www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৫৬ ও ৫৭)

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৫৬)!
আমাদের এলাকায় একটি পুকুর ছিলো। নাম বড় পুকুর। একটি অদ্ভুত নাম। পুকুরের নাম আবার বড় হতে পারে। এ কেমন কথা? কিন্তু আসলেই পুকুরের নাম ছিলো বড় পুকুর। তবে পুকুরের আয়তন অনেক বড় ছিলো। এজন্য বোধ হয় পুকুরের নাম হয়েছে বড় পুকুর। আমার জন্মের পর থেকে দেখছি পুকুরটি। ভর দুপুর বেলা এই পুকুরের পার দিয়ে হাঁটতাম না। ভয় ভয় লাগতো। এই ভূত, পেত্নির ভয় আর কি! এই পুকুরের অবস্থান কালীগঞ্জের পিপ্রাশৈর গ্রামে। তবে এই পুকুরে আমরা দল বেঁধে গোসল করতাম। সাঁতরে এপার থেকে ওপার চলে যেতাম। পুকুর পাড়ের গাছগুলি আমাদের অক্সিজেন দিত। ছায়া দিত। পুকুর পাড়ের কলাগাছ থেকে মাঝে মাঝে কলা চুরি করে খেতাম!? পুকুরের মাছ খেয়ে আমরা তৃপ্তি অনুভব করতাম। পুকুরটা ছিলো এজমালি। অর্থাৎ এর মালিক ছিলো সরকার। যার ফলে সবাই এই পুকুর থেকে কিছু না কিছু নিজের হস্তগত করে বেজাই আনন্দ পেত। আমরা এই পুকুরের পারে ফ্রি কোচিং চালু করেছিলাম। এখন আর তা আছে বলে মনে হয় না। হায় রে! কি দিন পড়েছে? স্কুলই যেখানে খুলছে না, সেখানে ফ্রি স্কুল তো দূরের কথা!

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৫৭)!

বিয়ে বাড়ীর উপহার
আমাদের এলাকায় বিয়ে বাড়ীতে উপহার দেয়ার একটা প্রচলন ছিলো। খু্‌বই ইন্টারেস্টিং। আমার এই পর্বটা খুব ভালো লাগতো। আমি খুব উপভোগ করতাম এই পর্বটি। এই উপহার প্রদানের পর্বটি উপস্থাপন করার জন্য একজন লোককে মনোনীত করা হত। উপস্থাপকের দুইটা নূন্যতম গুণ থাকতে হত। একটি খুব জোরে কথা বলা এবং আরেকটি হল- লোকটির ধরন জোকার টাইপ হতে হবে। জোরে কথা বলার লোক নির্বাচন করার কারণ হল- তখন সাউন্ড সিস্টেম তত একটা ছিলো না। জোরে কথা বললে যেন সকলে শুনতে পারে। জোকার টাইপ লোক মনোনীত করার কারণ হল তিনি সবাইকে হাসিয়ে আসরটা তরতাজা রাখতে পারে। আমাদের এলাকায় এরুপ একজন লোক ছিলো। এজন্য প্রায় প্রতিটি বিয়ে বাড়ীতে তার ডাক পড়তো। এই উপস্থাপকের প্রধানতম দায়িত্ব হল- বর কনেকে কে কি উপহার দিয়েছে তা সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে সবাইকে জানানো। আগে মানুষ কেন যেন বর-কনেকে বেশী বেশী পিতলের কলস দিত। আগে অন্য বাড়ী থেকে পানি আনার একটা রেওয়াজ ছিলো। এইজন্য হয়তো পিতলের কলস বেশী দিতো। পিতলের কলসের উপর কয়েকটা থাপ্পর মেরে উপস্থাপক সুন্দর করে বলতো- ’ছেলের মামি একটা পিতলের কলস দিছে।’ সবাই পিতলের কলস দেখে দিতো একটা হাততালি। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়াতে অনেকে বিয়ের সময় আবার গরু-বাছুর ও দিতো। তবে গরু-বাছুর স্বশরীরে দিতো না। পরে দিতো। তবে উপস্থাপককে দিয়ে গরু-বাছুর দেয়ার ঘোষণাটা কিন্তু দেয়াই হত। উপহার দেয়ার পর শুধু চলতো ভুরিভোজের পর্ব।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল), ১০.০৪.২১
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast