www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সেদিন বৃষ্টি ছিল

রাত ২টা বাজে পুরো শহর আজ নিস্তব্দ
হয়ে আছে, খুব বেশি বৃষ্টি হচ্ছে তাই
কোথাও কোন মানুষের দেখা নেয়।
নিল গ্রাম থেকে শহরে আসছে সন্ধার
দিকে কিন্তু অচেনা শহরে সারাসন্ধা
ঘুরাঘুরি করেও থাকার কোন ব্যাবস্থা
হলনা, সে সন্ধা থেকে এই গভীর রাত
পর্যন্ত নিল বৃষ্টিতে ভিজায় ঠান্ডায়
থরথর করে কাপঁতেছে। অনেক খুঁজার পর
অবশেষে একটা ২তলা ভবনের নিচে যায়
আর সে ভবনের নিচে একটা দেওয়ালের
পাশে ভিজা কাপড় নিয়ে নীল শুয়ে
পরে। রাত যত গভীর হচ্ছে ঠান্ডা যেন
ততটা বেরে যাচ্ছে, নীল আর পারছেনা
তাই ঠান্ডায় গোংরাতে থাকে। তার
গোংরানোর শব্দ শুনে ঘুম ভেংগে যায়
রুমে ঘুমিয়ে থাকা ইভার। ইভা ভাবতে
লাগলো এতো রাতে এতো বৃষ্টিতে কে
হতে পারে, একবার ভাবে দরজা খুলে
দেখবে আবার ভয়ে সাহস হচ্ছিলনা, ইভা
কি করবে বুঝতে পারছিলনা। অবশেষে
জানালা খুলে বাহিরে দেখেতে থাকে
আর হটাৎ তার চেখে পরে দেওয়ালের
পাশে যেন কোন একটা মানুষ শুয়ে আছে
আর ঠান্ডায় থরথর কাঁপতেছে। ইভা
একবার বাহিরে দেখে অনেকটা ভয়ে
জানালাটা বন্দ করে নিজের বিছানায়
গেল কিন্তু তার দুচোখ বন্ধ করতে
পারলনা অই অবলা অসহায় মানুষটির কথা
ভেবে। সে আবার জানালার পাশে গেল
দেখতে ওই অসহায় মানুষোটিকে কি করে
সাহায্য করা যায়,কিন্তু কিভাবে করবে
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলনা। ইভা আবার
বিছানায় চলে যায়, কিন্তু তার দুচোখ
বন্ধ করতে পারছেনা, ইভার মনে হচ্ছে
তার খুব আপনজন যেন খুব বেশি কষ্টে
আছে, আজ যেন সে আপনজন তাকে ছেড়ে
চিরতরে চলে যাচ্ছে। নিজেকে
কোনভাবে শান্তনা দিতে পারছিলনা
ইভা অবশেষে সব ভয়ভীতি ভূলে দরজা
খুলে অসহায় মানুষটির পাশে গেল ইভা,
আর দেখল অসহায় মানুষটি থরথর করে
কাঁপতেছে ইভা সাহস করে সে মানুষটির
মাথায় হাত রাখল আর হাত রাখার
সাথে সাথে মানুষটি চোখ মেলে ইভার
দিকে তাকাতে অবাক হয়ে গেল ইভা আর
দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল এই সে নীল
যাকে সে খুব বেশি ভালবাসতো,প্রতি
মূহর্তে যার কথা ভাবত,যার জন্য ইভার
পরিবার গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে,
ইভা নীলকে জড়িয়ে ধরে কাধঁতে লাগল
নীল বুঝতে আর দেরি করলনা এই সে ইভা
যার জন্য এতদুরে আসা, নীল যেন এক
মূহর্তে পৃথিবীর সব কষ্ট ভুলে ইভাকে
জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেধে উঠলো ইভা
নীলকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
কাধতে লাগলো,আর বলতে লাগল কখনো
আমায় ছেড়ে যেওনা এমন অবস্থাতে
ইভার যেন মনে হল নীলের সমস্ত শরীর
ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, ইভা নীল কে
ডাকতেছে কিন্তু নীল কোন সারা
দিচ্ছেনা,ইভা কি করবে বুঝতে
পারছেনা নীলকে জড়িয়ে ধরে কাধঁতে
লাগল আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্খনা
করতে লাগল নীলের যেন কিছু না হয়,
কিন্তু এইভাবে নীলকে বাছানো
যাবেনা সেটা বুঝতে পারে ইভা আর
একটা মেয়ের পক্ষে একটা ছেলে মানুষকে
এই অবস্থায় একা একা ঘরের মধ্যেও
নেওয়া সম্ভব নয়। তার বাবা-মাকেও
জানানো যাবেনা, আর এমন বৃষ্টিতে
কারও সাহায্য ও পাওয়া যাবেনা। তাই
ইভা রুমে গিয়ে কিছু কাপড় আর কম্বল
নিয়ে আসে বাহিরে। আর নীলের ভিজা
কাপড় গুলো বদলে দেয়, আর কম্বল গায়ে
দেওয়ায় এরপর আবার রুমে গিয়ে আগুনের
ব্যাবস্থা করে। এইভাবে বাকি রাত ইভা
নীলের পাশে বসে কাটিয়ে দেয়,
সারারাত প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে ইভাও
ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে
নীলের পাশে পরে থাকে। সকাল হতে
না হতে ইভার বাবা ঘর থেকে বাহির হন
আর তার চোখে পরে তাদের আদরের
মেয়ে ইভা মেয়ের এই অবস্থা দেখে
অবাক হয়ে যান তিনি, পাশে গিয়ে আরও
বেশি অবাক হয়ে যান যে ছেলেটির জন্য
তারা গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিল সে
ছেলেটি তার বাসার সামনে সাথে তার
মেয়েও। যে মানুষটি খুব নিষ্টুর ছিল আজ
সে মানুষটির চোখে জল, ইভার বাবা
কান্না থামাতে পারলেন না মেয়েকে
জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলেন, আর
বলতে লাগলেন তোদের ভালবাসার
কাছে আমি হেরে গেলাম। কিন্তু ইভার
কোন সারা শব্দ নেই, মেয়ের সারা শব্দ
না পেয়ে নীলকে ডাকলেন কিন্তু নীলের
ও কোন সারা ফেলনা। ইভার বাবা আর
দেরি না করে দুজনকে হাসপাতালে
নিয়ে যান আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা
করতে থাকেন দুজনের জন্য কয়েক ঘণ্টাপর
তাদের দুজনের জ্ঞান ফিরে আসে।
ডাক্তার বলতে না বলতে ইভার বাবা
তাদের কাছে ছুটে যায় আর দুজনকে
জড়িয়ে ধরে কাধঁতে থাকেন। ইভা আর
নীলের বুঝতে দেরি হলনা তাদের
ভালবাসা মেনে নিয়েছে সবাই। দুজন
দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের
চোখে অশ্রু তবে আজকের এই অশ্রু দূঃখের
নয় আজকের এই অশ্রু চিরসুখের।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৮/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast