www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৯৬

বন্ধু শত্রু

আমার তো মনে হয় পৃথিবীতে সবাই আমার বন্ধু। মিত্র। কেউ শত্রু নয়।
বন্ধুত্ব বা মিত্রতা এমনই সহজাত। কিন্তু শত্রুতা তৈরি হয়। কারো সাথে কোন কিছু ব্যাপারে মতভেদ থেকে শত্রুতা তৈরি হয়। এই মতভেদের জন্য তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে হবে। এই জড়িয়ে পড়ার মূলসূত্র হল বন্ধুত্ব। বন্ধু না হলে মতামত আসবে না। আর মতামত শুরু না হলে মতভেদ আসবে না। আর শত্রুতা আসবে না।
তাই যে কেউ আমার বন্ধু। সে চেনা হোক বা অচেনা। পাশাপাশি বসে বসে, পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে, পাশাপাশি কাজ করতে করতে, পাশাপাশি থাকতে থাকতে কতজন তো বন্ধু হয় অথবা হয় না।
কিন্তু বন্ধু না হলে শত্রু হয় না। অচেনা অজানা অদেখা কেউ আমার শত্রু হবে কি করে? আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি একমাত্র আমার বন্ধুই করতে পারে। যে বন্ধু নামে পরিচিত হয় সেইই কেবল পরবর্তীতে শত্রু হয়।
তার মানে পৃথিবীতে সবাই আমার বন্ধু। আপন। সাহায্য চাইলে পাবেই পাবে অথবা পাবে না। রাস্তা ঘাটে পথে প্রান্তরে গ্রামে শহরে দেশে বিদেশে চলার পথে যে কেউ আমার বন্ধু আমাদের বন্ধু। যদি তুমি সাদা মনে কাদা নেই হও তাহলে বিন্দাস বন্ধুর মত যার কাছে ইচ্ছে খুশি তুমি সাহায্য চাইতেই পারো।
তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে চলার পথে সেই পথের দিশায় বন্ধু ভাবনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। না হলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেখানেও ভাবার বিষয় যে প্রতারিত হওয়া শত্রুতার লক্ষণ নয়।
কোথাও বেড়াতে গিয়ে যার কাছে সাহায্য চাইলে সে তোমাকে ঠকাল। সে কিন্তু তোমার শত্রু নয়। সে তোমার বন্ধু হতে পারে নি।
কেন না রাস্তায় বেরিয়ে সবাই আমার বন্ধু ভেবে চোখ কান বন্ধ রেখে এগিয়ে গেলে তো চলবে না। শত্রু বা শত্রুতা না থাক, সবাই যে বন্ধু নয় এ কথা বলা যেতেই পারে।
তাই আমি ভাবতে পারি সবাই আমার বন্ধু। বন্ধু ভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে হাত বাড়াতে হয়।
আপনি হিসেবে করে দেখবেন যে মনে হয় আপনার শত্রু সে আসলে কোন এক সময় আপনার বন্ধু বা বন্ধু ভাবাপন্ন ছিল।
এই যে ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা, পাশের বাড়ির সাথে শত্রুতা, পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে শত্রুতা কিংবা যে কোন শত্রুতায় দেখা যায় এরা বন্ধু ছিল তাই আজ শত্রু। উড়ে এসে জুড়ে বসা যে কেউ আমার আপনার বন্ধু হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে কিন্তু কখনই শত্রু হতে পারে না।
তাই বলা যেতেই পারে, পৃথিবীতে নিজের পরিবার ছাড়া কেউ বন্ধু নয়। আর যা কিছু সব স্বার্থ।
একটা পর্যায় পর্যন্ত নিজের অবস্থান ঠিক রেখে মানুষ তার পরে তার হাত বাড়িয়ে দেয় আমরা তাকেই বন্ধু বলি। কিন্তু কোন স্বার্থ ছাড়া, কোন প্রত্যাশা ছাড়া, কোন দেওয়া নেওয়া ছাড়া একমাত্র পরিবারের লোকজন ছাড়া কেউ কিছু করে না।
যদি করে তবে সে তার নামের জন্য ভাবনার জন্য বা স্বভাবের জন্য। এ জাতীয় মানুষ বিরল। নেই তা নয়। আছে। তোমার পাশে আছে। আমার পাশেও আছে। আছে বলে পৃথিবীর বুকে সংঘবদ্ধ জীবন বর্তমান।
একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কি ঠিক হল? তা বলে আমি?
সে বলেছিল, তাতে কি হয়েছে? কে যাবে? তাই তুই। এতে অন্যায় কিছু নেই।
সত্যিই অন্যায় নেই। অন্যায় কিছু হয়নি। তবে আমরা যে অবস্থানকে পরম বন্ধু বলে ভাবি সেই স্কুল কলেজ কর্মস্থান প্রতিবেশী সেখানে যে বলে ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো, কেন সে বেস্ট ফ্রেন্ড। কোন উত্তর নেই।
আসলে উত্তর হয় না। অনুভব করতে হয়। এই অনুভূতির সবচেয়ে কাছে অবস্থান করে পরিবার। পরিবারে যদি বন্ধুত্ব না গড়ে ওঠে তাহলে অন্য কোথাও গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। মুখের আলাপে ভেবো না বন্ধু।
বন্ধু দুর্লভ। একসাথে পড়াশুনা করেছে বলে ভেবে বসো না, ও আমার বন্ধু। একসাথে ছোটবেলায় মেলামেশা ছিল বলে ভেবে বসো না, ও আমার বন্ধু। একসাথে কিছুদিন কাজ করেছো বলে ভেবে বসো না, ও আমার বন্ধু। এরা সবাই বন্ধু হতে পারে, নাও হতে পারে, আবার শত্রুও হতে পারে। অতএব সাধু সাবধান।
একমাত্র পরম বন্ধু মা বাবা। তারপর নিজের স্ত্রী। শেষ বয়সে অনেকেই তা টের পায়। আর পরিবার।
তারপরেও যদি কেউ পরম বন্ধু পায়। সেটাই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৪২৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৮/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দারুণ লিখেছেন
  • চমৎকার
  • অসাধারণ
  • ভালো লাগলো।
  • মাহতাব বাঙ্গালী ০২/০৮/২০২১
    বন্ধুত্বের উপর ভালোই লিখেছেন
 
Quantcast