www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সাংগঠনিক কার্যক্রম

অতীতে (আশি ও নব্বই-এর দশকে) আমরা অনেক সংগঠন করেছি। সংগঠনের প্রতি একটা মোহমায়া আমাদেরকে বলা যায় অনেকটা অন্ধ করে রাখতো। আর আমরা সারাদিন সংগঠনের পিছনে ছুটতাম আর ছুটতাম। শুধু উন্নয়ন চিন্তা মাথার মধ্যে গিজ গিজ করতো। সমাজটাকে একেবারে ভেঙ্গে চূড়ে নতুন করে ফেলতাম। সবাইকে নিয়ে চলার একটা প্রবল বাসনা ছিলো তখন আমাদের সবার মনে। তাই সবাই দলবেঁধে সাংগঠনিক ভাবে চলার চেষ্টা করতাম এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম।

তখন চড়াখোলাতে চড়াখোলা খ্রীষ্টান যুব কল্যাণ সমিতি তাদের ঈর্ষনিয় সাফল্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলো। বড়দিনসহ বিভিন্ন পার্বনে চড়াখোলা খ্রীষ্টান যুব কল্যাণ সমিতি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেত। তা দেখে আমরা অনুপ্রানিত হয়ে আমাদের এলাকার পি এইচ বি (পিপ্রাশৈর, হাড়িখোলা, বোয়ালী) খ্রীষ্টান যুব সমিতি গঠন করি। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মি. দিলীপ ভিনসেন্ট গমেজ এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলাম আমি। শুরু হয়ে গেল আমাদের সাংগঠনিক জীবন। একবারে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। খাওয়া নাই, দাওয়া নাই, শুধু সাংগঠনিক কাজ আর কাজ। শুরু হয়ে গেল আমাদের এলাকায় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। টাকা নাই, পয়সা নাই অথচ কি ভাবে যে হাজার হাজার টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করে ফেলতাম, তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন। একটা কথা বলে রাখি, তখন মানুষ খুবই উদার হৃদয়ের অধিকারী ছিলো। ডুনেশন চাইলে কেউ না করতো না। ডুনেশন চাওয়ার জন্য যে কত জায়গায় চলে গিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। মি. বার্নাড গমেজ, মি. মিলন কস্তাসহ অনেক লোকের বাসায়ই তখন গিয়েছি ডুনেশন আনার জন্য। ডুনেশন আনার জন্য না গেলে এই সমস্ত হৃদয়বান লোকদের সাথে হয়তোবা কখনো পরিচয়ই হতো না আমাদের।

আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বড়দিনে ম্যাগাজিন ছাপাতাম। একদিকে লেখা সংগ্রহ, অন্যদিকে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ। মাথা একবারে খারাপ হয়ে যেত। এই ম্যাগাজিনের জন্য কত যে প্রেসে রাত কাটিয়েছি তা লিখে শেষ করা যাবে না। এক দিকে ডানি দার প্রেস ও অন্য দিকে ম্যাক কম্পিউটার। কখনো সময় বাঁচানোর জন্য নীল ক্ষেত থেকেও ম্যগাজিন প্রিন্ট করে নিয়ে যেতাম। কিন্তু ম্যাগাজিনটা যখন বের হয়ে যেত, তখন যে আনন্দ লাগতো তা বলে বুঝাতে পারবো না। তখন সব কষ্ট ভুলে যেতাম। আর নিজের একটা লেখা যদি ছাপাতে পারতাম তখন জীবন একেবারে ধন্য হয়ে যেত। আমি বরাবরই লেখা ছাপানোর কাঙ্গাল ছিলাম। ম্যাগাজিনে একটা লেখা ছাপা হলে, নিজের নামটা দেখতে পেলে নিজেকে বড় বড় মনে হত। যেন তুমিলিয়া মিশনের প্রধান সেনাপতি আমিই হয়ে গেছি, আর আমার চারিদিকে সৈন্য আর সৈন্য, শুধু হুকুমের অপেক্ষায় ! একবার সুযোগ খুঁজতে লাগলাম কিভাবে ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নিজের নাম জাহির করা যায়। তখন সমিতির সভাপতি ও মিশনের পাল-পুরোহিত ম্যাগাজিনে বাণী দিতেন। এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেল। কখনও কখনও স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাণীও দেয়া হত। আমি সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সুতরাং আমার কোন বাণী দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তো যা হোক, একবার সভাপতিকে রাজী করলাম যে, এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ম্যাগাজিনে যৌথভাবে বাণী দিবে। একদিকে সভাপতির ছবি এবং অন্য দিকে সাধারণ সম্পাদকের ছবি। এই চান্স পেয়ে তো আমি মহাখুশি। কবে ম্যাগাজিন বের হবে সেই চিন্তায় আমি দিন গুণতে লাগলাম। কিন্তু ম্যাগাজিন দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ! আমার এরকমই ছবি প্রিন্ট হল যে, একবারে বুঝাই গেল না যে এটা আমার ছবি! তখন আমার মনটা এতোই খারাপ হয়ে গেল যে, ২ দিন পর্যন্ত আমি নাওয়া-খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম।

আমরা সেই সময় সংগঠনের মাধ্যমে গুণী সংবর্ধনা, সম্মেলন, নাটক, পালাগানসহ নানা কিছু করতাম। এই সময় আমার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলো- টনি গমেজ, কাজল গমেজ, সুবীর টেরেন্স কোড়াইয়া, বিনয় কোড়াইয়া, মন্টু কস্তা, দিলীপ মাইকেল কস্তা, আগষ্টিন গমেজ, বাবুল গমেজ, মিল্টন রোজারিও, লিটন রোজারিও, রতন রোজারিও, মনু জন কোড়াইয়া, সুশান্ত কোড়াইয়া, রনজিৎ কোড়াইয়া, জীবন রিবেরু, শ্যামল রোজারিও, সেন্টু রোজারিও, খোকন পিরিচ, পরিমল কস্তা, এন্ড্রু গমেজ, হিউবার্ট গমেজ, মিন্টু গমেজ, প্রনয় গমেজ, চিত্ত গমেজ, মিল্টন গমেজ, শিমন কস্তা, লিও গমেজ, বিকাশ গমেজ, রবার্ট গমেজসহ নাম মনে করতে না পাড়া আরো অনেকে। সমাজ উন্নয়নে আজ তাঁদের অবদান আমি মনে প্রাণে স্মরণ করছি।
২৪/০৯/২০
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৬০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৯/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পি পি আলী আকবর ২৬/০৯/২০২০
    চমৎকার
  • স্মৃতিকথা মন ছুঁয়ে গেল
  • সুন্দর স্মৃতি।
  • ফয়জুল মহী ২৪/০৯/২০২০
    চমকদার , শুভ কামনা নিরন্তর।
 
Quantcast