www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠঃ
গ্রামঃ রহিমগঞ্জ, উপজেলা বাবুগঞ্জ,বরিশাল।
বাবাঃ আব্দুল মোতালেব হাওলাদার
মাঃ মোছা সুফিয়া খাতুন
অবিবাহিত।খেতাবের সনদ নম্বর ০১।
শহীদ ডিসেম্বার ১৯৭১।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর তাঁর দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাতেই মহানন্দা অতিক্রম করে অবস্থান নেন রেহাইচড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাকি দুই দলের একটি বালিয়াডাঙ্গায় ন্দী অতিক্রম করে অবস্থান নেয়। অপর দল কালীনগর ঘাঁট দিয়ে নদী অতিক্রম করে আক্রমণ চালায়।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে যেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন, তার অদূরেই ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে আক্রমণ চালান। তাবে তাঁর সহযোদ্ধারা তেমন সুবিধা করতে পারেন নি। পাকিস্তানী সেনারা নিজ নিজ প্রতিরক্ষায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোন ব্রেক-থ্রু না হওয়ায় মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কিছুটা মরিয়া ও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি নিজেই ক্রুল করে একটি ব্যাংকারের দিকে এগিয়ে যান। ওই ব্যাংকারে ছিল পাকিস্তানীদের এল এম জি পোস্ট। তাঁর লক্ষ্য ছিল গ্রেনেড ছুড়ে ওই বাঙ্কার ধবংস করা।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ওই বাংকারের কাছে পৌছাতে সক্ষম হন। কিন্তু গ্রেনেড ছোড়ার মুহূর্তে কাছাকাছি আরেক বাংকারে থাকা পাকিস্তানী সেনারা তাঁকে দেখে ফেলে। তারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একটি গুলি এসে তাঁর কপালে লাগে। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি।
তাঁর মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর আত্তপ্রত্তয়ী মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীদের সাঁড়াশি আক্রমণ চালান এবং তুমুল যুদ্ধের পর সেদিনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মহিউদ্দিন জাহাঙ্গিরের মরদেহ উদ্ধার করে সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধি চিহ্নিত।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ইঞ্জিয়ারিং কোরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের কারা কোরামে।মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনিসহ চারজন বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে ভারতে যান। পরে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ৭ নম্বর সেক্টরের মেহেদীপুর সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আওতাধীন এলাকা ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, কলাবাড়ী সোব্রা, কান্সাট ও বারঘরিয়া এলাকা। মেহেদীপুর সাবসেক্টর এলাকায় পাকিস্তানীদের কাছে তিনি মূর্তিমান এক আতঙ্ক ছিলেন।
১৪ নভেম্বর সোনা মসজিদ মুক্ত হয়। সেদিন ভরে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে সোনা মসজিদে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানীরা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আকস্মিক আক্রমণে তারা কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হকচকিত অবস্থা কাটিয়ে পালটা আক্রমণ করেন। জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানীদের পরাস্ত করেন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন্সহ ১১ জন নিহত ও ৫ জন বন্দী হয়।
সুত্ত্ : একাত্তরের বীরযোদ্ধা (খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্তগাথা)
প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৬০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১২/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনিত্য ০২/১২/২০১৩
    ধন্যবাদ, লেখাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
  • প্রবাসী পাঠক ০২/১২/২০১৩
    বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
    গ্রাম - রহিমগঞ্জ, ইউনিয়ন - আগরপুর,
    উপজেলা- বাবুগঞ্জ, জেলা - বরিশাল।
    সমাধি স্থল- সোনা মসজিদ , চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
  • প্রবাসী পাঠক ০২/১২/২০১৩
    বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ ই মার্চ বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯৬৬ তে আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮-র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।১২ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তার নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আক্রমণ করে। যুদ্ধে অপরিসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে ১৪ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানী বাহিনীর স্নাইপার বুলেটের আঘাতে তিনি শহীদ হন। পরদিন সহযোদ্ধারা লাশ উদ্ধার করে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোনামসজিদ চত্বরে সমাহিত করে।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৩/১২/২০১৩
      পাঠক ভাই আমি কি এই কমেন্ট টা আমার লেখার সাথে এডিট করে দিব। তাহলে মনে হয় ভাল হবে।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৩/১২/২০১৩
      পাঠক ভাই আমি কি এই কমেন্ট টা আমার লেখার সাথে এডিট করে দিব। তাহলে মনে হয় ভাল হবে।
      • প্রবাসী পাঠক ০৩/১২/২০১৩
        জি আপু , আপনি এডিট করে দিতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা , তথ্যগুলো যতটা শেয়ার করা যায় ততই আমরা এই বিষয়ে আরও জানতে পারব।
 
Quantcast