www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

করোনায় একজন প্রবাসী

করোনায় একজন প্রবাসী।
২৬তম পর্ব।

আচমকা ইকামা চাওয়ায় লোকমান ভয় পেয়ে যায় মাথা নিচু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। জিব ইকামা আবারও বলে পুলিশ লোকমান এবার মুখ খোলে বলে মাফি ইকামা (ইকামা নাই ) ইকামা মাফি পুলিশ বলে। দুই বছরে সে মালিকই দেখেনি ইকামা কিভাবে পাবে শুনেছে ভিসাই ক্যানসেল। লোকমানকে গাড়িতে উঠতে বললে সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে সে। লোকমান হয়তো ভাবে আজ হতে জীবনের আরেক অধ্যায় যেটা সত্যের চেয়ে সত্য প্রবাসে জেল। মেয়াদ উত্তীর্ণ ইকামা হলেও হয়তো পুলিশ বিবেচনা করতো ছেড়ে দেওয়ার। কিছু লোকের ধারণা লোকমান যে ভিক্ষা করে তা পুলিশকে অন্য কেউ বলেছে। না হয় এই মহামারীতে ইকামা দেখতোই না। এমনও বহু হয়েছে যে ইকামা না থাকায় পুলিশ ধরে আবার ছেড়েও দেয় এমন আমি নিজেও বহু দেখেছি। প্রথমে নিয়ে যায় এলাকাবৃত্তিক পুলিশ ক্যাম্পে সেখানে কয়েক দিন রেখে পাঠিয়ে দেয় বড় জেলে।

যে কোন ছোটখাটো অপরাধ হলে পুলিশ ফাঁড়ি কিংবা থানা হতেই মালিক জিম্মাদার হয়ে নিয়ে আসতে পারে। অবশ্যই বহিরাগতদের একটা অপরাধ মেয়াদ উত্তীর্ণ ইকামা থাকে আর এইটা তাদের অপরাধ নয় মালিক ইকামা করতে গড়িমসি করে আর বিপদে শ্রমিকেরা। আসলে ইকামাতে সরকারি টেক্স আদায় করলেও এইটাতে একজন শ্রমিকের সমস্ত তথ্য লিখা থাকে। সৌদিয়ানদের জন্য আইডি কার্ড় আর বহিরাগতদের জন্য ইকামা বাধ্যতামূলক এর মাধ্যমে পরিচয় যেমন বহন করে তেমনি সমস্ত সেবা নিশ্চিত হয়। এই ইকামা করা না করার উপর শ্রমিকের কোন হাত নেই এইটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মালিকের উপর। এই মালিকদ্বয় শতে দশ বিশ জন প্রতারক স্বভাবের নিজের কাজ করলেও অনেক সময় ইকামা করতে চায় না। আর মুখের চুক্তি করে যারা ফ্রী থাকার কথা বলে তারা টাকা দেওয়ার পরও ইকামা করে না এর পরে আছে দেশী দালালদের প্রতারণা।

লোকমান একজন নয় এই রকম হাজারো লোকমান আছে ঘড়ি বাড়ি বিক্রি করে ঢাকা শহর দেখে প্লেন চড়ে বিদেশের সোডিয়াম লাল নীল বাতি দেখে। মাঝখানে জেল জুলুম সয়েও পরিবারের বিরাগভাজন হয়। দেশে গিয়ে আবার আগের পেশায় ফিরে যায় বাধ্য হয়ে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মানুষ বিদেশ আসবে না এবং এসে সবাই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। আগে বেশীর ভাগ সফল হতো এখন বেশীর ভাগ মানুষ প্রতারিত হয় তাই অনেক যাচাই বাছাই করে দেশ হতে পা ফেলতে হবে একবার ডুবে গেলে সাগরের তলদেশে পৌছে যেতে হয়। এখন মানুষ অসাধু হয়ে গিয়েছে সীমাহীন অর্থনৈতিক মন্দা চলে দেশে দেশে যার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছাড়া এরপর আছে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা। মাঝখানে আমরা গরিব দেশের গরিব শ্রমিক অবশ্যই আমাদের দেশেও বড় বড় লোক আছে যারা বিদেশে টাকা পাচার করে। বিদেশে ব্যবসা করে বাড়ি কিনে গাড়ি কিনে নারী কিনে। আমি ও আপনি শ্রমিক শুধু শ্রমিক।

আজকাল খুব ভয়ও লাগে আমার পাশেই একজন ভারতীয় কেরালার নাগরিক হার্ট এ্যাটাক করে মারা যায়। এর কিছু দিন পর লোকমানের পাশে একজন চাঁদপুরের লোক মারা যায় সেও হার্ট এ্যাটাক। সবাই বলে বেকার থাকায় চিন্তায় মানুষের এমন মরণ।
(চলব)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
২৭তম পর্ব।

প্রচুর কর্মহীন করোনা কালে মধ্যপাচ্যে রাজনীতি জম জমাট হয়ে উঠে ইসরায়েলকে নিয়ে। করোনায় সৌদি আরবে দেশী বিদেশী হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ে। সেই দিকে লক্ষ্য না করে মধ্যপাচ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রভাব ধরে রাখতে আমেরিকার দক্ষ কৌশলে সৌদি আরব নাচের পুতুল হয়ে মঞ্চে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেদের স্বার্থের জন্য একে একে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। বাহরাইন, সুদান, আরব আমিরাত ও মরক্কোর পরে আর কে স্বীকৃতি দিবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ইসরায়েল ভালোবাসার জন্ম হচ্ছে। ভুটানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরায়েল দক্ষিণ এশিয়াতে প্রবেশ করেছে। ভারত ও সৌদি আরবকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে পাকিস্তানের কাছ থেকে ইসরায়েল স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আমেরিকার ইশারায় পাকিস্তানের কাছ থেকে বাধ্য করে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য সময়সীমা বেধে দিয়েছে।

ইসরায়েল ও আমেরিকার ইহুদীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সবগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইহুদিরা তৈরি করেছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক,গুগল,নাসা ও বিশ্বসেরা সামরিক সরঞ্জাম সমূহ ইহুদীদের দখলে। বিশ্বে এমন কোন কিছুই নেই, যা সম্পর্কে মোসাদ অবগত নয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর পরে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উপর বহু দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রবল চাপ আসতেছে। বাংলাদেশ সরকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের ভয়ে সেই চাপ অদ্যাবধি উপেক্ষা করে আসছে, তবে কতটুকু উপেক্ষা করা সম্ভব সরকারের পক্ষে বলা মুশকিল । আবার এর সাথে জড়িত আছে দেশ শাসনের ক্ষমতার লিপ্সাও।

আমেরিকায় নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় এবং জো বাইডেনের জয়ের পর সৌদি আরব হঠাৎ করে মধ্যপাচ্যের রাজনীতিতে সিংহ হতে বিড়াল বনে যায়। মাত্র কিছুদিন আগেও ইরান, তুরস্ক ও কাতারকে সর্বশক্তি দিয়ে কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়েছে কোণ-ঠাসা করার জন্য কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সেই সৌদি আরব এখন তুরস্ক ও কাতারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার কৌশল খোজ করতেছে। কিছু দিন আগে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরায়েলকে মদদ দিয়েছে সৌদি আরব। অথচ এখন এই সৌদি আরব কঠোর ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করতেছে। আসলে আগে হতেই সৌদি আরবের রাজা আর তার পুত্রের ভিতর মতভেদ ছিল ইসরায়েলকে নিয়ে। তারপরও ইসরায়েলকে সৌদি আরবের আকাশ সীমানা ব্যবহার করতে দেয়। যার কারণে ইসরায়েল আরব আমিরাত এবং বাহারাইন সহজভাবে সফর করতে পারে। অথচ কাতারের লোক এবং বিমান সৌদি আরবে নিষিদ্ধ ।

জো বাইডেনের জয়ের পর পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোপনে সৌদি আরব এসে বৈঠক করে সৌদি যুব রাজের সাথে। সেই বৈঠকে যুব রাজ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা ঘটে বাহারাইনে নিরাপত্তা বৈঠকে সৌদি রাজার একনিষ্ঠ সমর্থক যুব রাজ তুর্কি বিন ফয়সালের বক্তবে। সে সেখানে কঠোর ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করে স্পষ্টভাবে বলে দেন যেতদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হচ্ছে তেতদিন ইসরায়েল যেন আর আরব বিশ্বের কারো সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
২৮তম পর্ব।

সৌদি যুবরাজ ফয়সালের বক্তব্যের সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত ছিছেন। আরব আমিরাত ও বাহারাইনের ধুমধাম করে স্বাগত জানানোর মধ্যেই এমন বক্তব্যে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েন। আর যুবরাজ ফয়সালের বক্তব্য সৌদি আরবের রাজার বক্তব্যই মনে করা হয়। যুবরাজ বলেন ইসরায়েল নিজেকে শান্তির দূত হিসাবে তুলে ধরেন। আর প্রকৃত সত্যটা হলো ফিলিস্তিন পশ্চিমা শক্তির অধিনে আবদ্ধ আছে। ইসরায়েল যখন তখন ফিলিস্তিনীদের ধরে বন্ধি শিবিরে পাঠিয়ে অত্যাচার করছে, ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ কেউ এই অত্যাচার হতে বাদ পড়ছে না এবং ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। ইসরায়েল ইচ্ছামত বাড়ি-ঘর ধ্বংস করছে যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং মেরে ফেলছে। তখন সৌদি যুবরাজ ফয়সালের ভাষা ছিলো অত্যন্ত কঠোর এবং তিনি অভিযোগ করেন ইসরায়েলের হাত পরমাণু অস্ত্র আছে আর তারা এবং তাদের দোসর অনুগত মিডিয়া ক্রমাগত সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে রক্ত পিপাসু বোধ তাদের তারপরও ইসরায়েল প্রচার করে যে তারা শান্তির দূত তাই সৌদির বন্ধু হতে চায়।

যুবরাজ বলেন তারা তখনি সৌদি আরবের বন্ধু হতে পারবে যখন স্বাধীন ফিলিস্তিন মেনে নিবে। অবশ্যই ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে অধিকৃত ভূখণ্ড ফিলিস্তিনকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তারপর সব আরব রাষ্ট্রের ইসরায়েল বন্ধু হতে পারবে। যুবরাজের বক্তব্যের পর পরই ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন এই বক্তব্যে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, আরব বিশ্বে যে পরিবর্তন আসছে তা যুবরাজের কথায় চাপ নেই এবং তিনি শান্তি চুক্তি না হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন হয় ফিলিস্তিনকে সমস্যার সমাধান মেনে নিতে হবে না হয় এমন দোষারোপ করতে হবে। এই উপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় বাহারানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মঞ্চে বসা ছিলেন। হঠাৎ করে সৌদি আরবের এমন কঠোর ভাষায় সবাই হতবাক হয়ে পড়ে।

এই সম্মেলনে যেত কঠোর হয়েছে তার চেয়েও বেশী এখন কাতর হচ্ছে মধ্যপাচ্যের আরেক ছোট দেশ কাতারের কাছে। সৌদি জোটের দেওয়া অবরোধ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কাতার হলো ইসলামী রাজনৈতিক প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারপরও অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ ক্ষুদ্র হলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কাতার নিখুঁত খেলোয়াড। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন অগাধ প্রভাব দেখানো মুসলিম রাষ্ট্র আর দ্বিতীয়টির নজির নেই। কাতারের এই রাজনীতি আবার প্রথা বিরোধী, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসলামী রাজনীতির বড় পৃষ্ঠপোষকতা করে এই কাতার। আরব বিশ্বে নিষ্ঠুর রাজতন্ত্রের কঠোর প্রতিবাদী কণ্ঠ এই কাতার । আরব দেশে গণতন্ত্রের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ এই কাতার বিশেষ করে বিশ্বজগৎ খ্যাত চ্যানাল আল-জাজিরার মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করে চলেছে। এবং সাথে সাফল্যমণ্ডিত কূটনীতি তৎপরতা চালিয়ে পশ্চিমাদের কাছে নিজের অপরিহার্যতা বজায় রেখেছে দোহা। কাতারের এই সাফল্য মোটেও পছন্দ নয় মধ্যপাচ্যে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া সৌদি জোটের বিশেষ করে সৌদি ও আমিরাতের, এদের সাথে আছে মিশর ও বাহারাইন। রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানে ভিত থাকে এইসব দেশ কারণ যে কোন গণতন্ত্রীকরণে এইসব দেশ হুমকির মুখে পড়বে।

তাই কাতারের গণতন্ত্রমনা নীতিকে এইসব দেশ দেখছে নিজের অস্তিত্নের জন্য প্রচণ্ডভাবে হুমকি হিসাবে। তাই কাতারের সার্বভৌমত্ব হরণ ও দুর্বল করার জন্যই ২০১৭ সালে সৌদি জোট অবরোধ আরোপ করে। এই জোট মনে করে ছিল কাতার নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়, এখনো কাতার মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই কথা সত্য যে কাতারের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তারপরও কাতার তার নিজের অবস্থা হতে সরে আসেনি। বিবিসি সংবাদ বিশ্লেষকের মতে সৌদি জোট মনে করে ইয়েমেনের হুতির মত কাতার সৌদি জোটের বশ্যতা মেনে নিবে। তবে কাতারে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
২৯তম পর্ব।

কাতারের রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক ভাণ্ডার, উত্তর অঞ্চলে রয়েছে সুবিশাল তেল ভাণ্ডার। শুধুমাত্র বৃটেনে রয়েছে কাতারের ৫৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এই ছাড়া তাদের পিছনে রয়েছে তুরস্ক ও ইরানের শক্ত সমর্থন। বিবিসি সংবাদ বিশ্লেষক ফিলীপ গাডনারের মতে মধ্যপাচ্যে গত কয়েক বছরে বিরাট বিভাজন রেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর একদিকে আছে তিনটি সুন্নি রাজতন্ত্র সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহারাইন এবং তাদের মিত্রদেশ মিশর। অন্যদিকে কাতার, তুরস্ক ও ইসলামি আন্দোলন বিভিন্ন সংগঠন। দুই পক্ষ একে অপরকে বয়কট করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশাল ক্ষতি সাধন হয়েছে। এই বিভেদ দুর করতে উভয় পক্ষকে চাপ দিতে ট্রাম্পের জামাতা মধ্যপাচ্যে সফরে আসেন। উনি কাতার এবং সৌদি আরবের সাথে বৈঠক করেন। আমেরিকার নতুন প্রেসিডন্টও নিশ্চয় চাইবেন এই সমস্যার সমাধান কারণ কাতারে রয়েছে আমেরিকার বিশাল সেনাঘাঁটি। কাতারে অবরোধের বড় কারণ হলো মধ্যপাচ্যে গণতন্ত্র ও ইসলামি দলগুলির প্রতি আল জাজারির নিবিড় সমর্থন আসলে এইটা হলো কাতারের নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

তুরস্ক, ইরান ও কাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৌদি জোটের জন্য অস্তিত্বের হুমকির কারণ। শিয়া রাষ্ট্র ইরান হলো সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশী মাথা ব্যথা তেমনি তুরস্কও। কারণ কাতারে রয়েছে তুরস্কের সামরিক ঘাটি। কাতার ও তুরস্ক হলো মধ্যপাচ্যে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক এবং মুসলিম বাদ্রারহুড়ের বড় পৃষ্ঠপোষক। সৌদি জোট যখন কাতারের উপর অবরোধ দেয় তখন আমেরিকা ও ইউরোপ এই অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয় সৌদি জোটকে আর তখন তারা চৌদ্দটি শর্ত দেয় কাতারকে।
এর মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিলঃ
(১) আল জাজিরা টিভি বন্ধ করা।
(২) তুরস্ক ও ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
(৩) তুরস্কের সামরিক ঘাটি বন্ধ করা। ও
(৪) মধ্যপাচ্যের সমস্ত ইসলামি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধ করা।
কাতার এইসব দাবির কোনটিও মেনে নেয়নি বরং আরো উল্টা সৌদি জোটকে বলে দেয় এইসব দাবি কাতারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জন্য হুমকি স্বরূপ।

কাতারকে বশে আনতে না পেরে ছোট রাষ্ট্র কাতারকে দখল করার পরিকল্পনা করেন সৌদি পিন্স সালমান। তবে সৌদি আরবের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি এখন আমেরিকায় জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় চোখে সর্ষে ফুল থেখছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলতেছেন সৌদি যুবরাজ সালমান লাইন অফ ফায়ারে রয়েছেন কারণ খ্যাতিমান সাংবাদিক জামাল খাসোগি ও ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন জো বাইডেন। তিনি ইরানে পরমানু চুক্তির বড় সমর্থক এই জন্য যুবরাজ সালমান ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরে কাতার ও তুরস্কের সাথে সম্পর্ক গঠতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। কাতারের সাথে সুসম্পর্ক করে বাইডেনকে বুঝাতে চান যুবরাজ তার সাথে থাকতে আগ্রহী, অন্যদিকে তুরস্কেও কাছে টানতে চান সৌদি আরব। এই ট্রাম্পই কাতারে অবরোধ দেওয়ার জোর সমর্থক ছিলেন পরে বুঝতে পারে হিতে বিপরীত হলো।

কাতারের বিমানকে সৌদি আরবের আকাশ সীমা ব্যবহার করতে না দিলে কাতার ইরানের আকাশ সীমা ব্যবহার করা শুরু করে এতে কাতার ও ইরান আরো কাছাকাছি চলে আসে। করোনা মহামারীর মাঝেই ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার পর প্রথমে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কঠোর নিন্দা জানান। নানা দিক বিবেচনা করে ট্রাম্প কাতার হতে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করে আর এতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এগিয়ে আসে কুয়েত, তাই অতি তাড়াতাড়ি কাতার হতে অবরোধ উঠে যাবে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন খুব দ্রুত কাতার সাথে আবার পুনরায় সম্পর্ক শুরু হবে। ট্রাম্প বিদায়ের আগেই অবোধ শিথিল হয়ে যাবে আশা করা যায়।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩০তম পর্ব।

তবে এই সম্পর্কে প্রথমে জোর আপত্তি জানায় আরব আমিরাত। আর এখন কন্ঠ পাল্টিয়ে আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন সব দেশের স্বার্থে সৌদি আরব এক মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করে সৌদি আরব আর কাতারের মধ্য উষ্ণ সম্পর্ক আরব আমিরাত আর মিশর চাইবে না । কাতারের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক করতে বড় ধরনের ছাড় দিতে হচ্ছে। কাতার কোন দাবিতো মেনে নেয়নিই এখন উল্টো শর্ত দিয়েছে যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে বিনা শর্তে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এবং সৌদি জোটের সব দেশে কাতারের নাগরিক অবাধে যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে উল্লেখ্য অবরোধে সময় সৌদি জোট কাতারের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। সৌদি আরব বিনা শর্তে কাতারের সব শর্ত মেনে নিবে এতে কোন সন্দহ নেই। তবে কাতার সৌদি জোটকে কতটা বিশ্বাস করবে তা বলা মুশকিল। বিশ্লেষক ফিলিপ গাডনার মনে করে প্রতিবেশী দেশগুলিকে ক্ষমা করতে কাতারের বহু সময়ের প্রয়োজন হবে। কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্ক সম্পর্ক জোরদার হলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে তুরস্ক আর মুশকিলে পড়বে আরব আমিরাত ও মিশর। কাতার ও সৌদির সম্পর্কে মধ্যপাচ্যে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন হবে হবে তুরস্কের প্রভাব বাড়বে এবং মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের ইসলামি দলগুলি সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমস্যায় পড়বে ইসরায়েল যদিও সৌদি এই ইস্যু কবর দিতে তৎপর কিন্তু কাতার ফিলিস্তিন নিয়ে আগের মতনই থাকবে।

সৌদি আরব তুরস্কের ভূমিকম্পের পর ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে ছিল। তার সূত্র ধরে তুরস্ক প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে কৃতজ্ঞতা জানান সৌদি বাদশাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব ও তুরস্ক তিক্ততা সম্পর্কের কিছুটা অবসান হবে বলে মনে হয়। হৃদয়তাপূর্ণ আলোচনা দাবী করেন উভয় পক্ষ তখন তাঁরা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনাও করেন। একদিকে মুসলমানদের দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, এই দুই প্রভাবশালী নেতার আলাপে মুসলিম বিশ্বে চমক সৃষ্টি করে। মূলত আমেরিকার নির্বাচন দুই দেশের জন্য নতুন বাস্তবতা নিয়ে এসেছে তাই আলোচনা হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে। গত আরব বসন্তের পর হতে এই দেশের মধ্য সম্পর্ক শীতল হয়ে যায় তারপরও সম্পর্ক জোরদার করার নানা উদ্যোগ ছিলো। ২০১৮সালে কানাডা সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করলে প্রতিবাদ করে তুরস্ক। সেই সময় সৌদি একজন মহিলা মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার করলে কানাডা এর কঠোর প্রতিবাদ করে বলে এটা মানবাধিকার লক্ষণ রিয়াদের। তখন সৌদি কানাডার রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার করে সমস্ত বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে। ওই সময় আরো অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে তুরস্কও সৌদির পাশে দাঁড়ায় এবং বলে এইটা কানাডার অনধিকার চর্চা। তার সূত্রধরে দুই প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা গঠে উঠে। কিন্তু জামাল খাসোগির হত্যায় দুই দেশকে দুই মেরুতে নিয়ে যায় তখন।

তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের ভিতর জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি ক্রাউন পিন্স সালমান সারা দুনিয়ায় ভিলেন হিসাবে চিহ্নিত হয়। তুরস্কে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে নিখুঁতভাবে খাসোগিকে হত্যা এবং পরে এক হত্যাকারী খাসোগির পোষাক পরে দূতাবাস হতে খাসোসি সেজে বের হয়ে যায় এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ছিলো। কিন্তু তুরস্কের তদন্তকারী দল সব কিছু পাল্টে দেয় একে একে তাদের হাতে আসে হত্যা করার প্রমাণ এমনি কি লাশ কেটে টুকরা করার সময় খুনীদের কথা বার্তাও তদন্তকারীর হাতে চলে আসে। আর এতে বুঝা যায় এই হত্যায় প্রভাবশালী কেউ জড়িত এরদোগান কারো নাম না বলে বুঝিয়ে দেন এই হত্যায় পিন্স সালমান জড়িত। এরপর পানি অনেক দূর গড়ায় দুই দেশের যে সুসম্পর্কের সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ছিল তা দ্রুত মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।

ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব আর তুরস্কের সম্পর্ক প্রীতিকর নয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ওসমানীয় খেলাফত হেরে যাওয়ার পর সৌদি আরব রাষ্ট্র গঠন করা পথ তৈরী হয় আর আগে একশ বছর মক্কা মদিনার খাদেম ছিলেন ওসমানীয় শাসকেরা। কামাল আর্তাতুকের সময় সম্পর্ক ভালো ছিলো স্নায়ু যুদ্ধ, ইরাক ইরান যুদ্ধে সব সময় উভয় দেশ একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মত-অমত থাকলেও কখনো সম্পর্ক বৈরিতা রূপ নেয়নি বরঞ্চ ব্যবসা বাণিজ্যে সম্পর্ক ক্রমশ বেড়েছে কিন্তু এত বছরের সম্পর্ক পাল্টিয়ে দেয় আরব বসন্ত। গণরোষে যখন আরব বিশ্বে ক্ষমতা আটকে থাকা স্বৈরশাসকের পতন হচ্ছে তখন সৌদি আরব নিজের ক্ষমতার লোভে অবস্থান নেয় এই গণ আন্দোলনের বিপক্ষে আর তুরস্ক অবস্থান নেয় গণতান্ত্রিক
আন্দোলনের পক্ষে ঠিক তখনি শুরু হয় দুই বন্ধু দেশের দূরত্ব । (চলবে)।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১০/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ন্যান্সি দেওয়ান ১৫/১০/২০২০
    Sundor
  • মোঃ অমিত হাসান ১৫/১০/২০২০
    প্রিয় কবিকে এখানে পেয়ে খুশি হলাম। তবে প্রিয় কবির কলমে যে বাস্তবই ওঠে আসে এবং বাস্তবতা কে চিনিয়ে দিতে সাহায্য করে। এ জন্য প্রিয় কবিকে জানাই সালাম
  • সুন্দর
  • important post
 
Quantcast