www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ছোট গল্প ”শিক্ষা”

ছোট গল্প
“শিক্ষা”

আরিয়ান ও শুভ দুজন বন্ধু। বেশিদিন হয়নি ওদের বন্ধুত্বের। শুভ পড়াশুনার পাশাপাশি একটা ব্যাবসা করছে। কলেজ মার্কেট এর ২য় তলায় তার একটা কসমেটিকস্ এর দোকান আছে। সে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। শুভর মাঝে কোন জটিলতা নেই। খুবই সরল মনের একজন ছেলে। যে কাউকেই সহজে আপন করে নিতে পারে।

আরিয়ান এর বড় ভাই এর দোকান ছিল শুভর দোকানের পাশেই। দোকানে আসা যাওয়ার মধ্যে হ্যালো -হাই, মাঝে মাঝে চা খেতে খেতে একটু আধটু কথা বলা থেকেই শুরু হয় ওদের বন্ধুত্ব।
আরিয়ান দেখতে শুনতে খুবই সুদর্শন এবং সুন্দর করে কথা বলতে পারা একজন ছেলে। শুভ ধুমপান না করলেও আরিয়ান নিয়মিত তা করে।

আরিয়ানের কিছু ব্যাপার ছিল, যা শুভ পছন্দ করতোনা। শুভ তা আরিয়ানকে বলেছিলোও। শুনে আরিয়ান হাসি দিয়ে বলে, “আরে গাধা! এখনইতো বয়স একটু মজা করার। কিছুদিন পর যখন কাজকর্মে লেগে যাবো তখন কি আর এসব করার সময় পাবো?”
শুভ প্রতিউত্তরে বলেছিলো, “শুন আরিয়ান, তুমি যা মজা হিসেবে নিচ্ছো, তাতে তুমি মজা পাচ্ছো ঠিকই কিন্তু তাতে তো অন্যের সর্বনাশ হচ্ছে!”
”ভাই একটু সময় দে, ভালো হয়ে যাবো। আপাতত যা করছি, তা করতে দে। তোর যদি কখনো ইচ্ছে জাগে মজা নেয়ার আমাকে শুধু ইশারা দিবি, সব ব্যবস্থা আমি করবো, তোর কোনো চিন্তা করতে হবেনা। শুভ নিজেকে একটু জাগিয়ে তোল! হা হা হা।”
আরিয়ানের কথাগুলো শুনে শুভর কান, চোখ, মুখ সব লাল হয়ে গেল। তবে কিছু বলছিলোনা দেখে আরিয়ান হাসি দিয়ে বললো, “বন্ধু মজা করলাম। মাইন্ড করিসনা। আমি জানি তুই এসবে রাজি হবিনা। তুই ভালো ভালোই থাক। আমি খারাপ আছি, দেখিস একদিন ভালো হয়ে যাবো।”

আরিয়ান শুভর সাথে মেশার আগে মাঝে মাঝে শুক্রবারে জুমআর নামাজ পড়ত। শুভর সাথে মেশার পর থেকে ওদের আড্ডা দেয়ার সময় নামাজের সময় হলে শুভ আরিয়ানকে জোর করে নিয়ে যায় মসজিদে। বেশির ভাগ সময়ই আরিয়ান অজু হাত দিয়ে বলে যে, “দোস্ত প্যান্ট পবিত্র নাই। তুই যা, আমি পরে পড়ে নিবো।”

আরিয়ান প্রায় প্রতি সপ্তাহেই চট্টগ্রাম নয়তো কক্সবাজর যায়। দুদিন পর এসে শুভর সাথে সব আকামের কথা বলে এবং ছবি ও ভিডিও দেখাতে চায়। শুভ দেখতে চায়না এবং শুনতেও চায়না। তবুও আরিয়ান সব আকামের কথা বলে যায়। আরিয়ান গত তিন মাসে অন্তত ৭টা মেয়েকে নিয়ে হোটেলে গেছে এবং এক সাথে রাত্রি যাপন করেছে। যেসব মেয়ে ওর সাথে বিছানায় যায় সবগুলো নিজ ইচ্ছাতেই যায় এবং সবগুলো মেয়েই ভালো ঘরের। মেয়েদের সাথে আরিয়ান প্রতারণা করে ওদের উপভোগ করে। রাত্রি যাপনের পরই দু’তিন দিনের মাঝে ইচ্ছে করেই খারাপ ব্যাবহারের মাধ্যমে রিলেশন ব্রেকআপ করে ফেলে। আরিয়ান মাঝে মাঝে মদ্যপানও করে।

দুই সপ্তাহ পর আরিয়ান শুভর দোকানে এল। ওকে আগের মত প্রাণচঞ্চল দেখাচ্ছেনা। কেমন যেনো বিমর্ষ দেখাচ্ছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।
: এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? এ অবস্থা কেনো তোমার? ধরা-টরা খেয়েছো নাকি?
আরিয়ান চুপ।
: আরে ভাই কথা বলো না কেনো?
আরিয়ান কিছু না বলে শুভর দিকে তাকালো। শুভ দেখতে ফেলো আরিয়ানের চোখের কোনায় জল জমাট বেঁধে আছে। শুভ বুঝতে পারছে যে আরিয়ানের কোন সমস্যা হয়েছে। তাই আর কোন প্রশ্ন না করে চা দোকানের ছেলেটাকে ডেকে বললো, “মফিজ দু’কাপ চা দিয়ে যাতো।”
ভাঙ্গা গলায় এবার আরিয়ান বললো, “কিছু সময়ের জন্য বেরুতে পারবি?”
: কোথায় যাবি?
: তোর সাথে কিছু কথা শেয়ার করা খুব দরকার। তুই ছাড়া আমি আর কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিনা।
: বুঝলাম। কিন্তু , যাবে কোথায়?
: ৫ম তলায় রফিকের রেষ্টুরেন্ট এ চল। ওখানে নিরিবিলি আছে।
: ওকে চল।

রফিকের রেস্টুরেন্ট এ সময় (দুপুরের পর) পুরোই কাস্টমার শূণ্য থাকে। শুভ আর আরিয়ান মুখোমুখি বসল।
: এবার বলো কি সমস্যা?
: শুভ.................
: থেমে গেলে কেনো?
: অল্প দিনেই আমি অনেক বেশি পাপ করে ফেলেছিলাম। মেয়েগুলোর সরলতার সুযোগ নিয়ে আমি ওদের কুমারিত্ব নষ্ট করেছি।
: তাতো জানি। তোমাকেতো কত করে বুঝিয়েছিলাম এসব পাপ কাজ ছেড়ে দিতে! এখন কি হয়েছে তা বলো।
: কি করে বলবো বুঝতে পারছিনা।
: এখানে অন্য কেউ নেই। বলে ফেলো। যত দ্রুত বলতে পারবে ততই হালকা হবে তোমার কষ্টটা।
: তুইতো জানতি জয়ন্ত নামে আমার এক বন্ধু ছিলো কক্সবাজারের।
: হুম।
: গত ২০ তারিখে তোর সাথে এশার নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর জয়ন্ত আমাকে ফোন করেছিলো। ও বললো, “বন্ধু, তোকেতো অনেক সাহায্য করেছি মেয়ে নিয়ে হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য। এখন তুই আমার একটা উপকার করবি। আর তা হলো, চট্টগ্রামে আমাকে একটা হোটেল ম্যানেজ করে দিবি, মানে তুই সিকিউরিটি দিবি। কারণ তোরতো চট্টগ্রামে ভালো জানা শুনা আছে। শুধু এক রাতের জন্য।” আমি ওকে বললাম, “চট্টগ্রামেই কেনো? কক্সবাজারেইতো তুই ম্যানেজ করতে পারিস, ওখানে তোর একটা প্রভাব আছে।” জয়ন্ত বললো, “তাতো আছেই। তবে নতুন গার্ল ফ্রেন্ড চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসতে রাজি হয়েছে। তুই জানিস ব্যাটা কত কস্টে পটাইছি? প্লিজ দোস্ত তুই আমার হেল্পটুকু কর।”
: তারপর?
: বন্ধু কথা দে, এখন যা বলবো তুই কখনো তা কাউকে শেয়ার করবিনা।
: তুমি নিশ্চিন্তে বলো। আমি কাউকে বলবোনা।
: এরপর আমি ২৫ তারিখ চট্টগ্রাম গিয়ে ওর জন্য সর্বোচ্চ সিকিউরিটির একটা রুম বুকিং করলাম। আমি ওকে বললাম, “বন্ধু মালটাতো দেখালিনা।” বলার সাথে সাথেই ও মোবাইল অন করে মেসেঞ্জার ইনবক্স থেকে একটা ছবি বের করে আমার সামনে ধরলো.........
এতটুকু বলে আরিয়ান থেমে গেছে। ওর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। চেহারাটা কেমন অসহায়ের মত হয়ে গেছে। চোখের কোনায় জমে থাকা জল গুলো ফোটা ফোটা হয়ে ঝরে পড়ছে।
: এই আরিয়ান, কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেনো? কথাটা শেষ কর।
আরিয়ান শুভকে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “বন্ধু, ওটা আমাদের নাজমার ছবি ছিলো।”
শুভ থতমত খেয়ে গেলো। বুঝতে পারছেনা যে, কি বলা যায় এই মুহূর্তে। তাই আরিয়ানের পিঠে হাত রেখে বললো, “এটা তোমার পাপের একটা ফল এবং তোমার জন্য কঠিন একটা শিক্ষা। এখন এত ভেঙ্গে পড়োনা, শান্ত হও। এরপর তুমি কি করেছো তা বলো?”
আরিয়ান স্বাভাবিক হতে অনেক্ষণ সময় লেগেছে।
আমি ছবিটা দেখামাত্রই না চেনার ভান করে বললাম, ”দেখা হয়েছে, রেখে দে। তোর সাথে সম্পর্ক কতদিনের?” জয়ন্ত বললো, “পরিচয় রং নাম্বারে কল করার মাধ্যমে। ৩ মাস হলো। ২৯ তারিখেই প্রথম দেখা হবে।” আমি ওর সাথে কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসেই নাজমাকে বললাম, ব্যাগ গুছিয়ে রাখ। কাল ঢাকা যাবো তোকে নিয়ে। নানুর অবস্থা ভালোনা। তোকে দেখতে চেয়েছে।” আমি নাজমার উত্তরের আশা না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।
শুভ কথা গুলো শুনে বললো, “আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ বোনের ইজ্জত রক্ষা করেছে। শুন আরিয়ান, অল্পের জন্য তোমার বোন ও তোমাদের ফ্যামিলির ইজ্জত রক্ষা হয়েছে। শুকরিয়া আদায় করো এবং তাওবা কর স্বীয় পাপের জন্য। আর যত দ্রুত পারো বোনের বিয়ের ব্যাবস্থা করো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৮/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast