www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হলুদের বাহারি ব্যবহার ( রম্য রচনা )

আমার প্রিয় রং হলুদ ( রম্য রচনা )
( পর্ব-২ )

হলুদ নিয়ে প্রথম সংখ্যা লেখার পর প্রিয়তমা গিন্নির একটা কমেন্টস পেলাম মেসেজে । তুমি নিজেই তো একটা হলুদ ! সব তরকারিতে লাগো ! এই দুনিয়ার সকলের উপকারে বিপদে আপদে মনে হয় তোমাকেই ভগবান নিয়োজিত করেছেন । আমি-ও কম না ! রিপ্লাই দিয়েছি - যেহেতু আমার গায়ের রংটা কাঁচা হলুদের মতন , তাই সবকাজেই একটু একটু করে খরচ করি ! গিন্নির ছোট্ট রিপ্লাই - ঢং !

এই হলুদ নিয়ে কি লিখবো , সকালটা শুরুই হয় হলুদের রং দিয়ে ( তাই না ! ) । বুঝলে বুঝপাতা , না বুঝলে তেজপাতা ! নারীদের যে জিনিসটার প্রতি সবচেয়ে বেশি লোভ ( ভালবাসা বললে সুন্দর দেখায় ! ), সেটা হচ্ছে স্বর্ণ ! এই স্বর্ণের কালারটা হলুদ রং থেকে একটু লালচে কালার হলেই স্বর্ণকারের চৌদগুষ্টি উদ্ধার না করে অনেক মা-বোন-ভাবীরা রাত্রে ঠিকমতো ঘুমাতে যান কিনা আমার সন্দেহ ! একজোড়া বালার প্রতি নারীদের যে মহব্বত ও ভালবাসা জড়িয়ে আছে , তার সিকিভাগ স্বামীজীর রেমন্ডের স্যুট কিংবা রোলেক্স ঘড়ির উপর আছে কিনা , আমার কাছে খুবই চিন্তার বিষয় ! এইসব নিয়ে বেশি লেখালেখি করলে কিংবা বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে অফিস থেকে রাত্রে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে তো, নাকি ?

দুনিয়াতে এতো এতো কালার থাকতে এই ট্যাক্সি ক্যাবকেই হলুদ রং করতে হবে ? কারণটা কি ? এর একমাত্র কারণ হলো, চোখের মধ্যে খুব দূর থেকে হলুদ রংটা খুব জ্বলজ্বল করে । ট্রাফিক বাত্তির মাঝখানের রংটাই কিন্তু হলুদ । এইখানে লালের পর হলুদ , হলুদের পর গ্রিন সিগন্যাল কেন প্রতিস্থাপন করেছে, আমার জানা নাই ! লালে না হয় বুঝলাম, আইনের লাল রঙের কড়া চোখ , অমান্য করলেই ফাইন ! গ্রিন মানে গ্রিন সিগন্যাল, যাও বাবা , আবার দৌড়াও ! হলুদের কাজটা কি ?
হলুদকে নিয়ে যত ভাবছি , ততই আমি মুগ্ধ হচ্ছি ! কি একটা কপাল ওর ! কলকাতায় গেলে হলদিরামের সনপাপড়ি না খেয়ে ঢাকা ফেরা হয়নি কখনো ! ঢাকায় তো রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে দেশীয় ব্র্যান্ড ' ইয়েলো-YELLOW "! হলুদের প্রতি কি প্রেম , আহারে ! আমার ময়না পাখির সৌন্দর্য্যটা যেন উপচে পড়েছে তার গলায় হলুদ টিকলিটার জন্যেই ! আমি সকাল-বিকাল ভগবানের এই রূপলীলার খেলা দেখেই দিন কাটাই ! বিশ্বের যে কোনো দেশে স্কুল বাসের রং কেন হলুদ করা হয়েছে, জানার চেষ্টা করেছেন কখনো ? তাহলে আসুন, জেনে নেই !

আসলে বাচ্চাদের দেখতে ভালো লাগার জন্য নয়, স্কুল বাস হলুদ রঙ করার পিছনে আছে নিরাপত্তাজনিত বৈজ্ঞানিক কারণ। এই হলুদ রঙকে বলা হয় ‘হাইওয়ে ইয়েলো’। হলুদ রঙ, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য লালের চেয়ে কম তবে নীলের চেয়ে বেশি। এই রঙ তাই স্কুল বাসে ব্যবহার করা হয়, যাতে রাস্তায় হাঁটার সময় এটি দূর থেকে দেখা যায়। বৃষ্টি বা কুয়াশাতেও হলুদ রঙ শনাক্ত করা যায়, হলুদ রঙের পার্শ্বীয় পেরিফেরাল দৃষ্টি লাল রঙের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। আমাদের চোখের সোজাসুজি না থেকে যদি কোনাকুনি অবস্থান করে তবুও হলুদ রঙ বুঝতে আমাদের কোনও অসুবিধা হয় না। মনে হতে পারে সবচেয়ে বেশী দৃষ্টি আকর্ষণকারী রঙ লাল। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হলুদ রঙের পার্শ্বীয় পেরিফেরাল ভিউ লাল রঙের থেকে ১.২৪ গুণ বেশী। পথ দুর্ঘটনা ঘটে চলমান বস্তু দেরিতে দেখার কারণে। তাই বিপদের হাত থেকে বাঁচতে এবং দুর্ঘটনার প্রবণতা কমাতে স্কুল বাসে হলুদ রঙ করা হয়। একমাত্র আমাদের দেশেই বোধহয় বাবা-মা রা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা বেশি উদ্বিগ্ন নন, তার প্রমান এক ফুট সাইজের মোটর সাইকেলে ছয় সদস্যের পরিবারের যাতাযাতি গাদাগাদি করে কোথাও যাবার প্রবণতা ! আপনি বিশ্বের আর কোনো দেশে এই দৃশ্য দেখতে পারবেন কিনা , আমার জানা নেই ! উগান্ডা এবং সিয়েরালিওনে-ও একটা মিনিমাম কমনসেন্স আছে ! যা আমাদের দেশের অনেক বাবা-মায়ের নেই !

পরিবার নিয়ে সন্তান নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার এই রঙ যদি আপনার জীবন থেকে হারিয়ে যায়, কিম্বা আপনি যদি রঙ ছাড়া বাঁচতে চান তবে আপনার জীবন মুহূর্তে বিবর্ণ হয়ে যাবে। ---- ( চলবে )
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ২১৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৪/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast