www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সময়ের সাথে জীবনের ভাবনা ১৩

শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায়, একটানা মির্চা এলিয়েদ এর লা নুইবেঙ্গলী ও মৈত্রেয়ী দেবীর ন হন্যতে পরে শেষ করলাম, আগেও পড়েছি কিন্তু তা মাথার চিন্তা শক্তির উপর দিয়ে চলে গেছে, আমার একটা বই দুবার পড়ার ব্যাপারে চুলকানি ছিল,এখন মনে হচ্ছে একটি বই কয়েকবার পড়া উচিত, বই দুটি পড়ার পর আমার কিছু ভাবনা আমাকে ঘুমুতে দিচ্ছে না, আমারকাছে মনে হচ্ছে ইউরোপিয়ান বা অন্য কোন মহাদেশের নারীদের থেকে এই উপমহাদেশের নারীদের মানসিক অবস্থা একটু জটিল প্রকৃতির, সেটা মনে হয় সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক অনেক প্রথার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠার কারনে, এই মননে জটিল অবস্থা দিনের পর দিন জন্ম নিয়ে এসেছে। এই নারীরা মননে এক ধরনের অনুভূতি নিয়ে বেড়ে উঠলেও বাইরে তার অন্য অনুভূতি প্রকাশ করতে তারা এক ধরনের যোগ্যতা অজর্ন করে ফেলেছে, কিন্তু যখনই নিজের একটু ইচ্ছের প্রকাশ করতে গেছে, নিজের মনের সুপ্ত চাওয়াটাকে প্রাধান্য দিতে গেছে তখনই জটিলতাগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়, আমার কথা হলো যদি প্রথম থেকেই এক ধরনের চাওয়া থাকে সেটাকে কেন প্রথমেই প্রকাশ করলো না এখন কেন প্রকাশ করতে হলো, এখানেই আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার বিকাশই দায়ী, কিন্তু এই যে জটিলতা এর ভুক্তভোগী হয়নারীর অন্য পুরুষ পার্টনার।

সেদিন প্রথম আলোর অধুনাতে ভাল স্বামীর গুনাবলী নিয়ে এক পৃষ্টার ফিচার প্রকাশিত হলো, আমার কাছে লেখাটার সব থেকে দুর্বলতা মনে হলো, একজন স্বামী কখনই একাই ভালো হতে পারেনা যদি তার সঙ্গীর সহযোগীতা না থাকে সেটা, এই ফিচারটা পড়ার পর আমার বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই লেখার সাথে তোমার কোন দ্বিমত আছে কিনা, তিনি সে ব্যাপারে না বলে বললেন এই লেখাটার চরমতম দুর্বলতা হলো- যারা গৃহীনি তাদের স্বামী কেমন হবে সেটা নিয়ে বলা হয়েছে কিন্তু একজন চাকরীজীবি মহিলার স্বামী কেমন হবে তা নিয়ে কোন কথা নেই, বিষয়টা আমারো মনে ধরলো, আমিও দেখেছি বর্তমানে শুধু গৃহীনি নিয়ে পরিবার কমই গড়ে উঠছে, সবাই চাকরীজীবিদের বিয়ে করছে, এই পরিবারের স্বামী কেমন হবে আবার স্ত্রীর কি দায়িত্ব সে বিষয়ে ভাবনার সময় এসেছে, এটা আমায় আরো চিন্তিত করলো যখন গত সোমবারের প্রথম আলোর নকশার পাঠকের উকিল এ একজনের চিঠি পড়ে- তিনি বলেছেন- তার স্ত্রী তার আয়ের টাকা তাদের পরিবারে খরচ করছেন না, অনেক কথার পরে তিনি বললেন দাম্পত্য জীবনে খুবই অসহায় বোধ করছেন তিনি কি করবেন। এখানেই আমাকে বিচলিত করে তোললো- যে সচ্ছলতার জন্য চাকুরীজীবি মহিলাদের বিয়ে করলো সেটা যদি সুখের না হয়ে সংসার ভাঙ্গার উপাদান হয়ে উঠে তার থেকে দুখজনক আর কি হতে পারে। এখানেই নারীর বেড়ে উঠার প্রক্রিয়াতাদের জটিল করে তুলছে। যা আমি প্রথমেই বলেছি।

আমার কাছে মনে হলো মির্চা এলিয়েদ এর বইটা শরীর ও মনস্বর্বস্ব আর মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা মুন্সীয়ানার সাথে মনর্স্ববস্ব, আমার বিশ্বাস মৈত্রেয়ী দেবী চল্লিশ বছর পর ন হন্যতে না লিখে যদি ত্রিশ সালের কিছু দিন পর লিখতেন তাহলে এতো সতর্ক হয়ে তিনি লিখতে পারতেন না, পুরো বইটা তিনি অনেকটা জবাবদিহিতামুলক লিখেছেন, বইয়ের প্রথম অংশমনে হয় মির্চার বই না পড়ে লিখেছেন আর পরের অংশটা লিখেছেন মির্চার বইটা পড়ে, আর এখানেই তিনি নিজেকে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, আমারতো মনে হয় কখনও তিনি মির্চার ভালোবাসার প্রতিদান দেবার জন্য মনের আকুতিকে বাড়িয়ে লিখেছেন, নিজের অপরাধবোধকে হালকা করার জন্য মনের দ্বিধাবিভক্ত অবস্থাকে প্রকাশ করেছেন স্বতস্ফৃর্তভাবে। আর তার অপরাধবোধটা মনে হয় বিয়ে করে চল্লিশ বছর সংসার করাটাকে দেখেছেন, এই জন্যই বইয়ের শেষে দেখলাম বর্তমান স্বামীর থেকে মির্চার জন্য তার আবেগকে বারবার স্বামীর আবেগ থেকে বেশি পরিমানে মুল্যায়ন করেছেন। মির্চার সাথে মৈত্রেয়ী দেবীর দেখা হবার পর দুজনেই অনেক বছর বেচে ছিলেন, তাদের দুজনের মধ্যে দেখা হয় ১৯৭৩ সালে আর মৈত্রেয়ী দেবী মারা যান ১৯৮৯ সালে মির্চা মারা যায় ১৯৮৫। এই বিশাল সময়ে তাদের কি আবার দেখা হয়েছিলো, আর ন হন্যতে প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে, এ রকম একটা বই প্রকাশিত হবার পর তাদের সংসার কেমন ছিলো খুব জানতে ইচ্ছে করে, যে মানসিক জটিলতার কথা প্রকাশ করেছিলেন পরবর্তীতে সেটা কেমন ছিলো, তার স্বামীকে কিভাবে গ্রহনকরে ছিলেন, তিনি কিভাবে এই মননের দ্বিধাদ্বন্ধ থেকে কি মুক্তি পেয়েছিলেন,

মাঝে মাঝে মনে হয় নারী তার এই মানসিক জটিলতা থেকে মুক্তি চায়,এর জন্য কখনও সে স্বামী, সংসার করে মন দিয়ে, কখনও নিজেকে বা নিজের ইচ্ছেটাকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মুক্তি চায়, কখনও সামাজিক ধর্মীয় অনুশাসনে নিজেরমুক্তি খূজে, যখন কোনটাতে নিজেকে স্থির করতে পারে না তখন জটিলতায় আটকে পড়ে, নিজেও ভালো থাকে না পার্টনারকেও ভালো রাখে না, আমার অনুধাবন ভুলও হতে পারে, কারন স্বামীস্ত্রী বা নারী পুরুষের সম্পর্কের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার খুব কম ।

ন হন্যতে বইতে মৈত্রেয়ী দেবী ভালোবাসার ক্ষেত্রে মনের প্রাধান্যটাকে যতটা মুন্সিয়ানার সাথে তুলে ধরতে চেয়েছেন তার সাথে আমার দ্বিমত রয়েছে। আমিতো মনে করি ভালোবাসার গভীরতা ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে শরীর বড় একটা উপাদান, আর এই শরীর পারস্পারিক স্পর্শও হতে পারে আবার যৌনাংঙ্গের ক্রিড়ারত অবস্থাও হতে পারে। মনের সাথে শরীরের যোগ যদি না থাকে সে ভালোবাসার স্থায়িত্ব হবার কথা না, কারন শরীরের মধ্যে মন, মনের মধ্যে শরীর না, আমি অনেক নারীকে দেখেছি মন দিয়েছে একজনকে, শরীর দিয়েছে আরেকজনকে,সামাজিক প্রথার ভয়ে হয়তো উপর থেকে তাদের সংসার টিকে আছে মনে হলেও তাতে ভালোবাসা আছে বলে মনে হয় না। অনেক দম্পতি কে দেখেছি চেটেপুটে শরীর খেয়েই দিব্যি সংসার করে যাচ্ছে, তখন একটু বিচলিত হয়ে পড়ি শরীর দিয়ে সংসার টিকানো যায়? পিছনের সমাজে এরকম হলেও বর্তমান সময়ে হবার কথা নয়, কারন বর্তমানে নারী সিদ্বান্ত নেবার ক্ষেত্রে অনেকটা স্বাধীন, সে তার অধিকারের ব্যাপরেও সচেতন। এটা ভালো দিক কিন্তু আমার ভয়টা হলো নারী এখন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার করে যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেবার অভিজ্ঞতা সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এতে কোনটা স্থায়িত্বের দিক থেকে সঠিক, কোনটা তার অবাধ স্বাধীনতা গুলিয়ে ফেলছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে একপেশে আচরন করে ফেলছে, হয়তো অনেকপরে অভিজ্ঞতা তাদের পুর্নাঙ্গতা দিবে, কিন্তু ততদিনে তার সাথে থাকা পার্টনারের কি হবে সেটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। আর লিখতে ভালো লাগছে না, মাথাটা জটিলতায় ভরে উঠছে জীবনটাকেও শংকিত করে তুলছে, আপাতত আলোচনা বন্ধ করে জটিলতা থেকে মুক্তি পাই।

November 17, 2013 at 2:38pm
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৮২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/১২/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast