www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মিঠু ও মিনু

কে তুমি?কি করছো এখানে? আরে তুমি কাঁদছো কেন? তোমার চোখে জল কেন? কি হয়েছে তোমার? আরে আরে চোখের জলে দেখি তোমার পোশাক ভিজে যাচ্ছে? নাম কি তোমার? আমার নাম মিঠু। আমি জমিদার বাড়িতে কাজ করি? জমিদার বাবু আমাকে বলেছিলেন পঁঞ্চাশটা গরু নিয়ে মাঠে চরাতে।আমি ৯ বছরের ছেলে আমি কি পঁঞ্চাশটা গরু মাঠে নিয়ে চরাতে পারি বল? তারপর ও বাবুর কথামতো গরুগুলো মাঠে নিয়ে যায়। সেই সকালে এক মুঠো পানতা ভাত খেয়ে মাঠে গেছি। সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরে ঘুরে গরু গুলো দেখাশোনা করেছি। দুপুরে একমুঠো ভাত, এক টুকরো রুটি, এমন কি একটু জল পর্যন্ত খায় নি। সারাদিন গরুগুলো দেখাশোনা করতে করতে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল সে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিল। ওর নাম মিনু। তারপর আমি ওর সাথে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করি। মাছ ধরতে ধরতে আমি ওর সাথে কিছু দূর চলে যায়। এমন সময় এক বুড়ি এসে গরুর গোবর গুলো নিয়ে যায়। আর আমি মিনুর সাথে মাছ ধরতে থাকি। এমন সময় জমিদার বাবুর প্রহরী বীরদর্পন আমার সামনে এসে হাজির। তাকে দেখে আমার হাত থেকে বড়শি পড়ে যায়। আমি ভাবলাম আজ আমার নিস্তার নেই। এমন সময় বীরদর্পন হুঙ্কার দিয়ে বলে মিঠু! জমিদার বাবু তোমাকে পাঠিয়েছেন গরু রাখার জন্য আর তুমি গরু রাখা বাদ দিয়ে মাছ ধরছো? ঐ ছোকড়াটা কে? ও বুঝি তোমাকে মাছ ধরতে ডেকে নিয়ে এসেছে তাই না? না দাদা, না। ও আমাকে ডেকে নিয়ে আসেনি বরং আমি ওর কাছ থেকে একটি  বড়শি নিয়ে মাছ ধরছি। তুমি মিথ্যে বলছো। জান না আমি মিথ্যে সহ্য করতে পারি না। না দাদা,আমি সত্যি বলছি ও আমাকে ডেকে আনেনি বরং  আমি ওর কাছ থেকে বড়শি নিয়ে মাছ ধরছি। না,না, না। আমি তা বিশ্বাস করি না। আর তুমি কি জান? জমিদার বাবুর গরুর গোবর চুরি হয়ে গেছে? বলেন কি দাদা। তাহলে তো আজকে আমার নিস্তার নেই। হ্যা!হ্যা!হ্যা! তুমি তো আজকে মরেছো। তুমি তো ভাল করেই জান জমিদার বাবু গোবর দিয়ে গ্যাস তৈরি করেন। আর গিন্নী মা সেই গ্যাস দিয়ে রান্না করেন। জমিদার বাবু সকালে তোমাকে পেট ভরে খাওয়ায়ে পাঠিয়েছে তার গরু রাখার জন্য আর তুমি কিনা গরু পাহারা না দিয়ে মাছ ধরেছো? দর্পন দা আমাকে মাফ করবেন। আমি তো বুঝতে পারিনি গোবর চুরি হয়ে যাবে। ঐ বেয়াদব ছেলেটা তোমাকে নিয়ে এসেছে তাই না? তোদেরকে আমি ছাড়বো না। আজকে আমার হাত থেকে তোদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই বলে প্রহরী বীরদর্পন, মিঠু ও মিনুর ওপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহর করতে লাগল। দাদা আপনার হাতে পায়ে ধরি আমাদের মারবেন না।আমরা আপনার সন্তানের মতো, আমাদের মারবেন না। দাদা আমাদের মারবেন না। সকালে এক মুঠো পানতা ভাত  আর দুপুরে একটু জল ও খায়নি। আমাদের মারবেন না দাদা। না,না,তোদের আজ শাস্তি পেতেই হবে। এই বলে দর্পন প্রহর শুরু করল।
আর বলতে লাগল তোদের মতো ছোটদের মারতে আমার খুব ভাল লাগে। প্রতিদিন গোবর দিয়ে গ্যাস  বানানো হয়। প্রতিদিনের গ্যাস প্রতিদিন শেষ হয়ে যায়। আজকে গ্যাস না হলে রান্না করবে কি দিয়ে। গিন্নীমা শুনলে তোদের মেরে ফেলবে তার চেয়ে বরং আমার হাতে মর। এভাবে মারতে মারতে আর এক প্রহরী এসে খবর দেয় জমিদার ওদের কে দরবারে নিয়ে যেতে বলেছে। দর্পন, মিঠু ও মিনুকে টানতে টানতে দরবারে নিয়ে হাজির ততক্ষনে মিঠু ও মিনু অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। দরবারে আনার কিছুক্ষন পরে তাদের জ্ঞান ফিরল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে সেই সকালে এক মুঠো  পানতা ভাত ছাড়া এখন ও কিছুই জোটেনি। সারাদিন না খেয়ে অবস্থা অনেক খারাপ,মিঠু বলে জমিদার বাবু একটু জল দেবেন। আমার অনেক পিপাসা লেগেছে। আমি একটু জল খাব। জল,কিসের জল! কেন তোকে জল দেবো। তোকে সকালে পেট পুরে খাওয়ায়ে গরু চরাতে পাঠিয়েছি  আর তুই কিনা গরু চরানো বাদ দিয়ে মাছ ধরতে যাও। গরুর গোবর চুরি হয়ে গেছে। আজকে গ্যাস বানাতে পরিনি, তোর গিন্নীমা রান্না করতে পারেনি। আমরা সবাই না খেয়ে আছি আর তুই  কিনা জল চাও। হ্যা! জল তোকে দেবো কিন্তু খাওয়ার জল না। দর্পন চাবুক নিয়ে আসো  দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ওদেরকে পঁঞ্চাশ বার চাবুক মার। দর্পন চাবুক নিয়ে এলো এবং তাদেরকে গাছের সাথে বেঁধে চাবুক মারতে শুরু করল, ছোট ছোট দুটি শিশু সকাল থেকে না খেয়ে প্রায় কাতর অবস্থা। তারপরে আবার পঁঞ্চাশ চাবুক। চাবুক মারতে মারতে এক পর্যায়ে  মিনু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। মিঠু ও মৃত্যু প্রায় অবস্থা এমন সময় জমিদার বললেন যাও ওদেরকে বিলের মাঝে ফেলে দিয়ে আসো শিয়াল কুকুরে ছিড়ে ছিড়ে খাক। জমিদারের কথামতো দর্পন ওদের কে বিলের মাঝে ফেলে দিয়ে এলো। তখন কেবল বিল থেকে ধান কাটা শেষ হয়েছে বিল শুকনো। মিঠু কিছুক্ষন অজ্ঞান থাকার পর আস্তে আস্তে উঠল। সমস্ত শরীর থেকে তখন ও রক্ত ঝরছে। মিঠু তারপর মিনুকে ডাকতে লাগল। কিন্তু মিনু তো আর ওঠে না। কিছুক্ষন ডাকার পর মিঠু বুঝতে পারল মিনু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। কিন্তু তখন আর কি করার মিঠু মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। কিছু দূর যাওয়ার পর মঙ্গল বাবুর সাথে দেখা মঙ্গল বাবু একজন সচেতন ব্যক্তি সে মিঠুর মুখে সব ঘটনা শুনে অবাক হলেন এবং বললেন জমিদারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় আমি তোমাকে সাহায্য করবো। পরে তারা আইনের  আশ্রয় নিলেন ঠিকই কিন্তু ক্ষমতা ও টাকার জোরে শেষ পর্যন্ত জমিদারের কোন শাস্তি হলো না।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এটাই আসলে বাস্তবতা।
  • HM Kawsar ০৯/০৫/২০১৭
    মরমাহিত
  • ফয়জুল মহী ০৮/০৫/২০১৭
    মনোমুগ্ধকর
  • মধু মঙ্গল সিনহা ০৮/০৫/২০১৭
    ভালোলেখা।
  • খুব ভালো।
 
Quantcast