www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর

আমার বাবা স্কুল শিক্ষক। সে হিসেবে ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন কিসিমের পরীক্ষার খাতা দেখে আমি অভ্যস্ত। বাবা যখন খাতা দেখতেন তখন পাশে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম। প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল কে কে এক থেকে তিন এর মধ্যে আছে এবং কে সবচেয়ে কম পেয়েছে। পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে অনেক খাতা থেকে বেশ মজার মজার লেখা বেরিয়ে আসত। কোন খাতায় হয়ত পাস করিয়ে দেয়ার জন্য কাকুতি মিনতি। কোন খাতাতে যা চেয়েছে তা না লিখে আবোল তাবোল বিভিন্ন কিছু লেখা। আবার কেউ টুকে লিখলে বাবা তা দেখে বুঝতে পারতেন। সে লেখার ধরন থাকত আলাদা। তেমনি একটা পরীক্ষা। যতদূর মনে পরে বার্ষিক পরীক্ষার খাতা। বিষয় ভূগোল। প্রশ্নে চাওয়া হয়েছে ভূমিকম্প কি? উত্তরে লেখা আছে, যে কারণে ঘরবাড়ি, গাছপালা ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে এবং মানুষজন দৌড়াদৌড়ি করে তাকে ভূমিকম্প বলে। ঐ একই বিষয়ের আরেকটা প্রশ্ন ছিল ‘ইউরোপের চিনি শিল্পের বর্ণনা দাও?’ খাতায় লেখা ছিল ‘ ইউরোপের চিনিকল আমাদের দেশের চেয়ে অনেক উন্নত। সেখানকার চিনি আমাদের দেশের চিনির চেয়ে অনেক বেশি চিকন। তাই সেখানকার লোকজন গুড়ের বদলে চিনি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নাস্তা তৈয়ার করে’। বাব খাতা দেখে রাগতে গিয়েও হেসে ফেললেন। বললেন, ওর কপালে দুঃখ আছে। সেই শিক্ষার্থীর কপালে কি দুঃখ এসেছিল কিংবা আদৌ কোন দুঃখ এসেছিল কিনা জানা হয়নি। আমার কলিগের কাছ থেকে শোনা একটু ভিন্ন ধরণের খাতার কথা শুনাচ্ছি। এবারের বিষয় সাধারণ বিজ্ঞান। শ্রেণি সপ্তম। প্রশ্নটি আমাদের খুব পরিচিত। ‘একখণ্ড লোহা পানিতে ডুবে যায় কিন্তু লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে কেন? উত্তরে লেখাঃ সবই আল্লার কুদরত। আল্লাহ চায় তো যে কাউকে ভাসাতে পারে আবার যে কাউকে ডুবাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মহাপ্লাবনের সময় সবকিছু ডুবে গেলেও নূহ (আঃ) এর নৌকা ডুবে যায়নি। কারণ আল্লাহ চেয়েছে তাই। তাই আমরা বলতে পারি আল্লাহ চায় বলেই একখণ্ড লোহা পানিতে ডুবে যায় কিন্তু অতবড় লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে। সাচ্চা ইমানদার বাচ্চা। সাচ্চা ইমানদারি উত্তর। বিজ্ঞানের ধর্মীয় ব্যাখ্যা। আমি হলফ করে বলতে পারি এ বাচ্চা ভিবিষ্যতে বড় আলেম হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। তাছাড়া তার সৃষ্টিশীলতা তারিফ করার মত। মারহাবা! সুভাহানাল্লাহ!
আমার এক ছোট ভাই উদ্ভাস কোচিং সেন্টার এর খাতা দেখে। ঘটনাটি তার মুখ থেকে শোনা। এখানে অবশ্য কোন সিঙ্গেল প্রশ্নের উত্তর নায়। সব প্রশ্নের উত্তর কয়েক লাইনে দেয়া। উত্তর এইরকম; ভাল করে প্রশ্ন করতে কি কুত্তায় কামরায়। তারপর প্রশ্নকর্তার গুষ্ঠি উদ্ধার করে বেশ কিছু জনপ্রিয় বাঙলা গালি। উত্তর শেষ হয়েছে কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে
‘উদ্ভাস-
পেছনে বাঁশ’
(ছত্রটি ভদ্র ভাষায় লেখা। মূল থেকে খানিক বিচ্যুত বিধায় মাফ চেয়ে নিচ্ছি। কারও ইচ্ছে হলে দুষ্ট ভাষা বসিয়ে নিতে পারেন।)
হক কথা। সে এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে এসেছে, আর মাস্টাররা উলটাপালটা প্রশ্ন করে রেখে দিল তাই কি হয়! আর পরীক্ষা খারাপ হলে যে বাবার ঝাড়ি খেতে হবে তার কি হবে। তাই ‘যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেতুল’।
শেষ করছি বল্টুর মায়ের কাছ থেকে শোনা একটা ঘটনা দিয়ে। ‘ শিক্ষক মহাশয় খাতা দেখছেন। হঠাত একটি খাতায় তার চোখ আটকে গেল। খাতায় প্রশ্নের বিপরীতে কোন উত্তর লেখা নেই। তার বদলে খাতার অনেকাংশ জুড়ে বেশ বড়সড় একটি চিঠি লেখা হয়েছে। সে যেনতেন চিঠি নয়। চিঠির ভাষ্য মতে তার (চিঠি লেখকের) ক্যান্সার হয়েছে এবং যেকোনো সময় সে মারা যেতে পারে। মারা যাওয়ার আগে তার শেষ ইচ্ছে পরিক্ষায় পাস করা। শিক্ষক মহাশয় যেন পাস করিয়ে তার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করে। শিক্ষক বুঝতে পেরেছিলেন যে বিষয়টা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। তারপরও খানিকট দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন। বলা তো যায় না হতেও পারে। পরদিন ক্লাসে গিয়ে শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন
অমুক কে রে? নাম
শুনে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে গেল।
তোর নাকি ক্যান্সার হয়েছে?
শিক্ষক এই প্রশ্নের উত্তর পাননি। কারণ তার আগেই ক্যান্সার রোগী ঝেড়ে দৌড়।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯৪৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast