবস্থা সঠিক করা এবং সময় মতো প্রদান করতে পারলে সুবিধাভোগীগণ অনেকটা উপকৃত হবেন।
কেননা তৃণমুল পর্যায়ে দেখেছি সঠিক সময়ে ভাতাগুলো পাচ্ছেনা, মাত্র ৬০০টাকা একজন মানুষের ৬দিন চলার কথা নয়, সেখানে এক মাস কিভাবে চলবে? তাছাড়া প্রতি মাসেতো প্রদান করা হয়না, প্রতি তিন মাসের ভাতা ৬ষ্ট ৭ম মাসে গিয়ে প্রদান করেন। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই সামন্য অর্থ দিয়ে কিভাবে জীবন ধারণ করেন তা একমাত্র ভুক্তভোগীগণ জানেন।
আবার এই সামান্য টাকা উত্তোলন করতে বড় ধরনের ঝামেলা, যে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেয়া হয় সেটা দেখা যাচ্ছে অনেক ইউনিয়নে তার শাখা ব্যবস্থা নেই, থানা শহরে যেতে হচ্ছে।  ব্যাংকগুলো নিরাপত্তার জন্য উপরের তলায় সাধারনত শাখা, একজন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য যেমন কষ্টসাধ্য তেমন বাকি সকল প্রতিবন্ধীব্যক্তির জন্য সমস্যার কারণ। অনেক ব্যাংক শাখা আছেন তারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করে থাকেন, সেখানে আবার বিভিন্ন দোহাই দিয়ে প্রতি ভাতাভোগীর বই হতে ১০/২০টাকা করে কেটে নেয়া হয়।
আমার মনে হয় প্রতি ইউনিয়নে যদি শিক্ষিত সচেতন প্রতিবন্ধীব্যক্তি দ্বারা দুই তিন সদস্যের টিম গঠন করে এই  টিমের মাধ্যমে সব ভাতা প্রদান করলে তাদের মাঝে যেমন আন্তরিকতা সৃষ্টি হতো এই দশ বিশ টাকা তাদের রোজগারের একটি পথ হতো।
উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমার বিনিত অনুরোধা নির্মোক্ত ক্ষুদ্র ভাবনাগুলো একটু ভেবে দেখবেন।
একজন প্রতিবন্ধীব্যক্তি সমাজে পরিবারে অনেকটা অবহেলিত এর কারণ তাঁরা রোজগার করতে অক্ষম, তাদেরকে বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়না কেননা পরিবার হতে ভাবেন এদের ভবিষৎ নেই অতএব যে দুটোদিন বাঁচে বাঁচুক।
অবহেলার শিকার হয়ে তাঁরা শেষে মৃতুর প্রহর গুনতে শুরু করে ভাগ্যকে সকল দোষী করে একটু সান্তনা নিয়ে হয়ত চলে যান।
এক্ষেত্রে সরকার যদি প্রতিবন্ধীব্যক্তির প্রত্যেকের শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের জন্য সার্টিফিকেট প্রতি মাসিক কিছু ভাতার ব্যবস্থা করত (বিশেষ করে যাদের সরকারী চাকরির আবেদন করার বয়স নেই তাদের ক্ষেত্রে) তাহলে ভবিষৎ প্রজন্ম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিশুর প্রতি পরিবার, সমাজ একটু হলেও নজর দিত।
এই ভেবে যে সার্টিফিকেট থাকলে চাকরি না হোক মাসোয়ারা কিছু সংসারে আসবে এ আশায় হয়তো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিএকটু হলেও তখন সম্মান পাবে। এবং বিদ্যালয় মুখি করবে নিজ নিজ পরিবার, এনিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবতে পারেন।
প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোর পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন এবং সমাজের সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা এবং স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। তাদেরকে কোন প্রতিষ্ঠানে রাখা হলে অথবা লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হলে তাদের অবহেলা সহিংসতা ও অত্যাচারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশী। প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে দাতব্য সেবার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসাবে না দেখে তাদেরকে জীবনের প্রতি অধিকার , ভালো স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি শিক্ষা এবং আইনের আওতায় মতপ্রকাশ এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে অন্য শিশুদের সমান হিসাবেই বিবেচনা করা উচিৎ। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিবন্ধী হিসাবে না দেখে আগে শিশু হিসাবে দেখা উচিত।
তাদের স্বপ্ন আছে তাদের সেসব স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্খা আছে। এবং তারা ন্যায়সঙ্গত সুযোগ পেলে তাদের পরিবার ও সমাজের সম্ভাবনাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে খুঁজে বের করার বিষয়ে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। বেঁচে থাকা, বিকশিত হওয়া এবং সাফল্য অর্জনের জন্য তাদেরকে সমান সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের চাহিদা নির্ধারণ এবং তার সমাধানের পরিকল্পনা তৈরিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক সনদ এবং শিশু অধিকারের জন্য প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবারগুলোকে তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয় তা মেটাতে সাহায্য করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
সকল সচেতন ব্যক্তিদের জানতে হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পেছনে ফেলে নয় তাদের সাথে নিয়েই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য সমাজের সচেতন মানুষ,স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সামাজিক সেবাসমূহ এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাতে না পারলে যেমন সমাজের ঠিক তেমনি দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তাই আসুন আমরা সকলে এদের পাশে দাঁড়াই, ভালোবেসে নিজের দুহাত বাড়াই।
.
        
                    স্বপন শর্মা
             উলিপুর-কুড়িগ্রাম।
     [email protected]
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১১৩৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আমি-তারেক ২৭/১২/২০১৬
    valo topic...
  • সোলাইমান ২৬/১২/২০১৬
    বেশ গভীর ভাবনা ।
    ভালোবাসা জানবেন প্রিয় ।
  • ভালো লিখেছেন। বাস্তবসম্মত লেখা।
 
Quantcast