www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি ছাগলের আত্মকাহিনী (৭)

আমি একটি ছাগল। সবাই আমাকে ছাগল বলে ডাকে। আমাকে ছাগল বলে ডাকলে আমি ভীষণ মাইন্ড করি। আমাকে ছাগল বললে এর প্রতিবাদ স্বরূপ আমি এক সপ্তাহের জন্য খাবার ও পানি খাওয়া বাদ দেই। আমার মনিব বিষয়টা জানে। তাই তিনি আমাকে সাধারণত: ছাগল বলেন না। তবে মুখ ফসকে ২/১ বার মনের ভুলে ছাগল বলে ফেলেন। তখন আমি ভীষণ রাগ করি। আমার নাম কে ছাগল দিয়েছে জানি না। তাকে ধরতে পারলে আমি জন্মের মাইর দিতাম।

একটি প্রবাদ আছে, ’পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়।’ আমি এই প্রবাদের ঘোর বিরুধী। পাগলে যাই কিছু বলুক না কেন আমি কিন্তু সব কিছু খাই না। আমি একজন ভদ্র ছাগল। আমাকে যে কোন কিছু দিলেই আমি কিন্তু খাই না। আমি তিন টাইম খাবার খাই। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যা। এই তিন টাইম ছাড়া আমি অন্য সময় কোন খাবার খাই না। আমি ভুষি, সিদ্ধ মালঞ্চ ও কাঁঠাল গাছের পাতা খাই। কোন কোন সময় দুর্বা ঘাস খাই। এর চেয়ে বেশী কিছু আমি তেমন একটা খাই না। প্রবাদে যে বলছে, আমি সব কিছু খাই তা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি এই প্রবাদের তিব্র নিন্দা করি এবং তা উঠিয়ে নেয়ার অনুরোধ করি। তা না হলে ছাগলকুল মিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।

আমি সকাল বিকাল দুধ দেই। সকালে এক কেজি ও বিকালে এক কেজি। সকালের দুধ আমার মনিব বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। বিকালের দুধ তিনি তার পরিবার-পরিজন নিয়ে খান। এতে তার পরিবার পুষ্টির অভাব পূরণ করছে। দুধ দিয়ে মানুষকে উপকার করার বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগে। আমার তিনটি বাচ্চাও আছে। এই বাচ্চাগুলো অল্প দিনে বড় হয়ে আমার মত দুধ ও বাচ্চা দিবে। আমার গোবর সার হিসেবে উপকারী। ভাবতে আমার ভালই লাগে। এখন দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশী। অনেক যুবক পড়াশুনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে ছাগল পালনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শুনেছি ছাগল পালন খু্‌বই লাভজনক। বিষয়টি আমার কাছে ইতিবাচক বলে মনে হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন দেশে বেকারত্বের হার কমবে অন্যদিকে ছাগলের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাবে। কুরবানির ঈদের সময় ছাগলের একটা বিশাল চাহিদা তৈরী হয়। অনেক মানুষ আছে তারা গরু কোরবানী না দিয়ে ছাগল কোরবানী দেয়। আমাদের জীবন উৎসর্গ করেও আমরা ছাগলরা ধর্মীয় বিষয় বিবেচনা করে কোরবানীর বিষয়টাকে মেনে নেই। এতো বড় ত্যাগ স্বীকার করার পরেও আমরা মানুষের মন পাই না। দিন শেষে আমাদের আবার ছাগলই বলে। আমাদের কি অন্য নামে ডাকা যায় না?

আমরা ছাগলরা একবার বড় একটি মিটিং করি। মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয় যে, মানুষ যেন আমাদের ছাগল না বলে তার জন্য এলাকার সব মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াব। যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ। একদিন ঠিকই আমরা এলাকার লোকদের পেট পুরে খাওয়ালাম। মাংস, পোলাও কোনটারই কমতি ছিলো না। কিন্তু হায়! যাওয়ার সময় মানুষ আমাদের বলেছে, এই ছাগল, আজ তাহলে যাই, সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। শুনে আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল। যেই ছাগল ডাক না শুনার জন্য এতো ঘটা করে দাওয়াত করে খাওয়ালাম, সেই মানুষই যাওয়ার সময় আবার আমাদের ছাগলই বলেছে। সুতরাং জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ। তাই যতদিন আছি এই ছাগল নাম নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।
-স্বপন রোজারিও, ১০.৪.২১
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৪৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast