www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমরা তিন জন

>ছোট গল্প<

আমি বাবু আর সুমন,মানুষ তিনজন তবে হৃদয় যেন একটাই।

কিরে সুমন আজ বাবু এলোনা কেন?ওর আবার কোনো সমস্যা হলো না তো? সুমন মাথায় হাত দিয়ে বললো, হায়রে ভগবান বাবু এলোনা কেন তা আমি কি করে জানব? কি করে জানব, আমি কি ওর বাড়ীতে গিয়েছিলাম না কি?
আরে রাখ তোর ভগবান। বাবুর বাড়ী যেতে হবে। চল।আমি সামনে,সুমন পিছনে, চললাম দুজনে।আমি আমার পেছনে দুজন মানুষ হাঁটার শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু ফিরে দেখলাম না,মনে হলো ভুল ধারনা। আমি বললাম কিরে সুমন পিছনে আছিস?
থাকব না তো কি? আমি কি ভূত হয়ে উড়ে গেলাম নাকি?
আরে না কোনো কথা বলছিস না তো তাই ভাবলাম আর কি-
কথা কি সহজে মুখ থেকে বের হয়? সুমন কর্কশ কন্ঠে জবাব দিলো।
কেন? বের হয় না কেন? আমি প্রশ্ন করলাম।
সুমন আমাকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো, আমরা তিন জন থাকব সেখানে একজনের ঘাটতি। তাই সব কথা আমার মন থেকে হারিয়ে গেছে।
আমাকে কি তোর বন্ধু মনে হয় না?
মনে হয়।নরম ভাবে জবাব দিলো। আমি বলেই গেলাম, আসলে বাবুর জন্য আজ আমাদের সব প্লান ধ্বংস।আমি ভেবেছিলাম আজ তিন জন এক সাথে বসে একটা কবিতা তৈরি করবো। কবিতার নাম দিব "আমরা তিন জন "
সুমন কে বললাম আজ আর বাবুর বাড়িতে যাবো না। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তাছাড়া অনেক পথও বাকি আছে এখনও।তুই বাড়িতে যা।কাল দেখা হবে।
উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সুমন-
কাল যদি বাবু না আসে তবে কি?
তাহলে কাল আমরা দুজনে কবিতা লিখবো। আর কবিতার নাম দিব "আমরা দুজন"।

সুমন চলে গেলো।
ও হিন্দু হলেও আমার আর বাবুর সাথে একেবারে গলায় গলায় বন্ধুত্ত। ও কখনও আমাদের দুজনকে ছাড়া সুখী হতে পারে না। আমরাও ওকে খুব ভালোবাসি।তাই একদিন যদি দেখা না হয় পরেরদিন মনটা খুব ভার থাকে সুমনের। ও যখন আমাদের সাথে থাকে তখন ওকে হিন্দু মনেই হয়না। সুমন একটু ভাবুক প্রকৃতির।ও সব সময় কি যেন ভাবে। ওর মনের আশা হলো ও একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানি হবে।
আমার কবি হবার খুব শখ।তাই ওদের দু'জনের জন্য আমি অনেক কবিতা লিখে ফেলেছি। আমার সেই অ-বিখ্যাত কবিতার থেকে দুই-চার লাইন তুলে ধরলাম-
" বাবু
অল্পেতেই কাবু
বাবুদের গাছে ধরে
ছোট ছোট লেবু "

" সুমন
চলে হন হন
সুমেনর বউ না'কি
কাশে খন খন "

আমরা তিন জনই একাদশ শ্রেণীতে পড়ি।বাবুর ভাবনা শুধু লেখাপড়া নিয়ে। কিন্ত ssc পরিক্ষার পর ওর লেখাপড়া একদম বন্ধ হওয়ার দশায় ছিল।ওরা আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নয়।ওর বাবা নেই,মারা গেছে,প্রায় বছর তিনেক আগে।কিন্তু আমরা ওর লেখাপড়া বন্ধ হতে দিলাম না।আমি আর সুমন মিলে টাকা দিয়ে ওকে কলেজে ভর্তি করাই। প্রায় অর্ধাঅর্ধি বই ও কিনে দেই । দুজন শিক্ষক দুটো বই কিনে দিয়েছিলো।ওর মা খুব খুশি হয়। আমার চেয়েও সুমন কে বেশি আদর করে বাবুর মা।তার পর থেকে আরও বেশি মনোযোগী বাবু।তাই আমাদের সাথে ও এখন খুব কম বেড়াতে আসে।

কিন্তু পরদিন ঠিকই এসেছে দুজনেই।আমাদের আনন্দ আর ধরে না।সে কি হাসাহাসি! মনে হয় কেউ যেন কাতুকুতু দিয়েছে।সুমন হাসি থামিয়ে দিয়ে বাবুর দিকে তাকিয়ে বললো- কাল আমরা একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তুই আসিস নাই বলে লেখা হয়নি।বাবু বললো আসিনি মানে!এটা কেমন কথা বলিস?
আমি একেবারে থতমত খেয়ে গেলাম। চুপ করে সব শুনছি।কিন্তু সুমন সে ধরনের ছেলে নয়, ও বাবুকে ধমক দিতে শুরু করে-
চোপ শালা মিথ্যেবাদি।
বাবুর মনটা একেবারে খারাপ হয়ে গেল। ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো- কিরে মুন্না,তুই কিছু বলবি না? মনে হয় যেন করুনা চাইলো।আমি সুমন কে বললাম তুই আসলে বেশি কথা বলিস, শালা বাচাল।সুমন বোধহয় কিছু মনে করল না।ও সহজে মন খারাপ করে না।
আমি বললাম -
আমার মনে হয় তুই কাল এসেছিলি।
হ্যাঁ এসেছিলাম।
কখন?
যখন তোরা আমার খোঁজ নিতে আমার বাড়ীর পথে রওয়ানা দিয়েছিলি তখন। তখন আমি তোদের পিছনে ছিলাম। কিন্তু বুঝতে না দিয়েই চলে গিয়েছিলাম।তবে আসতে দেরি হয়েছিল তাই।আমি বললাম এটা কোনো ব্যাপার হলো।কথা বললেই পারতিস।
ও বলল,তাছাড়া মনটাও ভালো ছিল না।
কেন? আমরা কি তোর কেউ না?
বাবু কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমার মা ও নাই রে! সুমন এতক্ষণ চুপ করে ছিল। কিন্তু আর থাকতে পারল না।কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল-
কি হয়েছে? বাবু হু হু করে কান্না জুড়ে দিলো।আমার আর সহ্য হলো না। আমারও চোখ বেয়ে দু-ফোঁটা পানি বের হলো।ওর স্থানে যদি আমি থাকতাম তাহলে হয়তো.............।
বাবু বার বার অনুতাপ করে বলতে লাগলো -
আমি সর্বহারা হয়ে গেলাম,সর্বহারা,সর্বহারা।
ওকে বোঝাতে চাইলাম, কিন্তু কি দিয়ে বোঝাবো?
কোন ভাষা খুঁজে পাইনা। ও কি বুঝ মানবে?
বাবু কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে চলল।
আমি মনে মনে ভাবলাম,আমরা যেন একে অপরের পরম শত্রু।মনে হয় আমার আর কবিতা লেখা হলো না।পরের দিন শুনলাম বাবু ঢাকা যাওয়ার জন্য বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেছে।আমি বাসস্ট্যান্ডের দিকে ছুটলাম।কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার,আমি যাওয়ার আগেই বাসটা স্টান্ড ছেড়ে চলে গেছে।আমি নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি বাসটির দিকে। হঠাৎ বিকট শব্দ। বাসটিতে আগুন ধরে পুড়ে যাচ্ছে সব কিছু।আমি বাবুর কথা ভাবতেই অজ্ঞান হয়ে পরলাম। তারপর আর কি হলো সবাই জানে,শুধু জানি না আমি। অনেক্ষন পর জ্ঞান ফিরে চেয়ে দেখি আমার মাথার কাছে বাবু দাড়িয়ে। আমি ভাবলাম হয়তো, অজ্ঞান অবস্থায় সপ্ন দেখছি।অজ্ঞান হলে কেউ কি সপ্ন দেখে?
তবুও আমার মনে হলো। কিন্তু সে কি! সুমনও এখানে এসেছে। ও আমাকে শান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে বলল-
বাবু ঐ গাড়িতে ছিলোনা। আমি বেন্চের উপর শুয়ে ছিলাম।উঠে বসলাম।বললাম-
তাহলে কি?........
বাবু আস্তে আস্তে বলল-
আমি তোদের মায়া ছেড়ে যেতে পারলাম না। এই দেখ টিকেট কেটেছিলাম।কিন্তু গাড়ীতে উঠে যখন তোদের কথা মনে পড়েছে তখনই বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে পরেছি। আমি একেবারে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম-
কি নিয়তির খেলা।
সুমন বলল-
ভগবানও আমাদেরকে আলাদা করতে দ্বিধা বোধ করল।
আমরা আসলে কেউ কাউকে ছাড়া মরতেও পারবো না।
আমার মনটা আনন্দে ভরপুর হয়ে গেল। খোদার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া, যিনি আমাকে আমার বন্ধুর সাথে দেখা করার সুযোগ দিয়েছেন।
আমি অতি আনন্দে সেই কাঙ্ক্ষিত কবিতাটা আবৃতি করতে থাকলাম-

বন্ধু মোরা তিন জন
সুখে দুখে তিনে মিলে
করি আলাপন,
একে মোরা অপরের
সঙ্গী দূর সফরের
আমরা তিন জন...............
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০২/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো ।।
  • বেশ!
  • ফয়জুল মহী ২১/০২/২০২০
    চমৎকার সৃষ্টি, পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম
 
Quantcast