www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ ( হিজড়া )

২৩তম পর্ব
রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া )।
একটা কালো মেঘ ছিল চাঁদের উপর । ছোট্ট অথচ বেগবান হাওয়া মেঘটাকে নিমেষে উড়িয়ে কোথায় যেন নিয়ে গেল। আলো আর আলো, গাছের পাতায় আলোর বিচ্ছুরণ । বাবা বুঝলেন জয় হয়েছে আমার । দরজায় দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলেন । সৌমিক হয়তো লজ্জায় আমার কাছে আসছে না । দুই বছরের ভালোবাসা আমার , এখন স্বপ্নের সংসার হবে। দৌড়ে গিয়ে ঘরের কোনে তুলসী গাছে জল দিতে চাইলাম। আবার দৌড়ে ঠাকুর ঘরে ওহ ! রাত অনেক , ঠাকুরের দরজা বন্ধ। সৌমিক ঘরে বাহিরে আসলো কখন টেরও পেলাম না। আরে আসো রাত অনেক হয়েছে। আমি ঘরে এসে সোজা মায়ের ঘরে ।

বালুর ঘাটের অনিক দত্ত, হয়েছে আনিকা । এখন জলপাইগুড়ির সৌমিক চক্রবর্তীর জীবন সাথী হবে।
“নারী মনে পুরুষ শরীর এটা কেমনে হয়? শরীর মন না মিললে তাতে মনেরই অসুখ হয়। ” শরীর ও মন এক করেছি, আর এখন দুইটা মনেরও এক হয়েছে।
জলপাইগুড়ির টাউন হলে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ে হয় রীতিমত সনাতন ধর্ম মেনেই। ধর্ম হোক আর রাষ্টই হোক সবই মানুষের কল্যাণের জন্যৃ । আস্তে আস্তে সমাজের মানুষের মন ও চোখ বদলাবে। আমাদের শক্ত থাকতে হবে, ভেঙ্গে পড়লে লক্ষ্যচ্যুত হবে। মনজিল সামনে রেখে রাস্তায় চললে সফলতা আসতে বাধ্য ।
ভগবান ওদেরও মানুষ করে পাঠিয়েছে। আমরাও মানুষ, যদি আমাদের ভিতর নূন্যতম মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে মেনে নিবো না কেন। আমি আমার সন্তানের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিয়েছি। কারণ মানুষ মাত্রই স্বাধীনতা চায়। আজ কয়েক বছর আগে এমন কাজ সহজ ছিলো। আজ আমি সানাই বাজিয়ে ঢোল পিটিয়ে রুপান্তরিত মেয়েকে ঘরের বউমা করে তুলে নিচ্ছি। তবে এটা সত্য যে আনিকার চোখে আমি প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস দেখেছি যে , সে জীবনকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর আমাকে আরো লোক অনুপ্রাণিত হবে। এবং এরাও সমাজের মুল স্রোতে ফিরে আসবে। এতে সমাজ এবং রাষ্টের লাভ হবে। দেশের আইন আদালত তৃতীয় লিঙ্গের অনুমোন দিয়েছে। এখন শুধু আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করলে এই মানুষ গুলা স্বচ্ছন্দে বাঁচতে পারবে পরিবারের সাথে থেকে।
ভগবানের কৃপায় আমি দুনিয়াতে দেবতারুপি শুশুর শাশুড়ী পেয়েছি। আত্মীয় স্বজনের অনিহায় আমার বাবা আমর বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেনি। মা এসেছে আর্শীবাদ দিয়েছে। আমার শুশুর তিনশত মেহেমান নিয়ে আমার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করেছে। আর কি চাই দেবতার কাছে। সৌমিক খুবই ভালো ছেলে। তারও সরকারী হাই স্কুলে নতুন চাকরী হয়েছে ।তবে আমার সব এলোমেলো হয়ে আছে। নাচের স্কুল বড় করবো , মেকআপ আর্ট এবং স্কুলের চাকরী সবই জলপাইগুড়ি নিয়ে আসবো আস্তে আস্তে। এখনও হানিমুন যাওয়ার চিন্তা করতে পারি নাই। কারণ দুই মাস পর রুপান্তরকামীদের বিশ্ব সুন্দরী ভারত প্রতিযোগিতা । সেখানে অংশগ্রহন করবো তার জন্যই এখন নিজেকে প্রস্তুত করতেছি।
লড়াইটা এত সহজ ছিলো না। কিন্তু পাশে থাকে যখন বন্ধুর মত স্বামীর হাত তখন সব লড়াই জয়ের দিশা দেখায়। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় লিঙ্গের মিস ওয়াল্ড প্রতিযোগিতা যেন আমার কাছে সহজ মনে হচ্ছে। আমার জীবন সফরটা কিন্তু একদমই সহজ ছিলো না। সমাজ,কটু দৃষ্টি এবং আড়ালে হাসা হাসি কোন কিছুর কমতি ছিলো না । সব কিছুকে পিছনে ফেলে আজ আমি শ্রীমতী ।
আমি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মুকুট জিতে প্রমাণ করেছি , আমি পারি। আমাকে দেখে এই সমাজটা যেন অন্যদের প্রতি সদয় হয়। ট্রেন হতে নামতেই যেন জলপাইগুড়িতে এক উচ্ছাস । এই পথ কতটা কঠিন ছিল আমি জানি । রাস্তায় কাটা বিছানো ছিল, সেই কাটা এক এক সরিয়ে মা বাবার আর্শীবাদ নিয়ে ভগবানের কৃপায় সমাজকে আমি মাথা নত করেছি। কোন কিছুতেই আমি পিছু হটে যাইনি। ভেঙ্গে পড়লে আমি এই মুকুট মাথায় নিতে পারতাম না। সব কিছুকে দমিয়ে আজ আমি মিস ইন্ডিয়া । ওর সাথে পরিচয়ের পর হতে তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছি উৎসাহ এবং সাহস দিয়েছি। আমি জানতাম এলিনা প্রেজেন্ট মিস টান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা হয়। এবং অংশগ্রহন করতে বলি।
আসলে কেমন খুশি লাগছে সেটা প্রকাশ করার মত না। আমি চাই সে আরো বড় হোক। আমার আর্শীবাদ চীরকাল পাবে। (চলবে) ।
২৪তম পর্ব রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ ( হিজড়া)।
আচ্ছা ভাই কেন এমন বলবে। “ভাই বড় ধন রক্তের বাধঁন । এই যে প্রবাদ তা কি মিথ্যা। ভাই বলে আমি লজ্জায় ঘরের বাহির হতে পারি না। তোর জন্য বার বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমি আর বিয়েই করবো না , তোমরা তোমাদের হিজড়া সন্তান নিয়ে থাকো । আমি ঘর ছেড়ে চলে যাবো। দেখো সামিউল তোমার জন্য আমি আমার ভালো সন্তানকে হারাতে পারবো। ঠিক আছে বাবা আমিই বের হয়ে যাবো, তোমরা সুখে থাকো । মা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থকে। হ্যা ঠিক আছে বের হয়ে যা। আমি বিয়ে করলে আমার বউ তোর মত হিজড়ার মুখ দেখতে যেন না হয়।
আমি ঘর হতে বের হয়ে আসি। কিন্তু কোথায় যাবো। সব হিজড়ার মতই জীবন আমার। তবুও কেন এত একা ,কেন এত আলাদা মনে হচ্ছে। মাথার উপর বিশাল আকাশ , মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া , পিছ ঢালা রাস্তায় সাঁ সাঁ করে গাড়ি ছুটে চলা । গাছ পালা সবই ঠিক আছে। কাগজী গ্রামের সেই রাজ হাঁসগুলিও ডোবার ভিতর সাঁতার কাটায় মত্ত । কিন্তু আমার কাছে মনে হয় পায়ের নিচে মাটিই নেই। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর গন্ডি পার না হওয়া সামিউল আলাম। দুনিয়া রং ঘোলাটে ,তামাসা ও খেলার এক মঞ্চ । যেখানে জন্মদাতাই বলে দুর হও।
জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে এনেছো এটাও পুরুষত্বের কম বাহাদুরি নয় , হোক না সন্তান প্রতিবন্ধী তাতে আর জন্মদাতার হাত নাই। তোমরা আমাকে ছুড়ে ফেলছো আর তৃতীয় লিঙ্গের সমাজ আমাকে শুধু মাথা রাখার জায়গা নয় আহার এবং চিকিৎসাও দিয়েছে। নিজের পেটের দায় আমাকে নামতে হলো হিজড়াদের আদি পেশায় । রাস্তা কিংবা বাসাবাড়ি গিয়ে টাকা চাইতে আমার ভালো লাগে না । কিন্তু করবো টা কি আমরা, টাকা না হলে কিভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকবো। তবে হাত পাতা আমার একদম ভালো লাগছে না।
আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উচু করে বাঁচতে চাই। দল বেঁধে এইভাবে ভিক্ষা করা মোটেই ভালো লাগে না। সাধারণ মানুষ খুব ঘৃণা করে আমাদের। মানুষের ধারণা হিজড়া মানে অলক্ষণ ,হিজড়া মানে জোর করে চাহিদা আদায়, হিজড়া মানে অশালীন । তবে সবাই সমান না। সরকার ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসলে ,বিত্তবান এবং হ্রদয়বান মানুষ এগিয়ে আসলে এই অবস্থার অবসান হবে। কেউ কিছু না দিলে না করলে আমরা বাঁচবো কেমন করে । আমরাও সুখ চাই, শান্তি চাই , সম্মান চাই । মানুষ হিসাবে বাচঁতে চাই।
অন্য দশ জনের মত সমাজ চাই। যে সমাজ আমাদের অস্বীকার করে সেই সমাজ নয়। সেই সমাজ হবে মানবিক । রাষ্ট সবার হলেও সমাজ সবার নয় , কিন্তু কেন । আমি সামিউল আলাম ছিলাম , আর এখন সামিউল আলাম শাম্মী। যে ঘরে সামিউল বাস করতে পেরেছে সেই ঘরে শাম্মীর জায়গা হয় না কেন। শরীরে সামিউল এবং আত্মা শাম্মীর যে ঘরে বাস করতে পারবে সেই ঘর চাই। আর হিজড়াদের সাথে নয়, চাই আমার পরিবারের সাথে। (চলবে)।

২৫ তম পর্ব রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া)
হিজড়াদের আচার-আচরণে সাধারণ মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত । জীবন জীবিকার তাগিদে অনেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। হিজড়াদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সরকার এবং মহৎ ব্যক্তিদের ব্যাপকভাবে এগিয়ে এসে হিজড়াদের পাশে দাঁড়ালে তাদের জীবনকাল উন্নতি হবে আর এতে হিজড়া সম্প্রদায় জীবনের নিশ্চয়তা পেলে ছোট ছোট অসামাজিক কাজ হতে বিরত হতে বাধ্য। আমি নিজেই সকালে বাহির হতাম টাকা তুলতে। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পাতা কতটা অসম্মানকর । যদিও এই কাজটা হিজড়াদের আদি পেশা। কারো কাছে টাকা চাইলে বা আমাদের দেখলে মনে হয় যেন মানুষ আগুনে পুড়ে ছাই হতে রাজি এই হিজড়ার সাথে কথা বলতে রাজি না।
আমার একদম মন চায় না টাকা উঠাতে যেতে। বার বার মনে পড়ে আমার বাবা সম্পদশালী আর এখানে আমি গুরুমার দয়ায় এক মুড়ো ভাতের কাঙ্গাল । লুকিয়ে লুকিয়ে কত সাজগোজ করতাম। কত লিপস্টিক , কত নীল পালিশ , কত মেকআপের সামগ্রী কিনেছি । আর এখানে ভাতের জন্য হাত পাততে হচ্ছে। তায়পরও যেন শান্তির নীড় । উত্তরণ আমার হবেই । আকাশে চাঁদ ছিল, ডেমরায় চাঁদের কিরণ ছিল। দপ করে কালো মেঘ এসে অন্ধকার করলো। পরক্ষনে বাতাস আসলো ,আবার চাঁদ , এখন আমার মাথার উপর। হয়তো পুরা বাংলাদেশ আলোকিত । এইটাই হয়তো জীবনের খেলা। ২৫ বছর বয়সী শাম্মী । যে কারো নয়নের নজর হরণকারী । কাজল কালো চোখ , মায়াবী চাহনি , লম্বা লম্বা চুল গায়ের রং সবই যেন ধরণীর রমণী । তবে গলার আওয়াজ শুনে আমি পানি পান করি। শাম্মীও একটা হাসি দিলো।

আমি আকাশ দেখি , সে আমাকে । গুরুমা আজ রেগে আছে কারণ তোলা উঠাতে যাইনি। আসলে মন চায় না হাত পাতি। কারো বাসায় গিয়ে কোন ডিমান্ড করি । মানুষের দেওয়ার সাধ্য থাকলেও কিছু টাকা নিতে খুবই কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে একটা ভূমিকম্পের আশা করি যেন স্বার্থবাজ দেশটা কম্পন ধরায়। সব হিজড়া সেই কম্পনে তলিয়ে যায়। গুরুমা আমি একটা চাকরী পেয়েছি। এই অনন্যা এই চুমকি এই ফাতেমা তোরা কোথায় সব এইখানে আয় একটা খুশির খবর আছে , শাম্মী চাকরী পেয়েছে। এনজিও বন্ধুসভায় আমার চাকরী হয়েছে। এত বড় চাকরী নয় তবুও আমি খুশি । এইটি হিজড়া জীবন জয়ের প্রথম সিঁড়ি । তবে আকাশের চাঁদ ধরার ইচ্ছা নাই । চাই শুধু এক ফালি বিশুদ্ধ আলো আর সেই আলোয় হবে আলোকিত জীবন । চাই এক ফালি বিশুদ্ধ বাতাস আর সেই বাতাসে আমার সিল্কি চুল উঠে জানান দিবে আমি নারী । আমি তুমি এবং তোমরা সব এক বিধাতার সৃষ্টি সবাই মানুষ।

স্যার , অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন পজিশন নিতে পারছি নাই । আপনি যদি কষ্ট করে দেখতেন, তাহলে ঠিক আছে , আমি চেষ্টা করবো। ডেইলি স্টার প্রত্রিকার উদ্যোগে একটা আলোচনা সভায় যাই আমি বন্ধুসভার পক্ষ হতে। সেখানে পরিচয় এই মহানুভব মানুষটার সাথে। কোন রাখঢাক না করে সরাসরি জানতে চান, উনি আমাদের নিয়ে কাজ করলে আমরা করবো কিনা । আমিতো মনে মনে এমন দেবতার জন্য আরাধনা করছি বহুদিন ধরে।
আমি তোমার কথা সব মনোযোগ দিয়ে শুনেছি । আমি যদি তোমাদের নিয়ে কাজ করি , তাহলে তুমি কি কাজ করতে পছন্দ করবে।
স্যার আমি ছোটকাল হতে সাজগোজ করতে এবং করাতে ভালোবাসি , যদি এমন কাজ হয় -----। ঠিক আছে কোন পজিশন দেখো । তার আগে আরো ভালো করে কাজটা তোমাকে জানতে হবে। হাবিবুর রহমান ( অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার , পুলিশ সদর দপ্তর , ঢাকা )। উনিই আমার আলোর দিশারি । গুরুমাসহ সবাই আমাকে উৎসাহ দেওয়া এবং সহযোগিতা করতে লাগলেন । স্যার আমাকে মেকআপ এর উপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন । এর ভিতর আমি দোকান নিতে ঘুরে বেড়াই। কিন্তু কোন পজিশন ঠিক করতে পারি না। এখানেও সেই একই সমস্যা আমি হিজড়া। কোথায় পাবো টাকা , কিসের ব্যবসা করবো , ঠিক মত ভাড়া পরিশোধ করবো কিনা , শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে যদি দোকানটাই দখল করি, কারণ হিজড়া বিশ্বাস করা যায় না। তবে পুলিশ দেবতা ঠিকই আমাকে বিশ্বাস করলেন ।

ডেমরায় উত্তরণ বিউটি পার্লার এর কর্ণধার আমি , শাম্মী হিজড়া । তিনজন হিজড়া বোনকে সাথে করে আমার স্বর্গীয় জীবন শুরু। আলো সোজাসুজি চলে কিন্তু জীবন নয়। খেয়ে না খেয়ে আবার দিন চলতে লাগলো। কোন নারী দোকানে আমাদের দেখলে যেন দৌঁড়ে পালাতে চায়। এত সুন্দর আচার-আচরণ , নিজেদের এত পরিপাটি রাখাও যেন কোন কাজে আসছে না। বিয়ের সাজতো দুরের কথা নিয়মিত সাজগোজ করতেও কোন নারী আসতে চাইতেছে না। বিয়ের সাজ দেওয়ার কথা বললেতো মুখের উপরই বলে দেয় হিজড়ার হাতে সাজলে-------। অর্থাৎ হিজড়া অপেয় । বলে তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যাবে। তবে আমি ভেঙ্গে যাবো না। পরিবর্তন করবোই , হবেই । দিন যায় কিন্ত রাত যায় না । ছাদে উঠে তারা গুণতি করি। বড় তারা দেখতে দেখতে সকাল হয়। (চলবে ) I
২৬ তম পর্ব
রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া)
পূর্ব দিগন্তে সূর্যোদয়ের লাল আভা জানান দেয় আজ মেঘহীন দিন যাবে। আমার মন ভালো হয়ে যায় , আমি ভাবতে থাকি এই লাল আমাদের জাতীয় পতাকার চিহ্ন , এই চিহ্ন রক্তের । অনুরুপ আমাকেও মনন ও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে। অবশ্যই আজ না কাল আমার জীবনে সোনালী আভা উদিত হবেই।

আস্তে আস্তে যেন পরিবর্তন হতে আরম্ভ করছে। পরিবর্তনের জন্য নিজের চালচলন পরিপাটি করেছি। নিজেকে আমূল পরিবর্তন করে নিজেকে বিনীত ও বিনয়ী করেছি বলে আগে যারা দেখলে দৌড়ানো শুরু করতো তারা এখন আমার ক্লায়েট। অনেকে এসে আমাকে খোজে আমার হাতে কাজ করানোর জন্য। আমাকে না ফেলে সময় নিয়ে চলে যায় , পরে আসে । আমি বুঝতে পারি মেধা ও মননশীলতা আমাকে ভালোবাসা দিচ্ছে ক্লায়েটদের। এই ডেমরায় আমার এক পরিবার না হাজার পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। আজ আর অতীত নয় শুধু সামনের সোনালীর হাতছানি ।


আমি একজন মেকআপ আর্টিষ্ট নয় এখন , আমি একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট , একজন সফল ব্যবসায়ী । তাই সমাজ এখন একটু একটু সমীহ করে। আমি চাই পুরা হিজড়া সম্প্রদায়টা শিক্ষিত হয়ে কর্মময় জীবন যাপন করুক। এই জন্য সমাজর মানবিক লোকদের সুনজর দরকার । হিজড়ারা আমাকে দেখে এখন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এদের কাজে লাগাতে চাই। সবাই কাজ করলেই হাত পাতার ও যৌনতার অভিযোগ থাকবে না । অসামাজিকতা সমাজ অশান্ত করে। আমার প্রথম উত্তরণ বিউটি পার্লার আশুলিয়ায় । এখন ডেমরায় একটা এবং সাথে লাগোয়া কসমেটিক্স সপ। আসলে কখনো ভাবী নাই কসমেটিক্স সামগ্রী দোকানের মালিক হবো। মেয়েরা যখন আমার এখানে সাজতে আসে তখন তারা অনেক প্রসাধন নিতে চায় । সেই চাহিদার উপর ভিত্তি করে পাশে গঠে তুলেছি কসমেটিক্স সপ উত্তরণ।
এই দোকানটাও দেখে আমার সম্প্রদায়ের লোক। তোরা বেতনভুক্ত হিসাবে আছে। তবে কষ্ট লাগে যখন সাধারণ মানুষ আমার এইসব মানতে নারাজ। তারা ভাবে হিজড়াও আবার ব্যবসা করে। যে যাই বলবে বলুক , আমি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারি না । সবাই আমার ঘরে দেবতা আমি তাদের পুজা দিই । আল্লাহর পরে মা বাবার স্থান তাই উনাদের দোয়াই কাম্য। যদিও কারো সাথে দেখা হয় না । মাঝে মাঝে এক ছোট ভাই আসে দেখা করতে। আমি চেষ্টা করতেছি হিজড়াদেরকে মুলস্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনতে । এনজিও বন্ধুকে কাজে লাগিয়ে আয়োজন করেছি ফ্যাশন শো। যেখানে মডেলিং করে শুধু হিজড়ারা । আমার কাজ এবং এই ফ্যাশন শো সব হিজড়াদের জীবন মানে প্রভাব ফেলতেছে ।
সাধারণ মানুষ দেখছে যা ধারণা পাল্টাতে কাজে লাগছে। হিজড়ারা বুঝতেছে শিখতেছে , অন্যের দান দক্ষিণায় তাদের জীবন চালানো গ্রহিত কাজ। আমাদের বাংলাদেশের ছেলে রুপান্তর হয়ে কানাড়ায় মড়েলিং করছে। এবং সেখানে প্রথম সারির একজন মড়েল। তারাতো অন্যায় কিছু করছে না। শরীরে দুইটা লিঙ্গ হতে একটা বেচে নিচ্ছে আর সেটাই তার আত্মার সমর্থন । আত্মা এবং শরীর এক হলেই তো একটা পরিপূর্ণ মানব।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে স্বাধ আহ্লাদ থাকা সৃষ্টিগত দাবী। সামাজিক বৈষম্য হতে বাঁচতে হিজড়া হওয়া সত্বেও তা গোপন করে বড় হয়েছে লেখাপড়া শিখেছে । হিজড়া জানতে পারলে স্কুল কলেজ তাকে ভর্তিই নিতো না। অস্ত্রোপচার করে শরীরের যে সেই খুঁতটা দুর করে তারা মেয়ে হয়েছে । আমাদের খুঁত মনে তা আদৌ দুর করার মত না ।
শরীরের খুঁত দুর করে জ্যাজল কবির মিস রুপান্তর প্রতিযোগীতায় অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জিতেছে । অথচ দেশে এসে তার মায়ের সাথে দেখা করতে পারে না। সমাজ বাধা । অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে রাতের আধারে আলোহীন ঘরে চুপিসারে দেখা করতে হয়। বুকভরা অজানা কষ্টকে পাথার চাপা দিয়ে মা সন্তান বুক মিলিয়ে ফিরতে হয় নিজ নিজ গন্তব্যে । সন্তান বাংলাদেশ জয় করতে না পারলেও একদিন বিশ্ব জয় করবে। আর বাংলাদেশ এই সব মায়েদের ভালোবাসা কেড়ে নিতে নিতে একদিন ভুল বুঝবে। (চলবে)
শেষ পর্ব
রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া )।
ল্যাক্সমী নারায়ণ ত্রিপ্রথী । একজন বিশিষ্ট সমাজ
সেবক এবং ফাউন্ডার আসত্রিভা । ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন তৃতীয় লিঙ্গ। সেখানের অতিসাধারণ জনগণও উনাকে চিনে । উনি সমাজ সবাইকে নিয়ে পুরা মহারাষ্টে কাজ করেন। শৈশব এবং কিশোর কাল আর দশজন হিজড়ার মত কেটেছে। তবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন , হয়েছেন উচ্চ ডিগ্রীধারী। যা সাধারণ মানুষও পারে না। আজ উনার চলাফেরা ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকদের সাথে । উনাকে দেখে যে কোন মানুষের অনক কিছু শিখার আছে । আসত্রিভা হিজড়া সম্প্রদায়কে আশার আলো দেখায় । বাংলাদেল , ভারত , পাকিস্তান , নেপাল , ভুটান ও শ্রীলংঙ্কা এই সব উন্নয়নশীল দেশের হিজড়ারদের আচার-আচরণ , চলাফেরা ও কালচার এক গন্ডিতে আবদ্ধ । পরিবার, সমাজ এবং রাষ্টের একই চেহারা দেখে । চাঁদাবাজি , জোরজবর , ভাড়াটায় খাটা এবং গোপনে যৌনতার ব্যবসা ।
অথচ উন্নত রাষ্টে হিজড়ারা সাধারণ নাগরিকদের সাথে জীবন যাপন করে এবং অন্যদের মত রাষ্টের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। কোন হিজড়া সন্তানকে পরিবার বিতাড়িত করে না । তারাও পরিবার ছেড়ে চলে যায় না। তবে যৌন আচরণ কাজ লাগায় মেয়েলি স্বভাবের হিজড়ারা । মধ্যপাচ্যে হিজড়ারা সমকামী লোকদের যৌন লালসাকে পুজি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করে । অনেক হিজড়া বন্ধুর সাথে মৌখিক চুক্তি করে জীবন সহজভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। অগাধ সম্পদশালী হওয়ায় তাদের কোন সামাজিক বাধা নেই চলাফেরায় । তবে সব কিছু করে আইন আদালত ও পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে ।

ইসলাম বলেছে কোন সন্তান যদি ছেলে না মেয়ে বুঝা না যায় তাহলে তার লিঙ্গের দিকে তাকাবে। এবং দেখবে কোন লিঙ্গ দিয়ে সে প্রস্রাব করে , যদি কোন সন্তান পুরুষ অঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে পুরুষ এবং যে সন্তান স্ত্রী লিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে মেয়ে । চার ধরণের হিজড়া হতে পারে । (১) যার আচার-আচরণ নারীদের মত কিন্তু প্রস্রাব করে পুরুষ অঙ্গ দিয়ে তারা আকুয়া । (২) যার আচার-আচরণে নারীর মত আবার কিছুটা পুরুষালী ভাব আছে এবং মুখে দাড়ি গোঁফও দেখা যায় । নারী পুরুষ উভয় ভাব থাকায় তারা সিনাল। দেখতে ছেলের মত কিন্তু আচরণ নারীর , দেখতে মেয়ে কিন্তু আচরণ ছেলে মেয়ে উভয়ের , যৌন ক্ষমতা আছে এদের বিয়ে দিলে সংসার ঠিক থাকবে এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা আছে , এদের বিয়েশাদী ইসলাম সম্মত । (৩) যে ছেলেও না এবং মেয়েও না আবার লিঙ্গ দেখেও বুঝা যায় না তারা কুনজায় মুশকিলা । অনেক সময় দেখা যায় দুই ধরনের লিঙ্গই আছে । এদের যৌন ক্ষমতা থাকে না তাই এদের জন্য বিয়ে হারাম। (৪) যারা অস্ত্রোপচার করে নিজের স্বার্থে হিজড়া হয়। বা কোন কারণে হিজড়া হতে বাধ্য হয় তারা খোজা । এবং এদের যৌন ক্ষমতা লোপ করে দেওয়া হয়। তিন এবং চার নাম্বার হিজড়া বিয়ে করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম।

মেয়েলিপনা বেশী থাকলে মেয়েদের মত নামাজ পড়বে। আর ছেলেদের মত চলাফেরা করলে ছেলেদের মত নামাজ পড়বে যদি হিজড়া মুসলিম হয়। বাবার ধন সম্পদেও অন্য সবার মত সমান অধিকার । যে স্ত্রী লিঙ্গের সে মেয়ের হিসাবে আর যে পুরুষ লিঙ্গের সে অন্য ছেলের সমান ভাগ পাবে। তবে কোন মতেই হিজড়াদেরকে বাবার সম্পত্তি হতে বেদল করা যাবে না । আর যদি লিঙ্গত্ব নির্ধারণ করা না যায় তাহলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিজড়ার অংশ বুঝিয়ে দিতে হবে ।

ইসলামে মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে বিধান । মেয়ে ও মেয়ে এবং ছেলে ও ছেলে বিয়ে ইসলামে সম্পূ্র্ণরূপে হারাম। অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের সাথে বিয়েই ইসলাম সমর্থন করে। ইসলাম মানবতার কথা বলে। তাই হিজড়া সন্তানের প্রতি সদয় আচারণ করতে হবে। এবং তাদের বুকে আগলে রাখতে হবে । (সমাপ্ত )।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৪/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast