www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৮২

বিজ্ঞানমনস্কতা
-------------
সবার মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা আনার প্রধান অন্তরায় আমরা নিজেরা। বিজ্ঞ জ্ঞানী গুণী ডিগ্রিধারী সমাজধারক পদাধিকারী প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে কুসংস্কারে আবদ্ধ। ফলে সেইসব (কু)সংস্কারে 'বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু তর্কে বহুদূর' মনে করে সবাই সেই একই রাস্তার পথিক হয়ে যায়।
মাথার মধ্যে ঢুকে থাকে বেরোনোর সময় কেউ হাঁচলে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। সামনে দিয়ে বেড়াল চলে গেলে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। এখন আমি দাঁড়ালাম না। বাইরে বেরিয়ে কাকতালীয় ভাবে হয়তো কিছু ঘটে গেল তাতে আমার মনে আপসোস র‍য়ে গেল একটু দাঁড়িয়ে পড়লে বোধ হয় এটা হত না।
শিশু জন্মের পরে ঠিকুজী, কোষ্ঠী, তাবিজ, মাদুলি, আংটি, ঘুনসি, নজরকাঠি, নজরটিপ, জলপড়া, গোত্রভাঙা, মধু খাওয়া, ছোঁয়াছুঁয়ি, শিশুস্নান ইত্যাদি আরো বিভিন্ন প্রথার কোন না কোন কিছুর সঙ্গে আমাদের প্রতিটি পরিবার যুক্ত।
এসব বেশিরভাগ এসেছে কোন না কোন অনুশাসনের হাত ধরে। জন্মক্ষণ ধরে জ্যোতিষচর্চা পাথরধারণ ইত্যাদিতে শিশুকে সেই যে আষ্টেপৃষ্ঠে আমরা জড়িয়ে ফেলি তার থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না। আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও মুক্ত হতে পারে না।
ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে। কিন্তু এই যে অনুশাসন তা অনেকটাই বিশ্বাসের ভবিতব্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই হয়তো কিছু হবে না কিন্তু যদি কিছু হয় এই ভেবে আজ অমাবস্যা বা পূর্ণিমা নিরামিষ খাওয়াই ভাল। আজ চুল কাটা যাবে না। এটা মল মাস। এ সময় বিয়ের শুভ যোগ নয়। ইত্যাদি। ইত্যাদি কোন না কোন অবস্থানে আমরা বড়রা নিজেদের সাথে সাথে শিশুদেরও জড়িয়ে নিই।
সারা সমাজজুড়ে প্রত্যেকে কোন না কোন এরকম বিজ্ঞানের বাইরে কিছু না কিছু যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে কিছু সংস্কার মেনে চলেছে।
এসব যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে সংস্কারে কিছু ব্যাখ্যা জোয়ার ভাটা চাঁদ সূর্য গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোঝানোর চেষ্টাও আমাদের বড়দের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। যা বাড়ির ছোটদেরও ঠারে ঠুরে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পরবর্তী প্রজন্ম সেসব দেখছে শুনছে ভাবছে। তাই তাদের কোমল হৃদয়ে এই যুক্তিবিহীন ঘটনা বিষয়ে অনেককিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। কিন্তু তারা উত্তর পায় এরকম - এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা চলে না।
- বড়দের মুখে মুখে কথা বলো না, এটাই নিয়ম।
- আরে বাবা, তা না হলে পাপ হবে। আর কোন কথা নয়।
- আবার উল্টে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করো না তো।
- বিশ্বাসে কোন প্রশ্ন চলে না।
- প্রশ্ন করে নিজের ভবিতব্য নিজে দিশাহীন করো না।
কিংবা কিছু প্রচলিত উত্তর দিই। যা তাদের মনঃপুত হয় না। তবু ছোটরা গুটিয়ে যায়। প্রশ্ন করার ইচ্ছে আর থাকে না। তাছাড়া সংসারের যা চলমান নিয়ম তার বিপরীতে প্রশ্ন করে শুধরে নেওয়া ছোটদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যুক্তি দিয়ে জানার ইচ্ছে আস্তে আস্তে তাদের লুপ্ত হয়ে যায়।
ফলে ছোট বড় সবার মস্তিষ্কে বিজ্ঞানচর্চার সাথে সাথে সেইসব যুক্তিবিহীন (কু)সংস্কার ওতপ্রোতভাবে সেঁটে যায়। যদি কিছু হয়ে যায়। যদি কিছু হয়ে যায়। তার চেয়ে একটু দাঁড়িয়ে যাওয়াই ভাল। হাতজোড় করে অঞ্জলি দেওয়াই শ্রেয়। অঞ্জলি পর্যন্ত খালি পেটে থাকাই ভাল। মস্তিষ্ক তাই বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তি মানলেও মন পড়ে থাকে সেই সব গড্ডালিকার দিকে।
গর্ভে শিশু এলে এই এই নিয়মকানুন, জন্মের পরে এটা করতে হয় ওটা করতে হয়, বিয়ের এই এই প্রথা, মারা গেলে এইসব, শুভকাজ নারকেল ছাড়া হবে না, শুভক্ষণ বলে কথা ভুলে যেও না, সূর্য গ্রহণের সময় কিছু খেতে নেই, গর্ভবতী মহিলারা গ্রহণ দেখলে তার বাচ্চার ক্ষতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি অনুশাসন যতদিন ডালপালা মেলে সমাজে অবস্থান করবে ততদিন সংস্কার কিংবা কুসংস্কার শুধুমাত্র বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়ে দূর করা যাবে না।
বিজ্ঞানমনস্কতায় কিন্তু এটা সংস্কার ওটা কুসংস্কার এ রকম হয় না। যুক্তির হাত ধরে জীবনকে স্বচ্ছ স্বাভাবিক সুন্দরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কিছু কিছু স্বাধীনচেতা এসব কিছু কিছু না মেনে বিজ্ঞানমনস্কতায় এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা অল্পই। কেন না সেইসব স্বাধীনচেতা মানুষও কিছু কিছু অনুশাসনের সংস্কার তো মেনেই চলে।
অনুশাসনে জন্মের এই এই প্রথা, বিয়ের সময় এই এই প্রথা, মৃত্যুর এই এই প্রথা, অঞ্জলি না খেয়েই দিতে হয়, একাদশীতে উপোষ থাকতে হবে যদি ঠিক হয় তাহলে তাবিজ মাদুলিও ঠিক। রত্নধারণও ঠিক।
কেন না যুক্তি থাক বা না থাক আমার পক্ষে যেটা ভাল শুধু সেটাই গ্রহণ করব, না হলে খারাপ বলে দেব, গ্রহণ করব না তা তো হয় না। দুটোই যে বিজ্ঞানমনস্কতা বা বিজ্ঞান যুক্তির বাইরে।
এ প্রসঙ্গে মতি নন্দীর একটা গল্প আছে - এক গোলকিপার ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সময় গাড়িতে তার ছেলে তার গায় বমি করে দেয়। বড্ড বিরক্তি নিয়ে খেলতে নামে ও জিতে যায়। পরের ম্যাচে যাওয়ার সময় সারা রাস্তায় অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে আর বমি করাতে পারে নি। খেলতে নেমে সেই কথা মনে করতে করতে ম্যাচ হেরে যায়। ফলে দোষ চাপে বমির।
ফলে আমরা বড়রা পরীক্ষার আগে দইয়ের ফোঁটা না দিতে পারলে মনটা ফস ফস করে। একবার আমার ছেলের অঙ্ক পরীক্ষার দিন দইয়ের ফোঁটা দিতে ভুলে গেছি। পরে মনে পড়েছিল। মনটা ফস ফস করছে। কিন্তু ছেলে তো পরীক্ষার হলে। কিন্তু সেই দিন ছেলের সবচেয়ে ভাল পরীক্ষা হয়েছিল। একশ তে একশো।
আবার আমি একবার অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যে পাঁচটা নাগাদ এক ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে বললাম - এই এই অঙ্কগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। দু একটা প্র্যাকটিস করে নাও। ছাত্রী বলল - বাবা তো সব পেন মায়ের থানে দিয়ে এসেছে তাই এখন খাতায় লেখা যাবে না। পুজোর পরে রাত আটটা নাগাদ আনবে। তারপরে।
বুঝুন অবস্থা। সে তো পুরো ফেল। তার বাবা মা বলল - তাও হল না। কত চেষ্টা করলাম। কি আর করা যাবে।
আমরাও তাই কিছু প্রথা, কিছু অবস্থান, ছোটখাটো বালিশে বসলে ফোঁড়া হবে না, হাঁচি না শোনার ভান করে বেরিয়ে যাবো, বিড়াল সামনে পড়লেও গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাবো, তাবিজ মাদুলি ব্যবহার করব না ইত্যাদি ইত্যাদি করে দেখাতে পারি এবং দেখাই। আবার কাজের মাঝে একটু পরে এসব আর মনেই থাকে না।
কিন্তু এভাবে সার্বিক বিজ্ঞানমনস্কতা সমাজের বুকে আনা কখনই সম্ভব নয়। যতদিন অনুশাসন থাকবে।
আমরা প্রত্যেকে কোন না কোন ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে যুক্ত। কেউ ধর্ম নিরপেক্ষ নয়।
১) কেননা ধর্মবিহীন কোন উৎসব নেই। সেই উৎসবের রীতিনীতি আপনি মানেন না সে আপনার ব্যাপার। সে ধর্মে থেকেও অনেকে অনেক রীতি মানে না।
২) সবাই সামাজিক বিয়ে করে। পুরোহিত ডেকে অথবা মন্দিরে অথবা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে। তাতে ধর্মীয় কিছু না কিছু ছাপ থাকে। সিঁন্দুর ব্যবহার করে অথবা করে না। অতএব আপনি একটি ধর্মে যুক্ত।
৩) কিভাবে সৎকার হয়েছে? দাহ অথবা কবর। যাই হোক না কেন তা ধর্মীয় আচরণের সঙ্গে যুক্ত।
৪) আপনি যে নামে পরিচিত সেটাও একটি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৪৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জানবক্স খান ১৯/০৭/২০২০
    very impertant and essential things you discussed.
  • Nice
  • ফয়জুল মহী ২১/০৬/২০২০
    । মনোহর  লেখনী
  • চমৎকার।
  • ভালো লাগলো।
 
Quantcast