www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কাজীদের পাজিগিরি

চিত্র ০১: কাজী অফিসে একজন এসে (কাজীর সহকারে)বলল, আমার এক পরিচিতের বিয়ে কাবিন করে দিতে। মেয়ে বিদেশ থাকে, ছেলে দেশে। মেয়ে বিধবা হয়েছে ১৫ বছর আগে, আর ছেলের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে ৮ বছর আগে। সহকারী জিগ্যেস করে তালাক হয়েছে?
-না, অনেকদিন আগেই চলে গিয়ে এখন আরেকজনের সংসারে আছে দুই সন্তান নিয়ে। এ নিয়ে সমস্যা হবে না।
-সমস্যা হবে কি হবে না তা আপনি কী জানেন? আগে তালাক দিতে হবে তারপর বিয়ে।
-আপনি ব্যবস্থা করুন।
-তালাকনামার জন্য একহাজার দিতে হবে, কাবিন করবেন কত টাকার?
-আড়াই লাখের মত।
-তাহলে তারজন্য দিতে হবে আড়াইহাজার, তাও শুধু আপনার জন্য।

চিত্র ০২: একজন লোক আসে ম্যারিজ সার্টিফিকেট নেবার জন্য। কাজী সাহেব দেড় হাজার টাকা দাবি করেন ফী বাবদ। লোকটা বলল, এটা দ্বিতীয়বারের মত সার্টিফিকেট নেয়া, কিছু কম হবে না? তারপর ৫০০ টাকায় ম্যারিজ সার্টিফিকেট নিতে পারে লোকটি।

চিত্র ০৩: একজন আসে কাবিননামার নকল তুলতে। সে বলল, রেজিস্টারের বহিতে বর আর কনের নামের বানানে কিছু সংশোধন করতে হবে। কাজী জানালো তাকে তার সহকারীর সাথে চুক্তি করতে। এত নাকি ওদের হাত নেই, জেলা অফিস থেকে সংশোধন করে নিয়ে আসতে হবে। তার জন্য দরকার ফি আর খরচ বাবদ সাত হাজার টাকা। লোকটি তা শুনেই আক্কেল গুড়ুম! এখানেই এত টাকা ? তাহলে এই কাগজগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আর এজেন্সিতে নিয়ে সত্যয়ন করতে কত খরচ হবে??????? অনেক সুপারিশ আর তদবীরের পর ৫ হাজারে চুক্তি হয়।

চিত্র ০৪: এক ছেলে আসে (পার্টি নিয়ে) বিয়ে সম্পাদনের জন্য, কিন্তু তা রেজিস্টারে তোলা যাবে না, শুধু হাতে একটা কাবিননামার কাগজ বা স্ট্যাম্প দিতে হবে। সহকারী এতে ৩০০০ হাজারের চৃক্তি করে।

এটা একটা আমার (এই মুহূর্তে স্থানের নাম বলছি না) পরিচিত কাজী অফিসের একদিনের চিত্র। প্রতিদিন এরচে' অনকবেশি আর আরো নাটকীয় চিত্র দেখা যায়। বিয়ে একটি সুন্দর ও পবিত্র বন্ধনের জন্য সামাজিক ব্যবস্থার নাম। অথচ এই সব কাজী অফিসে নিত্য ঘটছে মিথ্যে বিয়ে অথবা আইন বহির্ভুত কাবিন।

সুন্দর শশ্রু মন্ডিত সুন্নতী লেবাসে এইসব কাজী নামক পাজীরা বসে অন্যের নামে তুই নম্বরীর নিন্দে করে নিজেরা মিথ্যে দাবিতে জনগণের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। আমার এক বন্ধু কাজী ছিল, (অনেকদিন আগে, এখন তার সাথে যোগাযোগ নেই) সে জানালো, কাজীদের বেশিরভাগ কথাই নাকি ভূয়া। আসলে ভলিয়ূম কিনতে ও রেজিস্টারের সামান্য ফি ছাড়া সরকারী কোষাগারে আর কিছুই জমা হয় না। কত টাকা কাবিন হল বা কত টাকা উসুল হল তা জানা কোন দরকার নেই। সব কাবিনের খরচ একই রকম হওয়ার কথা।
প্রতিদিন তারা দুই নম্বরি বিয়ের কাবিন ছাড়াও তালাকনামা আর ডিভোর্সের নামে অনেক টাকা জনগণের কাছ থেকে আদায় করে।
এইসব অবৈধ কাজ আর অতিরিক্ত টাকা আদায়ের পথ বন্ধ করার জন্য শুধু দরকার একটু সরকারের সদিচ্ছা। রেজিস্টারের খাতায় রাফ রেজিস্ট্রশনের পর অনলাইনের মাধ্যমে (দেশের মূল অফিসের মাধ্যমে, যেমন এখন জন্ম নিবন্ধন হচ্ছে) বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রেশন করলে সয়ংক্রিয় ভাবে তাতে রেজি. নম্বর থাকত আর খুব সহজে জনগণ এই সেবা পেতে পারত শুধু থানা/ইউনিয়ন ভিত্তিক রেজিস্টার কেন্দ্রের মাধ্যমে।
একটু ভাববেন কি???
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৫/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast