www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্রেডিট ইউনিয়নে সঞ্চয়ী আমানতের ভূমিকা

পঞ্চাশ-এর দশকে অবিভক্ত ভারতের বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডের জনগোষ্ঠি অধিকাংশই ছিলেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল। এই অসচ্ছল জনগোষ্ঠিকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি প্রদানের জন্য ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। তৎকালিন আর্চবিশপ স্বর্গীয় লরেন্স এল. গ্রেনার সিএসসি মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন এবং মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তাঁর স্বপ্ন সফল হয় ফাদার চার্লস জে ইয়াং-এর মাধ্যমে। তিনি ফাদার ইয়াংকে কানাডার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির কোডি ইন্সটিটিউটে পাঠান সমবায়ের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে ফাদার ইয়াং ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুলাই পুরানো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ৫০ জন খ্রীষ্টভক্তকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রেডিট ইউনিয়ন দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা যা ইতোমধ্যে দেশের ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং অনুকরণীয় ক্রেডিট ইউনিয়ন হিসেবে পরিগণিত হওয়ার গৌরব ও যোগ্যতা অর্জন করেছে।

ক্রেডিট ইউনিয়নের সূচনাকালে একটি শেয়ারের মূল্য ছিলো ০.২৫ টাকা। ক্রেডিটের সূচনালগ্নে ক্রেডিট ইউনিয়ন শুধু শেয়ার জমা নেয়া ও ঋণ প্রদান করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। ক্রেডিট ইউনিয়নের একমাত্র আয় ছিলো ঋণের ওপর ১২% হারে সুদ গ্রহণ করা যা সময় বিবেচনায় সুদের হার উচ্চ ছিলো। এমনতর পরিস্থিতিতে সমিতির মূলধন বৃদ্ধির হার ছিলো খুবই নগন্য। সমিতির প্রথমদিকের মূলধনের আকার পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এই মূলধন স্বল্পতার কারণে বাস্তবিক অর্থেই ক্রেডিট ইউনিয়ন সদস্যদের চাহিদা অনুসারে ঋণ প্রদান করতে সক্ষম হত না। এমন অবস্থা ক্রেডিট ইউনিয়নের দ্রুত বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়। ক্রেডিট ইউনিয়নের মূলধন বৃদ্ধির বিষয়টি নেতৃবৃন্দকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলে। ফলে নেতৃবৃন্দ বিকল্প পন্থা আবিস্কারে মনোনিবেশ করতে থাকে।

১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ক্রেডিট ইউনিয়নে শেয়ার জমার পাশাপাশি সদস্যদের সঞ্চয়ী হতে উৎসাহ দানের লক্ষ্যে সঞ্চয়ী জমার প্রবর্তন করা হয়। এই সঞ্চয়ী আমানতের প্রবর্তন ক্রেডিট ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা মনে করেন ক্রেডিট ইউনিয়নে সঞ্চয় ব্যতিত কোন বিকল্প নেই। ক্রেডিট ইউনিয়নে সঞ্চয়-এর ব্যবস্থা না থাকলে সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ী প্রবনতা বৃদ্ধি পায় না এবং অপরদিকে টাকার স্বল্পতার কারণে সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা যাবে না। ঋণ বিতরণ না করা গেলে সদস্যদের সমবায় আন্দোলনে কোন আগ্রহ থাকবে না এবং ফলে সমবায় আন্দোলনের বিকাশের পরিবর্তে তা মুখ থুবরে পড়বে। ‘সঞ্চয়ের টাকা থেকে ঋণ প্রদান’ এই ধারণা থেকে সদস্যদের সঞ্চয়ী হতে উদ্যোগী ও উৎসাহিত করা হয় এবং সদস্যরা শেয়ারের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসেবে বেশী বেশী টাকা জমা করতে থাকে। এক সময় যা ছিলো শুধু ‘সঞ্চয়ী হিসাব’ তা এখন বিভিন্ন ধারণায় রূপ নিয়েছে। এগুলো হল- হাউজিং ডিপোজিট স্কীম, এসটিডি হিসাব, বিবাহ সঞ্চয় প্রকল্প, মিলিওনিয়ার ডিপোজিট, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, বয়স্ক সঞ্চয় প্রকল্প, শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প, উৎসব সঞ্চয় প্রকল্প, ত্রৈমাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প, দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় আমানত, বী সেভার্স এন্ড স্মার্ট সেভার্স ইত্যাদি। এই সঞ্চয়ী ধারনা সমবায়ে/ক্রেডিট ইউনিয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করে। বিভিন্ন ফরমে সঞ্চয়ী হিসাব প্রবর্তনের ফলে সমিতিগুলো সদস্যদেরকে চাহিদা মোতাবেক ঋণ প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে সমিতিগুলোকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়, যার ফলে সমিতিগুলোকে আর পিছনের দিকে তাকাতে হয় নি। সঞ্চয়ের মাধ্যমে ঋণ প্রদানে সক্ষমতা অর্জনের ফলে এই সঞ্চয় ধারনা এখন সকল সমিতি গ্রহণ করেছে। এই সঞ্চয়ের ধারনা সমবায় অঙ্গণে পুরাতন ধারণার কবর রচনা করেছে। পুরাতন প্রথাগত ধারণায় ‘আগে শেয়ার পরে সঞ্চয়’ ছিলো। বর্তমান ধারণায় ‘আগে সঞ্চয়ী হিসাব ও পরে শেয়ার’ জমা যা সমবায় অঙ্গণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান ধারণায় এখন সব ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো সঞ্চয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। কোন কোন ক্রেডিট/সমবায় ক্রেডিট হিসাব খোলার পূর্বেই সঞ্চয়ী হিসাব খোলার জন্য সদস্যদের উৎসাহিত করছে এবং কিছু কিছু ক্রেডিট/সমবায় ক্রেডিট হিসাবের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসাব খোলতে উৎসাহিত করছে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast