www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ১০০

স্বাধীনতা, আমার ও আমার দেশের

বলতে গেলে স্বাধীনতা এক ধরনের শব্দ মাত্র।
যেদিন থেকে পৃথিবী নানা ভাবে ভাগ হয়ে গেছে, সম্প্রদায়ে বিভাজন হয়ে গেছে সেদিন থেকে স্বাধীনতা শব্দ অনেকটাই কুক্ষিগত।
মানুষকে কারো না কারো অধীনে থাকতে হয় এবং নানা রকম নিয়ম কানুন আচার বিচার মেনে চলতে হয়।
এর বাইরে খুব কম সংখ্যক মানুষ যা ইচ্ছে খুশি করতে পারে। বলতে গেলে তারাই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
তারা যুদ্ধ করতে পারে, খুন করতে পারে, মানুষের কল্যাণ করছি বলে চিৎকার করতে পারে, মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদছে বলে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারে। তাদের স্বাধীনতা যাতে খর্ব না হয় তার জন্য আগে পিছে সিকিউরিটির ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া স্পাই লাগানো থাকে। যারা কিছুতেই বিরুদ্ধ কথা শুনতে চায় না।
এর বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশে বাস করে। দেশের পতাকা তোলে। স্যালুট করে। কবিতা লেখে। গল্প শোনায়। ঘুম পাড়ানি ছেলে ভুলানি ছড়া বলে। গুরু গম্ভীর আলোচনা করে। মাঠে ঘাটে রাস্তায় জীবনের পর্যালোচনা করে। আর স্বাধীন নাগরিক হিসেবে খুব গর্ব বোধ করে।
দেশের সার্বভৌম ও সুরক্ষার জন্য আইন কানুন আচার বিচার খুব জরুরী। যাতে স্বাধীন রাষ্ট্র সুস্থির ও সুরক্ষিত থাকে।
তবু দেশের ভেতরে সেই আইন সেই আচার সেই বিচার সেই স্বাধীনতা সঠিক ভাবে মূল্যায়িত হয় না। ফলে শোষণ নিপীড়ন অত্যাচার অনাচার অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। সাধারণের বসবাস সেই মেপে পা ফেলা, মেপে কথা বলা, মেপে দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
খাঁচা নেই কিন্তু মাচা আছে, পড়ে যেতে পারে যখন তখন। ডানা আছে কিন্তু ওড়া নিষেধ। সুর আছে কিন্তু গুণগান ছাড়া গান গাওয়া নিষেধ। পথ আছে কিন্তু যাওয়া নিষেধ। স্বাধীনতা আছে কিন্তু তা কেবল উদযাপনের জন্য। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবু স্বাধীনতা আছে বলে আমি লিখছি। স্বাধীনতা আছে বলে আমার কথা বলার ক্ষুদ্র হলেও একটা জায়গা আছে। স্বাধীনতা আছে বলে তুমি শুনছো আমার কথা। দুমুঠো খাবার জোগাড় করে আমি খেতে বসি। হা হা করে হাসি কাঁদি। ঠাট্টা ও মশকরা করি।
ইংরেজ শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য শত শত শহীদ প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দেশের স্বাধীনতা, মানুষের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়।
কি চেয়েছি কি পেয়েছি আর চাওয়া পাওয়ার ফারাক ইত্যাদি ভাবতে গেলে অনেক কিছু উলোট পালট হয়ে যায়। আসলে মানুষের স্বাধীনতা আগেও ছিল না এখনও নেই।
আমিও ভাবছি এই যে কাজে যাচ্ছি, টুকটাক কাজ পাচ্ছি, সামর্থ্য অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনছি, খাচ্ছি দাচ্ছি, কষ্টে সৃষ্টে সংসার চালাচ্ছি এতে কি খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না? তা তো নয়। তাহলে আমি স্বাধীন আমরা স্বাধীন।
আসলে তা কিন্তু নয়।
সব সময় নজর আছে তুমি নিরপেক্ষ নাকি সপক্ষ? তাহলে কোন পক্ষ? কোন কোন লোকের সঙ্গে মিশছো? কিভাবে লাইফ স্টাইল গড়ে তুলছো? সামাজিক ভাবে তোমার অবস্থান কি? পাঁচজনের সঙ্গে কি কথা বলো? সরকারি ব্যবস্থায় তুমি কোথায় অবস্থিত? তোমার চাল চলন কেমন! ইত্যাদি ইত্যাদি নানান বিষয়ে নিয়মিত স্ক্যান চলে।
একটু এদিক ওদিক হলেই কোপ পড়ার সম্ভাবনা। আর কোপ পড়লেই বোঝা যায় স্বাধীনতা কাকে বলে?
আচ্ছা বলুন তো, এভাবে সুতোর উপর কি বরাবর হাঁটা যায়? এভাবে মেপে চলতে থাকাকে কি জীবন বলে? এদেশ ওদেশ সব দেশেই সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা এমনই।
তবু স্বাধীনতার এমন দিন এলে মনের মধ্যে একটা দেশপ্রেম জেগে ওঠে। আমার দেশ। আমার নিজের দেশ। যে দেশের জন্য লাখো লাখো শহীদ জীবন দিয়েছেন। আবার আমরা আমাদের দেশকে নিজেদের মত করে সুন্দর আনন্দময় করে গড়ে তুলব।
তাই স্বাধীনতা আসলে একটা দেশের। দেশবাসীর। কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নয়। কে কি পায় নি, কার কি অধিকার ভঙ্গ হয়েছে কি হয় নি, কোথায় কে সমষ্টি নষ্ট করছে ইত্যাদি স্বাধীনতার কোনো উদ্দেশ্য নয়।
তাই স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতার শুভেচ্ছা সবই আমার দেশ আমাদের দেশ আরো সুন্দর আনন্দময় গড়ে তোলার আন্তরিক অঙ্গীকার।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩৩২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৮/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast