www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একজন ডাক্তার তপন

একজন মিঃ তপন রোজারিও। গ্রামের সবাই তাকে তপন ডাক্তার বলে ডাকে। এই ডাক্তার কোন পাশ করা এমবিবিএস ডাক্তার নয়। এই ডাক্তার বংশানুক্রমিক ডাক্তার। তপনের বাবার বাবা (ঠাকুর দা) ছিল পাশ করা ডাক্তার। এর পর তপনের ঠাকুর দাদার মৃত্যু হলে তার বাবা বংশানুক্রমিকভাবে ডাক্তার উপাধি পেয়ে যায়। তপনের বাবা অবশ্য বেশী শিক্ষিত ছিল না। তপন তার বাবার কাছ থেকে দেখে দেখে কাজ শিখে ডাক্তার হয়ে যান। এখন তপনের পালা। তপনও বংশের ধারাবাহিকতায় ডাক্তারই হয়ে যায়। এভাবে তাদের বাড়ীর নামই ডাক্তার বাড়ী হয়ে যায়। সম্মানিত পাঠক, ভুল বুঝবেন না, এখানে উক্ত ডাক্তার বড় কোন রোগের চিকিৎসক নন। এখানে যে ডাক্তারের কথা বলা হয়েছে সে ডাক্তার শুধু জ্বর, ঠান্ডা, মাথাব্যথা, কাঁশি, খাজলি-পাচরা প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। সিরিয়াস কোন রোগী আসলে এখান থেকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয় না। বরং তাদেরকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
অনেক ইচ্ছে ছিল তপনের, সে এমবিবিএস পাশ করে ডিগ্রীধারী ডাক্তার হবে, গরীব মানুষের সেবা করবে, সমাজের সেবা করবে। এ উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য চেষ্টাও কম করেনি সে। পরীক্ষার সময় দিবা-রাত্রি অধ্যয়নে মনোনিবেশ করে সে। কোন কোন পরীক্ষার সময় এমন হেয়েছে যে, কখন যে রাত্রি পার হয়ে সকাল হয়ে গেছে, সে টেরই পায় নি। এক রাত পড়েই সব পরীক্ষা দেয়া আর কি। আর তা হবে না কেন? তপন গ্রামের ছেলে। তাকে স্কুল পড়ার পাশাপশি অনেক কাজ করতে হয়। যেমন-ধান রোয়া, ধান কাটা, গরুর জন্য ঘাস কাটা, গরুর যতœ নেয়া, মাটি কাটা, ধান ভাঙ্গানো, হাল চাষ করা প্রভৃতি বহুবিধ কাজ। এরুপ নানাবিধ কাজ করে পড়ালেখা করার সময় পাওয়া যায় না। তাই এক রাতের পড়ায় যা হয় তাই পরীক্ষায় লিখে তাকে পাশ করতে হয়। গ্রামের অধিকাংশ ছেলেরই একই অবস্থা, সারাদিন কাজ করে বই পড়ায় সময় থাকে না। এভাবে অবশ্য পাশ ও করা যায়। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা তাতে অর্জন হয় না এবং প্রকৃত শিক্ষার অভাবে জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয় না। এভাবে কিছু পড়ে, কিছু না পড়ে তপন তার স্কুল জীবন শেষ করে। রেজাল্টও তার মোটামুটি ভাল। এবার তার শহরে গিয়ে বড় কলেজে পড়ার ইচ্ছা।
ইচ্ছানুসারে তপন ভর্তি হয় মিতিঝিলের একটি নামীদামী কলেজে। থাকা খাওয়া আসাদগেটস্থ ছাত্রাবাসে। ছাত্রবাস থেকে কলেজ বিস্তর ফারাক। বাসে ঝুলে প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়া করে তার অবস্থা মোটামুটি কাহিল। তার উপর প্রেক্টিক্যালের ধাক্কা সামলে উঠা বিরাট কঠিন ব্যাপার। রসায়ন, পদার্থ, জীব ও প্রাণী বিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে প্রেক্টিক্যাল করে প্রায়ই রাতে ছাত্রাবাসে ফিরতে হয় তপনের। তার উপর গৃহ শিক্ষক না থাকায় তপনের রেজাল্ট ভাল হল না। রেজাল্ট ভাল না হওয়ার অবশ্য আরেকটি কারণ রয়েছে। তা হল রিক্তার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠা। পড়াশুনার এতো চাপের মধ্যেও তাকে রিক্তার সাথে কিছুটা সময় দিতে হয়েছে যা তার রেজাল্টের উপর প্রভাব ফেলেছে। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে তপনের পক্ষে আই.এসসি পাশ করা সম্ভব হয়নি প্রথম বার। দ্বিতীয়বার পাশ করেছে দ্বিতীয় বিভাগে যা ডাক্তার হয়ার জন্য উপযোগী কোন রেজাল্টই নয়। এভাবে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করা তপনের জীবনে নেমে এল অন্ধকার। যে দিকে তাকায়, সাগর শুকিয়ে যায়। এভাবে তার এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ভেস্তে যায়। তার পরেও তপন থেমে থাকেনি। এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইংরেজী’ বিষয়ে অনার্স পড়ার প্রবল ইচ্ছ্ াতাকে পেয়ে বসে। শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য দৌঁড়ঝাপ। কিন্তু কোথাও তার চান্স হয় নি। এভাবে তার এ আশাও বিফলে যায়। পরে একটি কালেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেয় তপন।
ডিগ্রি পাশ করার পর সমবায়ে চাকরী নেয় তপন। লেখাপড়ার ইচ্ছা তার জীবন থেকে তখনও চলে যায় নি। এবার সে মনস্থ করেছে, ডাক্তার যখন হতে পারেনি তখন ডক্টর হবে। তাই আবার তার লেখাপড়া শুরু হয়। কিন্তু কিছূতেই তার কিছু হয় না। চাকুরীর স্বার্থে তাকে অনেক সময় অফিসে থাকতে হয়। যার ফলে তার ডক্টর হওয়ার ইচ্ছাটাকেও জলাঞ্জলি দিতে হয়। এবার সে আর কোন পথ না পেয়ে গ্রাম্য ডাক্তারের একটি কোর্স নিয়ে ডা: তপন রোজারিও হয়ে গ্রামে ফিরে যায়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast