www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপরিচিতা

১।
কোথায় যাবেন আপনি?
মাসুদ স্কুটি আরোহণীর দিকে তাকালো। মাথায় হেলমেট। পরনে লাল রঙের ফতুয়া, জিন্স প্যান্ট। পায়ে লাল জুতো। পিটে একটা লাল ব্যাগ ঝোলানো। তরুণী যথেষ্ট রূপবতী। হাসছেও চমৎকার করে। মাসুদের মনে হল, এ তরুণী হচ্ছে সেই সব মানুষদের একজন যাদের দেখলেই আপন মনে হয়, মনে হয় অনেক পরিচিত।
.
মাসুদ বলল, "শান্তিপুর যাবো"
"ওমা! সে তো অনেক দূর!"
"হুম জানি"
"এখানে তো এখন গাড়িও পাবেননা। হেঁটে যাবেন নাকি?" হাসলো মেয়েটি।

"আগেও কয়েকবার এসেছি। গাড়ি তো পেয়েছিলাম। হেঁটে যাওয়া তো সম্ভব না। গাড়ির জন্য ওয়েট করছি।"
.
নুসরাত রেডিয়াম-রিস্টওয়াচে তাকিয়ে বলল, "রাত এগারোটা। এখন কোন গাড়িই পাবেন না। আমি শান্তিপুর যাবোনা, তবে ওদিকেই যাব। আপনাকে ফতে মিঞার বাজারে নামিয়ে দিলে বাকি পথ আপনি সহজে যেতে পারবেন। ভাগ্য ভাল হলে রিক্সাও পেয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া লোকাল সিএনজির সার্ভিসও আছে সেখানে।"

প্রস্তাবটা মন্দ নয় কিন্তু মাসুদ হেসিটেট করছে।

নুসরাত বলল, "কী ভাবছেন? মেয়ে মানুষের গাড়িতে উঠবেন না? শুনুন আপনি সত্যিই গাড়ি পাবেন না। শেষ গাড়িটা আপনি মিস করেছেন। এখানকার রাস্তাঘাট আমার ভালভাবেই চেনা। শর্টকাট রাস্তা ধরে ফতে মিঞার বাজারে যেতে বড়জোর চল্লিশ মিনিট লাগবে।"
.
মাসুদ স্কুটিতে উঠতে উঠতে বলল, "কী নাম আপনার?"
"নুসরাত, আপনার?"
"মাসুদ।"
.
নুসরাত স্কুটি চালু করতে করতে বলল "নাইস টু মিট ইউ মাসুদ সাহেব।"

"নাইস টু মিট ইউ টু।"

"শান্তিপুর কেন যাচ্ছেন?"

"মামাতো বোনের বিয়ে।"

"কোথায় থাকেন?"

"ঢাকায় থাকি।"

"কী করেন আপনি?"

"একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে একাউন্টেন্ট হিসেবে আছি। আপনি?"

"আমি স্টুডেন্ট। তবে টিউশানি করি।"

"আপনি বেশ স্বাধীনচেতা বলে মনে হচ্ছে।"

"যেমন ভাবছেন তেমন না। তবে দরকার পড়লে সবই যাতে করতে পারি, নিজেকে সেভাবে তৈরি করছি।"
.
ফতে মিঞার বাজারের কাছাকাছি আসতেই নুসরাত বলল, এই তো এসে গেছি। বলেই বাজারের দিকে না গিয়ে রাস্তা থেকে একটা মাঠে স্কুটিটা নামিয়ে দিলো নুসরাত!
.
"কি ব্যাপার ওদিকে যাচ্ছেন কেন?" মাসুদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
নুসরাত বলল, "ওই যে বাড়িটা দেখছেন? ওটাই আমার বাড়ি। চলেন আপনাকে চা খাওয়াই।"
.
বাড়িটা দেখতে পেল মাসুদ। নির্জন মাঠে বাড়িটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো লাগছে। দোতলা বাড়ি। রাত বলেই কিনা কে জানে, বাড়িটাকে কেমন অশুভ, ভুতুড়ে মনে হচ্ছে ওর।
.
মাসুদ বলল, "আরে না না, আপনি অনেক করেছেন। চা খাওয়াতে হবেনা। আমাকে এখানে নামিয়ে দিন।"
.
নুসরাত স্কুটি থামালোনা। বলল, "আরে চলুন তো। আমি রাক্ষস না যে আপনাকে খেয়ে ফেলবো। তাছাড়া চা খাওয়ানো তেমন বড় ব্যাপার না। পরে সুযোগ পেলে নাহয় প্রতিদান দিয়ে দিবেন।"

"সে সুযোগ কি মিলবে?"

"মিলবে। ঢাকায় গেলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। চিনবেন তো তখন? নাকি চিনবেন না? আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে রাখবেন। আপনারটাও দিয়ে যাবেন।"

"আচ্ছা আচ্ছা চলুন।"


সোফায় বসে অপেক্ষা করছে মাসুদ। বাড়িটা কেমন নিস্তব্ধ। আশেপাশে কোন বাড়ি নেই, চারপাশে কেবল মাঠ আর মাঠ। এরকম একটা বাড়িতে নুসরাতরা কেন থাকে, কীভাবে থাকে কে জানে!

ট্রেতে করে চা নিয়ে এসে টেবিলে রাখল নুসরাত, সাথে একটা প্যাড। বলল, এই নিন এখানে আপনার নাম্বারটা লিখে দিন। মাসুদ নাম্বারটা লিখে দিয়ে চায়ে চুমুক দিল।

২।
আস্তে আস্তে ঘুম ঘুম চোখ মেলল মাসুদ। একটা বেডে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে ওকে। মুখে টেপ লাগানো। গায়ে একটা সুতাও নেই। ধীরেধীরে সব মনে পড়ছে ওর। চায়ে নিশ্চয় সিডাটিভ কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল নুসরাত। ওকে কেন বন্দী করা হল? নুসরাত কোথায়?

ওর উপর ঝুঁকে আছে রক্তশুন্য পিশাচের মত দেখতে একটা লোক। একটা টিটকারি মূলক হাসি লেগে আছে লোকটার ঠোঁটে। পাশের টেবিলে সার্জিক্যাল ব্লেড, ছেনি, হাতুড়ি, ছুরি চাপাতি ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র দেখে হঠাৎ যেন চেতনা ফিরে পেল মাসুদ। প্রাণপণে চেষ্টা করছে হাত পা ছাড়িয়ে নিতে।

হেসে উঠলো নুসরাত। ও লোকটির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল বলে দেখা যায়নি এতক্ষণ, ও বলল, "খামোখা নড়াচড়া করছো। এখানে এ এপর্যন্ত যারা এসেছে তাদের সবাই আমাদের পেটে হজম হয়ে গেছে।" মাসুদের আতংকিত বিস্ফোরিত চোখ দেখে, নুসরাত বলল, "হ্যা ঠিক ধরেছো! আমরা ক্যানিবাল, ক্যানিবালিজম প্র‍্যাক্টিস করি!"
.
পিশাচের মতো দেখতে লোকটাকে দেখিয়ে বলল, বাবা মর্গে ডোমের চাকরি করে। কাজ করতে করতে একসময় আবিষ্কার করে মানুষের গোশতের চেয়ে সুস্বাদু আর কোন গোশত নেই ... "তুমি এত অবাক হচ্ছো কেন মাসুদ? ক্যানিবালিজম সবসময় ছিল, আছে,থাকবে। ইতিহাস থেকে একটা খুবই পরিচিত ঘটনা বলি উহুদের যুদ্ধে মুসলিম বীর হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করলে তার দেহ থেকে কলিজা বের করে কাঁচা খেয়ে ফেলে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা। জানো নিশ্চয়?"

ঠোঁটে একটা ক্রুর হাসি ফুটিয়ে নুসরাত বলল, "অনেক গল্প হয়েছে! বাবা এবার তুমি তোমার কাজ শুরু করো!"

নুসরাতের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের টেবিল থেকে হাতুড়ি তুলে নিল। প্রচন্ড জোরে হাতুড়িটা এগিয়ে আসছে ওর মাথা বরাবর। মুখে টেপ বাঁধা বলে চিৎকারও করতে পারছেনা ও। কেবল তাকিয়ে রইল অসহায় দুটো চোখ, যার একটি থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা উষ্ণ জল!

৩।
রাত সাড়ে দশটা।

স্কুটি নিয়ে নির্জন রাস্তায় অপেক্ষা করছে নুসরাত। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর একটা লোককে আসতে দেখল ও। বয়স ৩৫ থেকে ৪০। লোকটা বেশ নাদুসনুদুস। দেখেই খুশি হয়ে উঠল ও। নিশ্চয় এর গোশত খুব জুসি হবে।
.
স্কুটি এগিয়ে নিয়ে লোকটার কাছে গিয়ে থামল। নুসরাত বলল, আংকেল আপনি কোথায় যাবেন?
.
লোকটি স্কুটি আরোহণীর দিকে তাকালো। মাথায় হেলমেট। পরনে লাল রঙের ফতুয়া, জিন্স প্যান্ট। পায়ে লাল জুতো। পিটে একটা লাল ব্যাগ ঝোলানো। তরুণী যথেষ্ট রূপবতী। হাসছেও চমৎকার করে। লোকটির মনে হল, এ তরুণী হচ্ছে সেই সব মানুষদের একজন যাদের দেখলেই আপন মনে হয়, মনে হয় অনেক পরিচিত!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৬৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/১২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast