www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ট্রেন ভ্রমণ

ট্রেন ভ্রমণ
মোঃ বুলবুল হোসেন



সুমন অনেকদিন পরে বাড়িতে এসেছে। কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারোদিক প্রচন্ড ঠান্ডা ‌। ছুটি শেষ তাই সুমনকেও অফিসে যেতে হবে। বাড়ি থেকে অফিস একশত কিলোমিটার দূরে ।তাই একদিন আগেই অফিসের দিকে রওনা দিতে হবে। সুমন তার মা-বাবাকে বলে ঘর থেকে বাহির হয়ে পরল । সুমনের বাবা মা সুমনকে দোয়া করে দিল আর বলল দেখেশুনে রাস্তাঘাট চলাচল করিস নিজের খেয়াল রাখিস। সুমন বললো আচ্ছা মা তুমি আমার জন্য চিন্তা করিও না। তোমরা ভালো থেকো ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করে নিও। এই বলে সুমন চলতে শুরু করলো। সুমনের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রেলস্টেশন। সুমন সামনে অটো ভ্যান দেখতে পেল। সুমন অটো ভ্যান উঠে পড়ল বলো রেলস্টেশনে যাবো। অটো ভ্যানের চালক বলল জ্বি মামা বসেন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। এদিকে অটো ভ্যান যাচ্ছে আর সুমনের তার বাবা-মার কথা মনে পড়ছে।


কতদিন পরে এসেছিল কয়েকটা দিনের জন্য আবার চলে যেতে হচ্ছে। তাদের কথা মনে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল সুমনের ।
বাবা-মার কথা ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে স্টেশনে এসে পড়ে । অটো ভ্যান চালককে ভাড়া দিয়ে সুমন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে ।
প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একটি ট্রেন এসে স্টেশনে থেমে যায় সুমন কোনরকম ট্রেনে উঠে পড়ে। এত ভিড় ছিলো যে ভিড়ের মাঝে ওঠা অনেক কষ্ট কর।
সুমন এর আগে অনেকবার ট্রেনে ভ্রমণ করেছে কিন্তু এত ভিড়ের মাঝে কখনো ট্রেনে ভ্রমণ করে নি তাই দাঁড়িয়ে থাকতে সুমনের অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। সুমন হঠাত খেয়াল করলো কোথা থেকে যেন কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়া যায় । সামনে তাকিয়ে দেখে একটি মধ্য বয়সের মহিলা দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছে । ভাল করে খেয়াল করে দেখে সুমন তিন চারজন যুবক মিলে মহিলাটিকে চাপের মাঝে রেখেছে। এত লোকের মাঝে কেউ কিছু বলতেছে না আর মহিলাটি মাঝখানে বরাবর দাঁড়ানো ছিলো। সুমনের দেখা ছাড়া কোন কিছু করার ছিল না। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর একটা স্টেশনে চলে আসে ট্রেনটি। ওই জায়গায় বেশ কিছু লোক নামার পর কিছুটা স্বাভাবিক হয় ট্রেনের ভিতরে।



পাশে থেকে একজন লোক বলে উঠল এ জায়গায় ক্রসিং আছে। তাই কিছুক্ষণ সময় আমাদের এই স্টেশনে অপেক্ষা করতে হবে। অনেকে ট্রেন থেকে নেমে হাটাহাটি করতেছে। সামনে একটি ঝাল মুড়ির দোকান দেখতে পেলো। এদিকে সুমনের ছোট থেকেই ঝাল মুড়ির প্রতি একটু দুর্বল। সে অনেক পছন্দ করে ঝালমুড়ি টাকে। সুমন দোকানদারকে বলল ভাইয়া আমাকে দশ টাকার ঝালমুড়ি দেন দোকানদার বলল ঠিক আছ। একটু ঝাল বেশী দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে দেন। সুমন মুড়ি খেতে খেতে সামনে হাঁটা শুরু করলো কিছু দূর হাঁটার পর ট্রেনের সামনে গিয়ে থেমে পড়লো। ট্রেন স্টেশন সুমনের পছন্দ হয়ে গেলো। জায়গাটা একদম নিরব পাহাড়ি এলাকা গজারি বন দেখতে সবুজের সমাহার। প্রকৃতির মাঝে সুমন হারিয়ে গেলো। সুমন ভাবল বারবার ইচ্ছে করে এমন সুন্দর জায়গায় আসতে। মাঝে মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। সুমন সামনে তাকিয়ে দেখে একটি ট্রেন স্টেশনের দিকে ছুটে আসতেছে। ট্রেন লাইনের বিপরীত পাশে থেকে একটি মহিলা রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা করলো । লাইনটি পার হতে গিয়ে অল্পের জন্য মহিলাটি বেঁচে গেলো আর স্টেশনে বসে থাকা মানুষগুলো আফসোস করলো । আপনার যদি কিছু হয়ে যেতো। এমন সময় মহিলাটি এসে সুমনের কাছে বলো ভাইয়া একটু পানি হবে।



সুমন বোতল এগিয়ে দিলো বললাম নেন পানি। আর বললো এভাবে পার হওয়া আপনার ঠিক হয়নি। মহিলাটি বলল ভাই আমার খুব তাড়া আছে । আমার স্বামী হাসপাতালে তাই আমি দ্রুত বেগে পার হতে চেষ্টা করেছিলাম। আমি কিভাবে যাচ্ছি আমি নিজেও জানিনা। মহিলাটির কথা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন আর কিছু বলল না। বলল বোন তুমি দেখে শুনে যাও তোমার স্বামী অবশ্যই ঠিক হয়ে যাবে । সবাই তার স্বামীর জন্য দোয়া করলো আল্লাহ যেন তাড়াতাড়ি তার স্বামীকে সুস্থতা দান করেন (আমিন)। হঠাৎ করে ট্রেনের হরেন বেজে ওঠে সবাই দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ল। সুমন তাদের সাথে সাথে উঠে পড়লো আর ভাবলো আপন জনদের জন্য আপন জন কিনা করতে পারে। এদিকে ট্রেনটাও আপন গতিতে ছুটে চলছে। হঠাৎ সুমনের ফোনে রিং বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই মা বলে ওঠে তুমি কি পৌঁছে গেছো । না মা আমি এখনো পৌঁছেনি ট্রেন এক ঘন্টা পরে এসেছে । এমনকি সামনের স্টেশনে এক ঘন্টা দেরি হয়েছে যার কারণে আমার আরো ঘন্টা দুই বেশি সময় লেগে যাবে। তুমি চিন্তা করো না। মা কিছু খেয়ে নিও। এই বলে সুমন তার ফোনটা রেখে দিলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৪৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১২/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast