www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শৈশব

হারিয়ে গেছে ? কে ? থানায় খবর দিন । আরে না না, শকুন্তলার আংটি হারায়নি, যে রাজা দুষ্মন্ত তাকে চিনতে পারবেন না ! হারিয়েছে শিশুর শৈশব ।

নিজেকে দিয়েই শুরু করি । আমি পড়তাম নব নালন্দা হাই স্কুলে । আমাদের ক্লাস হতো দুপুরে, আফটারনুন সেশন । স্কুল থেকে বাড়ি আসতাম বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটায় । এসে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়ে, তারপর পড়তে বসতাম । কোচিং ক্লাস থাকলে,বাড়ি ফিরে, গোগ্রাসে গিলে, আবার বেড়িয়ে পড়তাম অথবা স্কুল থেকেই চলে যেতাম । বিকেল আমার দিকে চেয়ে থাকত করুণ চোখে কিন্তু আমি বিকেলের অস্তিত্বটাই খুঁজে পেতাম না । মাঝেমাঝে চোখে পড়ত বস্তির ছেলেরা সারা গায়ে কাদা মেখে ফুটবল খেলছে । পাশ থেকে লোকজন বলত, 'ওদের লেখাপড়া হবে না । ওরা নষ্ট হয়ে গেছে । ওরা অনাহারে মরবে আর আমাদের ছেলেমেয়েরা গাড়ি ঘোড়া চড়বে ।' আমি ভাবতাম যে বস্তির ছেলে মানেই নষ্ট হয়ে যাওয়া, ফুলের বাগানে আগাছা ।তারপর একটা ভাবনা ঘাড়ে চেপে বসল । যারা খেলাধুলা করে তারাই নষ্ট কারণ তারা লেখাপড়া করে না ।

এখন আর যৌথ পরিবার নেই । তিনজনের ছোট পরিবারে- নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি - সবাই মানুষ । পিতা মাতা সন্তান । দাদু ঠাকুমার স্নেহ থেকে বঞ্চিত ।খেলার মাঠ, প্রাণের পুকুর বুজিয়ে বড় বড় সব ফ্লাট বাড়ি উঠেছে । হারিয়ে গেছে হওয়া, মরে গেছে রোদ্দুর।মনে রাখতে হবে অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল বলে তার সমাজে ঠাঁই হয়নি । এদিকে ঘটা করে পরীক্ষার খাতায় রচনা লিখতাম- খেলাধুলা জীবনের অঙ্গ । যে যে খেলার নাম লিখতাম সেগুলো সব টিভিতেই দেখা, নিজে শুধু ভিডিওগেম খেলতাম ।

বড় হয়ে এখন বুঝতে পারছি, কী মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি । খেলাধুলা না করলে শারীরিক ও মানসিক, দু দিকেই মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। জীবনটা সব থেকে বড় খেলা, এখানে খেলোয়াড় না হলে বাঁচা যায় না । হারজিত যে সহজে মেনে নিতে পারে না, তাকে সারা জীবন চরম হতাশায় ভুগতে হয় । জীবন তাকে কোনও জায়গা দেয় না । আজকালকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়ে গেছে । তার ঘাড়ে কত চাপ ! 'স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী, আমরা কী আর বইতে পারি।' মা বলে দিয়েছেন, 'পাশের বাড়ির বাবান কিন্তু অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছে, তুমি পঁচানব্বই। বাবা খুব কষ্ট করে রোজগার করে মাস্টার রেখেছেন । আমি সারাদিন রান্নাঘরের ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ হচ্ছি ।' সামনে আরো অনেক পরীক্ষা । ম্যারাথন দৌড়ের শেষ আছে কিন্তু ইঁদুর দৌড়ের শেষ নেই ।

রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারেননি দুর্বাসা মুনির অভিশাপে । আর আমি শৈশবকে চিনতে পারিনি হারানো বিকেলের অভিশাপে ।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩৮০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১০/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast