www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জীবন থেমে থাকেনা

জীবন থেমে থাকেনা
==============
স্বপ্নপূরণের জন্য মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়। জীবনের নাট্যাংশে কত অভিনয় না করতে হয়। লোকে বলে যে জীবন একটা যাত্রাপথ, এতে অনেক রকম আপ-ডাউন আসে। মানুষ যখন জন্ম নেয়, তখন থেকে জীবনের শুরু হয় এবং মৃত্যুর সাথে এর সমাপ্তি ঘটে।
"মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করে এবং নিজেই নষ্ট করে" কথাটির মর্মার্থ এখন বুঝতে পারি। ২০০০ সালের জুন মাসে গ্রাম ছেড়েছি। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামে কাটিয়েছি। কত পাওয়া না পাওয়ার গল্প সেখানে। প্রতিবছর বন্যা, মঙ্গা মোকাবেলা। তারপরও জীবন থেমে থাকেনি। সে সময়টায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের হাই স্কুলে পায়ে হেঁটে যেতাম প্রতিদিন। মাঝখানে খেয়াঘাট, নৌকা পারাপার। আষাঢ়-শ্রাবণে একূল ওকূল অথৈ পাথার। একটা সাইকেল কেনার খুব ইচ্ছে ছিল তখন। নাহ কিনতে পারিনি তখন। টিফিন টাইমে এক টাকায় ২টা জলপাই ছিল আমার টিফিন। কিংবা কখনো ১টা সিঙ্গারা। সেই সিঙ্গারার টাকাও জোগাড় করতে হতো সুপারি বিক্রি করে। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বাগানের সুপারি ৫কিমি দূরের তরির হাট, মাদারগঞ্জ, ইন্দ্রগড়, কচাকাটা বাজারে বিক্রি করতাম। ২০ হালিতে ১ পন সুপারি হিসাব করা হতো। সুপারি গোনার সময়ে দুই হাতে ২ হালি গুনতাম। কিন্তু আমি মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই হাতে ৫টি করে ১০টি সুপারি গুনতাম। এভাবে ২০টি সুপারি প্রতি পনে বেশি নিতাম। তা বিক্রি করেই স্কুলের টিফিনের টাকা হয়ে যেত। আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা, আজ প্রকাশ করে দিলাম।
জীবন যেমনঃ
২০০০-২০০১ সালে খুলনায় ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির দুটো ছাত্র পড়িয়ে মাসে ৪০০+৫০০= ৯০০/- আয় করতাম। নিজের অর্জিত টাকা খরচ করার মজাই আলাদা, বুঝতে পারলাম। ২০০২ সালে এইচএসসি পাশের পর খুলনা থেকে বিদায় নিলাম।
জীবনের খোঁজেঃ
সিলেট এমসি কলেজের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হয়েছি। ধীরে ধীরে বাবার দেয়া টাকা সব শেষ। বাবার চাকুরিও নেই।
ডিসেম্বর ২০০৩ কি ভয়ানক সময় না কাটলো জীবনে। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। টিউশনি, রাজমিস্ত্রী, রিকশা চালানো কোনটাই বাকি রইল না। তবে কারো কাছেই হাত পাতিনি, পরিশ্রম করেছি। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। আমি বিশ্বাস করতাম, যে ব্যক্তি পড়ালেখা জানে- তার মধ্যে শেখার, চিন্তা করার, বুঝতে পারার ক্ষমতা তৈরি হয়। পড়ালেখা থাকলে মানুষ অনেক অর্থোপার্জন করতে পারে। তাই যেকোন মূল্যে পড়ালেখা শেষ করতে চাইছিলাম। এক্ষেত্রে ডক্টর লুৎফর রহমানের যুবক জীবন, উচ্চ জীবন, মহৎ জীবন বইগুলো আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করত। ডেল কার্নেগীর বইও পড়তাম। পড়ালেখা শেষ করার উদ্দেশ্যেই ২০০৪ সালে টিসি নিয়ে চলে গেলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে।
নতুন জীবনঃ
২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেছি। ২০০৮ সালে কুমিল্লায় ক্ল্যাসিক কোচিং সেন্টার খুললাম। ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোচিং সেন্টার জমজমাট চালিয়েছি। ওই টাকা দিয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, নিজে চলেছি, বিয়ে করেছি, ঘর-বাড়ি ঠিক করেছি, বাবাকে হোন্ডা কিনে দিছি, ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখায় সহযোগিতা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলেছি।
অফ-টফিক:
২০১০ সালে হাউজিং এস্টেট কুমিল্লায় "ক্ল্যাসিক প্রি-ক্যাডেট একাডেমি" নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ব্যানার তৈরী করলাম, বেঞ্চ বানালাম, বাসা ভাড়া নিলাম। ডিড না থাকায়, বাড়িওয়ালার সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত স্কুলটি আর খোলা হয়নি। কষ্ট পেয়েছি অনেক।
চাকুরী জীবনঃ
২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত চাকরি করে চলছি। চাকরিতে প্রবেশ করে সব শেষ, স্ট্যাটাস আছে টাকা নাই। তবে দীর্ঘদিনের আর্থিক নিশ্চয়তা আছে। তারপরও বলি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাক না খেয়ে রাখেননি। সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের পথ দিয়েছেন। সৎ ভাবে জীবন যাপন করতে পারতেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
নতুন ভাবনা:
"একটা ভাবনা আপনার জীবনকে বদল করে দিতে পারে" এই ভাবনার উপর বিশ্বাস রেখে দ্বিতীয় রোজগারের পথ খুঁজতাছি। ওয়েভ ডেভলপমেন্ট শিখেছি। এছাড়াও জব সাইডে দৈনিক ৪-৫টি করে জব এপ্লাই করি। যদি লেগে যায়!! মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড় হয়, এই আশায়!
* এত কিছুর পরেও শিক্ষকতা পেশাটাকে খুব মিস করি। কেন জানি মনে হয় একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল দিতে পারলে খুব ভালো হতো। এই পরিশ্রমী হাতটা নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করার পরও আরো কিছু করতে চায়।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১৭২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৫/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast