www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সখী যাতনা কাহারে বলে

সাদা শার্টের সঙ্গে ম্যাচ করে নীলরঙা জিন্স প্যান্ট পরল ফয়সাল, ইন করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জরিপ করে নিল ও - বেশ লাগছে! গুনগুন করে একটা প্রেমের গানের সুর তুলছে সে। ইদানীং সবকিছু বদলে গেছে ফয়সালের, "তোকে ছাড়া বাঁচা মুশকিল" টাইপ গান শুনতেছে। আগে ধুমধাড়াক্কা একশান/মারামারি না থাকলে ছবিই দেখতনা, এখন লুতুপুতু মার্কা প্রেমের সিনেমাগুলোও মনযোগ দিয়ে দেখছে। ছবির নায়কের জায়গায় নিজেকে আর নায়িকার জায়গায় মৌমিতাকে কল্পনা করলেই জীবনটা খুবই আনন্দময় হয়ে উঠে ওর।

মৌমিতা আর ও একই ভার্সিটিতে পড়ে। দুজন দুজনকে তুইতোকারি করে। কিন্তু ফয়সাল জানে, মেয়েটা ওর প্রেমে হাবুডূবু খাচ্ছে। তা নয়তো কী? ও হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। কেননা ভার্সিটিতে এত এত ছেলে থাকতে মৌমিতা ওকেই কেন এত বেশি টেক কেয়ার করে? ওকেই কেন গভীর রাতে ফোন করে গান শুনায়? ওকেই কেন সব কথা শেয়ার করে? নতুন কোন ড্রেস পরলে হোয়াটস আপ করে ওকেই কেন বলে "কেমন লাগছে?

কাল রাতে ফোন করেছিল মৌমিতা। বারবার করে বলে দিয়েছে বিকেল পাঁচটার আগেই যেন রবীন্দ্র-সরোবরে সে চলে আসে। সারপ্রাইজ আছে ওর জন্য। সারপ্রাইজটা যে কী ফয়সাল তা ভাল করেই জানে। ওকে প্রপোজ করবে মৌমিতা, আর কী? মেয়েটা অনেকদিন ধরেই "হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল" তবে মেয়েমানুষ বলে কথা - বুক ফাটে, তবু মুখ ফুটে না। কিন্তু পরশুর একটা ঘটনায় মৌমিতার সাহস হয়েছে বলে ফয়সালের ধারণা।

ঘটনা খুবই সামান্য, তবে মৌমিতার কাছে হয়তো নয়। লাইব্রেরী রুমে রূপার সাথে কথা বলছিল ফয়সাল। এ আর এক পাগলী। মাঝেমাঝে ফয়সাল ভাবে ও এত চার্মিং কেন! যা হোক একটু বেশিই গা ঘেঁষে বসেছিল মেয়েটি। মৌমিতাও ছিল লাইব্রেরীতে। খেয়াল করেছে ব্যাপারটা। চেহেরা স্বাভাবিক ছিল ওর, কিন্তু ফয়সাল জানে ভিতরে ভিতরে হিংসায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে মৌমিতা। ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চয় সিরিয়াসলি ভেবেছে মৌমিতা, তাই হয়ত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে চাইছে সে।

আয়নায় নিজেকে আরও একবার দেখে নিয়ে বাইরে বেরুল ও। রাস্তায় পা রেখেই রিস্টওয়াচে চোখ বুলাল, পাঁচটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। একেবারে কাঁটায় কাঁটায় পৌছতে হবে এমন কোন কথা নেই। একটু দেরী করে যাওয়াই বরং ভাল, ভাব নেয়ার দরকার আছে। চট করে একটা রিক্সা নিয়ে নিল ও। নিজেকে বড্ড ফুরফুরে লাগছে, হাওয়ায় ভাসছে যেন।ফয়সাল ভাবল, "আহ! কী চমৎকার বিকেল, এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন আল্পনাময় বিকেলবেলায়।"

রবীন্দ্র সরোবরে পৌছতে পৌছতে পাঁচটা পনেরো হয়ে গেছে। কোমরে হাত রেখে, কপট রাগ দেখিয়ে, চোখ-মুখ নাচিয়ে মৌমিতা বলল,"আজকেও লেইট! তোর কি সময়-জ্ঞান কোনদিনও হবে না?" মৌমিতা নীল শাড়ী পরেছে। কেন পরবেনা? ভাবছে ফয়সাল, মৌমিতা তো জানে নীল ওর প্রিয় রঙ।
স্যারেন্ডারের ভঙ্গীতে হাত তুলল ফয়সাল, বল্ল, "সরি!"
"হয়েছে থাক থাক।"

ফয়সালের হাত ধরে টানতে টানতে একটা কফিশপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মৌমিতা। মৌমিতা যেই ফয়সালের হাত ধরেছে ফয়সালের মনে হল সে একটা মস্ত বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আর গোলাপ, ডালিয়া, বেলী, হাস্নাহেনা, রজনীগন্ধা সব একসাথে ফোটে গিয়ে সৌরভ ছড়াচ্ছে চারদিকে অথবা সে পাহাড়চুড়ায় দাঁড়িয়ে, তার হাতে রংধনু! মোশারফ করিম স্টাইলে ফয়সালের চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে "জীবন এত সুন্দর ক্যারে!" ওর মনে হল রবীন্দ্রনাথকে এখন কাছে পেলে ভাল হত, মৌমিতার এ হাত ধরার দৃশ্যটা দেখিয়ে বলত, "দ্যাখ ব্যাটা 'ভালবাসা কারে কয়!"

কফি শেষ করে ফয়সাল মৌমিতার দিকে তাকাল। মৌমিতা প্রচুর কথা বলছে এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বলছে। কিন্তু ফয়সাল ভাবছে "ও কি একটু নার্ভাস? তা তো হবেই। এসব ব্যাপারে ছেলেদেরই যখন হাঁটু কাঁপে মেয়েদের আর দোষ কি?

"তোর সারপ্রাইজটা কি বল এবার" কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে কথাটা বলেই ফেলল ফয়সাল। মৌমিতা কিছু বলার আগেই ভ্যানিটিব্যাগে ওর ফোনটা বেজে উঠল। দ্রুত ফোনটা বের করে রিসিভ করল ও, বলল, "হ্যালো.. কোথায়? আসছি আসছি"

মৌমিতা ফয়সালের দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল, "চল, চল।"
"কোথায়?
"আরে চল না।"
অগত্যা ফয়সাল অনুসরণ করল মৌমিতাকে। কিছুদূর হেটে গিয়ে গোলচত্বরে দাঁড়ানো নীল পাঞ্জাবি পরা লম্বা, শুকনো একটা ছেলেকে লক্ষ্য করে হাত নাড়ল মৌমিতা। ছেলেটাও হাত নেড়ে উত্তর দিল।

ছেলেটার কাছে গিয়ে মৌমিতা তার স্বভাব-সুলভ চোখমুখ নাচিয়ে বলল,"পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, ও ফয়সাল, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।" তারপর ছেলেটার বাহুতে মাথা রেখে, ফয়সালের দিকে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠ বলল "ও রাহাত, আমার বয়ফ্রেন্ড! কালই নিউইয়র্ক থেকে ফিরেছে!"

রাহাত হাত বাড়িয়ে ফয়সালের সাথে হ্যান্ডশ্যাক করল। ফয়সাল প্রাণপণে চেষ্টা করছে চেহেরা স্বাভাবিক রাখার জন্য, কিন্তু পারছেনা। রংধনুর সাত রং খেলা করছিল যে চেহেরায়, শুকিয়ে আমশি হয়ে গেছে সেটা।মাত্র মিনিট পাঁচেক আগেও রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসা কারে কয় বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু ব্যাটা রবীন্দ্রনাথের অভিশাপেই কিনা কে জানে, সে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে - "সখী যাতনা কাহারে বলে!"
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রুমা চৌধুরী ০৯/০৯/২০১৮
    দারুণ লাগল শেষটা। খুব সুন্দর গল্প।
 
Quantcast