www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বনানী

গল্প : বনানী

: এক :
বনানীর গায়ের রঙ সবুজাভ। বোধ করি একটু বেশীই সবুজ; তথাপি বেশ উজ্জ্বল দেখতে। গাঢ় রঙের কারণে যেমনটা মেটে মেটে হয়, অবস্থা সেরকম না। সূর্য্যের আলো ঠিকই ঝিলিক পারে এখানে। থেকে থেকে আরক্তিম শরীরে লালের ছোপ ছোপও আছে কিছুটা। আর এই গায়ের রঙটাই যে বনানীর কাল হয়েছে! কিশোরী থেকে যৌবন উঁকি উঁকি দেয় - বনানীকে বিবাহ-ইচ্ছুক পাত্রের গুণতি অনেক। বিয়ের সম্মন্ধ খালি আসে আর আসে - অদ্যাবধি আসছেও। প্রথম বিয়ের আনন্দটা না বললেই নয়। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া একজন এল - দরাজ কণ্ঠ। মস্ত শরীরে সম্মোহিত চাহনি, বজ্রের মত সাহস। আর বুকভরা পাগল করা ভালবাসা তাঁর। বনানী মন্ত্র মুগ্ধের মত হয়ে যায়।
অসাধারণ ভাললাগায় পার হতে থাকে নববধুর জীবন। নতুন সংসার, নানা চাহিদা। কত ব্যস্ত শুভ্র পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত কর্তা! বনানী পুরো আঁজলা পেতে দেয় - স্বামীকে প্রাণ ভরে তৃষ্ণা মেটাবে।
কিন্তু হায়! বনানীর কপাল পোড়ে গোড়াতেই। অকস্মাৎ বিধবা হয়; স্বামী-সংসার হারিয়ে পাগলপাড়া যেন।

: দুই :
বিধাব বেশে বনানী শোক পালনের সময়ও পায় না ততটা। আবার বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এই মানুষটা স্বাস্থ্যবান, শক্তপোক্ত গড়ন। দেখে বয়স আন্দাজ করা কঠিন, তবে সুশ্রী বেশ। সারাক্ষণ কালো চশমা পড়ে থাকায় বনানী ঠিক বুঝতে পারে না তাঁকে, তাঁর মনকে। কেমন চুপচাপ থাকেন, কথা বলেন আস্তে আস্তে।
লোকটা অবশ্য তেমন সময় দেয় না ওকে। কালো চশমা, টি-শার্ট আর জিন্স পড়ে ঘুড়ে বেড়ায় সারাক্ষণই। দেশ-বিদেশে কত জায়গায় যায় তার নতুন এ সঙ্গীটি! ভাবলেও গর্ব গর্ব লাগে বনানীর। মানুষটার চাহিদা তত বেশী না - ঘরের এক কোণে বসে একান্তে দু’চার দলা ভাত আর তরকারী বেড়ে দেয় বনানী। তাই নাকেমুখে খেয়ে আবার দৌড়। এখানে-ওখানে খাল কাটতে হবে, পানি আনতে হবে সেচের। এসব নিয়েই কাটে তার সময়।
বনানী ভেবেছিল, যাক সংসারটা বুঝি টিকেই গেল। তাই কি হয়? বনানীর যে আজন্ম পাপ! আবার স্বামীহারা ও হঠাৎ করে।

: তিন :
কোত্থেকে এই মানুষটা এসেছিল বনানী জানেনা। শুনেছে অস্ত্র হাতে জোড় করে বনানীকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। সেই থেকে একটা ঘৃনা আটকে আছে বনানীর হৃদয়ে। তথাপি নতুন স্বামী - আদর সোহাগ, স্বামীসেবা করতেই হয়। লোকটি কথা বেশী বলেন। বনানী দেখেছে - প্রচুর মিথ্যাও বলেন মানুষটি। এই প্রথম নিজেকে বেশ অসুখী মনে হয় বনানীর। মনে হয় কোন ভালবাসা নেই এখানে, সবই কৃত্রিম।
অবশ্য ভাবতেই গা কেমন রি রি করে। মানুষটা সারাক্ষণ অন্য মেয়েদের পিছনে ছুক ছুক করে। এসব মেনে কেমন করে যে তাঁকে আদর করবে বনানী ভেবে পায় না। তারপর আবার আশেপাশের কেউ উনাকে পছন্দ করে না। কতদিন এর সাথে সংসার করতে হবে কে জানে? দীর্ঘশ্বাস বের হয় বনানীর। অবশ্য হাসি ফুটে একদিন। মানুষের অপছন্দের মুখে লোকটা স্বইচ্ছায় বিদায় নেয় সেদিন। আহ! শান্তি বনানীর!

: চার :
লেসবিয়ানের স্বাদ কেমন বনানী জানে না। তবুও বনানী শুনছে এক মানবীর সাথে ওর বিয়ে হবে এবার। অজানা আশংকায় ভরে উঠে হৃদয়। এমন অভিজ্ঞতা না থাকায় শংকিত মন। কেমন হবে এ জীবন? বনানী কি ভালবাসতে পারবে তাকে, সেও কি ওকে ভালবাসবে একজন পুরুষের মত? নানা চিন্তায় অস্থির থাকে সে।
কিন্তু অতি আনন্দে কাটে বনানীর। এ যাবৎকালের সর্বাপেক্ষা সুখ মনে হয় ওর। সুখের সাগরে নিয়মিত ভেসে যেতে থাকে। নিজেকে আরো সবুজ করে তোলে আনন্দে। মানুষটাও প্রতিনিয়ত ওর শ্রী বাড়িয়ে দেয়। অর্থ-বিত্ত্বে সমৃদ্ধ হতে থাকে ধীরে ধীরে।
হায়! এই সুখও ওর সয় না বেশীদিন। বিচ্ছেদ হয়ে যায় আবারও।

: পাঁচ :
লেসবিয়ানের অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ বনানী পুনরায় লেসবিয়ানের আগমনে যারপরনাই খুশী। এ মানুষটি আরো ভালো - সারাক্ষণ তক্কে তক্কে থাকে কীভাবে ওকে সুখী রাখবে। কথা বেশী বলেন - বোধ করি একটু বেশীই বলেন। তবে মনটা বেশ পরিস্কার।
বনানীর শরীরটা আলো-ঝলমলে করে দেন তিনি। সারা গায়ে আনন্দ আর সুখের বন্যা বইয়ে দেন যেন। ঈষৎ রোগাক্লিষ্ট শরীরটা পুষ্ট হতে থাকে বাড়ন্ত পুই গাছের মত। শরীরের রোগজীবানু দূর হতে থাকে। আহারে! এও যে কপালে সইলো না!

: ছয় :
আবার বিয়ে হয় বনানীর। পুরোনো লেসবিয়ান সাথীকে পেয়ে বনানী যারপরনাই খুশী। কী সুখের সংসার ছিল ওদের সেসময়! ভীষণ রোমাঞ্চিত আবার তাঁকে পেয়ে। পণ করেছে, এবার তাকে নিয়ে হেস্তনেস্ত সুখের জীবন কাটাবে।
কিন্তু সব ধুলায় মিটিয়ে দেয় কোত্থেকে এক ছোকরা এসে। সুখের সাজানো বাগান লন্ডভন্ড। হায়েনাদের নিয়ে সব ছিড়েকুড়ে খায় ছোকরা। কাহাতক এ সহ্য করা যায়? পরিনতিতে আবার বিচ্ছেদ হয়ে যায় বনানীর।

: সাত :
আবার উদ্বেলিত হয় বনানী। লেসবিয়ানের সুখের জীবন শুরু হয় পুরোনো অন্য সাথীটির সাথে। শুরুতেই মহা উত্তেজনা নিয়ে আরম্ভ করে বনানী। অনেক কর্তৃত্ব নিয়ে এবার গদীনসীন হন তিনি। কিন্তু হায়! এবার কেমন যেন আগ্রাসী পতিদেবী। সবকিছুতে জোরজবরদস্তি, একরোখা। এক ছোকরার বদলে এখন অগণিত ছোকরা দিকে দিকে। ওদের লোলুপ দৃষ্টি আর অসীম ক্ষুধার কাছে রীতিমত অসহায় বনানী। সারাক্ষণ খুবলে খুবলে খায় ওকে। বনানীর সুন্দর দেহটা ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে দিনে দিনে।
ভড়কে যায় বনানী। দিন যায় মাস যায় অবস্থা আরো খারাপ হয়ে উঠে। কিছুই বলতে দেয় না, শুনতেও চায় না। এভাবে কী সংসার করা যায়? এবারই বোধ হয় সবচেয়ে বেশী সময় একজনের সাথে সংসার করে বনানী। তারপরও মনে হয় ভাল লাগছে না। মরণ পর্যন্ত কি এর সাথেই থাকতে হবে? কী যে হবে কে জানে?

গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সমির প্রামাণিক ০৯/০৮/২০১৭
    বেশ। একটা অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যায়।
  • এম এম হোসেন ০৯/০৮/২০১৭
    ভাল
  • মোনালিসা ০৮/০৮/২০১৭
    অসাধারন
  • তীর্থের কাক ০৮/০৮/২০১৭
    অনন্য
  • তারুণ্যে স্বাগত গল্পকার।
 
Quantcast