www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সেই মেয়েটি

অনেকদিন আগে এসেছিলাম,প্রায় বছর ছয়েক তো হবেই। তার বেশিও হতে পারে! চেনা হলেও খুব অচেনা লাগছে জায়গাটা। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,বাস থেকে নেমে রিকশা না পেয়ে অগত্যা হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা হয়ে এলো তবু পথ যেনো শেষ হয় না।কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার হয়ে এলো,কারো মুখ চেনার উপায় নেই।যদিও উপায় থাকলেও রাস্তায় কোনো মানুষ ছিলো না!
আশে পাশে কোনো বাড়িও দেখা যায় না,আমি চমক কে দাঁড়াতে বললাম।
চমক আমার চাচাতো ভাই, আমার থেকে ২-১ বছরের ছোট হবে।এর বেশি বলার প্রয়োজন বোধ করি না।
যাই হোক,আমার কথা শুনে চমক একটু ভয়ে ভয়ে বললো "কি হয়েছে!"।
-ঐ যে দেখ,একটা আলো দেখা যায় সম্ভবত কারো বাড়ি হবে।চল আমরা ঐ দিকেই যাই।
চমক আমার কথায় সায় দিয়ে বলল 'চল'।
আমরা দুজনে অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে বাড়িটার কাছাকাছি পৌঁছাতেই একটা জানালা খোলা দেখতে পেলাম। এতক্ষণে আমার আনন্দ বোধ হলো। চমক বাঁকা দাঁতের ফাঁক দিয়ে ফিক করে একটা হাসি দিলো।
জানালা যখন খোলা, একটা না একটা উপায় তো হবেই! আস্তে আস্তে জানালার কাছে যেতেই যা দেখতে পেলাম তাতে একটা মেয়ে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। খুব মনোযোগের সাথেই পড়ছে তাই আমাকে লক্ষ্য করে নি। আস্তে করে বললাম-
'একটু শুনবেন'।
কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে একটু জোরেই বললাম-
'এই যে শুনছেন'
এবারে একটু গা নাড়া দিয়ে আবার বই পড়া শুরু করলো। আমি শিউরে উঠলাম,মনে মনে ভাবলাম ভূত টুত নয় তো! চমককে কাছে টেনে খুব জোড়ে আবার ডাকতেই ওপাশ থেকে উত্তর এলো-
-কে! কে!
-চিনবেন না।
-চিনবো না তো ডাকছেন কেন?
-এখানে আশে পাশে কোনো থাকার জায়গা হবে?
-ও.... আপনারা বুঝি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন!!
-হুম,আমরা এক আত্মীয় বাসা যাচ্ছিলাম কিন্তু রাত হওয়াতে পথ খুঁজে পাচ্ছিনা।
-এখানেই থাকতে পারেন, অনেক জায়গা আছে।
মেয়েটির কথা শুনে খুব অবাক হয়ে গেলাম, অচেনা দুজন ছেলেকে কি কেউ এভাবে বাড়িতে জায়গা দেয়! মনে প্রশ্ন জাগলো, আপনি কি একা বাড়িতে?
কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না,মেয়েটা সদর দরজা খুলে দিলো। আর কোনো উপায় না দেখে দুজনেই ভিতরে গেলাম।আমার মানসিকতা কেমন হয়ে গেলো,একটা মেয়ে এত সাহসি হয় কি করে! মেয়েরাও এত সুন্দর মনের হয়,এই মেয়েটাকে না দেখলে জানা হতো না।
বেশ বড়সড় পাকাবাড়ি কিন্তু বিদ্যুত নেই,আমরা রুমের ভিতরে গিয়ে রাতটা ভালোভাবেই কাটালাম।

ফজরের আজান শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।কিছুক্ষণ পর বাইরে বের হতেই দেখি,মেয়েটি রান্না করছে।আমাকে বাথরুম দেখিয়ে দিলো,আমি চমককে ডেকে দুজনে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর মেয়েটির সাথে অনেক কথাই হলো কিন্তু কারো নাম কেউ জানলাম না।অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটির নাম জানা হলো না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে এবার বিদায় নেবার পালা।মেয়েটি জানতে চাইলো,
-কার বাড়িতে যাবেন?
-আমার এক মামার বাড়ি।
-বাড়ি চিনতে পারবেন তো!না পারলে সাথে যাই?
-লাগবে না, আমরা খুঁজে বের করবো।
-যদি খুঁজে না পান তাহলে এখানে আসবেন।
আমরা বাড়ি খুঁজে পাব কি না সে কথা মেয়েটি এত নিশ্চিত ভাবে বলছে কিভাবে! যাই হোক আমরা হাঁটতে শুরু করলাম।দুপুর পর্যন্ত অনেক ঘোরাঘুরি করার পরও বাড়ি পেলাম না।
অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে আবার সেই বাড়িতে গেলাম।দরজায় কড়া নাড়তেই আমি একদম হতভম্ব! এ আমি কি দেখছি, আমি এতটাও বোকা কবে থেকে! যার বাড়ি খুঁজছিলাম এ তো তারই বাড়ি। মামি আমার দিকে তাকিয়েই আছে, আমি ছালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম। মামি আমাদের বসতে দিয়ে গল্প শুরু করলো।
-ওটা তোমার চাচাতো ভাই না ?
-হ্যাঁ
-খুব সুন্দর হয়েছে তো!
আমার মামি আমার সামনে চমককে সুন্দর বলছে। আমার যে কেমনটা লাগছিলো বলে বোঝাতে পারব না। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। মামি আমার মনোভাব বুঝতে পেরে অন্য কথা বলতে শুরু করল। তারপর জানতে পারলাম সব কিছু, যে মেয়েটিকে নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা সে আর কেউ নয় আমারই মামাতো বোন আলো। আলো আমাকে চিনতে পেরেও কিছু বলে নি, তার জন্য মামি ওকে খুব বকাবকি করলো। আমি মামি কে নিষেধ দিতেই আলো আমায় বিচার দেয়া শুরু করলো।
-আরিফ ভাইয়া জানো? মা আমাকে সব সময় বকে!

আমি আলোকে চিনতি পারিনি, এই কয়েক বছরে ও অনেক বড় হয়ে গেছে। ছয় বছরে একটা মেয়ের এতো পরিবর্তন হয় কি করে?
কে বুঝবে? এটা সেই মেয়েটি!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৯৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast