www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিয়তি ১

১।
রিলিজ বাটন টিপে খালি ম্যাগাজিন ফেলে দিয়ে একটা গাছের আড়ালে পজিশন নিল ফয়সাল। এক্সট্রা ম্যাগাজিনটা ভরে নিল পিস্তলে। আর মাত্র আটটা গুলি! কোনভাবেই বাজে খরচ করা যাবেনা। স্লাইড টেনে চ্যাম্বারে গুলি নিয়ে এল ও!
.
রাগে নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে ওর। বলা হয়েছিল আজিজ মেম্বারকে শেষ করে দিতে হবে যে কোন মূল্যে, প্রয়োজনে ডাবল এমনকি ট্রিপল মার্ডারও করতে হতে পারে। কিন্তু ওদের সাথেও যে পিস্তল থাকতে পারে এ তথ্যটা ওকে মনসুর সাহেব দেয়নি। ওর কল্পনাতেও আসেনি ব্যাপারটা। ভেবেছিল ভিলেজ পলিটিক্স এর ব্যাপার,গ্রাম্য কতগুলো লোক, লাঠিসোটা বড়জোর দাঁ-ছুরি হবে এদের অস্ত্র! কিন্তু এটা যে ২০১৮, ফেসবুক টুইটারের যুগ, পৃথিবীটা এখন হাতের মুঠোয়, এ সত্যটা ও কি করে ভুলে গেল।
.
চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার আর কুয়াশায় ঢাকা। কিন্তু ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাস্তাটা মোটামুটি আলোকিত। তাই কোন রকম রিস্ক নিবেনা সে। রাস্তাটা সে ভালোভাবে দেখতে পাবে, কিন্তু রাস্তা থেকে কেউ তাকে দেখতে পাবেনা।
.
ভালই ছিল পজিশনটা। ওরা ছিল দুইজন - আজিজ মেম্বার আর সাথে তরুণ এক ছেলে। প্রথম গুলিটা আজিজ মেম্বারের বুকে তাক করে ছুঁড়েছিল ও। কিন্ত মাতাল হওয়ার কারনে শরীরটা দুলছিল মেম্বারের, তাই বুলেট বুকে বিঁধেনি, কিন্তু হাত বা বুকের আশেপাশে ঠিকই লেগেছে - এ ব্যাপারে নিশ্চিত ফয়সাল।
.
সাথে থাকা তরুণ অত্যন্ত ঠাণ্ডা মগজের পরিচয় দিল, সে পালিয়েও যায়নি আবার এলোপাথাড়ি গুলিও ছোড়েনি ওকে লক্ষ্য করে অন্ধকারে। ছেলেটা বুঝতে পেরেছিল এ পরিস্থিতিতে ওদের সবচেয়ে বড় শত্রু ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা। ছেলেটা ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে ল্যাম্পপোস্টের বাতি তাক করে পরপর দুবার ট্রিগার টানল। দ্বিতীয় বুলেটটা বালবটাকে চুড়মাড় করে দিল। মুহুর্তেই অন্ধকার হয়ে গেল পুরো এলাকাটা।
.
এরপর অনুমানে দুই পক্ষের গুলি বিনিময়। একসময় লোডেড ম্যাগাজিন শেষ হয় যায় ফয়সালের। ভাগ্যিস এক্সট্রা ম্যাগাজিন সঙ্গে এনেছিল, নইলে এতক্ষণে কী ঘটে যেত বলা মুশকিল।
.
এখন দুদিকেই নিস্তব্ধতা। কেউ আর গুলি ছুড়ছেনা। ফয়সাল ভাবছে ছেলেটার এক্সট্রা ম্যাগাজিন আছে কিনা। না থাকলে যুদ্ধ এখানেই শেষ। থাকলেও মেম্বারের দল বেশি সুবিধে করতে পারবেনা। কারণ মেম্বার আহত। বাঁচতে হলে তরুণ ছেলেটাকে একা পালাতে হবে।
.
রেডিয়াম-রিস্টওয়াচে চোখ বুলাল ফয়সাল। বারোটা তিরিশ। গ্রাম এলাকার জন্য গভীর রাত। ইনফরমেশন অনুযায়ী, কাজ সেরে ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ব গলির মোড়ে একটা সি.এন.জি দাঁড়িয়ে আছে। আর তিরিশ মিনিটের মধ্যেই ওকে সব কাজ সেরে যেভাবেই হোক জায়গাটায় গিয়ে পৌছতে হবে ওকে।
.
হঠাৎ করেই তরুণের ফোন বেজে উঠলো। ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো ফয়সালের ঠোঁটে! ফয়সাল ন্যাচারাল শিকারি। তার নিশানা এতই নিখুঁত যে ছোটবেলায় সে ঢিল ছুড়ে উড়ন্ত পাখি ফেলে দিত।
.
রিংটোন শুনে আর মোবাইলের অল্প আলো দেখে এক সেকেন্ডের কম সময়ে নানা হিসেব নিকেশ করে দ্রুত পরপর দুবার ট্রিগার টানল ও। আর্তনাদ করে উঠল তরুণ, তারপর পুরো এলাকায় জমাট বাঁধল শুধুই নিস্তব্ধতা।
.
ফয়সাল ওদের দিকে এগিয়ে গেল। পেন্সিল টর্চ জ্বালিয়ে দেখল দুটো বডি কাছাকাছি পড়ে আছে। বুকে আর পেটে কাছাকাছি দুটো বুলেট ঢুকে গেছে তরুণের শরীরে। মোবাইলের অপর নাম মরণ, মনে মনে হাসল ফয়সাল।
.
আজিজ মেম্বারের বুকেই লেগেছিল গুলিটা। তবু নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাথায় তাক করে আর একবার ট্রিগার টেনে দিল সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটার

২।
শুক্রবার, ছুটির দিন।
শওকত অন্যমনস্ক হয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
.
টেবিলে নানারকম খাবার সাজানো। কিন্তু খাবার ব্যাপারে কোন মনযোগই নেই ওর। নানারকম অশুভ চিন্তায় মনটা ভরে আছে। নাসরিনকে সে কোনভাবেই বুঝতে পারছেনা। ইন ফ্যাক্ট, কোনদিনই নাসরিনকে ও বুঝতে পারেনি। ভেবেছিল বিয়ের পর সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে, কিন্তু হয়নি। এখন প্রায়ই মনে হয় ওকে বিয়ে করাটা শওকতের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। বিয়ের পর নাসরিনের কাছ থেকে এক ফোঁটা সুখও পায়নি ও।
.
কি করে পাবে? নাসরিনকে যতবার বুকে নিয়ে শুয়েছে ততবার তার মনে হয়েছে, স্ত্রী অন্য এক পুরুষের কথা ভাবছে! প্রতিটি আদরে সাড়া দিয়েছ সে অন্য কাওকে মনে করে, শওকতকে মনে করে নয়!
.
মেয়েদের নিয়ে শওকতের খুব বড় ভুল ধারনা ছিল। ও ভাবতো, স্বামী যদি ভাল মানুষ হয় বিয়ের পর কোন মেয়েই তার অতীতকে আঁকড়ে ধরে কষ্ট পাবেনা। স্বামীকেই ভালবাসবে মনপ্রাণ দিয়ে। কিন্তু নাসরিন তার সব হিসেব নিকেশ উলটে পালটে দিয়েছে। অথচ এমন নয় যে ফয়সালের সাথে নাসরিনের গভীর কোন সম্পর্ক ছিল। নাসরিন যদি মিথ্যে বলে না থাকে তাহলে ফয়সালের প্রতি নাসরিনের প্রেম একতরফা। সম্পর্কে ফয়সাল নাসরিনের কাজিন। ফয়সাল নাসরিনকে স্নেহের চোখে দেখলেও, ফয়সালই ছিল নাসরিনের প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম ভুলা যায়না সারাজীবন এমনটাই জেনে এসেছে ও কিন্তু নৈতিকতা বলেও তো একটা শব্দ আছে নাকি!
.
নাসরিনকে কেন যেন কিছুই বলতে পারেনা ও।উল্টো নাসরিনই তার ধারালো কথায় এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেলে ওকে। আইরিনকে জড়িয়ে নোংরা নোংরা কথা বলে। মোটকথা দিনের পর দিন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নাসরিন।
.
আইরিন শওকতের ফুফাতো বোন। একটা এক্সিডেন্টে শওকতের বা মা দুজনই মারা যাবার পর ফুফুর আদর স্নেহেই বেড়ে উঠেছে শওকত। আইরিন আর ওর মধ্যে আপন ভাই-বোনের মতোই সম্পর্ক। কিন্তু ফুফু চেয়েছিল ওদের দুজনের মধ্যে বিয়ে হোক। প্রতিবাদ করেছিল ওরা। নিজেদেরকে ওরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কল্পনাও করতে পারেনি। পরে অবশ্য ফুফু এ নিয়ে আর তেমন জোরাজোরি করেনি।
.
চা শেষ করে নিয়ে বেডরুমে দিকে এগুলো ও। রুমে ঢুকেই সে বিস্মিত হয়ে দেখল নাসরিন সুটকেস গুছাচ্ছে।
.
শওকত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "সুটকেস গুছাচ্ছ যে! কই যাবে তুমি?"
.
স্যুটকেসে দুটো শাড়ি ভরল নাসরিন, মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, "আমার যাবার কথা তো বেশ কদিন আগেই ঠিক হয়েছে।"
.
"আমি খুব ভাল করেই জানি যে তুমি কোথায় যাচ্ছ।"
.
"তাতে তো তোমার সুবিধে হওয়ার কথা। কটা দিন আমার মুখ আর দেখতে হবেনা।"
.
"বিয়ের পর আগের একটা সম্পর্ক নিয়ে এখনো এত সিরিয়াস কেন, বলতে পারো আমাকে? ঘা চুলকালে বাড়ে, কমেনা নাসরিন।"
.
"ঘা চুলকাচ্ছি না। ঘাটা যাতে চিরতরে শুকিয়ে যায় সে চেষ্টাই করছি।"
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করল নাসরিন।
.
যদি বুঝতাম যে তোমাকে আমি সত্যিকার অর্থে কোনদিনও পাবনা তাহলে…
.
"আমাকে যতটুকু পেয়েছ এমন বহু মানুষ আছে যারা তার এক ভাগ পেলেও ধন্য হয়ে যেত।" বলল নাসরিন, কৌতুক ঝিক করে উঠল তার চোখের তারায়।
.
"তোমার ভেতর আসলে কোন নৈতিকতা নেই, নাসরিন। মাঝে মধ্যে তোমাকে আমি এত ঘৃণা করি। যখন বিয়ে করলে, তখনও তোমার মগজের এক কোণে ফয়সাল ছিল। বিয়ের পর যতদিন একসঙ্গে আছি, আমার সন্দেহ প্রতিটি দিন তুমি তার কথা ভেবেছ।"
.
"যদি ভেবেও থাকি, তুমি চিৎকার করলে সেটা বন্ধ হবে না। কেন চিৎকার করে প্রতিবেশীর হাসির খোরাক হচ্ছো? তোমার এই চিৎকার-চেঁচামেচি আমার ভাল লাগছে না। সব যদি যুক্তি দিয়ে বিচার করতে পারতে, এই অশান্তি সৃষ্টিই হত না। বিয়ের আগে আমার মনের অবস্থা কি ছিল, তুমি জানতে। আমি তোমাকে সতর্কও করেছি, কিন্তু আমার কোন কথাই তুমি শোনোনি।"
.
শওকত জানে নাসরিন যা বলছে সব সত্যি। কিন্তু তাই বলে বিয়ের পরেও সে শোধরাবে না? কার জীবনে প্রেম নেই? আর এখন তো মানুষ সঙ্গীর আগেকার রিলেশন মেনে নিয়েই ঘর সংসার করছে। সেও তাই করেছে। সে ভেবেছে তার ভালবাসা দিয়ে সে ভুলিয়ে দেবে নাসরিনের সকল অতীত। কিন্তু তার কিছুই হয়নি, বরং দিনদিন নাসরিন যেন আরো বেশি দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে।
.
শওকত বলল,"প্লিজ নাসরিন যেওনা। আমার ভালবাসার কি কোন দামই নেই তোমার কাছে?"
.
ঠোঁটের কোণ কামড়ে কি যেন চিন্তা করল নাসরিন, বলল, "এবার থামো তো, অনেক হয়েছে। আমার যাবার কথা, আমি যাচ্ছি। তুমিও চাইলে আইরিনের সাথে ঘুরে আসতে পারো। আমার কোন সমস্যা নেই।"
.
আইরিন খুব ভাল মেয়ে।"
.
"একটু বেশিই ভাল। তোমাকে ভালবাসে আইরিন, আমি জানি। তুমিও যে বাসনা তা শপথ করে বলা যায় না।"
.
সুটকেস বন্ধ করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল নাসরিন। "হালকাভাবে নিয়ো না, তোমার আসলে আইরিনের সাথে প্রেম করা উচিৎ। যেহেতু আমার সম্মতি আছে। এ প্রেমকে কোনভাবেই পরকিয়া বলা যাবেনা। সত্যিকার একটা লাভ অ্যাফেয়ার হবে তোমার।"
.
চোখ-মুখ লালচে আর গরম হয়ে উঠল শওকতের। বলল, "তাহলে তোমার আমার সম্পর্কটাকে কি বলবে?"
.
তেতো একটা সম্পর্ক তো আছেই তোমার সঙ্গে আমার, তোমাকে আমি খেপিয়ে তুলছি, বেঁধেও রেখেছি। তাই তোমার স্বার্থেই বলছি ভাল হবে যদি আইরিনের দিকে একটু নজর দাও তুমি, আইরিন যেরকম মেয়ে দুদিনেই বিছানায় পেয়ে যাবে আমার বিশ্বাস।
.
স্থির পাথর হয়ে গেল শওকত, চোখ দুটো থেকে আগুন ঝরছে। "এমন কুৎসিত কথা তুমি বলতে পারলে? আমার জন্যে যদি নাও থাকে, আইরিনের জন্যে তোমার কোন মায়া বা দরদ নেই? ফুফু আমাদের বিয়ে দিতে চেয়েছিল ঠিক। কিন্তু ও তো নির্দোষ। ওকে তুমি অন্তত রেহাই দাও।"
.
হাসি পেলেও হাসল না নাসরিন, বলল, "আইরিনের এ-সব ব্যাপারে হয়তো তেমন কোন অভিজ্ঞতা হয়নি এখনও। তোমার কাছ থেকে প্রথম স্বাদ পেলে ওর জন্য ভালই হবে।"
.
"ছি, তুমি এত নোংরা! এসব কথা কোন স্ত্রী তার স্বামীকে বলে? নিরীহ, লক্ষ্মী একটা মেয়ের সঙ্গে নিজের স্বামীকে তুমি মিছিমিছি জড়াতে চাইছ"
.
স্ত্রীর কাছাকাছি চলে এল শওকত। তার চেহারার মায়াভরা ভাবটুকু অদৃশ্য হয়েছে, রাগে জ্বলজ্বল করছে চোখ দুটো, দৃষ্টিতেও আশ্চর্য ধরনের একটা নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠেছে।
.
হঠাৎ একটু ভয় লাগল , শিরশির করে উঠল তার শরীর। "ধ্যেত, তুমি দেখছি বড় বেশি সিরিয়াসলি নিচ্ছ" ভয় পাওয়া গলায় বলল।
.
তুই একটা শয়তান মেয়েলোক। কোন্ দিন না সীমা ছাড়িয়ে যাও!
.
ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমার কথা যদি এতই খারাপ লাগে তোমার, এখন থেকে আর কোন ভাল পরামর্শ দেব না।
.
"এরইমধ্যে অনেক বেশি বলে ফেলেছিস তুই। আমার মনে হচ্ছে তোকে খুন করতে পারলে দারুণ তৃপ্তি পেতাম।"
.
"এ তোমার পাগলামি, সরো তো, সুটকেসটা বন্ধ করতে দাও।" প্রায় চিৎকার করে উঠল নাসরিন। সে কিছু বোঝার আগেই শওকত তার একটা হাত ধরে সজোরে মোচড় দিল, হ্যাঁচকা টানে নিয়ে গেল পিঠের দিকে। স্বামীর গায়ে এত শক্তি, আজই যেন প্রথম উপলব্ধি করতে পারল নাসরিন। "ছাড়ো আমাকে! রাগে আবার চিৎকার করে উঠল, তবে এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে।
কেন ছাড়ব? ফয়সালের হাতে তোকে তুলে দেয়ার জন্যে? ।
.
হাঁপিয়ে উঠল নাসরিন, ব্যথায় নীলচে হয়ে গেছে চেহারা। শওকতের শক্ত শরীরের ভেতর গা মোচড়াচ্ছে নাসরিন। ছাড়ো আমাকে! আমার লাগছে! আর্তনাদ করে উঠল সে।
.
প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় মারল শওকত। টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে গেল নাসরিন। হুমড়ি খেয়ে নাসরিনের গায়ের ওপর পড়ল শওকত।
.
৩।
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে আইরিন আর সুমনা। সুমনা খেয়াল করল আইরিন কথার বলার মাঝে মাঝে ৫/৬ গজ দূরে একটা ছেলের দিকে তাকাচ্ছে।
.
ছেলেটার হাতে কফি, মনযোগ দিয়ে ক্যন্টিনে সেট করা টেলিভিশনে ক্রিকেট দেখছে।
.
আইরিন বলল "ওই তুই অই দিকে কি দেখছিস?"
.
"ছেলেটা কি কিউট তাইনা?"
.
"পছন্দ হয়েছে?
.
"হুম, বলা যায়। ভার্সিটিতে উঠেও যদি পছন্দ/টছন্দ না করি। আর কখন করবো বল?" একটু সুর করে, কেউ না শুনে মতো সুমনা গাইল "এখন তো সময় ভালাবাসার!"
.
"তুই কি সিরিয়াস?"
.
"হুম বলা যায়।"
.
"আরে ফাইজলামি না সত্যিই তুই সিরিয়াস কিনা বল। তারপর দ্যাখ আমার ম্যাজিক!"
.
"হুম, ধরে নে সিরিয়াস।"
.
"দূর শালী!... নাম্বার লাগবে কিনা বল?"
.
"পারলে নিয়ে আয়।"
.
"ওকে সোনা! নাও ওয়েট এন্ড সি"


আইরিন ছেলেটার খোঁজ-খবর নিতে শুরু করল। নাম রাহাত। ল ডিপার্টমেন্টে পড়ে। ভাল স্টুডেন্ট। প্রেম-ট্রেম করে কিনা এ বিষয়টা ক্লিয়ার না। তবে যেহেতু ছেলেটা হ্যান্ডসাম, বেশ কয়েকটা মেয়ের নজর আছে ওর ওপর।
.
ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন হওয়ায় আরো ডিটেলসে তথ্য পেতে ঝামেলা হচ্ছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছে এ ছেলেটাকে লাইনে নিয়ে আসা কঠিন হবে। আইরিন যাও একটা ছেলে পছন্দ করেছে - দেখা যাচ্ছে ছেলে পাথর গোত্রের। ওর মন পেতে হলে আইরিনের হাতুড়ি আর ছেনি লাগবে।
.
সুমনা সাহস করে রাহাতের সাথে একদিন কথা বলল, "এক্সকিউজ মি ভাইয়া! আপনার সাথে একটু কথা আছে।"
.
রাহাত বলল, "আমি তো আপনাকে চিনতেছিনা।"
.
"আমি ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের"
.
"ও! তো কি কথা?"
.
"আপনার নাম্বারটা কি দেয়া যাবে?"
.
কেন!
.
"আসলে আমার একজন বন্ধু আছে। নাম আইরিন। ও আপনার ওপর ক্রাশ খাইসে। ওর জন্যই নাম্বারটা চাইসি"
.
ক্রাশ শব্দটার ব্যাপারে রাহাতের ভয়ানক এলার্জি আছে। শব্দটা শুনলেই, কেন কে জানে, ওর মাথা খারাপ হয়ে যায়। ও বলল, "আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এ ধরণের সস্তা বিষয়ে কারো কাছে আমার নাম্বার শেয়ার করিনা। আর আপনার বন্ধুর হয়ে দালালি করছেন কেন? আপনি ভাবছেন বন্ধুর উপকার করছেন। আসলে উল্টো। ক্ষতি করতেছেন আপনার বন্ধুর।"
.
কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেল রাহাত। সুমনা পাল্টা কোন জবাবই দিতে পারেনি। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে রাগে ফুঁসছে ও এখন। মনে প্রচণ্ড জেদ এসে যাচ্ছে ওর - এর একটা বিহিত করতেই হবে ওর!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast