www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভদ্রতার সন্ধানে একদিন জাদুঘরে যেতে হবে (প্রথম পর্ব)



ভদ্রতার সন্ধানে একদিন জাদুঘরে যেতে হবে (প্রথম পর্ব)
সাইয়িদ রফিকুল হক

আর-কিছুকাল পরে মনে হয় ভদ্রতা খুঁজতে আমাদের কোনো জাদুঘরে যেতে হবে। দেশের মানুষের আচার-আচরণ, বেশভূষা ও সর্বোপরি মানবাত্মার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আজকাল তাইতো মনে হচ্ছে। মানুষ এখন বদলে যাচ্ছে। আর সে বদলে যেতেই পারে। মানুষ পরিবর্তিত হবে—এটাই স্বাভাবিক। মানুষের এই পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক বা কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আজকাল সে বদলে গিয়ে ভালো কিংবা মানুষ হচ্ছে না। সে নির্দ্বিধায় হচ্ছে—আপাদমস্তক-ভণ্ড আর চিরায়ত-পশু। এজন্য তার মনে কোনো আফসোস নাই—দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা অনুশোচনাও নাই। সে হাসিমুখে নিজের জন্য পশুত্বকে বরণ করে নিচ্ছে।

আগে মানুষ পরিবর্তিত হতো—আর দিনে-দিনে একটু-একটু করে আরও ভালো হতো। আর আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করতো। আর এখন মানুষ রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে সরাসরি অমানুষে পরিণত হচ্ছে। আরও বেশি পশু হচ্ছে। মানুষ এখন নিজেকে পশুত্বের দিকে ধাবিত করে পশুতে রূপান্তর করছে। নেশাগ্রস্তের মতো মানুষ এখন নিজের উন্নতির দিকে ছুটছে। এখন তার অন্য কোনোদিকে তাকাবার কোনো সময় নাই। মানুষের এই আত্মোন্নয়ন এখন নেশায় পেয়ে বসেছে। আর তার এই মরণনেশা—বাড়ি, গাড়ি, জায়গাজমি, টাকাপয়সা, সুন্দরীস্ত্রীসহ যাবতীয় পার্থিব বস্তুর জন্য। আসলে, এর নাম হচ্ছে—লোভ। মানুষকে এখন লোভে পেয়ে বসেছে আর পাপে ধরেছে।

মানুষ এখন খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠছে। আর এই মানুষ এখন নিজের স্বার্থ ষোলোআনা ব্যতীত আর-কিছুই বোঝে না। স্বার্থনেশায় একশ্রেণীর অমানুষ এখন ভয়ানক অন্ধ। এদের কাছে নিজের লাভ ছাড়া আর কোনো কথা নাই। এই অমানুষের দল এখন চেনে শুধু অর্থসম্পদ, টাকাকড়ি, আর সীমাহীন ভোগ-বিলাসিতা। স্বার্থনেশায় ডুবে এরা এখন রাষ্ট্র চেনে না, সমাজ চেনে না, জাতি চেনে না, মানুষ চেনে না—আর মানুষের মন বোঝে না। এরা আজ এমনই এক ভয়াবহ পশুতে পরিণত হয়েছে। আজ এদের কাছে শুধু নিজের স্বার্থই সবচেয়ে বড়!

একশ্রেণীর মানুষ এখন দিন-দিন লোভী-ইতর হয়ে উঠছে। সে যে আর মানুষ নাই—এই বোধও এখন তার মধ্যে নাই। সে শুধু চেনে টাকাপয়সা, ধনদৌলত, যুবতীনারী আর জায়গাজমি। আর শুধু পরের জমিজমার উপর তার লোভ সর্বাধিক। এই অমানুষগুলো এতো জঘন্য আর এতো ইতর হয়ে উঠছে যে, এদের কাছে আজ দেশ, মানুষ, মানবতাসহ জাগতিক মনুষ্যত্বর ভাবনাসমূহ আজ সম্পূর্ণ তুচ্ছ ও উপেক্ষিত। আর তাই, এই অমানুষগুলো ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

কথাগুলো মিথ্যা বলছি না। অদূর-ভবিষ্যতে ভদ্রতা খুঁজতে আমাদের হয়তো জাদুঘরেই যেতে হবে। আজকাল রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ-মাদ্রাসায় সর্বত্র এখন বেআদবির ছড়াছড়ি। এ যেন এখন—কে কতবড় বেআদব হতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলছে। আজ গুরুজনের প্রতি অনেকের ন্যূনতম ভক্তিশ্রদ্ধা নাই, শিক্ষকের প্রতি সামান্য আনুগত্য নাই, পিতামাতার প্রতি পরিপূর্ণ ভক্তিভাব নাই, গরিব-দুঃখীমানুষের প্রতি যথার্থ সহানুভূতি নাই, আর ছোটদের প্রতি বিশেষ স্নেহ নাই। সবখানে আজ শুধু নাই আর নাই। এর ভিতরে ভদ্রতা আসবে কোত্থেকে? একশ্রেণীর মানুষ-নামধারী অমানুষের হৃদয়ভূমি থেকে মনুষ্যত্ব ও ভদ্রতা এখন পালিয়ে যাচ্ছে। এদের হৃদয়ে নাই স্নিগ্ধ সতেজ অনুভূতি। এদের হৃদয়ের পলিমাটি ক্ষয়ে-ক্ষয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে পাথুরে কয়লার নতুন সংসার। আর সেই সংসার সর্বদা লোভ, হিংসা, অহংকার, লাম্পট্য, চাতুর্য, দুশ্চরিত্র, দুর্বিনীতভাব, দুর্নীতি, মূর্খতা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ। তাই, এখানে ভদ্রতার ফুল ফুটবে কীভাবে?

আজকাল বাসে উঠলে দেখা যায়, বেআদব কতরকমের। এখন তো বাসের ভিতরে বেআদবিপ্রদর্শন রীতিমতো একটা ‘স্টাইলে’ পরিণত হয়েছে। একশ্রেণীর ছোকরা-বেআদব বাসের একটা সিটদখল করার জন্য আশেপাশের একজন বয়ঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে, কখনও-কখনও সজোরে ধাক্কা মেরে, গুতা মেরে, ঠেলে চ্যাপ্টা বানিয়ে ছুটে চলেছে। তবুও এদের একটা সিটদখল করা চাই! এরা আজ একঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এদের কোমরের জোর আজ বুঝি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে! এদের হাবভাব দেখলে মনে হয়—এরা একেকটা শিংভাঙ্গা গণ্ডার। আফসোস, এরা একজন বয়োবৃদ্ধকে আজ সম্মান করতে জানে না!

আরেক শ্রেণীর কুখ্যাত বেআদব বাসের ভিতরে সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। এদের সামান্যতম লজ্জাশরম আজ আর অবশিষ্ট নাই। এরা একেবারে চশমখোর। আর এরা মনে হয়—বহু আগেই পশুতে পরিণত হয়েছে। আবার দেখা যায়, হঠাৎ বৃষ্টির হাত থেকে কতকগুলো মানুষ একটা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এই মানুষের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই রয়েছে। আর সেখানে এতগুলো মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে এই পৃথিবীর একটা জীবন্ত লম্পট। এদের বোধোদয় হবে কবে? আর কবে এরা একটুখানি মানুষ হবে?

বাসের মধ্যে মহিলা ও শিশু যাত্রীদের জন্য আলাদা সিট-বরাদ্দ করা রয়েছে। অধুনা, প্রতিবন্ধীদের জন্যও এই সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে, পারতপক্ষে কারও বসাটা অশোভন ও অনৈতিক। তা সত্ত্বেও একশ্রেণীর নরপশু, আর পুরুষ-নামধারী জংলী এখানে বহাল তবিয়তে বসে থাকে। আর মহিলা-যাত্রী বাসে উঠলে এরা সিট ছাড়তে চায় না। এতে কেউ-একজন প্রতিবাদ করলে এরা মহিলার সিটে বসে নিজেদের পৌরুষ জাহির করার জন্য উক্ত প্রতিবাদীর দিকে তাকিয়ে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে নেড়ীকুত্তার মতো ঘেউ-ঘেউ করে ওঠে। এই হলো আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক মানুষ-নামধারী নরপশুদের অতীব সুন্দর স্বভাব-চরিত্র! এরা ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

(ক্রমশঃ)



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/০৫/২০১৭
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরশ ১৪/০৫/২০১৭
    সুন্দর
  • মধু মঙ্গল সিনহা ১৪/০৫/২০১৭
    বাস্তবধর্মী লেখা।
 
Quantcast