www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কানাডায় এক মাস

সালটা ২০১৫। অক্টোবর মাস। আমি তখন স্বপ্নের দেশ কানাডায় অবস্থান করছিলাম। এ সময় বিষয়টি ভাবতেই আমার গর্বে মনটা ভরে যায়। সেই স্মৃতিময় জীবনের কিছুটা আলোকপাত করার জন্যই আমার আজকের এই কমল ধরা। এখন অবশ্য কলম ধরা বললে ভুল হবে, কারণ কলমের যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন লিখতে হবে কম্পিউটার ধরা।

তো যা হোক, ছোট কাল থেকেই আমার ভ্রমণের একটা নেশা ছিল। সময় সুযোগ পেলেই ভ্রমণে বের হয়ে যেতাম। তা দেশে হোক আর বিদেশে হোক। তবে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও খুব যে ভ্রমণ করতে পেরেছি তা ও নয়। তার পরেও কানাডাসহ পৃথিবীর ৫টি দেশ ভ্রমণ করা আমার জন্য একেবারে সহজ কথা নয়। ২০১০ সাল থেকে আমার বিদেশ ভ্রমণ শুরু। ২০১০ সালে আমি প্রথমে ব্যাংকক যাই আকু কর্তৃক ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন কোর্স করার জন্য। এর পর আমি মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর একই সাথে ভ্রমণে বের হয়ে যাই। আমি প্রথমে মালেন্দো এয়ারওয়েজে মালয়েশিয়া যাই। মালয়েশিয়া গিয়ে সকালে একজন বাঙ্গালী বড় ভাই এর সাথে নাস্তা করি। পরে বাই রোডে রওয়ানা দেই সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়ার পাশের দেশ সিঙ্গাপুর। আমার সিঙ্গাপুরের ভিসা ছিলো বলে সহজেই সিঙ্গাপুর যাওয়া সম্ভব হয়েছিলো। সিঙ্গাপুরে আমি মেরিনা বে তে আমার এক বড় ভাই-এর বাসায় রাত্রি যাপন করি। বড় ভাই আমাকে মোস্তফাতে মার্কেটিং করতে নিয়ে যায়। বড় ভাই-এর বাসায় রাত্রি যাপন শেষে সকালে আবার রওয়ানা দেই মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। মালয়েশিয়া এসে আবার সেই মালেন্দো এয়ারওয়েজে আবার ঢাকায় ফিরে আমি। এর পর আমি স্বপরিবারে ভারতের দার্জেলিং যাই। এই হলো আমার বিদেশ ভ্রমণের সংক্ষিপ্ত চিত্র।

এর পর আমার মনে হল আমি লন্ডন যাব পড়াশোনা করার জন্য। সুতরাং শুরু হল যথারীতি চেষ্টা। কিন্তু লন্ডনের ভিসা কপালে জুটল না। আমি কিন্তু থেমে নেই। বিদেশে আমাকে যেতেই হবে। শুরু হল আবার ভর্তি যুদ্ধ। আমি কানাডার কোডি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটে এপ্লাই করলাম। কোডি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট আমাকে অফার লেটার দিলো। অফার লেটারে কোডি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটকে ২000 কানাডিয়ান ডলার পাঠানোর একটা বিষয় ছিলো। আমি বিদেশে টাকা পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেলাম। কয়েকটা ব্যাংকে আলাপ করলাম। তারা আমাকে বলেছে, আপনার Student File খুলতে হবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তো যাই হোক, আমি একদিন সকালে জনতা ব্যাংকে মি. প্রলয় দীপক ডি রোজারিও-এর চেম্বারে গিয়ে হাজির হলাম। তাঁকে গিয়ে আমি বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম। এরপর তিনি নিজে গিয়ে আমাকে জনতা ব্যাংক থেকে ২000 কানাডিয়ান ডলার কোডিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। এই জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এরপর শুরু হল কাগজপত্র সংগ্রহ করার পালা। যত সমিতিতে আমি সদস্য রয়েছি সব সমিতি থেকে সার্টিফিকেট নিলাম। এর পর কানাডার ভিসার জন্য ঢাকাতে সাবমিট করলাম। ভিসা পাব কি না সিউর ছিলাম না। কারণ আমার সলভেন্সি বেশী ভালো ছিলো না। তারপর সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে ভিসা ইস্যু করা হয়েছিলো। তখন আমার মনে অনেক আনন্দ হয়েছিলো।

রওয়ানা হলাম কানাডার উদ্দেশ্যে। প্রথমে ঢাকা থেকে কোম্বিং। কোম্বিং থেকে বেইজিং। বেইজিং গিয়ে হল এক বিপত্তি। সেখানে এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না। তাদের সন্দেহ হয়। কারণ আমার ভিসাটা ছিলো স্টুডেন্ট ভিসা। ভিসার সাথে বয়সের মিল ছিলো না বলে হয়তোবা আমার সাথে এ কান্ড করা হয়েছে। যা হোক, পরে আমার সকল কাগজপত্র দেখে আমাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তারপর বেইজিং থেকে চায়না ইস্টার্ন -এ টরেনটু চলে এলাম। টরেনটু থেকে সোজা চলে গেলাম সেলেস ড্রাইভে। সেখানে মি. লিউ ডি কস্তার বাসায় উঠলাম। তিনি সম্পর্কে আমার বেয়াই হন। তার বাসায় আমি ৩/৪ দিন ছিলাম। কোডি নভাস্কশিয়ায় অবস্থিত। টরেন্টু থেকে নভাস্কশিয়া প্রায় ৩৫০/৪০০ মাইল দূরে। টরেন্টু থেকে নভাস্কশিয়ায় সময়ের ব্যবধান প্রায় ১ ঘন্টা। প্রথমে ভেবেছিলাম প্লেনে নভাস্কশিয়া যাবো। পরে বাজেটের কথা চিন্তা করে বাই রোডে নভাস্কশিয়া গেলাম। টরেনটু থেকে নভাস্কশিয়া যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সুন্দর। একটার পর একটা বাসে চড়ে নিমেষেই চলে গেলাম নভাস্কশিয়ার কোডি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটে। সেখানে আমি একটা জিনিস দেখে অবাক হয়েছি যে, বড় বড় বাসগুলো মহিলারা চালাচ্ছেন। কোডিতে যাওয়ার পর আমাকে একটি কার্ড ধরিয়ে দিলো। এই কার্ডই তখন ছিলো একমাত্র ভরসা। বাসা থেকে বের হতে কার্ড , ঢুকার সময় কার্ড, খাবার সময় কার্ড,, কার্ডের এক এলাহী কান্ড। কোডিতে আমার কোর্স শুরু হল। খুবই এনজয় করলাম। সেখানে অনেক দেশের অংশগ্রহণকারী ছিলো। ইন্ডিয়া, মিশর, ব্রাজিল, ইথোপিয়াসহ অনেক দেশের অংশগ্রহণকারী ছিলো। সেখানে প্রশিক্ষণের সিস্টেমটা ছিলো পার্টিসিপেটরি সিস্টেম। অর্থাৎ একটা বিষয় দিয়ে সব অংশগ্রহণকারীদের নিকট থেকে বক্তব্য/মতামত চাওয়া হত। সিস্টেমটা আমার খুব ভাল লেগেছে। আমাদের দেশের প্রশিক্ষণ হয় একমুখি। অর্থাৎ একজন বলে, সবাই শুনে। বিদেশে প্রশিক্ষণ হয় বহুমুখী। সেখানে একজন বলে না, সবাই অংশগ্রহণ করে। কোডিতে সাফল্যজনকভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে আমি টরেন্টুতে বাবলু কস্তার বাসায় চলে এলাম। তারপর শুরু হল বাঙ্গালীদের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার পালা। কত বাসায় যে দাওয়াত খেয়েছি তা এখন অনেকটা ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেখানে থাকাকালে আমি মি. মুকুট কস্তা, মি. প্রদীপ স্ট্যানলী গমেজ, মি. দীপক এফ পালমা, মি. প্রিন্স জন গমেজ, মি. সেন্টু বি গমেজ, মি. সমর গমেজ, মি. স্বপন গিলবার্ট গমেজ, মি. শ্যামল রোজারিও, মি. রিচার্ড (নাগরী)সহ আরো অনেকের বাসায় গিয়েছি এবং তাদের আতিথেয়তা রক্ষা করেছি। আমি সেখানে দেখেছি বাঙ্গালীরা আন্তরিকভাবে এবং দলগতভাবে অবস্থান করছে। দেখতে আমার ভালই লেগেছে। প্রায় একমাস পরে আবার মাটির টানে নভেম্বর মাসে আমি দেশে ফিরে এলাম।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩৯২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৯/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast