www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমি কাক

আমার হাতে এখন প্রচুর ফাঁকা সময়। সেই কারণে হাতের কাছে যা পায় তাই পড়তে শুরু করে দি। তবে ব্যাপার হলো আমি খুব বেশি তত্ত্বজ্ঞানী পূর্ণ কোন লেখা পড়তে পারি না।সেই কারণে চেষ্টা করি ছোট ছোট জিনিস এর মধ্য দিয়ে আনন্দ পাবার।
আমার পড়ার বিষয় বস্তুর মধ্যে বেশিরভাগ সময় থাকে ছোটদের গল্প ,ছোটদের ছড়া ,ছোটদের জন্য বই ইত্যাদি। আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে জ্ঞানী গুণী বই পড়তে আমার অসুবিধা হয়। আর যেহেতু অসুবিধা হয় তাই আর পড়ার চেষ্টাও করি না।
ছোটদের গল্প বই পড়ার একটা সুবিধা আছে। বেশি ভাবনা চিন্তা করতে হয় না। অনেকটা এইরকম- দেখলাম ,পড়লাম, পড়ে মজা নিলাম, আনন্দ নিলাম, হাসলাম ভুলে গেলাম। বেশি ভিরিক্কী টাইপের বই পড়তে গিয়ে নিজেই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙে পড়ে থাকার কি মানে বাবু।
আমি পড়ি ঈশপের গল্প, গোপাল ভাঁড়ের গল্প, ঠাকুরমার ঝুলি, বাংলা রূপকথা ইত্যাদি।
বড় হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই এই গুলোর দিকে অবজ্ঞার চোখে তাকিয়ে থাকেন। তা উনি থাকতেই পারেন। যে যেমন সে তেমন। কারো ভালো লাগে না-সে পড়ে না, আমার ভালো লাগে আমি পড়ি।
এই যেমন পড়ছিলাম একটা গল্প যার নাম “অহংকারী কাক”।
সুন্দর লাগলো পড়ে। আগেও পড়েছিলাম, শুনেও ছিলাম, এখন আবার পড়লাম।ভালোও লাগলো।
মুশকিল হল অন্য জায়গায়।
কয়েকদিন যাবত আমি সবকিছু কে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছি। মনের মধ্যে একটি আদর্শ এসে যাবার পর থেকেই এটা হয়েছে।
বহুপঠিত এই গল্পটিকেও আমি আর ঠিকভাবে ভাবে মেনে নিতে পারলাম না।
বিশেষ করে পারলামনা গল্পটির নীতিকথা টিকে।
মানলাম যে কাকটা যেটা করেছে সেটা করা ঠিক নয়। সে কাখ হয়ে ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করেছে আমি মানছি। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে এই কাক হয়েও ময়ূর হয়ে যাওয়ার চেষ্টাই আমাদের অহরহ এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এগিয়ে নিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে।
কাকটি ময়ূর সাজতে গিয়ে কেবলমাত্র বিপদেই পড়ে নি। তার একুল-ওকুল দু'কুলই গেছে।
কিন্তু যখন বড় বড় গুনিদের কথা শুনি তখন দেখতে পাই শুরুর দিকে সকলেই তাদেরকে এই কাকের মতোই তাচ্ছিল্য করেছে। তাদের ওপরে হেসেছে। যে ব্যক্তিরা আগেভাগেই ময়ূর হয়ে গেছে তারা ঠোকরাতে ছাড়েনি।এমনকি কাক হয়ে বেঁচে থাকা আমাদের মত সাধারণ মানুষের দল ঠুকরে পালক উপড়ে-নিতে ছাড়িনি। এই চেষ্টায় কত কাক মারা গেছে তার ইয়াত্তা নেই।
কিন্তু যেগুলো মরেনি? সেই না মরা কাকগুলো ময়ূরের থেকেও সুন্দর ও ময়ূরের থেকেও উচ্চাসন লাভকারী হয়েছে। আমি কারো নাম বলব না। আপনি যে কোন মহান ব্যক্তি যারা সমাজকে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন তথা নিজেকে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন তাদের জীবনে পড়ে দেখুন। দেখবেন আমি খুব একটা ভুল কথা বলছি না।
Toism জিনিসটি মনের শান্তি দিলো কিন্তু সমাজের উন্নতির পথ দেখালো না। রেখে দিল আমাদের ঘরকুনো করে। কোন জাতির বদনাম করবো না। হয়তো আমাদের দেশের প্রত্যেকের মাথার মধ্যে এই ধর্ম ধর্ম ভূতের কারণে যেমন আছি তেমন থাকি ভাবটি গেঁথে গেছে। কবেকার লেখা ঈশপের গল্পে যেন তারই রূপ ফুটে উঠতে দেখলাম।
বা হয়ত আমি গল্পটা বুঝতে পারিনি। হয়তো বেশি ভেবে ফেলেছি।
যাই করে থাকি এটুকু বুঝতে পেরেছি ঘর থেকে বের হতে না পারলে আর ময়ূর হবার চেষ্টা না করতে পারলে দেশের তো দূরের কথা নিজের উন্নতিই হবে না। উন্নতি যদি করতে হয় তবে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' ভাব থাকলে চলবে না। তেড়ে এনে ধরে বসিয়ে গলায় পা দিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করার ভাব রাখতে হবে। নিজের কার্যসিদ্ধি করতে হবে এই কারণে কারণ আমাদের মত মানুষের লক্ষ্য হলো দেশের উন্নতি। আর দেশের উন্নতি যখন আমার নিজের লক্ষ্য তখন নিজের লক্ষ্য পূরণ করবোই। করবো তো করব। ময়ূর হতে গিয়ে যদি মরতে হয় তো মরবো। কাক হয়ে জন্মে থাকতে পারি, কিন্তু সেই নিয়ে কেউ খোঁচা দিলে কেউটে হয়ে তাকে ছোবল মারতেও ছাড়বো না। এগিয়ে যাব যখন ঠিক করেছি তখন এগিয়েই যাব। পিছনে যদি কেউ আপনজন ও পড়ে যায় তাহলেও ফিরে তাকাবো না।
চলতে শুরু করে দিয়েছি। থামব না।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩৭৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast