www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্রীম ক্রাকার ( উপন্যাস )

গল্পটা অন্য রকম হতে পারত যেমন টা ঠিক ছবি হয়, উদাসি হাওয়ার রং ধূসর, প্রেম মানে লাল কিংবা মহত্ বোঝাতে গেরুয়া । কিন্তু রক্ত মাংসের হ্যা কেবল মাত্র রক্ত মাংসে মোড়া শরীর গুলো যেহেতু মানুষদিগের তাই তেমন টা হলনা ।
খাদ্য খাদকের চরিত্র যদিও প্রকৃতির রচনা,তবু বর্ণ বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা, লিংগ বৈষম্য, সর্বপরি আমাদের ভবিষ্যতের পথ, এসব নিয়েই আমাদের জীবন চরিত । সমাজ বিষয়ক গবেষণা অতীত কাল থেকেই প্রচলিত ছিল। তবে ওগুস্ত কোঁত সর্বপ্রথম ১৮৩৮ সালে এর রীতিবদ্ধ আলোচনা করেন। এছাড়া হার্বার্ট স্পেনসার সমাজবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের মূল স্থপতি হিসেবে ফরাসি পণ্ডিত এমিল ডুর্খাইম এবং জার্মান সমাজবিজ্ঞানী মাক্স ভেবারের নাম উল্লেখযোগ্য।
এত কিছুর পরে যখন আমাদের মধ্যেই প্রশ্ন জাগে মানুষ কি তবে ধংস প্রবন না সৃষ্টিশীল ? একথা বলাতে ...
অদিতি বলে উঠল - এই মা ! তুই জানিস না ।
মানুষ তিন প্রকার চরিত্র বিশিষ্ঠ, ধংসকারি, সৃষ্টিশীল আর এর মধ্যবর্তী এক শ্রেণীর চরিত্রের যাদের বলে সুবিধাবাদী।
যেমন আমি, সৃজনী আর সৃজনীর মা মানে আমাদের মেঘ কাকিমা।
একথা জিমূত বলাতে, অদিতি বিষ্ময়ের সুরে বলল- তার মানে !
জিমূত বলল - এই দ্যাখ, আমি যে সৃজনীকে ভালবাসি, সেটা যেমন তোরা সকলে জানিস, সেটা ওর মা ও জানে ।
আর সেজন্য আমাকে কিনা করতে হয় ওদের জন্য, রেশন ধরা থেকে শুরু করে ওর বাবার জন্য ডাক্তার আনা, কারেন্টের বিল জমা দেওয়া, ওষুধ আনা সবটাই । আর মেঘ কাকিমা আমার দিকে সন্ধ্যে বেলায় এককাপ চা আর দূটো ক্রীম ক্রাকার এগিয়ে দিয়ে বলে, তোর মতো সমাজসেবি যেন বাঙ্গলার ঘরে ঘরে জন্মায় বাবা ।
অদিতি - এতে ধংসকারি, সৃষ্টিশীল আর সুবিধাবাদীর যোগসুত্র কোথায় পেলি জিমুত ?
এবার জিমুত বলল তুই বু্ঝলিনা তো ।
অদিতি - না ।
জিমুত - শোন তাহলে, সেদিন... মানে ...মানে আমাদের মাঝে মধ্যেই হয়, যখন ও...ও মানে সৃজনী যখন জামা কাপড় পড়ছিল, আমি গিয়ে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ...ওর ঘাড়ে, ওড় কানের নিচে চুমু খেতে খেতে ... বললাম, আমি তোকে কত ভালবাসি ...ভালবাসি...ভালবাসি...ভালবাসি ।
ও ঘুরে দাড়িয়ে দুহাতে আমার আমার গাল দুটো চেপে ধরে বলে, তুই পারবিনা, ছাড় আমাকে ।
আর চোখদুটো দিয়ে এমন ভাবে তাকিয়ে বলে যে ! আমার সেই মুহুর্তটাই মাটি হয়ে যায় ।
আমার আবেগের, আমার অনুভুতির, আমার ইচ্ছের, আমার সৃষ্টির প্রেম ওর ঐ দুহাতে ধংস হচ্ছে প্রায় দিন আর আমার আবার সুদিনের প্রত্যাশার সুবিধা ভোগ করছে মেঘ কাকিমা। এই কথাগুলো বলে কেমন ক্যাবলা মার্কা হয়ে গেল জিমুত, অদিতি আর কথা বাড়াল না শুধু বলল, সত্যিই তোর বিচার ও বিশ্লেষন বোধ !
বেশ গুরুগম্ভির হয়ে উঠ্ল পরিবেশ ।
এরই মধ্যে রঞ্জন এসে ঘরে ঢুকল, জিমুতের ধ্যান ভাঙিয়ে বলল - কাকিমা তোকে ডাকছে । জিমুত সোফা থেকে ঊঠে গায়ে লেদারের জ্যাকেট টা চরিয়ে নিল ।
এ কদিন এদিকে খুব ঠান্ডা পড়ছে, আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর ১২ ডিগ্রী বলছে বটে তবে বাইরে বেশ ঠান্ডা মনে হয় সাত কিংবা আট ডিগ্রী হবে ।
বিকেলে আসব, এখন আর হবেনা বুঝলি, মায়ের যা তাড়া, আমারও আজ ইউনিভার্সিটি আছে আর মায়েরও কলেজ, বিকেলে কফি কিন্তু মাস্ট ।
অদিতির দিকে তাকিয়ে এ কথা গুলো বলে জিমুত দরজার দিকে পা বাড়াল ।
অদিতি - বিকেলে নয় সন্ধেয় হবে, মাষ্ট, বেরবার সময় বাইরের দরজাটা বন্ধ করে দিস ।
জিমুত - আরে হ্যা, তোকে আর মনে করাতে হবে না ।
আমি রঞ্জন কে জিঙ্জ্ঞেস করলাম চা চলবে ?
রঞ্জন - হ্যা দাদা, এখন এটা অমৃত সমান ।
আমি ট্রে সমেত পাচটি কাপ, সুগার কিউব আর চা ভর্তি ফ্লাক্স নিয়ে ঢুকতেই, অদিতি বলল আমার কাছে দাও ওগুলো, আমি ঢেলে দিচ্ছি,
আমি যথাআঙ্জ্ঞে মহারানী বলে এগিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে ল্যাপটপের দিকে নজর দিলাম ।
অদিতি - আজ কি বাবুর মা কাজে আসেনি ?
আমি - কেন বলোতো ! তুমি তো দেখলে, তোমার নিচে আসার সময় উনি বেড়িয়ে গেলেন, আর বেলা ১০টায় বিছানা ছাড়লে এমন টাই হয় । ঘুম চোখে তুমি বুঝবে কি করে, কে ঢুকছে আর কে বের হচ্ছে ।
অদিতি - তুমি তো জান আজ আমার ছুটি, তাছারা মাঝ রাতের তোমার ধকল তো আমাকেই সামলাতে হয় ।
আমি - ধকল ! মানে ?
অদিতি - বলব তোমার গুন কীর্তির কথা, তোমার এই ছোট ছোট ভাই বোনেদের সামনে, কত্ত আব্দার ।
আমি মুচকি হাসি হেসে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম - এই তো তোমার চা করে আনলাম ।
অদিতি একটু থেমে নরম গলায় বলল - সে তো জানি, তবে তুমি টি পটটি ব্যবহার কেন করছো না ।
আমি - আমি জানি এখন তোমার এখান থেকে উঠতে দেরি হবে, আর তাছারা এই ঐশী আর তসলিমা এখন তোমাকে ছাড়বে না। তাই ফ্লাক্স ভর্তি করে আনলাম ।
অদিতি আর কোন কথা বাড়াল না, চা পরিবেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ঐশী আর তসলিমা আমাদের অতিথি হয়ে এসেছে, ঐশী হচ্ছে সম্পর্কে আমার শালিকা, ওরা নিউইয়র্কে থাকে মানে আমার কাকা শশুর মহাশয়, শাশুরি মা আর তাদের একমাত্র কন্যা ঐশী, আর তসলিমা হচ্ছে ঐশীর বান্ধবি ।ওরা দুজনেই ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী , ঐশী উইমান স্টাডিজ নিয়ে মাস্টার্স করার পর ভারতীয় নারী নিয়ে গবেষণার জন্য এদেশে এসেছে , তসলিমা দিল্লীর মেয়ে ও মনোবিদ্যা নিয়ে ওখানে পড়াশুনো করছে, তসলিমা আমেরিকায় ঐশীদের বাড়িতেই থাকে, ওখানে এখন খুব ঠান্ডা মাইনাস তিরিশ ডিগ্রি হবে, তাছাড়া আরেকটা কারন অবশ্যই আছে, সেটা হল ঐশীরা মানে আমার কাকা শশুর মহাশয় দক্ষিন কলকাতায় প্রায় পাচ কোটি টাকায় এটমোস্ফিয়ার এপার্টমেন্টে একটি ফ্লাট বুক করেছে আর ফ্লাট টি এখনও নির্মিয়মান অবস্থায়, তবে নব্বই শতাংশ কাজ সম্পুর্ন, আমরা গিয়ে মাঝে মধ্যে দেখে আসি তবে রঞ্জনই বেশিভাগ খবরা খবর রাখে, রঞ্জন আমাদের পাশের বাড়ির ছেলে, পেশায় ডাক্তার বাইপাশের ফর্টিশ প্রাইভেট হসপিটালে প্রাকটিস করে, তাছারা অদিতিদের দুরসম্পর্কের মাসতুতো ভাই হয় আর জিমূত হচ্ছে ওর কাকার একমাত্র ছেলে ওদের একান্নবর্তী পরিবার । আমার আর অদিতর প্রথম পরিচয় হয় কলকাতার বইমেলায়, খুব ভীড়ের মধ্যে ফেসে গেছি দুজনে খানিকটা হঠাৎ দূর্ঘটনার মতো । কোন দিকে এগোতে পারছিনা আর দুহাতে দুটো ব্যাগ নিজেকে সামলাতে না পেরে আমার বুকের মাঝেই যেন আশ্রয় খুজতে চলে এসেছে । আমার একটা হাতে কয়েকটা সুনিল বাবুর কবিতার বই , আসলে ''কবির মৃত্যু'' কবিতাটা পড়ার পর সুনিল বাবুর কবিতার প্রতি যেন একটা আগ্রহ সকল সময় ঘিরে থাকতো ।




.........ক্রমশ.........
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৮৪৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মধু মঙ্গল সিনহা ০৭/০১/২০১৮
    সুন্দর উপস্থাপনা।ভালো লাগলো।
    • শিবশঙ্কর ০৮/০১/২০১৮
      অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক , প্রিয় কবি ভাল থাকুন । সাথে থাকুন ।
  • ভালো লাগছে, চালিয়ে যান
  • সুন্দর
  • শুভেচ্ছা রইল প্রিয়
  • সাঁঝের তারা ০৬/০১/২০১৮
    চলুক...
 
Quantcast