একটি কলমের আত্মকথা (৯)
আমি একটি কলম। ঢাকার পুরান টাউনের একটি কারখানায় আমার জন্ম। জন্ম সালটা সঠিক মনে নেই। তবে ধারণা করতে পারি, আমার জন্ম আশির দশকে। আমার নিবটা খুব চিকন ছিলো। আমাকে লোকে নিব কলম বলে ডাকতো। নামটা একেবারে খারাপ না। আমার মোটামুটি ভালই লাগতো। আমার একটা অসুবিধা ছিলো। তা হল- আমার কিছুক্ষণ পরে পরে ক্ষুধা লাগতো। ক্ষুধা লাগার অর্থ হল- কিছুক্ষণ পরে পরে আমার পেটে কলি ভরতে হতো। তা না হলে আমা দিয়ে লেখালেখি করা যেতো না। তাই আমার পাশে একটা কালির দোয়াত রাখতে হতে। যখনই কালি শেষ হত, তখন দোয়াত থেকে কালি নিয়ে আমাকে সক্রিয় করা যেত। আমার গঠন খুব সুন্দর ছিলো। যেহেতু পেটে কালি ভরতে হত, তাই পেটটাও অপেক্ষাকৃত মোটা ছিলো। যাকে বলে হৃষ্টপুষ্ট। আমাকে আবৃত করে রাখার ঢাকনাটাও চমৎকার ছিলো। ঢাকনার মধ্যে একটা ক্লিপ বিশেষ বস্তু ছিলো যা দিয়ে অনায়ানে আমাকে সার্টের পকেটে আটকিয়ে রাখা যেত। আমাকে মানুষ যখন পকেটে নিত তখন তার মনটা একেবারে ভরে যেত। তাকে শিক্ষিত শিক্ষিত লাগতো। তার ভাবই আলাদা হয়ে যেত।
আমার জন্মের পরে পুরান ঢাকার একটি স্টেশনারী দোকানে আমাকে বিক্রির জন্য রাখা হল। সেখান থেকে একজন স্কুল মাষ্টার আমাকে ২০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে গেল। আশির দশকের বিশ টাকা মানে এখনকার অনেক টাকা বৈ কি। তিনি যেহেতু শিক্ষক তাই তিনি একটি লাল কালির দোয়াত কিনলেন। আর আমি লাল লেখা উপহার দিতে শুরু করলাম। আমার ক্রেতা যেহেতু শিক্ষক ছিলেন তাই তিনি আমাকে দিয়ে শুধু খাতা দেখতেন। তেমন একটা চাপ আমার ছিলো না। তিন বছর এভাবে চললো। তিন বছর পর তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করলেন। পরে তিনি আমাকে আর রাখলেন না। আমাকে তার বড় ছেলের কাছে হস্তান্তর করে দিলেন। তার বড় ছেলে ছাত্র। তার দরকার কালো কালি। তাই তিনি একটি কালো কালির দোয়াত কিনলে। আমাকে তিনি একদিন সারাদিন গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করলেন। আমার ভিতরে যা রঙ্গিন ভাব ছিলো তা নষ্ট হয়ে গেল। আমার পেটে ভরা হল কালো কালি। আর আমি এখন কলো লেখা দিতে শুরু করলাম। শিক্ষকের ছেলে আমাকে দিয়ে লেখা শুরু করলো। বিশেষ করে পরীক্ষার ৩ ঘন্টা আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। এতো লেখার চাপ আমি সহ্য করতে পারতাম না। তাই মাঝে মাঝে লেখা ছেদরিয়ে যেত। পরক্ষণে আবার ঠিক হয়ে যেতাম। এভাবে শিক্ষকের ৯ জন ছেলে মেয়ে আমাকে দিয়ে লিখতো এবং সবাই এখন শিক্ষিত হয়ে গেছে। এখন আমার আর তেমন কোন কাজ নেই। বাড়ীতে লেখাপড়ার কেউ নেই এবং আমার কদরও কমে গেছে। তাই আমি অবশিষ্ট হিসেবে পড়ে রইলাম শিক্ষকের বাড়ীতে।
শিক্ষকের বড় ছেলে যে আমাকে দিয়ে লেখেছে তিনি এখন বিচারক হয়েছেন। একদিন তিনি বাড়ীতে এসে আমাকে দেখেতে পান। তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। আমি যেতে চাইনি। অনেক কান্না করেছি। কিন্তু আমার কান্না কেউ শুনে নি। বিচালক মহাশয় আমাকে দিয়ে বিচারের রায় লিখতে শুরু করলেন। একদিন বিচারক মহোদয় একটি ফাঁসির রায় লিখলেন আমাকে দিয়ে। তখন আমার অন্তরটা কেঁদে উঠলো। ফাঁসির রায়ে স্বাক্ষর করার পর তিনি আমাকে ভেঙ্গে ফেললেন। এভাবে শেষ হল আমার জীবন।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল), ১৪.৪.২০২১
আমার জন্মের পরে পুরান ঢাকার একটি স্টেশনারী দোকানে আমাকে বিক্রির জন্য রাখা হল। সেখান থেকে একজন স্কুল মাষ্টার আমাকে ২০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে গেল। আশির দশকের বিশ টাকা মানে এখনকার অনেক টাকা বৈ কি। তিনি যেহেতু শিক্ষক তাই তিনি একটি লাল কালির দোয়াত কিনলেন। আর আমি লাল লেখা উপহার দিতে শুরু করলাম। আমার ক্রেতা যেহেতু শিক্ষক ছিলেন তাই তিনি আমাকে দিয়ে শুধু খাতা দেখতেন। তেমন একটা চাপ আমার ছিলো না। তিন বছর এভাবে চললো। তিন বছর পর তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করলেন। পরে তিনি আমাকে আর রাখলেন না। আমাকে তার বড় ছেলের কাছে হস্তান্তর করে দিলেন। তার বড় ছেলে ছাত্র। তার দরকার কালো কালি। তাই তিনি একটি কালো কালির দোয়াত কিনলে। আমাকে তিনি একদিন সারাদিন গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করলেন। আমার ভিতরে যা রঙ্গিন ভাব ছিলো তা নষ্ট হয়ে গেল। আমার পেটে ভরা হল কালো কালি। আর আমি এখন কলো লেখা দিতে শুরু করলাম। শিক্ষকের ছেলে আমাকে দিয়ে লেখা শুরু করলো। বিশেষ করে পরীক্ষার ৩ ঘন্টা আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। এতো লেখার চাপ আমি সহ্য করতে পারতাম না। তাই মাঝে মাঝে লেখা ছেদরিয়ে যেত। পরক্ষণে আবার ঠিক হয়ে যেতাম। এভাবে শিক্ষকের ৯ জন ছেলে মেয়ে আমাকে দিয়ে লিখতো এবং সবাই এখন শিক্ষিত হয়ে গেছে। এখন আমার আর তেমন কোন কাজ নেই। বাড়ীতে লেখাপড়ার কেউ নেই এবং আমার কদরও কমে গেছে। তাই আমি অবশিষ্ট হিসেবে পড়ে রইলাম শিক্ষকের বাড়ীতে।
শিক্ষকের বড় ছেলে যে আমাকে দিয়ে লেখেছে তিনি এখন বিচারক হয়েছেন। একদিন তিনি বাড়ীতে এসে আমাকে দেখেতে পান। তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। আমি যেতে চাইনি। অনেক কান্না করেছি। কিন্তু আমার কান্না কেউ শুনে নি। বিচালক মহাশয় আমাকে দিয়ে বিচারের রায় লিখতে শুরু করলেন। একদিন বিচারক মহোদয় একটি ফাঁসির রায় লিখলেন আমাকে দিয়ে। তখন আমার অন্তরটা কেঁদে উঠলো। ফাঁসির রায়ে স্বাক্ষর করার পর তিনি আমাকে ভেঙ্গে ফেললেন। এভাবে শেষ হল আমার জীবন।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল), ১৪.৪.২০২১
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ২৫/০৪/২০২১দারুণ
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ২০/০৪/২০২১দারুণ
-
মাহতাব বাঙ্গালী ১৬/০৪/২০২১সুন্দর গল্প; ভালো লেগেছে
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৫/০৪/২০২১Sundor
-
ফয়জুল মহী ১৪/০৪/২০২১বাহ্ , সুন্দর