www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভয়

গল্পে পড়েছিলাম ভূত ও প্রেতাত্মারর কাহিনী। এখন সে প্রেতাত্মা আমাকে নিয়ত ধাওয়া করে চলছে। আমার জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে।

ঘটনার শুরু যেখান থেকে...

চাঁদনি রাত, বর্ষাকাল, কালো মেঘের উড়াউড়ির মাঝেও ঝাপসা আলোয় পথ-ঘাট পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
আমি থানা সদর থেকে টেম্পুতে করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাত প্রায় ১২ টা বেজে ২২মিনিট। পুরো গ্রাম একদম নিশ্চুপ। কোথায় কোনো সাড়া শব্দ নেই।
সদরে আমার দোকান আছে। দোকান বন্ধ করতে প্রতি দিনের তুলনায় আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিয়মিত রাত ১০টার দিকেই বাড়ি ফিরি।
সিরাজ নগর আমার বাড়ি। সিরাজ নগর যাবার এটাই শেষ টেম্পু। কোনো যাত্রি নেই বলে ড্রাইভার যেতে রাজি হচ্ছিলনা। ভাড়া বাড়িয়ে দেবো বলে ড্রাইভারকে রাজি করালাম। ড্রাইভার আর আমি ছাড়া টেম্পুতে আর কেউ নেই। হালকা ঝির-ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। টেম্পু যখন বাজার ছেড়ে এনায়েতপুর রোডে ঢুকতে যাবে তখন একজন বুড়ো মহিলা হাত নেড়ে টেম্পু থামাতে ইশারা করল। ড্রাইভার স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি থামালো। কিছু না বলেই বুড়ো মহিলাটি টেম্পুতে চড়ে বসল।
ড্রাইভার জানতে চাইলো "কোথায় যাবেন?"
মহিলা বলল "ফোকলার ঘাট"।
কথাটা শুনে ড্রাইভার চোখে মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল "গাড়িতো ও দিকে যাবেনা। সিরাজ নগর পর্যন্ত যাবে।"
বুড়ি আবার বলল "দেখ বাপু, বুড়ো মানুষ, নিয়ে চল, দোয়া করব।"
এবার আমি বুড়িকে বললাম "আপনি বুড়ো মানুষ, এতো রাতে বের না হয়ে সকালেওতো যেতে পারতেন।"
বুড়ি আমার কথা শুনে বলে "বাপু এতো পাকনামো কোরোনা। মঙ্গল চাওতো আমাকে নিয়ে যেতে বলো।" বুড়ির কথা শেষ না হতেই ড্রাইভার বুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলল "আমি আপনাকে চিনিনা। এত রাতে শুধু আপনাকে নিয়ে আমি ওদিকে যেতে পারবোনা। সিরাজ নগর পেরিয়ে তেতুল তলা আমার বাড়ি, আপনাকে বরং ওখানে নামিয়ে দিবো, ওখান থকে হেঁটে চলে যাবেন।"
এবার বুড়িকে আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে বলি "এতো রাতেতো গাড়ি চলেনা, আপনার যেহেতু ফোকলার ঘাট যাওয়া বেশি প্রয়োজন, আপনাকেতো হেটেই যেতে হত। আপনার ভাগ্য ভালো আমার দোকান দেরিতে বন্ধ করাতে আপনি সিরাজ নগর পর্যন্ত গাড়িতে যেতে পারছেন।"

তর্ক করতে করতে টেম্পু যখন শ্মশান ঘাট পর্যন্ত এলো, আকস্মিক ভাবে টেম্পুর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো(গাড়ি থেমে গেলো)। আর সাথে সাথে মহিলাটি বিকট শব্দে ভয়ংকর হাঁসতে শুরু করল। পৈশাচিক হাসি শুনে আমি আর ড্রাইভার দুজনই খুব ভয় পেয়ে গেলাম।
স্টার্ট বন্ধ হওয়াতে ড্রাইভারের মাথা গরম হয়ে গেলো। কারণ সহজে এ টেম্পুর স্টার্ট ধরেনা (চালু হয়না)।
ভয় পেলেও ড্রাইভার খুব জোরে ধমক দিয়ে বুড়িকে বলল "চুপ করুন। আপনার কারণেই যতসব সমস্যা হচ্ছে।"
এ কথা শুনে বুড়ি চেহারা ভয়ংকর করে কুৎসিত ভাবে হাসতে হাসতে পৈশাচিক স্বরে বলল "সমস্যার কি দেখছিস, এই দেখ তোর গাড়িটা ফেলে দিচ্ছি"। কথাটা বলে আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই বুড়ি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে টেম্পু থেকে নেমে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়িটা জমিতে ফেলে দিল। গাড়িতে আমি আর ড্রাইভার ছিলাম। দুই গড়ানি দিয়ে গাড়িটা জমিতে পড়ে গেলো। আর উল্লাসে পৃথিবী কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে বুড়ি গায়েব হয়ে গেলো। গাড়ি গড়ানি দিয়ে পড়ার সময় আমি ছিটকে বাহিরে পড়ে গেলাম। ভাগ্যিস কিছু হয়নি। ভয়ে হৃদপিন্ড খুব লাপাচ্ছিল তখন। পড়া থেকে কোনো রকম উঠে যে দৌড় দিলাম, এক দৌড়ে ঘরের দরজার সামনে এসে হাঁপাতে লাগলাম। হাঁপানির শব্দ শুনে আমার স্ত্রী দরজা খুলে আমায় ধরে বলল "কি হইছে? তুমি অমন করতেছো কেনো?"
আমি ওকে কিছু বলতে পারিনি। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।

ঘুম ভাংলো সকাল ১০টায়। চোখ মেলে দেখি সমীরন মানে আমার স্ত্রী আমার মাথার পাশে বসে আছে। ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম রাতে ও এক ফোটাও ঘুমায়নি। সারা রাত আমার পাশেই বসে ছিল।
আমি জেগেছি দেখে ও গভীর মমতা ভরা স্বরে জানতে চাইলো "এখন কেমন লাগছে?" আমি শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললাম "কেমন লাগছে মানে, খুব ভালো লাগছে। তবে তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে, তুমি ঘুমাওনি কেনো?"
আমার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে ও জানতে চাইলো "কাল রাতে তোমার কি হয়েছিল?"
আমি ওকে সব খুলে বললাম। শুনে ও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল "খুব বেশি ভয় পেয়েছো? এখন থেকে রাত ৮টার সাথে সাথে বাড়ি ফিরবে। বেশি দেরি হয়ে গেলে ওখানে থেকে যেও।"
ওর কথা শুনে আমি বলি "আরে না পাগলী তেমন ভয় পাইনি। তোমার মত সুন্দরী বউকে ঘরে একা রেখে আমি দোকানে থাকতে পারি!"

২৩ দিন পর...

আমি সমীরণকে নিয়ে ওর বড় আপুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। বড় আপুর বাড়ি হল 'ফোকলার ঘাট'। ওনাদের ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই আচমকা আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠল। ভয়ে আমার হৃদপিন্ড বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। গলা শুকিয়ে গেলো। যত গরমই পড়ুক আমি কখনো ঘামাইনা, কিন্তু এখন ভয়ের ঘামে ভিজে আমার পুরো শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেল। আমার এ অবস্থা দেকে সমীরণ জানতে চাইলো আমার কি হয়েছে। অধিক ভয় ও অস্থিরতার মাঝেও নিজেকে খুব কষ্টে স্বাভাবিক রেখে বললাম "কই নাতো, কিছু হয়নি"।
সমীরণ : আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা কোরোনা।
আমি: আরে কিছু হয়নি। এমনিতেই। গরম লাগছেতো তাই।
এরপর সমীরণ ভিতরের দিকে চলে গেলো। আমি সোফায় বসলাম। আমাকে সালাম করার জন্য বড় আপুর ছোট ছেলে 'তান্ডব' দৌড়ে এল। ওর নাম তান্ডব হলেও ও খুবই শান্ত। ওকে আমার পাশে বসালাম। কথা বলছি ওর সাথে। কিন্তু দেয়ালে ঝুলানো ওই বড় ছবিটার দিকে চোখ পড়লেই কেমন যেন ভয়ংকর অনুভূতি হচ্ছিল।মনে হচ্ছে বুড়িটা ছবির ফ্রেম থেকে বেরিয়ে এসে আমায় গিলে খেয়ে ফেলবে।
আমি তান্ডবের কাছে জানতে চাইলাম-
: তান্ডব এই ছবিটা নিশ্চয় তোমার দাদুর?
: হুম। ঠিক ধরেছেন আংকেল।
: আচ্ছা উনি কি বাড়িতে আছেন?
: কি বলেন আংকেল?
: কেন কি হয়েছে?
: দাদুতো আমার জন্মের অনেক আগেই শ্মশান ঘাটের পাশের রাস্তায় গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছে।
ওর কথা শুনে আমার পেট মোচড় দিয়ে উঠল। এটা কি করে সম্ভব! ছবির বুড়িটিইতো ২৩ দিন আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পিশাচ মহিলা ছিল। ভয়ে আমি ঝাঁকুনি খেতে লাগলাম। এরপর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত আমি কিছুই বলতে পারবোনা। আমি চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম।
সমীরনের কাছে জানতে চাইলাম "আমার কি হয়েছিল? আমি হাসপাতালে কেনো?"
সমীরণ সংক্ষেপে বলল "আপুর বাড়িতে তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে। তান্ডবের চিৎকার শুনে আমি আর আপু দৌড়ে এসে দেখতে পেলাম তুমি সোফায় পড়ে আছো। তোমার মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছিল। এরপর তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।"
: ডাক্তার কি বলল?
: ডাক্তার কোন সমস্যা নির্ণয় করতে পারেনি। ঘুমের ইঞ্জেকশন আর স্যালাইন দিয়ে বলল "রুগির পাশে বসে কথা বলবেননা। জ্ঞান ফিরলে আমাকে ডাকবেন।"
কথা গুলো বলেই সমীরণ কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার ডাকতে চলে গেল।
সমীরন আমায় খুব ভালোবাসে।

গল্পে পড়েছিলাম ভূত ও প্রেতাত্মারর কাহিনী। এখন সে প্রেতাত্মা আমাকে নিয়ত ধাওয়া করে চলছে। আমার জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে। আগে জানতাম কারো সাথে কারো শত্রুতা থাকলে জীবত অবস্তায় প্রতিশোধ নিতে না পারলে, মৃত্যুর পর তার আত্মা সে প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু আমার সাথেতো ওই বুড়ির কোনো শত্রুতা ছিলনা। আমিতো বুড়িকে চিনতামইনা।

আমাকে ভুতে ধরেছে শুনে আমার শ্বাশুড়ি এক সাধক বাবাকে সাথে করে খুব সকালে আমার বাড়িতে উপস্থিত হল। বাবার নাকি অনেক পাওয়ার। বাবা আমাকে দেখা মাত্রই ভ্রু কুঁচকে ফেললো, মনে হল উনি সাক্ষাৎ ইবলিশ কে দেখছেন। এরপর উনি আমার হাত, চোখ আর নোখ দেখে প্রথমে বিড়বিড় করে কি যেন বলল, এরপর আওয়াজ করে বলল "না না সম্ভব নয়। একদম শেষ সময়ে নিয়ে এসেছেন আমাকে।" এ কথা বলে বিভিন্ন কবিরাজ আর হুজুরে দেয়া আমার গলা, হাত ও কোমরের সব তাবিজ খুলে ফেললো।
বিড়বিড় করে আবারো কি যেন পড়ে আমার পুরো শরীরে বেশ কয়েকবার ফুঁ দিলেন বাবা।
যাওয়ার সময় কন্ঠস্বর নামিয়ে একপ্রকার আমার থেকে গোপন করে আমার শ্বাশুড়িকে কি যেন বলে গেল।
সাধক বাবা যাবার পর বাড়িতে কান্নার রোল পড়ল। আত্মীয় স্বজন সব আসতে শুরু করল। মনে হল আমি মরে গেলাম বুঝি।
সবার আগ্রহ, কৌতুহল আর কান্না জড়িত বিলাপ শুনে বুঝলাম সাধক বাবা গোপনে আমার মরে যাওয়ার কথা বলে গেছে। আজ রাতেই আমি শেষ। এ সুন্দর পৃথিবীরর আলো ছায়া আর সমীরনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এখানেই শেষ। চল্লিশ দিন পর আমার সুন্দরী বউয়ের বিয়ে হয়ে যাবে অন্য কোন পুরুষের সাথে।
আমার কোন সন্তান নেই। মা বাবা নেই। নেই কোন ভাই বোন। সমীরণ ই আমার সব। কিছুক্ষন পর সমীরণ ও আমার থাকবেনা। আমি একা একা চলে যাবো না ফেরার দেশে।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

যখন জ্ঞান ফিরল....

অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পারছিলামনা। বুঝতে পারলাম আমার পুরো শরীর কিছু দিয়ে ডাকা। হাত দিয়ে মাথার উপর থেকে কাপড়টা সরালাম এবং আমাকে আবিষ্কার করলাম কোনার অন্ধকার রুমটায় খাটের নিচে উত্তর মুখি করে সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্তায়। আমার চারপাশে আগরবাতি জ্বলছে। আগরবাতির গন্ধটা কেমন যেন ভয়ংকর মনে হল। আমার পাশে কেউ নেই। সমীরণও না। দূর থেকে অনেক গুলো মহিলা স্বরের বিলাপ জড়িত কান্নার আওয়াজ কানে আসতে লাগলো।
এসব দেখে আমি আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

এরপর যখন জ্ঞান ফিরল...

দেখতে পেলাম লাশ গোসল করানোর সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত। গরম পানি, বরই পাতা, গোলাপ জল, সাবান সব রেডি। পানি থেকে ধোয়া উঠছে। আসপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছিলামনা। আমি লাশ ধোয়ার ঘরে। সবাই বোধহয় পানি হালকা ঠান্ডা হওয়ার জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছে। লাশের পাশে কেউ থাকতে চায়না।
মুয়াজ্জিন সাহেব যখন লাশ (আমাকে) গোসল করানোর জন্য ভিতরে ঢুকলো ঠিক তখনই আমি উঠে বসলাম।
লাশ উঠে বসে গেছে দেখে মুয়াজ্জিন 'ওমাগো' বলেই ভয়ে দিল দৌড়। মুয়াজ্জিনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সবাই ভিতরে এল। আমাকে জীবিত দেখে সবাই 'লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন' পড়তে লাগলো। অনেকে ভয়ে পালিয়েছে।যারা ছিল তাদের ভীড়ে আমি সমীরণকে খুজছিলাম। কিন্তু ওকে দেখছিলামনা।
আমার শালা রুপম। ওকে জিজ্ঞেস করলাম "তোমার আপু কোথায়?"
: হাসপাতালে।
: কি হয়েছে ওর?
: আপনার মৃত্যুর কথা শুনে আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কোনো ভাবেই জ্ঞান ফিরছিলোনা দেখে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
: কে আছে ওর সাথে?
: আম্মু।

লাশের খাটিয়া থেকে নেমে শার্ট পড়ে রুপমকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম।
আমাকে দেখে আমার শ্বাশুড়ি ভূত ভেবে ভয় পেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। এবং তাৎক্ষনিক মারা গেল।

আমার শ্বাশুড়ি মারা যাওয়ার পরের দিন আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরল সম্পূর্ণরূপে। এর আগে দু'দিন যাবৎ জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে পুনরায় অজ্ঞান হয়ে যেত। ওইদিনই হাসপাতালে আমার স্ত্রী সুন্দর ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিল।
সমীরণ আমাকে আর বাচ্চাকে দেখে মহাখুশি। ওর কাছে সব কিছুই স্বাভাবিক মনে হল। স্বামী আর বাচ্চা পেয়ে ও মনে হয় সব ভুলে গিয়েছে। ওর মার কথা পর্যন্ত জানতে চাচ্ছিলনা। বাচ্চা হওয়ার দু'দিন পর রুপম হাসপাতালে এলে সমীরণ ওর কাছে জানতে চাইলো "কিরে মা আসেনি কেনো?" রুপম উত্তরে কিছু না বলে বাহিরে চলে গেলো।
এরপর সমীরণ যখন সুস্থ্য হল ওকে সব খুলে বললাম। শুনে ও খুব কেঁদেছিল।

সব ঝামেলা শেষে যখন স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করতে যাবো তখনই খেয়াল করলাম সবাই আমাকে দেখে ভূত ভেবে চমকে উঠে, কথা বার্তা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। দোকানের চেলেটাও টাকা পয়সা নিয়ে ভেগেছে। দোকানে পরিচিত কোন কাস্টমার আর আসেনা। যা দু একজন আসে সবাই অপরিচিত। ব্যাবসায় ধস নামলো।
যে প্রেতাত্মার জন্য এত ঝামেলা পোহাতে হল সেই প্রেতাত্মা আবারো আমার পিছু লাগলো।
সব মিলিয়ে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আসায় সিদ্ধান্ত নিলাম জায়গা জমি, ঘর বাড়ি সব বিক্রি করে শহরে চলে যাবো।

জেলা সদরের উল্লাস পাড়ায় টিন শেডের একটা বাড়ি কিনলাম জায়গা সহ। ঘরের সাথে এডজাস্ট করে একটা দোকান দিলাম।
কিন্তু ওই প্রেতাত্মা এখানেও এসে হাজির হল। অস্থির করে তুলেছে এই প্রেতাত্মা আমাকে। দোকানে যখন ভীড় থাকেনা, যখন আমি অবসর থাকি, কিংবা যখন শুয়ে থেকে আমি কিছু একটা নিয়ে ভাবি ঠিক তখনি বুড়ি প্রেতাত্মাটি আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখায়। বিরিক্ত করে।

কি যেন একটা গুরুতুপূর্ণ বিষয় আমার মাথায় হঠাৎ হঠাৎ নাড়া দেয়। কি যেন একটা তথ্য ব্রেইনের মাঝে ঘুরপাক খায়। আবছা আবছা যখন ব্রেইনে বিষয়টা বুঝতে পারার কিংবা মনে পড়ার সম্ভাবনা নাড়া দেয় ঠিক তখনি প্রেতাত্মা হাজির হয়। আমায় ভয় দেখায়। চেহারা কুৎসিত করে ফেলে। কখনো দেখি বুড়ির একটা চোখ নেই। আবার কখনো কখনো দেখি দু'চোখই নেই। আর সবসময়ই দেখি সারা মুখে তাজা কাটা সেলাই। সেলাই থেকে পুঁজ গড়িয়ে পড়ছে। ভয়ংকর চেহারা।
যখন বুড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি অসহায়ত্ব বোধ করি, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বুড়ি আমাকে ভয় দেখানো অবস্থায় যদি কেউ এসে পড়ে তখন বুড়ি উধায় হয়ে যায়। আমি স্বাভাবিকতায় ফিরে আসতে কয়েক মিনিট সময় লেগে যায়..............
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast