www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অন্য জগৎ

রিয়্যাল ঘুমের মধ্যেই টের পেলো মাথাটায় অনেকক্ষণ যাবৎ একটা চিনচিন ব্যাথা, হালকা একটা ঝনঝনানি, ঠিক মোবাইলের ভাইব্রেশনের মতো । অসহ্য ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটল চোখে মুখে, ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষের হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দিলে চোখ গুলো যেমন লাল টগবগে হয়, রিয়্যালেরও সেই অবস্থা । চোখ খোলে মাথায় হাত দিয়ে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করল, মনে করতে লাগলো এখন কয়টা বাজে, দিন কি রাত! কখন ঘুমালে! কোথায় আছে সে! ইত্যাদি । বাইড়ে লক্ষ্য করে দেখলো সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসছে,বিছানার পাশেই মাথার দিকে জলের বালতি ও মগ, যা দেখে আন্দাজ করা যায় তার মাথায় জল দিয়ে সেবা শুশ্রষা করেছেন কেউ । রিয়্যালের বুজতে বাকী নেই, সকাল বেলা যখন ঘরে ফিরেছে তখনই খুব জ্বর আসছিল তার , শিয়রের কাছে মায়ের হাতের কোমল পরশে চোখ বুজেছিল সে, আর কিছু মনে করতে পারছে না সে । তবে খুব ঘুম হয়েছে কিনা বলতে পারছে না সে , কেননা এখনো চোখে যথেষ্ট ঘুম রয়েছে তার তবে জ্বর ভাবটা আর নেই । মা সম্ভবতঃ সন্ধ্যা দিতে গেছেন । মাথার ঠিকে যেখানটায় চিন চিন ব্যাথা করছিল, বাম কানের উপড়ে আলতো করে আঙুলটা ছোঁয়াতেই কিনকিন করে একটা মিষ্টি সুরের ঝঙ্কার বেজে উঠলো । অনেক স্বরের গুঞ্জন কিন্তু কি সুর বা কি শব্দ বুজার জো নেই তার তবে খারাপ লাগে না, কিছুক্ষণ আঙ্গুলটা ছুঁইয়ে রাখে সে, শব্দগুলো বুজার চেষ্টা করে । আশ্চর্যজনক ভাবে খেয়াল করে সে, মাথায় সেই আঙ্গুলের স্পর্শ আলগা হলেই সেই মিষ্টি ঝঙ্কারটা আর বাজে না ।
এরই মধ্যে মা এসে ঘরে ঢুকল, প্রথমে নিজে নিজেই বিরবির করছিল, ’কি জানি কি হয়েছে ছেলেটার, সারাটা দিন পরে পরে ঘুমাচ্ছে,, জ্বরও আসলো’, তার পরেই যখন দেখলো রিয়্যাল উঠে বসেছে, জিজ্ঞাসা করল, ’কিরে, ঘুম ভাঙ্গলো, জ্বর কেটেছে, কোথায় গেছিলি ভোর বেলায়, জ্বর বাঁধিয়ে আসলি যে বড়?’ মায়ের এতগুলো প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দেওয়া যায় না, রিয়্যাল চোখ বুজে মনে করার চেষ্টা করল, তারপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে যেটুকু বলা যায় সেভাবেই উত্তর দিল, ’কই! কোথাও যাইনি তো, সকালে মর্নিং ওয়াক করেই ফিরে এলাম, কেন যে জ্বরটা আসলো! জানিনা ।“ মা একরাশ সুগন্ধি ধোঁয়া ঘরের মধ্যে রেখে দিয়ে চলে গেলেন । এবারে রিয়্যাল ভাবতে বসেছে, কি হয়েছে তার সঙ্গে ! হ্যাঁ ঠিক মনে পরছে, আজকে ভোর বেলা অন্যদিনের চাইতে একটু তাড়াতাড়ি বেড়ি পরেছিল সে, বেড়িয়ে বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে যেখানে ডানদিকে মোড় নেয়, যেখানে একটা ছোট্ট কালি মন্দির রয়েছে, আর তার পাশেই সেই প্রকান্ড বটগাছ, যার কান্ড এবং মূল বিরাট এলাকা জুড়ে রাজত্ব করছে, পাশ দিয়ে যেতে গেলে নিজে থেকে মাথা নুইয়ে যায় ভক্তি শ্রদ্ধায়, এখানে কোন হিন্দু -মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান লাগে না, সবাই সম্মানে মাথা ঠেকায়, কতশত বছরের যে এই বট গাছ কেউ জানে না, বয়স্ক মানুষেরাও বলে, তাঁরা তাদের ছোট বেলা থেকেই নাকি গাছটিকে এমনই দেখে আসছে, হালে গাছের তলায় একটি কালী মন্দির হয়েছে এবং অবাক করার বিষয় হল কোথায় থেকে এক সন্ন্যাসী এসে জুটেছে, কি খায় কি করে কেউ জানে না, শুধু লতাপাতা-পলিতিন ইত্যাদি দিয়ে কোন মতে গড়া যে ঝুপড়িটায় সে থাকে তার পাশে দিয়ে গেলে গাঁজার গন্ধে ম ম করে, প্রথম প্রথম অনেকের উৎসাহ ছিল এই সাধুর বিষয়ে কিন্তু এখন আর কেউ এ বিষয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না, শুধুমাত্র মাঝে মধ্যে ফুরকান মিঞা-সত্যবীর এরা এসে ঝুপড়িতে ঢুকে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে যায়, এতে কারোর বুজতে অসুবিধা হয় না, এরা বাবা ভোলানাথের ভক্ত, গাঁজাকে প্রসাদ মনে করে সেই সঙ্গে এই সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য । সে যাই হোক, রিয়্যাল ভোর বেলায় এখান দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে সেই বিশাল বট বৃক্ষের ঠিক গোঁড়ায় ফুটবলের মতো একটা আলোক পিণ্ড দেখেছে , আলোক পিণ্ডের অপরূপ দৃশ্য দেখে সেই সৌন্দর্যের অমোঘ টানে ছুটে যায় রিয়্যাল । তার পার আর কিছু মনে পরছে না তার । নাহ, এবারে মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, আর কিছু ভাল লাগছে না , তবুও আরেকটু ভাবার চেষ্টা করছে সে, কি হয়েছিল তার, কেন জ্বর আসলো ! একটা ঘুমের আচ্ছন্নতা পেয়ে বসলো তাকে, হালকা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন যেমন হয়, সে বুজতে পারছে, এটা স্বপ্ন নয়, তবুও চোখ বুজে রইল, সে যা জানতে চাইল তাই যেন চোখের সামনে স্বপ্নের মতো ভেসে উঠতে লাগলো । আলোক পিণ্ডের সামনে থেকে কখন কিভাবে সে গেল সেটা বুজতে পারছে না তবে যেখানে গিয়ে পৌছল, সেটা একটা ভিন্ন জগৎ ভীষণ ভাবে অন্য রকম, ভীষণ ভালো লাগার অত্যাশ্চর্য নগর । সেখানে সবাই খুব খুব সুন্দর । প্রত্যেকটা নারী যেন একেকটা রাজকুমারী তেমনি প্রত্যেকটা পুরুষ । সেখানে কেউ বয়স্ক নেই আবার কেউ ছোট বা নাবালক নেই । প্রত্যেকটা নাগরিক যুবক যুবতী, প্রত্যেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী । অসাধারন এবং অনন্য এক লাবন্য প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে । রিয়্যাল যুবক না হলেও কিশোর, চেহারায়, গায়ের রং এবং দেহের গড়নে এই পৃথিবীর অন্য হাজার বাসিন্দার চাইতে কোন অংশেই কম নয় বরং অনন্য ; তবুও তাকে সেই জগতে যেন ভীষন বেমানান মনে হচ্ছিলো । অবাক বিষ্ময়ে রিয়্যাল যখন চোখ খুললো সেই নতুন জগতে, সে দেখতে পেলো সে যেন অভ্যাগত , আপ্যায়নের জন্য তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েক জন স্বপ্নের রাজকুমারী, সবাই যেন তার হুকুমের চাকর অথচ কি হুকুম করবে সে ! না, হুকুমের আগেই তাকে বিশেষ জলে স্নান করানো হল, সে দেখলো সেই জলের মধ্যে একটা দারুন সুগন্ধ আর জলটা যেন ভীষন হালকা। স্নান করার সঙ্গে সঙ্গে গায়ের রং গোলাপের পাপড়ির মতো হয়ে গেল । রাজকুমারের মতো অতি সুন্দর সব পোষাক এবং অলঙ্কার পড়ানো হল তাকে, এবারে যেন অনেকটা তাদের মতো মনে হচ্ছে । খাবার না চাইতেই সামনে চলে আসলো শত শত সব প্রিয় এবং দামী খাবার । হ্যাঁ, রিয়্যাল প্রান ভরে পেট পুড়ে খেয়েছে চব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সব । গল্পের ফুলপরী-জলপরীদের মতো মেয়েরা তাকে পরম শ্রদ্ধা সম্মানে, আদর যত্নে একটা আসনে নিয়ে বসালো । যে ঘরটায় রিয়্যাল বসলো, সে দেখতে পেলো এটা হচ্ছে সিনেমায় দেখা ভিন্ন গ্রহের অত্যাধুনিক অতি প্রকৌশলে সাজানো ঘরের মতো । এই ঘরে বসে যেমন সারা বিশ্বকে দেখা সম্ভব তেমনি এক নিমেষে সারা বিশ্বকে এখানে আনাও সম্ভব এমনকি সে দেখতে পেলো রানীর মতো একজনকে প্রণাম জানিয়ে একটা পুরুষ মানুষ খুব মিষ্টি গলায় মিহি সুরে সুস্পষ্ট ভাষায় শ্রদ্ধা সম্মান জ্ঞাপন করলেন । রিয়্যাল ভাষা বুজেনি তবে ভাব ভঙ্গিমায় বুজতে পারলো লোকটা বিদায় নিচ্ছেন । তার পরেই দেখতে পেলেন লেকটা একটা দড়জার সামনে গেলেন এবং একটা স্যুইচ টিপলেন তার পর পাশের স্ক্রীনে দেখা গেলো লোকটা নিমিষে একটা এয়ার পোর্টের মতো স্থানে চলে গেছেন এবং সেখান থেকে ছোট্ট প্লেইনের মতো কোন এক যানবাহনে চরে গেলেন । এখানে কেউ মোবাইল ব্যবহার করেন না অথচ কেউ বড় করে কোন কথা বলেন না । এমন সময়ে রিয়্যাল একবার মনে মনে ভাবলো, আমার বোধহয় খুব তৃষ্ণা পেয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা পরীর মতো মেয়ে এক গ্লাস জল নিয়ে তার সামনে হাজির দেখে সে বুজতে পারলো ওরা মনের কথা না বললেও বুজতে পারে । আরোও অবাক বিস্ময়ে রিয়্যাল লক্ষ্য করলো তার সামনে যে সমস্ত টেলিভিশনের মতো স্ক্রীন রয়েছে সেগুলোতে সেখানকার মানুষগুলো ছোট ছোট বাইক-গাড়ি নিয়ে খুব উপরে নয় তবে পনের কুড়ি হাত উপর দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে মানে যাতায়াত করছে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সকলের স্পিড একদম নিয়ন্ত্রণে । এভাবে কতটা সময় কেটেছে সেটা মনে নেই কিন্তু জলটা খাওয়ার পরেই সে নিদ্রাচ্ছন্নের মতো হয়ে গেছিল তবে এটাও বুজতে পারলো তার মাথার বাম দিকটায় ঠিক কানের উপরে একটা মোবাইলের সিমের মতো চিপ ফিট করে দিয়েছে ওরা কিন্তু কোন অপারেশানের প্রয়োজন হয় নি । যদিও আরো কিছু কাজ যেন বাকী ছিল এমন একটা অবস্থায় বট গাছের গোঁড়ায় ঝুপড়িতে বসবাস করা সেই সাধু তাকে লাঠি দিয়ে গুঁতো মেরে সজাগ করিয়ে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ সে জেগে উঠে বট গাছের তলায় ঘুমিয়ে ছিল বুজতে পেরে অপ্রস্তুত অবস্থায় পরে যায় এবং সেখানে থেকে ঘরে ফিরে আসে । ভাবনার বিষয়টা এখানে শেষ হয়ে গেলে আর কিছু বলার ছিল না কিন্তু সমস্যা হলো রিয়্যালের মাথার চিনচিন ব্যাথাটা, সেখানে আঙ্গুল ছোঁয়ালেই কিনকিন করে একটা মিষ্টি সুরের ঝঙ্কার বেজে উঠে, রিয়্যেল খুব চেষ্টা করে সেই সুর বা সেই সব শব্দের অর্থ বুজতে বা বোধগম্য করতে , কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছে না । এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় রিয়্যাল মাথায় আঙ্গুলটা ছুঁইয়ে রেখেই চোখ বুজে ফেলে, তারপরের সে হঠাৎ ভীষন অবাক হয়ে শোনতে ও দেখতে পেতে লাগলো সেই আশ্চর্য জগতের কথা । সে চোখ বুজে ষ্পষ্ট দেখতে পেলো, তার জন্য সেই রাজকুমারীর মতো ফুলপরী-জলপরীর মতো মেয়েরা বসে আছে, কিনকিন করা সেই মিষ্টি সুরের ঝঙ্কারে আছে এক অদ্ভুত উদার্ত আহ্বান ! তাকে আবার ডাকছে ওরা, ওরা চাইছে রিয়্যাল যেন আবার সেই বট গাছের গোঁড়ায় যায়, সেখানে গেলেই ওদের জগতে যাওয়া যাবে, সেই ভালো থাকার জগৎ, সেই ভাল লাগার জগৎ,সেই অত্যাশ্চর্যের জগৎ । এভাবেই ওরা প্রত্যেক কিশোরকে ওদের জগতে নিয়ে যাবে, নতুন স্বপ্নের জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে, শিখিয়ে দেবে প্রকৌশলের নতুন ধারা, দেখিবে দেবে সুশৃঙ্খল জীবন ধারার সুস্পষ্ট রূপরেখা । এই ভালো লাগার অমোঘ টানে রিয়্যাল ছোটে যায় সেই বট বৃক্ষের তলায় কিন্তু আর খুঁজে পায়না সে আলোক পিন্ড, কাছে যেতে চাইলেই বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে থাকে সেই নাম-পরিচয়হীন সাধুবাবা, তখন আর কোন সুগন্ধ পায় না, শুধুমাত্র গাঁজার গন্ধে ম ম করে চারিদিক । এভাবেই রিয়্যাল বার বার নতুনের দিকে ছোটে যায় আর পথ ভোলার মতো সাধুর লাটির গুঁতো খেয়ে বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসে । প্রত্যেকদিনের এই সমস্ত অপ্রকৃতস্থ প্রচেষ্টা বা ক্রিয়াকলাপ দেখে দেখে কেউ কেউ বলছে “বাতাস’ লেগেছে, আবার কেউ কেউ বলছে পড়াশোনার চাপে রিয়্যালের মাথা’টা গেছে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৬/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast