www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মধ্যযুগের বর্বরতায় অন্ধকার কলি কাল

এই ব্যাধি বিশ্বব্যাপী, দেশের আনাচে কানাচে। আমি এখানে কেবল আমার জন্ম স্থান, কলকাতার কথা বলবো। সেই ঘটনা গুলোর কথা, যে গুলো ঝড় তুলেছিল সারা দেশে।

কলকাতার দুটো নামজাদা স্কুলে পরপর ঘটে গেছিল নোংরা ঘটনা। নিগ্রহের শিকার হয়েছিল শিশু কন্যা | কাদেরকে আমরা শিক্ষক হিসাবে চাকরি দিই ? তারা কি মানুষ না অন্য কিছু ? মাথায় গণ্ডগোল না থাকলে কেউ এ কাজ করতে পারে না ! একেই নারীশিক্ষার আকাল দেশে, তারপর এই সব দেখলে কোন মা বাবা নিজেদের মেয়েকে স্কুলে পাঠাবার কথা ভাববেন ! তারা তো সব আশা ভরসা হারিয়ে ফেলবেন। দু একজনের জন্য পুরো স্কুলের বদনাম হয়েছিল, বদনাম হয়েছিল সকল শিক্ষক শিক্ষিকার। তার থেকেও বড় কথা এই যে- এই বদনাম ঢাকতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সব প্রমাণ মুছে ফেলে দিতে চেয়েছিল। এতে অন্যায়কারী আরো প্রশ্রয় পেয়ে গেছিল।এখানে আইন নিজে হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। পুলিশই ভরসা। কোর্টই ভরসা। কিন্তু আইনেও গলদ আছে। যেমন সরিষার মধ্যে ভূত লুকিয়ে থাকে। নির্ভয়ার একজন খুনি আজও দিল্লির বুকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বিচারের বাণীর চিতা জ্বলে এ দেশের পথে ঘাটে। দোষীর শাস্তি চাই। যারা এই পাপীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিল, আইন যেন তাদের রেহাই না দেয়। কী শাস্তি দেওয়া হবে সেটা কোর্ট ঠিক করবে। সেটা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বা যাবজ্জীবনও। মোট কথা পাপী যেন রেহাই না পায়। আর সাধারণ মানুষও যেন নিজে হাতে আইন তুলে না নেয়, তাতে প্রতিহিংসা আরও বাড়বে ।

এ তো গেল এক দিকের কথা। এবার আসি অন্য কথায়। যে শিশুটি এত কম বয়েসে এই অন্ধকার দেখলো, সে সারা জীবন কি সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারবে ? মানসিক ও শারীরিক- সব দিক দিয়েই সে তো ধ্বংস হয়ে গেল। যে সমাজ ধর্ষককে গণপিটুনি দেয়, সেই সমাজ ধর্ষিতাকে স্থান দেয় না। আমরা দু চোখ দিয়ে দেখি আধুনিক যুগ কিন্তু মনের ভিতর সেই মধ্যযুগই বাসা বেঁধে রয়েছে। স্কুলে শুধু মাত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসালেই হবে না। শিক্ষক নিয়োগের সময় একজন কাউন্সিলরের সুপরামর্শ প্রয়োজন। ধর্ষণ রোধ করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করতে হবে প্রত্যেক স্কুলে। বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক ভেবেচিন্তে নিতে হবে। ছেলেদের স্কুলে মহিলা শিক্ষিকাও ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত। কো-এডুকেশন স্কুল গুলোতে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো ভাবনা চিন্তা করতে হবে।

এ কথা আমি বিশ্বাস করি যে আমি লিখে প্রতিবাদ করলেই সমাজ বদলে যাবে না কিন্তু সচেতনতা বাড়বে।

এবার আসি মাস কয়েক আগে ঘটে যাওয়া অভয়ার কথায়। নির্ভয়ার মতোই নির্মম মৃত্যু দেখেছিল অভয়া। যিনি সেবা করেন, তার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই! ভাবতে লজ্জা লাগে। স্কুলের পর এবার হাসপাতাল- স্কুলের মতো হাসপাতালও সুরক্ষিত নয়। সব থেকে বড় কথা এই যে যদি রাতে আমরা মেয়েদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে কাজ কেন দিই? তার থেকে বড় কথা যে রক্ষক, সে কেবল বড় জনের রক্ষক কিন্তু সাধারণের ভক্ষক! গণতন্ত্রে এমন হবে কেন? কেউ একজন বলেছিল, 'রাতে ছেলেদের কাজ দিন আর দিনে মেয়েদের, তাহলে সব সমস্যা সহজেই মিটে যাবে'। তার উত্তরটাও সাংঘাতিক, 'রাতে যদি পুরুষ নার্স কাজ করে, তাহলে রোগিনীরা কি সুরক্ষিত থাকবে'? কথায় বলে- চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। অভয়ার মৃত্যু আঙ্গুল তুলে সমাজকে দেখিয়ে দিল যে হাসপাতালে উপযুক্ত সুরক্ষার প্রয়োজন এবং এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য আইন আরো কড়া করা প্রয়োজন। অপরাধীদের এমন শাস্তি দেওয়া দরকার, যাতে গোটা সমাজ এর থেকে শিক্ষা পায়।

এবার অন্য একটা প্রসঙ্গে আসি। আমরা সকলে জানি যে অপরাধীর কোনো রং হয় না, তা সত্ত্বেও নানা রং দিয়ে আবির খেলা হয়েছে। প্রতিবাদের গায়ে রং লাগায় তার স্বচ্ছতা হারিয়েছে। প্রথমে অসংখ্য মানুষ এই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিল কিন্তু রঙের ফোয়ারা দেখে মানুষের ঢল ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এই অপরাধ সব যুগেই ঘটেছে, সব যুগেই মানুষ প্রতিবাদ করে ন্যায় চেয়েছে কিন্তু ন্যায় চাওয়ার সাথে সাথে রং বদলানোর জন্য আওয়াজ তোলা বৃথা। এখন আইনই ভরসা। আমরা সবাই ন্যায় চাই মানুষের তরফ থেকে, মানবিকতার তরফ থেকে কিন্তু কোনো রঙের তরফ থেকে নয়। অন্যায়ের বিনাশ করতে যেন মিথ্যে গল্প না বানানো হয়- জনতাকে উস্কানি দেওয়াও আইনের চোখে অপরাধ।

যার গেছে, জ্বালা কেবল সে বোঝে। আর যেন এই জ্বালা কারোকে না পোড়ায়। কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করবো কি করে- যে মানুষ আইন তৈরী করে, সেই মানুষই আইন ভাঙে! ন্যায় বিচারের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ- কেবল ডাক্তার, নার্স নয়, কৃষক শ্রমিক থেকে শুরু করে স্কুলের সেই নির্যাতিতা শিশুটিও, অধ্যাপক বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে নির্ভয়ার সেই মুক্ত খুনিও।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১১/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শ.ম. শহীদ ০৫/১২/২০২৪
    একদম সত্য উপলব্ধির প্রকাশ।
 
Quantcast