www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কনসেপ্ট

কথায় বলে জামানা বদল গয়া। কতটা সত্যি কথা চলুন একটু যাচাই করে দেখি।

প্রথমে টেনে আনি সংসার। আগেকার দিনে স্বামী রোজগার করতো আর স্ত্রী রান্নাবান্না করতো। এখন দুজনেই রোজগার করে, তাই স্বামীকেও রান্নায় হাত লাগাতে হয়। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্বামীর রোজগার স্ত্রীর থেকে কম বা নেই। বিয়ের সময় হয়তো ভালো চাকরি করতো স্বামী, বিয়ের পরে সেই চাকরিটা কোনো কারণে চলে গেছে। কেউ কোনো রকমে একটা চাকরি জুটিয়ে নেয়, কেউবা কোনো চাকরিই পায় না। বিয়ের পরে স্ত্রীর ছেড়ে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না, যদি না স্বামী চরিত্রহীন অথবা অসৎ হয়, অতএব স্ত্রী সদা স্বামীর পাশে দাঁড়ায়। সে তখন রাত দিনের লোক রেখে দেয় তার স্বামীকে সাহায্য করার জন্য, যেমন স্বামীরা স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য কাজের মাসি রাখে। ঘরে বাইরে দু দিকে করা একজন প্রায় একা রোজগেরের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। যে মেয়ে চাকরি করে, সে সংসার করে না। কথাটা বহু ক্ষেত্রে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সংসার ও চাকরির মধ্যে ব্যালান্স (ভারসাম্য) করে চলতেই মেয়েরা বেশি ভালোবাসে। এখানে বলে রাখা দরকার যে কোনো মেয়ে বেকার ছেলে বিয়ে করে না, সে রোজগেরে হোক বা বেরোজগেরে। কিন্তু প্রায় সব রোজগেরে ছেলেই বিয়ের আগে মেয়েদের চাকরি ছাড়াতে চায়। গৃহবধূরা চিরকালই ছিল, আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এবারে বহু ক্ষেত্রে গৃহস্বামীও দেখা যাবে।

আগেকার দিনে বিয়েটাই ছিল মেয়েদের জীবনের শেষ পরিণতি। কেবল স্বামীর পরিচয়ে মেয়েরা বাঁচতো। এখন তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজের পরিচয়ে বাঁচতে শিখেছে। তারা শত বার যাচাই করে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে। কেউ কেউ আবার বিয়েই করে না। আগেকার দিনে একবার বিয়ে হয়ে গেলে হাজার ঝড় জলেও সেই বিয়ে টিকে যেত। 'ডিভোর্স' শব্দের অর্থ কেউ জানতোই না। আর এখন কথায় কথায় 'ডিভোর্স'। এখন কোনো একান্নবর্তী পরিবার নেই, সবাই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে মানুষ - মা, বাবা ও সন্তান (এক বা দুই) - তাই এখনকার মানুষের সহিষ্ণুতা কম। খোলা বাড়ি আর দেখা যায় না, সব ঘুপসি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটে থাকা মানুষের মনও খোলামেলা হয় না। কোনো কোর্ট চায় না যে 'ডিভোর্স' হোক। কারণ এতে যার সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়, সে হল সন্তান। সেই সন্তানটা আর সংসার করতে চাইবেই না। সংসার রাখার ইচ্ছে তার মন থেকে মুছে যাবে। আমাদের পরের প্রজন্ম আর বিয়েই করবে না। আমেরিকার যেমন সমাজ, তেমন হয়ে যাবে ভারতের সমাজ। কেবল মায়ের পরিচয়ে সন্তান বাঁচবে, বাবাকে আর চিনবে না। কথায় বলে দাদু ঠাকুমার স্নেহ পেলে নাতি নাতনিরা আত্মকেন্দ্রিক হয় না। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর মা বাবার সাথে সম্পর্ক রাখাটা এখন ব্যাক ডেটেড। এটা আমেরিকার নীতি- ভরত আমদানি করেছে। একটা সময়ের পরে মা বাবাকে ছেড়ে দিয়ে বন্ধু বান্ধব নিয়ে থাকতে হয়, এতে জীবনের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে। মা বাবার ছত্রছায়ায় থাকলে বড় হওয়া যায় না। আমাদের পরের প্রজন্ম আর দাদু ঠাকুমার মুখই দেখতে পাবে না। সেও তার মা বাবাকে একটা সময়ের পরে ছেড়ে দেবে। এই সব সন্তানদের পূর্ণ বিকাশ কখনোই ঘটবে না এবং তারা মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়বে। আমেরিকাতে বহু অমানুষ স্কুল পড়ুয়াদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে, সম্ভবত এই মানসিক অবসাদের কারণে। আত্মকেন্দ্রিক সমাজে সন্তান সন্ততিরা সব থেকে বেশি যন্ত্রণা পাবে। সংসার যদি হারিয়ে যায়, হারিয়ে যাবে সমাজও।

ভারত আমেরিকার নকল করতে করতে একটা মিনি আমেরিকা তৈরি হয়ে যাবে। যে আমেরিকাতে কোনো নিজস্বতা নেই, আসল আমেরিকা নিজস্বতা না হারালেও। মনে রাখবেন, নিজস্বতা হারানো মানে মৃত্যু। আসুন আমরা 'ইগো' শব্দটা বিসর্জন দিয়ে, 'লেট ইট গো' কে আপন করি। স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক হোক, নিজেদের ভালোর জন্য নয়, কেবল মাত্র সন্তানটার মঙ্গলের জন্য। সংসার ধর্ম দুজনে ভাগ করে নিক, ভাগ করে নিক সুখ দুঃখ হাসি কান্না। আমেরিকার পথে ভারত যেন না এগোয়। ভারত এগোক ভারতের পথে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ২৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১০/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast