www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৩৯) ও (৪০)

আঞ্চলিক ভাষা (ভাওয়াইল্যা ভাষা )
আমাদের বাড়ী গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায়। ভাওয়াল পরগনার মধ্যে। আমাদের এলাকায় কিছু আঞ্চলিক শব্দ আছে যা ভাওয়াইল্যা শব্দ (ভাষা) নামে পরিচিত। এগুলো আসলে অভিধানে পাওয়া যাবে না। এই শব্দগুলো অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে। কারণ শহরায়নের ফলে মানুষ এখন আর গ্রামে বেশী থাকতে চায় না। সবাই ঢাকামুখী। আবার যারা ঢাকায় থাকে তারা পরিবেশগত করণে এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে বিলিন হওয়ার পথে এই শব্দভান্ডার। আমি একজন ভাওয়াইল্যা হিসেবে ভাওয়ালে ব্যবহৃত কিছু শব্দ এখানে চয়ন করছি। বর্তমানে আমিও এই শব্দগুলো তেমন একটা ব্যবহার করছি না। আর আমার সন্তানরা তো না-ই। সুতরাং ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা বারন্দাকে উছরা বলতাম। ঘরের পিছনে যে জায়গা তাকে হাইছা বলতাম। আত্মীয়কে বলতাম কুডুম। টমেটুকে বলতাম তেমতি আর টমেটুর ভর্তাকে বলতাম তেমতির টালা। উঠানকে বলতাম দুয়ার, জায়গা/জমিকে বলতাম খেত। বৃষ্টি তীর্যকভাবে ঘরে ঢুকলে বলতাম এছলা। পুকুরকে বলতাম পুহুর। নৌকাকে বলতাম নাও। বৃষ্টি না হলে বলতাম খরান। বৃষ্টি হলে বলতাম কাইতান। লালমাটি সমৃদ্ধ উঁচু-নীচু জায়গাকে বলতাম ঠেংগর। সমতল ভূমি যুক্ত জায়গাকে বলতাম চৌরা। লাঠিকে বলতাম লাডি। লাঙ্গলকে বলতাম নাঙ্গল। খ্রীষ্টযাগকে বলতাম মিশা। উৎসবকে বলতাম পর্বের দিন। বিবাহকে বলতাম বিয়া। বিবাহ অনুষ্ঠানের আলোচনাকে বলা হত গুয়ামেল। অতিথি আপ্যায়নকে বলতাম কুডুম্ব সাদর। বর-কনে বিয়েতে রাজী হলে বলতাম জব দেয়া। চার্চে নাম নিবন্ধন করা হলে বলতাম নাম লেখা। বিয়ে বিষয়ে চার্চে ঘোষণা হলে বলতাম বান প্রকাশ। বিয়ে বাড়ীতে যারা খাবার পরিবেশন করে তাদের বলতাম সাইদার। বিয়ে বাড়ীর বরের পিতা বা অভিভাবককে বলতাম গইর্জা। বিয়ে বাড়ীতে বর-কনেকে আশীর্বাদ দেয়াকে বলতাম বেছাম দেয়া। বিয়ের আগের দিনকে বলতাম কামানী গাদ্দানী। বিয়ে বাড়ীতে খাবার আগে অতিথিদের সারিবদ্ধভাবে বসাকে বলতাম শোভা। বড়দিনের আগের দিন কচুদার। পানি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরকে বলতাম পানি হেচা। পাতলা ডালকে বলতাম আমিলা ডাইল। মানুষ মারা গেলে সেই বাড়ীকে বলতাম মরা বাড়ী। মানুষ মারা ‍যাওয়ার তিনদিন পরের অনুষ্ঠানকে বলতাম নিরামিষ ভাঙ্গা এবং ৪০ দিনে হত চল্লিশা। এর পরে কোন অনুষ্ঠান হলে বলা হত শ্রাদ্ধ। মাটির তৈরী ব্যাংককে বলতাম ব্যাংকটুপা। আগে উৎসবে অনেক বোমা ফোঁটাতাম। এগুলোর হরেক নাম ছিলো। যেমন- টুপা বোম, নাতা বোম, লাডি বোম। মাথার চুল ফেলাকে বলতাম মাথা নাইরা করা। পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে কাঁঠাল আনাকে বলতাম গাওয়াল। দূরে কোথাও কচ্ছপ ধরতে যাওয়াকে বলতাম শিয়ারে যাওয়া। শিয়ালকে বলতাম হিয়াল। খাঁটের নীচের জায়গাকে বলতাম উগার তলা। ঘরের উপরের টিনের নীচে দেয়া পার্টিশনকে বলতাম কার।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল)

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৪০)

জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
জাতীয় সঙ্গীতের (আমার সোনার বাংলা....) প্রতি আমাদের সম্মান ছিলো অতল ও গভীর। জাতীয় সঙ্গীত শুনলেই আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম। এখনও যদি কখনো জাতীয় সঙ্গীত কর্ণে প্রবেশ করে তাহলে আমি
বসে থাকতে পারি না। আগে আমরা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছি। সিনেমা শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হত। এটা বাধ্যতামূলক ছিলো। আর আমরা দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতাম। আগে বড় বড় অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হত। আগে স্কুলে আমাদের এ্যাসেম্বলী হত। এ্যাসেম্বলীর সময় জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক ছিলো। যার ফলে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার বিষয়টি আমদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তাই যখনই জাতীয় সঙ্গীত শুনি তখনই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করি। এখনকার অবস্থা খুব খারাপ। জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি কোন সম্মান নেই। অনেক স্কুলে মাঠ নেই, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে কি ভাবে? বিশেষ করে ঢাকার স্কুলগুলোর অবস্থা অনেক খারাপ।
-স্বপন রোজারিও (মাইকেল)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৮১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৩/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast