www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাদের বঙ্গবন্ধু

যে কোন স্থান পরিচিতি পায় সেই স্থানে কোন প্রসিদ্ধ ব্যক্তির অবস্থানের ভিত্তিতে। তেমনি রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২নং সড়কে কার বাড়ি? দেশের যে কোন শিক্ষিত, রাজনীতি সচেতন, ঢাকার যে কোন ট্যাক্সি-ক্যাব অথবা আশপাশ এলাকার রিক্সাচালককে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবে- কেন, শেখ সাহেবের! পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত কত লাখ কোটি পাহাড় পর্বতই তো বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ চূড়া হয়ে কেবল দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়ের এভারেস্ট। বাংলাদেশ এবং বিশ্বে শেখ পদবি নিয়ে তেমনি অনেকে আছেন ঠিকই কিন্তু শেখ সাহেব বলতে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় কৃতজ্ঞ বাঙালীর মাথা যার প্রতি নত হয়ে আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাঙালীদের অধিকারের দাবি তোলায় কারাগার হয়েছিল তার স্থায়ী ঠিকানা। ফলে পারিবারিক জীবনে বিপর্যস্ত বেগম মুজিব ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরের হাত ধরে ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ৩২নং রোড ধানমন্ডির অসমাপ্ত, নির্মাণাধীন ৬৭৭নং বাড়িতে এসে ওঠেন। শেখ সাহেব সেই আইয়ুবের সামরিক শাসন শুরু হওয়া থেকে, তখনও কারাগারে। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পেয়ে সর্বপ্রথম এই বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিন পর সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখার জন্য আইয়ুব সরকার পুনরায় তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ১৯৬৩ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহার হলে আবার তিনি মুক্তি পান এবং তখন থেকে এই বাড়ি আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় পার্টি অফিস হয়ে যায়। ১৯৬৪-এর মাঝামাঝি সময় থেকে শেখ সাহেব অধিকাংশ সময় কারাগারে ছিলেন। কিন্তু জনতার মিছিল ৩২নং রোডে উপস্থিত হয়ে সর্বদা স্লোগান তুলত ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো।’ তারা ঠিকই মুজিবকে মুক্ত করেছিল। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশের পর গ্রেফতার এবং ৬৮ সালে আগরতলা মামলা রুজু হলে কারাবন্দী মুজিবের ধানমন্ডির এই বাড়ি বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার ঠিকানা হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক এক গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে শেখ সাহেবকে মুক্ত ও বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এরপর থেকে ’৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জকিগঞ্জ-গোয়াইঘাট থেকে শ্যামনগর-কলাপাড়া পর্যন্ত চষে বেড়ান। বাঙালীদের তিনি ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করেন। তাদের ভিন্ন জাতিসত্তা বোধ ও আত্মপরিচয় বাতলে দেন। তাদের ভেতর সাহস সঞ্চারিত করেন। এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ডাক দিলে আজন্ম ভীরু এই বাঙালী সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হিংস্রতা নিয়ে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান তুলে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করে। এই যুদ্ধে যে কেবল পাকিস্তানের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছে তা নয় তাদের সহযোগী মার্কিন বলয়, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশের হার হয়। ফলে তখন থেকেই প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে তারা বঙ্গবন্ধু ও বাঙালীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে ধানমন্ডি ৩২নং রোডের বাড়িতেই ওঠেন। কোন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধান ছাড়া অতি সাধারণ মানের নির্মিত এটি একটি দোতলা বাড়ি। নিচে ছোটবড় সব মিলিয়ে পাঁচটি এবং উপরে ড্রইং, ডাইনিংসহ পাঁচটি কক্ষ। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর নিচতলার পুরোটাই রিসিপশন, প্রটোকল-প্রটেকশন ও দেশী-বিদেশী অতিথিদের সাক্ষাত কিংবা দলীয় মিটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। দোতলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন বঙ্গবন্ধু। বাড়ির পেছনে উত্তর দিকে মূল ভবন থেকে আলাদা বেগম মুজিবের ছোট্ট রান্নাঘর। একই লাইনে মুরগি ও কবুতরের খোপ এবং পাশে গোয়ালঘর। যাকে বলা চলে ঢাকার বুকে সৌখিন একটি খাঁটি বাঙালী পরিবার। স্বাধীনতার পর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্য তিন তলায় দুটি নতুন কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ছিল সাধারণ জীবন যাপনকারী আমাদের প্রানের নেতা গণমানুষের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু। কিন্তু দেশী বিদেশী কিছু কুচক্রী মহল এই মহানুভব জননেতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচনা করে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast