www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্রেডিট ইউনিয়নের সুফল

ভূমিকাঃ মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে সঞ্চয় প্রবনতা বৃদ্ধি এবং নিজেদের আর্থিক সমস্যা সমাধান ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠন করে। কবি কামিনী রায়ের ভাষায় সংজ্ঞায়িত করলে বলা চলে ক্রেডিট ইউনিয়ন হলো “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।” ক্রেডিট ইউনিয়নই ঋণদান সমিতি হিসেবে সমধিক পরিচিত। বর্তমানে ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় গরীব মানুষের ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। একথা বলাই বাহুল্য যে, এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং সুদখোর মহাজন/কাবুলিওয়ালদের করাল গ্রাস থেকে মানুষকে অবমুক্ত করার জন্য ক্রেডিট ইউনিয়ন বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে। ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের বয়স এদেশে ছয় দশকের বেশী হলেও সমবায় আন্দোলনের বয়স তার দ্বিগুণ। এই আন্দোলনের সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারলে বাংলাদেশে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

ক্রেডিট ইউনিয়নের সুফলঃ
ক্রেডিট ইউনিয়নের মাধ্যমে যে সকল সুবিধা পাওয়া যায় তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হল।
(১) সহযোগিতার বন্ধন : ক্রেডিট ইউনিয়ন আমাদের জন্যে একটি সহযোগিতার বন্ধন হিসেবে কাজ করে। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একে অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে এবং বাস করতে পারে না। মানুষ মানুষকে সাহায্য করে টাকা-পয়সা বা জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে। কিন্তু ক্রেডিট ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ক্রেডিট ইউনিয়ন একে অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, একে অন্যকে জামিন আদান-প্রদান করে। বিপদের সময় জামিন দিয়ে সাহায্য করার সুফল বা কার্যকারিতা শুধু বিপদগ্রস্থ সদস্য-সদস্যাই উপলব্দি করতে পারেন। ক্রেডিট ইউনিয়নের মাধ্যমে একে অপরকে জামিন দিয়ে সহযোগিতা করছে বলেই সদস্য-সদস্যাগণ অনায়াসে ঋণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে পারছে। এ ধরনের সহযোগিতার নিদর্শন অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
(২) সততা : ক্রেডিট ইউনিয়ন হল সততা পরিচর্যা করার একটি প্রকৃষ্ট স্থান। সততা ছাড়া কোন ক্রেডিট ইউনিয়নের কথা কল্পনাও করা যায় না। এটা চিরন্তন সত্য যে, অসৎ লোক সমিতিতে থাকলে সেই সমিতি কোনভাবেই টিকে থাকতে পারে না। যে ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায়গুলি টিকে রয়েছে সেগুলো সততা নিয়েই টিকে রয়েছে। খ্রীষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের রূপকার ও দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা-এর প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে ইয়াং, সিএসসি যথার্থই বলেছেন "সমবায়ে অসৎ ব্যক্তির কোন স্থান নাই।." তাহলে বুঝা যায় যে, ক্রেডিট ইউনিয়ন হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সততা চর্চা করার একটি মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
(৩) সদস্য হওয়ার গৌরব : ক্রেডিট ইউনিয়নে একজন সদস্য হওয়া একটি বিরাট গৌরবের বিষয়। সমিতির সদস্য হলে যে শুধু ঋণ নেয়া যাবে তা নয়, এর অর্থ হ’ল একটি বিরাট জনগোষ্ঠির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা এবং সদস্য-সদস্যাদের সুখে-দুঃখে সহভাগি হওয়া। সমিতি অনেক সদস্য-সদস্যাদের একতার বন্ধনে আবদ্ধ করে সর্ব মহলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কাজেই ক্রেডিট ইউনিয়নে সদস্য-সদস্যা হলে একদিকে যেমন সামাজিক মূল্য বৃদ্ধি পায় অপরদিকে মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে যার ফলে গর্বিত মনে হয়। এই মনোভাব মানুষকে তার উন্নয়নের পথে অনেক দূর নিয়ে যেতে সহায়তা করে। তখন মানুষ ভাবতে শুরু করে যে, সে আর এই পৃথিবীতে এক নয়।
(৪) মিতব্যয়ীতা : ক্রেডিট ইউনিয়ন সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। একজন সদস্য-সদস্যা সব সময় একরকম উপার্জন করতে পারে না। তাই তাকে অবশ্যই সঞ্চয় করতে হবে। সঞ্চয় দুর্দিনের বন্ধু। একজন মানুষের দুর্দিনে তার সঞ্চয়ই প্রকৃত বন্ধুর মত কাজ করে। পূর্বে সঞ্চয়ের ধারণা ছিলো আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যা থাকে তাই সঞ্চয়। কিন্তু বর্তমানে সঞ্চয়ের ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আয় থেকে সঞ্চয় বাদ দিয়ে যা থাকে তা ব্যয় করতে হবে।
(৫) একতা : সমবায় বা ক্রেডিট ইউনিয়ন অনেক লোককে একতার বন্ধনে আবদ্ধ করে। ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একটি পতাকার নীচে আবদ্ধ করে। ক্রেডিট ইউনিয়নে অনেক লোক হয়ে যায় একটি বৃহৎ পরিবারের গর্বিত সদস্য।
(৬) কর্মসংস্থান : বেকার সমস্যা আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানকল্পে দেশের ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো ভূমিকা পালন করছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে অনেক সদস্য-সদস্যা স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সদস্য-সদস্যা ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করে নিচ্ছেন।
(৭) ঋণ সুবিধা : ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো এর সদস্য-সদস্যাদের সহজ কিস্তিতে ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এ ঋণ নিয়ে সদস্য-সদস্যাগণ নিজের ও সামাজিক উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়।
উপসংহারঃ
একথা সত্যি যে, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এখনও ক্রেডিট ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা সম্ভয হয়নি। অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন এ দেশে জন্ম লাভ করলেও শুধু সততার জন্য অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছে। আবার অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন রয়েছে যেগুলো স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। এর মধ্যে রয়েয়ে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা, সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:সহ আরও অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন। এ ক্রেডিট ইউনিয়নকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। আসুন আমরা বাংলার প্রতিটি গ্রামে ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হই। এ ক্রেডিট ইউনিয়ন আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৯৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast