www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি পাগলের আত্মকাহিনী (১৩)

আমি একজন পাগল। সারাদিন রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াই। আর কি যেন ভাবি! যাই এখানে সেখানে। আমার কোন ঠিকানা নেই। আমার খাওয়া-দাওয়ার কোন চিন্তা নেই। ‘মুখ দিছে খোদায়, আহার দিবো খোদায়।’ আমি এই ধারনায় বিশ্বাসী। তাই সারাদিন আমি অন্তত খাবারের জন্য কোন চিন্তা করি না। আমার ক্ষুধা অন্যান্য মানুষের তুলনায় একটু কম। আমি দুই বেলা খাই। সকালবেলা এবং রাতে। আমার যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমি মানুষের কাছে খাবার চাই। বেশীরভাগ মানুষ আমাকে খাবার দেয়। তবে কিছু কিছু লোক আছে তারা আমাকে খাবার দেয় না। এজন্য আমি কোন মাইন্ড করি না। এটা হতেই পারে। সবার কাছে সবসময় খাবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যা হয় আরেকটা। কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক আছে তারা আমাকে খাবার তো দেয়ই না, বরং অনেক সময় আমাকে মারে। এই বিষয়টা আমি মেনে নিতে ‍পারি না। আমাকে মারবে কেন? খাবার না দেয় না দেক, কিন্তু আমাকে মারার অধিকারতো কোন মানুষের নেই। আমি আজ পাগল বলে মানুষে কি আমাকে মারবে? এটা তো কখনো ভাবা যায় না। যারা আমাকে বেশী বেশী মারে তাদের প্রতি আমি কেন যেন প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে পড়ি। আমি রাতের আঁধারে ভূত সেজে আবার তাদের বাড়ীতে যাই। তাদের ভয় দেখাই। কিন্তু কোন ক্ষতি আমি তাদের করি না। আমাকে যখন অনেক অনেক মারে তখন আমি শুধু ঘৃণ্য এই কাজটি করি। রাতে আমি খাবার খেয়ে যেখানে জায়গা পাই সেখানেই ঘুমিয়ে পরি। আবার সকাল হলে এই গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে ঘুরাফেরা করি। আর ভাবি। মানুষে খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। এতে আমার কোন আক্ষেপ নাই। নাই কোন অভিযোগ।
আমাকে সবচেয়ে বেশী উত্তেজিত করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। তারা আমাকে দেখলে আমার পেছনে পেছনে আসে। আমাকে তাড়া করে। পিছন দিয়ে ইটা দিয়ে ঢিল দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন আমার অনেক কষ্ট হয়। তারা আমাকে উত্তেজিত করে কেন তা বুঝতে পারি না। আমি মাঝে মাঝে তাদের ভয় দেখাই। দৌঁড়ানী দেই। কিন্তু তার পরেও তারা (ছেলে-মেয়েরা) আমাকে উত্তেজিত করে। আমার মেজাজ বেশী খারাপ হলে ছেলে-মেয়েদের ২/১ টা চড়-থাপ্পরও দেই। কিন্তু তাও তারা আমাকে উত্তেজিত করে।
আমি জন্ম পাগল নই। অন্য আরো ১০ টা মানুষের মত ভালো মানুষ ছিলাম। আমার একটা হৃদয় ছিলো। এ হৃদয়ে ভালোবাসাও ছিলো। আমিও একদিন কবিতা লিখেছি, গেয়েছি গান! লিখেছি প্রেমপত্রও। আমি একদিন হতে চেয়েছিলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত..। এগুলো এখন শুধুই ধূসর মরুভূমি। নিমেষেই সবকিছু আমার সাহারা মরুভূমিতে পরিনত হল! হায়রে কপাল!
আমি একটি মেয়েকে খুব ভালবাসতাম। একই স্কুলে আমরা পড়তাম। সেই সুবাদে দেখা যা পরে প্রেমে রুপ লাভ করে। মেয়েটি অতো ফর্সা নয়। শ্যামবর্ণ, মুখের কাটিন খুব সুন্দর। মেয়েটিও আমাকে ভালোবাসতো বেশ। যদি বলি একবারে লবনের মত! কিন্তু হঠাৎ করে এই মেয়েটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। আমাকে কিছু বলে যেতে পারলো না। এ শোক আমি সইতে পারি নি। হঠাৎ করে আমার যেন কি হয়ে গেল। মাথা একবারে খারাপ হয়ে গেল। সেই থেকে আমি এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। পাগল মন.. মন রে....
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৫/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast