www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ছন্দ

ছন্দ
----
বিশ্ব সৃষ্টির মূল কথাই হল ছন্দ। ছন্দে চলতে শিখলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। পৃথিবী চন্দ্র সূর্য তারা গ্রহ নক্ষত্র সবই চলছে ছন্দে। সৃষ্টির রহস্যই হল ছন্দ। এর বাইরে যে গিয়েছে সে হারিয়ে যেতে বাধ্য মহাকালের গহ্বরে।
শিশুদের আমরা তাই ছন্দ শেখাই। ছড়া বলতে শেখাই। যাতে সে সহজে তা করায়ত্ত করতে পারে। তখন সে যা বলে তা সে বোঝে না। শুধু ছন্দে দোল খায় এবং পর পর খুব সহজে বলতে পারে।
সেই ভাবনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার পড়াশুনা থাকা খাওয়া ইত্যাদি যদি নির্দিষ্ট ছন্দে গড়ে তুলতে পারি এবং তার আশেপাশের অবস্থানও যদি নির্দিষ্ট ছন্দে থাকে তাহলে সেই শিশু তার বোধে সাফল্য পাবেই পাবে।
সাফল্য তো আর হাতের মোয়া নয় যে সহজে পাওয়া যাবে। তাকে অর্জন করতে হয়। অবশ্যই তার জন্য ছন্দে চলার উপর জোর দিতে হবে। তাহলেই সাফল্য সহজেই অর্জিত হবে।
যেমন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা। মুখ হাত ধোয়া। সমস্ত প্রাকৃতিক কাজ সেরে বড়দের যে কাজে লেগে পড়া। ছোটদের পড়তে বসা। টিউশন যাওয়া। তারপর স্কুল ... ইত্যাদি, ইত্যাদি। এ সমস্তই নিয়মিত করা দরকার। মাঝে মাঝে এসবে যদি বিঘ্ন আসে তাও আবার নির্দিষ্ট ছন্দে ছন্দিত হলে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এর মাঝে শিশুটির বাবা মার আচরণও নির্দিষ্ট ছন্দে থাকা দরকার। সেখানে যদি তাদের মাঝে অন্য কোন অস্বাচ্ছন্দ্য ঢুকে পড়ে তাও কিন্তু শিশুটির মনে বা তার বড় হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তখন যদি আমরা আক্ষেপ করি ঐ তো কত খরচ করলাম, ছেলেমেয়ের পেছনে ঘুরে ঘুরে কত কষ্ট করলাম তবুও মানুষ হল না।
শিশুটির বাবা মা যাদের সঙ্গে ওঠা বসা করে যে ভাবে যে ছন্দে চলাফেরা করে সেই ছন্দ কিন্তু শিশুটির শেখার ছন্দিক রাস্তা। কেননা ছন্দ ব্রেকও কিন্তু নির্দিষ্ট ছন্দে করতে হয়।
যার বাবা সিগারেট খায় তার ছেলে আজ না হোক কাল সিগারেট খাবেই। ঝগড়া ঝাটি করলে ঝগড়াঝাটি করবে। তখন আর আফসোস করে কি হবে? বাবা মা যদি এসব না করেন তাহলেও যদি করে আপনি তার উদাহরণ হতে পারবেন। কিংবা সে আপনাকে দেখে হয়তো আজ কিংবা কাল ধরে ফেলা নেশা ছেড়ে দিতেও পারে।
অনেক চেষ্টা করে অনেকে এইভাবে ছন্দে জীবনটাকে কিছুতেই আনতে পারে না। কিন্তু সেই চেষ্টাও একটি নির্দিষ্ট ছন্দে চললে তাতে কিছু না কিছু পাওয়া যাবে। আমি যদি আজ সাবান তো কাল লঙ্কা পরশু কাপড় ইত্যাদি নিয়ে শুধু শুধু বাহানায় বেগড়বাই করি তাহলে সংসারের কোন ডালটাই ধরা হবে না। অকারণে এ ওকে দোষ দেয় বা ও একে দোষ দেয় এ সমাজ থেকে কিছুই পেলাম না।
সংসার কোন প্রতিযোগিতা নয়। বাবা মা যেটুকু ভাবে তা ছেলে মেয়ের মঙ্গলের জন্য। আবার ছেলে মেয়ের বোধ জন্মানো পর্যন্ত সেই ধারা বজায় রাখা দরকার।
এখানে আর একটা জিনিস খুব কাজ করে খুব তাড়াতাড়ি সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা। যা আরো ভয়ঙ্কর। অনেকটা বীজগণিতের স্টেপ জাম্প দেওয়ার মত। আর সেখানেও ছন্দ পতন শুরু হয়। ফলে এই ভাবে সাফল্য যেটুকু আসে তা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতেও সময় নেয় না।
সংসারে প্রত্যেকের সহযোগিতায় একটা নির্দিষ্ট ছন্দ তৈরি হয়ে যায়। যেমন ধরুন ছেলেমেয়ের পড়াশুনা, মিসেসের রান্নাবান্না আর আপনার অফিস বা ব্যবসা। এই সিস্টেমের মধ্যে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যেকে নিজেদের কাজগুলো ঠিক মত সময় মত করছি কি না।
রান্না আমার কাজ না। আমি তো ছেলেকে পড়াতে পারব না। আমি এখন বাজারে যাব কেন? তুমি দুধ আনতে পারো না?
এই কেন কেন, না না অবস্থানে দেখবেন, সব কাজই ছন্দ ছাড়া একটা বেনিয়মের মধ্যে চলতে থাকবে?
আমি পারব অথচ করব না, তা ঠিক নয়। কোন কাজ যেমন কারো নয় তেমনি সব কাজ সবাই ভাল পারে না। আপনি যেমন অফিস ভাল সামলাতে পারেন তেমন রান্না করতে পারেন না। তেমনি যে রান্না ভাল সামলায় সে অফিস সামলাতে পারবে না এ রকম ভাববেন না? হয়তো ভাল পারবে না। হতে পারে।
প্রতিটি সংসারে এই কাজগুলো একটা সিস্টেমে কে কখন করবে তার হিসেবেই গড়ে ওঠে। আমাদের কাজ শুধু সদিচ্ছা নিয়ে সেই ছন্দটিকে ধরে রাখা।
প্রতিটি সংসারে ধরে রাখা এই ছন্দ সংসার ছাড়িয়ে সমাজে, সমাজ থেকে দেশে দিশে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য। পাড়াতে সমাজে এমনকি অফিস আদালতেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বেই।
নিজের সংসার ঠিক ছন্দে যদি চালাতে পারি, যদি আমার শিশুটির সামনে ছন্দের উদাহরণ গড়ে তুলতে পারি, তাতেও সমাজ সেবার উদাহরণ হতে পারে।
আমার ছেলে যদি ছবি আঁকে সে তার ছবি আঁকা পরিমণ্ডল গড়ে তুলবে। যদি সে গুণ্ডা হয় সে তার পরিমণ্ডল গড়ে তুলবে। সমাজ গঠনের এও একটা দিক। ছন্দের অবস্থান।
সুস্থ সংসার ও তার ছন্দ অবস্থান গড়ে তোলা দরকার। তাতেই সমাজসেবা ও সামাজিক মঙ্গল।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮১১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ইব্রাহীম রাসেল ০২/১০/২০১৩
    হুম গবেষণাধর্মী লেখা আরো আরো লিখুন তবে সময় নিয়ে..এটা ভালো
  • Înšigniã Āvî ০২/১০/২০১৩
    ভাল লাগলো পড়ে...
  • একদম ঠিক। এমন ছন্দের কথা পছন্দ না হয়ে পারে না। খুব উপকারী প্রবন্ধ মেনে চলার চেষ্টা করবো
 
Quantcast