www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৭

নিজের ভালো অন্যের ভালো
===============
প্রতিদিনের করে ফেলা কাজের মধ্যে যদি আয় ব্যয়ের হিসেব না করি তাহলে চলার পথটা খুব সহজ হয়। আপনি যে কাজটা করতে যাচ্ছেন তাতে যদি ভাবেন আমার কি লাভ তাহলে কাজটা ঠিক করতে গিয়ে কোথাও না কোথাও বেসুরো লাগবে। কিন্তু যদি যে নিয়মে কাজটি করা উচিত তা যদি করেন তাহলে শুরুতে হয়তো কষ্ট হবে, এমন কি মনে হতেই পারে কেন এসব করছি বৃথা করছি না তো? শেষে সাফল্য আসবেই এবং আপনার লাভ হবেই হবে।
কিভাবে? যে কাজের জন্য আপনি লাভবান হবেন তা সহজেই বোঝান হয়তো মুশকিল হয়ে যেতে পারে।  তাই কাজ করে যেতে হবে। গীতার কথা 'মা ফলেষু কদাচন'।
যে কাজটা করছি তা যেন মোটামুটি নিয়ম মেনে আর অন্যের কোন প্রকার ক্ষতি না করে সংঘটিত করতে হবে।  
আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা করি না। লাভ নেই বলে আমরা কোনো কাজ করিই না। গল্পের বই পড়ে লাভ নেই বলে ছোটদের আমরা তা পড়তে দিই না। স্কুলের যেটুকু গল্প থাকে তাই বারবার পড়াই।
আবার লাভ আছে ভেবে অনেক সময় সমাজের চোখে খারাপ জেনেও সেই কাজ করে ফেলি। গোপনেও তা করতে প্রশয় দিই।
এ সব ক্ষেত্রে আমরা আর্থিক লাভটাই দেখি। অন্য আত্মিক ব্যাপারটা আমরা ভেবেই দেখি না।
তাই এগিয়ে যাওয়ার পথে যা যা উচিত বলে মনে হবে অন্যের ক্ষতি না করে তাই  করে ফেলতে হবেই।

ভাল ভাল কথা তো আমাদের মনীষী মহাপুরুষেরা অনেক বলে গেছেন। আবার সেইসব বললে কেউ শুনবে না। যদি কেউ বলে তাকে সবাই বোকার প্রলাপও বলতে পারে। কিংবা বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে পারে। শিশুরাও বুঝে গেছে এসব পড়ার জন্য ফালতু পড়া। ভাল কিছুর রসাস্বাদন করতেই চায় না।
এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভালোবেসে কেউ কোন কাজ করেই না। একটু হাত লাগিয়ে দিতে বললে ভাবে, সময় নেয়। সময় আছে কি না, কোন লাভ বা ক্ষতি হবে কি না, কোন ফায়দা পাবে কি না, পেলে কিভাবে পাবে, সেই ফায়দা নেওয়া উচিত কি না এইসব নানান ভাবনা ভেবে তারপর হাত লাগায় অথবা হাত লাগায় না।
রাস্তায় একই সঙ্গে মেডিক্যাল ইঞ্জিনিইয়ারিং শিক্ষা কলমচি টেকনিক্যাল শ্রমিক খেটে খাওয়া ইত্যাদি প্রায় সমস্ত শ্রেণি যাতায়াত করে। কিন্তু হঠাৎ কোন প্রয়োজনে এদের কাওকে কোন ভূমিকাই পালন করতে দেখা যায় না। মেডিক্যাল তার হাসপাতাল বা চেম্বার ছাড়া, শিক্ষা তার স্কুল বা টিউশন সেণ্টার ছাড়া, ইঞ্জিনিয়রিং তার চেম্বার বা প্রজেক্ট ছাড়া, কলমচি তার নিজস্ব রেজিস্টার ছাড়া অচেনাই থেকে যান। কিংবা যদিও বা চেনা যায় বা চেনা দেন তা কেবল তার বৃত্তের মধ্যে।
ফলে রাস্তায় অন্যায় অন্যাহ্য অনৈতিক ভুল শেষ বা শেষ পর্যন্ত যাই হোক, সবাই দেখেও না দেখার ভান করে। মেডিক্যাল যদি একটু হাত বাড়ায় চারপাশে কিছু প্রাণ বেঁচে যায় বা বাঁচার অবস্থান আরও ভাল হয়ে যায়। শিক্ষা যদি পাশের কাওকে কিছু শিক্ষার অবস্থান বাতলে দেন তো সেই জ্ঞান সমাজের পক্ষে মঙ্গল হতেই পারে। এই ভাবে প্রতিটি অবস্থান যদি ‘আমার তো ডিউটি নেই, আমি জানি না’ বলে, না এড়িয়ে যায় তাহলে অনেকটাই সামাজিক জীবন ভাবনা পাল্টে যেতে পারে।
যদিও এসব সরকারী বেসরকারী এনজিও ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ করে মাইনে দিয়ে কাজ করায়। অর্থাৎ মাইনে পাই, ফিজ নিই, কমিশন পাই তাই কাজ করি। ডিউট শেষ, আর তো কিছু জানি না।
আমি মেডিক্যাল আমি ডিউটির বাইরে অন্য কেন ভাবব? ঠিক একই রকম ভাবে পাশের বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীও একই রকম ভাবছে। শিক্ষকও তাই।
ফলে তাৎক্ষণিক অবস্থানে পাশের বাড়ি চিকিৎসা সংক্রান্ত থেকে যেমন সরে গেল, আমিও নিরাপত্তা সংক্রান্ত থেকে সরে গেলাম। শিক্ষা গম্ভীরভাবে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
আবার তার মানে এই নয় যে, প্রত্যেকেই সারাদিন একই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কিন্তু এই ভাবনা বা ভাবনার বিস্তার যে যার অবস্থান থেকে একটু একটু করে পাশের জনকে ছড়িয়ে দিলে অবস্থান বদলাতে বাধ্য। এবং সামাজিকভাবে প্রত্যেকের তার নিজস্ব কাজের ভঙ্গিমা বদলে আরও ভালো হতেই পারে।
বাস্তবে এসব এতটাই উল্টো পথগামী জীবনযাত্রায় গড়ে উঠছে যা ভাবনার অতীত। মাইনের জন্য নিরাপত্তা যেমন বুকে গুলি খেতেও প্রস্তুত তেমনি সন্ত্রাসও একই ভাবে মাইনে বা এককালীন অনেকটা আর্থিক পেয়ে বুকে গুলি মারতে বা খেতে প্রস্তুত। তাহলে কে সঠিক? ভাবা যেতেই পারে।
রাস্তায় মারামারি হলে কিছু না বুঝে অনেকেই হাত লাগায় আরও ক’ঘা দিতে। মারলে কিন্তু সবার লাগে। সেই অবস্থানে কিন্তু সমস্ত শ্রেণিই থাকে। তখন সবাই হিরো হয়ে যায়। সবাই বুঝে যায় অন্যায় হয়েছেই। অতএব তা বিনাশ করা দরকার। কিভাবে? না, আরও ক’ঘা দিয়ে শেষ করে দাও। এই আরও ক’ঘা অন্যায় নয়?
এখানে উল্টোদিকটাও ভাবা যেতেই পারে। তা হল, তুমি বললেই যে শুনবে না তা তো নয়। এমনও দেখা গেছে ভুল কি ঠিক জানি না, তুমি বলেছ তাই করবই না। সবার মনের মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব। সে শিক্ষিত কি অশিক্ষিত। অবশ্য পাশাপাশি সমাজ অবস্থান বুঝতে শিক্ষার দরকারের চেয়ে দরকার মানবিকতা বোঝা। যে কষ্টটা আমার হয় সেটা অন্যেরও হয়। যে সুখ আমি পেতে চাই সেটা অন্যেও পেতে চায়। যে বাড়ি গাড়ি আমি পেতে চাই সেটা অন্যেও পেতে চায়। সেই কষ্ট তার পাওনা কি না, সে জানে না তাও সে পেল, সেই সুখ সে পাবে কি না জানে না তাও সে পেতে চায়, সেই বাড়ি গাড়িতে বিলাসিতা সেও খোঁজার চেষ্টা করে বা করছে এবং করবে। ফলে তাকে পেছনে ফেলে আমি এগিয়ে গেলাম কিংবা আমাকে পেছনে ফেলে সে এগিয়ে গেল তা হয় না।
এই এগোনো পেছনো আরও স্পষ্ট বোঝার জন্য দরকার মানবিকতা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০২/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast