www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সাইবার বুলিংঃ


সাইবার বুলিং এর ধারনাটা এসেছিল আমার ছেলে আবীর (১১+)এর কাছ থেকে। কিছুদিন আগে ও কম্পিউটার হোম ওয়ার্ক করছিল, শেষ হলে ভাবলাম দেখি কি করল। দেখলাম মেগান মেইয়ার নামে একটা নাম,তার উপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। বললাম মেগান মেইয়ার কে? বলল আম্মু মেগান মেইয়ার হল ১৩ বছরের একটা মেয়ে যে কিনা সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবার  এ মারা যায়। মেগান মেয়ার সানাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইট মাই স্পেস এ আই ডি খুলেছিল। এখানেই ওর পরিচয় হয়  জোস ইভান  নামে একটা ছেলের সাথে,যার বয়স ১৬।( আসলে এটা ছিল ফেইক আই ডি , লরি ডিঊ  নামে ৪৯ বছরের এক মহিলা এই ফেইক  আই ডি খুলে মেগান এর সাথে কথা বলত, যে কিনা ছিল মেগান এর বান্ধবীর মা, যার মুল উদ্দেশ্য ছিল, মেগান তার মেয়ে সম্পর্কে কি বলে তা জানা।) মেগান এবং জোস  প্রায় একমাসের ও বেশী সময় ই মেইল চালাচালি করে।একদিন রাতে জোস এর ম্যাসেজ টোন পরিবর্তন হয়ে যায়। মেগান এর কাছে সে লেখে “তোমার সাথে আমি আর বন্ধুত্ব রাখতে পারবনা, আমি শুনেছি তুমি তোমার বন্ধুর সাথে ভাল ব্যবহার করনা, তুমি খারাপ, এই পৃথিবীতে তোমার মত মানুষের দরকার নেই।তোমার  মরে যাওয়া ভাল।“ মেগান আসলে জোস এর কাছ থেকে এরকম কথা আশা করেনি।তাই ওই  দিন রাতেই আত্মহত্যা করে। মারা যাবার এক মাস পর মেগান এর মা বাবা জানতে পারে যে লরি এই কাজ করেছে ফেইক আই ডি  খুলে। জোস  নামে আসলে কেউ ছিল না।
“ আজকের দিনে আমাদের সন্তানেরা অনেকেই ছোটকাল থেকেই ফোন এবং কম্পিউটার ব্যাবহার করে। অনেকেরই আবার স্মার্ট ফোন আছে যার মাধ্যমে তারা সবসময়ই ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। এর মধ্যে আবার অনেকেই আছে যারা সারাদিন ফেইসবুক,চ্যাটিইং, ম্যাসেজ বা ইমেইল আদান প্রদান করে। বর্তমান এই টেকনোলজির যুগে কোনভাবেই সন্তানকে এ থেকে দূরে রাখা যাবেনা। কিন্তু কিছু উপায় তো অবশ্যই আছে যার মাধ্যমে বাবা মা সন্তানদের অনলাইন ওয়ার্ল্ড এর সাথে সংযুক্ত রাখতে পারে, তাহলে অন্তত বাবা মা তাদের কোমলমতি সন্তানদেরকে অনলাইন আক্রমন বা সাইবার বুলিং এর থেকে রক্ষা করতে পারেন” ।
সাইবার বুলিং/আক্রমন কি??
সাইবার বুলিং হল বর্তমান এই অনলাইন টেকনোলজির মাধ্যমে আক্রমন, হ্যারাজমেন্ট করা। যা সাধারনত হয়ে থাকে ইমেইল এবং ম্যাসেজ এর মাধ্যমে, অনেক সময় বাক্তিগত তথ্য, ভিডিও, ছবি এবং স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে ও এই আক্রমন করা হয়ে থাকে। আসলে একে অপরের উপর আক্রমন যুগে যুগে সব সময় আছে, কিন্তু সামনাসামনি আক্রমনের চেয়ে সাইবার স্পেসে আক্রমন করা অনেক সহজ।কারন সাইবার স্পেসে যারা আক্রমন করে তাদেরকে সহজে ধরা যায়না, এবং এটি খুব দ্রুত ছড়ায়।

কিভাবে আপনার সন্তানকে সাইবার আক্রমন থেকে রক্ষা করবেনঃ
যদিও এই আক্রমন সাইবার স্পেসে হয়ে থাকে, তারপরে ও কিছু পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এই বুলিং এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারি।
১। সন্তানের সাথে বন্ধুর মত মিশুন। সব সময় খেয়াল রাখুন তারা অনলাইনে কি করছে? কোন সাইট ভিজিট করছে? তাদেরকে প্রাইভেসির ব্যাপারে সতর্ক করুন এবং বলেন যে পারসোনাল তথ্য যেন কোন সামাজিক ওয়েব সাইটে না দেয়। এবং কেউ যদি বাক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করে তা যেন সাথে সাথে আপনাকে জানায়। এক্ষেত্রে আপনি “মনিটরিং সফটওয়ার” ডাঊনলোড করে রাখতে পারেন। হয়ত অনেকেই এই মনিটরিং করা পছন্দ করবেনা, কিন্তু আপনি ওদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন যে বাবা মা হিসাবে পর্যবেক্ষণ করা আপনার দায়িত্ব। আপনার সন্তানের সামাজিক যোগাযোগ ওয়েব সাইট এর যে কোন পাসওয়ার্ড আপনি জেনে রাখুন, এবং আপনার সন্তানদের বলুন যে এই পাসওয়ার্ড যেন সে কাউকে না বলে।এটা একান্তই ওর নিজস্ব। এই পাসওয়ার্ড কেউ জেনে গেলে সে তার ক্ষতি করতে পারে।
২। ইন্টারনেট ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে দিন। কম্পিউটার বাসার এমন জায়গায় রাখুন যাতে আপনি সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ( সন্তানের বেডরুমে ল্যাপটপ দেবার দরকার নেই) ফোন কিনে দিলে বলেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, এবং এর ব্যাবহার ও নির্দিষ্ট করে দিন।
৩। আপনার সন্তানকে সামজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে ধারনা দিন। ওদেরকে বলুন, যেন না জেনে কোন ভিডিও এবং ছবি যেন কারো সাথে শেয়ার না করে, কারন এই সব ভিডিও এবং ছবি সমস্যা তৈরী করতে পারে।
৪। ওদেরকে সুন্দরভাবে বুঝাবেন কেউ যদি তাকে সাইবার বুলিং করে সে যেন এর উত্তর না দেয়, উত্তর দিলে সে আরো আনন্দ পাবে এবং আক্রমন করতেই থাকবে। উত্তর না পেয়ে বুলিং নিজেই একসময় থেমে যাবে।
৫। ওদেরকে বলুন যদি তারা কোন সময় সাইবার বুলিং এর শিকার হয় তারা যেন অবশ্যই বাবা মাকে বলে। তাহলে বাবা মা সন্তানদেরকে এই বুলিং এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। এবং ওই বুলিং এর কাছ থেকে সে যে কয়েকটা ম্যাসেজ পেয়েছে তা আপনাকে দেখাতে বলবেন।
৬। ওদেরকে শেখান যদি কেউ এরকম আক্রমন করে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যে কোন সামাজিক মিডিয়ায় সাইবার বুলিকে ব্লক করে দিতে , এবং ওর ই মেইল ও ব্লক করে দিতে বলবেন।
৭। সব ম্যাসেজ এবং ইমেইল সংরক্ষণ করে রাখতে বলুন যা ওই বুলিং এর কাছ থেকে এসেছে।

সাইবার বুলিং সনাক্তঃ
কিশোর কিশোরীদের অনেকেই আছে যারা এই সব বাবা মা এবং শিক্ষকের সাথে শেয়ার করতে লজ্জা পায়। মনে করে বাবা মাকে বললে হয়ত বাসা থেকে কম্পিউটার সরিয়ে দেবে। কিছু জিনিস পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনি নিজেই বুঝবেন আপনার সন্তান সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছে কিনাঃ
• ইন্টারনেট বা ফোনে কথা বলার পরই যদি সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
• যদি সে সারাদিন তার জীবনে কি ঘটলো তা যদি কারো সাথে শেয়ার না করে।
• নিজেকে বন্ধু বান্ধবী এবং অন্যান্য কাজকর্ম থেকে দূরে রাখে।
• পরীক্ষার ফলাফল যদি আগের মত না হয় এবং বাসায় সব সময় রেগে কথা বলে।
• আচরণ, ব্যবহার, এবং ঘুমের ও পরিবর্তন হবে।

যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার সন্তান সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছে তাহলে ওর সাথে খোলাখোলি আলোচনা করুন। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করুন। কারন দেখা যায় আমরা বাবা মা রা আগেই রাগ করে থাপ্পর দিয়ে বসি। এটি কখনই করতে যাবেন না। ওকে বুঝাবেন যে এতে ওর কোন দোষ নেই। এবং আপনি যে সব সময় ওর সাথে আছেন তা ওকে বলেন। এ প্রসঙ্গে আপনি আপনার শৈশবকালের কোন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে পারেন।ওকে সাহস দেন। কারন অনেকেই এই বয়সে এই সব মানিসিক চাপ সহ্য করতে পারেনা।এই সাইবার আক্রমন অনেকটা আসলে মানসিক নির্যাতন এর মত। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা ও করে বসে।এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর সুবিধা এবং অসুবিধা বুঝানোর দায়িত্ব বাবা মা হিসাবে আপনারই। আপনিই আপনার সন্তানকে এর থেকে রক্ষা করতে পারেন।

(লেখাটা আগে ফেইস্বুক  প্রকাশিত হ্য়েছে)
বিষয়শ্রেণী: তথ্যপ্রযুক্তি
ব্লগটি ১৭৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ধন্যবাদ।
  • Muradul alam ০৪/১১/২০১৩
    100% Right.
  • alamin Bapary ০৩/১১/২০১৩
    Khubi bhalo laglo pore asa kori sobai upokrito hobe
  • খুব গুরুত্ব পূর্ণ ইনফরমেশন দিয়েছেন, ভাল লাগল পড়ে। তবে অনেক সময় সন্তানরা আসক্ত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অবৈধ সাইটে চলাচল, অসময়ে অনলাইনে বসে থাকা, বাবা মাকে পাসওয়ার্ড না দেওয়া ফেক একাউন্ট খোলে ব্যাবহার করা ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এ কাজগুলো সাধারনত কিশোর বয়সে মজা এবং কৌতূহল বসত করে থাকে । এর পরিনতি অনেক সময় খারাপ হয় তাই এই সময়টা বাবা মাকে বেশি খেয়াল রাখা উচিৎ সন্তানদের প্রতি। এজন্য উইন্ডোজ এর প্যারান্টাল কন্ট্রোল সিস্টেমটা অনেক ভালো । এর মাধ্যমে দিনের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করে দেওয়া যায় কম্পিউটার ব্যাবহারের তবে মাঝে মাঝে চাইলে আপনার পাসওয়ার্ড সিয়ে সময় বাড়িয়ে দিতে পারেন। আর সে কি করছে এমনকি তার ফেক একাউন্ট আছে কি না থাকলে পাসওয়ার্ড কি এবং কার সাথে কি কথা বলছে নেটে কি সার্চ দিচ্ছে এসব জানতে পারবেন কী-লগার ব্যাবহার করে।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা, আমি সত্যি এই ইনফরমেশন গুলো সম্পর্কে জানতাম না। আশা করি আমার কাজে লাগবে। আপনার জন্য ও শুভকামনা রইল।
  • জহির রহমান ০৩/১১/২০১৩
    অনেক দরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা শেয়ার করেছেন। আন্তরিক শুভেচ্ছা আপনাকে।
  • এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আপনি পোস্ট করেছেন।আশাকরি সবাই উপকৃত হবে।ধন্যবাদ আপনাকে।শুভকামনা সবসময়।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      ভাই, এই পোস্ট টা পড়ে কেউ যদি একটু উপকৃত হয় তাতেই আমি কৃতার্থও হব। আপনার জন্য ও শুভকামনা।
 
Quantcast