www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমেরিকায় পক্ষকাল।

# আমেরিকায় পক্ষকাল #
(১)- ওফ্- (২)

১৯৯১ সালের নভেম্বরে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো এয়ার পোর্টে পৌঁছে ডকুমেন্ট কন্ট্রোল অফিসার আমাকে জিঙ্গাসা করল ..." তুমি আমেরিকায় কেন এসেছ ?" আমি বল্লাম মিটিং আছে। কাগজ দেখতে চাইলো। দেখালাম সব ডকুমেন্ট। ভালো করে দেখে খুব উত্তেজিত হয়ে বল্ল যে আমার আমেরিকায় কোন মিটিং থাকতেই পারে না। কাগজ পত্রে যাই থাকুক না কেন। রিটার্ন ফ্লাইটে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেবে।
খুব বিশ্রী চিৎকারে যাতা বলছিল। হকচকিয়ে গেলাম। আমার কম বয়স দেখে বোধহয় ওনার হিসাব মিলছিল না। শুনেছিলাম আমেরিকা সুসভ্য দেশ। প্রথম ইমপ্রেশনটা খুব খারাপ হল। আমি একা একটা চ্যানেল দিয়ে যাচ্ছিলাম আর আমাদের গ্ৰুপের অন্য ছ'জন অন্য চ্যানেল দিয়ে যাচ্ছিল। এই অফিসারের চেঁচামেচি শুনে অন্য এক অফিসার এসে তাকে বোঝাল যে আমি একটা গ্ৰুপে আছি। রিকোয়েস্ট করল আমাকে ছেড়ে দিতে। তারপর আমার মুক্তি হল।
এবার বল্ল যে যদি ফুড় স্টাফ কিছু থাকে সাথে, ফেলে দিতে। আপেল, বিস্কুট যা ছিল ফেলে দিলাম কিন্তু একটা ড্রাই ফ্রুটসের প্যাকেট ছিল,ফেলিনি। যাহোক্, সে ব্যপারে আর ঝামেলা করেনি। আমেরিকা ঢুকে গেলাম। সেদিনই রাতের ফ্লাইট ধরে সানফ্রান্সিসকো থেকে পোর্টল্যান্ড চলে যাই আমরা। যাওয়ার সময় আকাশ থেকে বিস্তির্ণ ফরেস্ট ফায়ার দেখেছিলাম।

পোর্টল্যান্ড এ হোটেলে ঢুকলাম তখন রাত দুটো। থ্রি স্টার হোটেল। নাম "হ্যা়ওয়ারড্ জনসন হোটেল প্লাজা"। রুমে আমার সাথে ছিল সমবয়সী আর্কিটেক্ট। রুমে ঢুকে দেখি জারে জল নেই। প্রচন্ড তেষ্টা পেয়েছে। কাকে বলি ! রিসেপশনে চেয়ার ফাঁকা। আমাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছে। কি করব বুঝতে পারছি না। করিডোরের এক সাইডে দেখি একটা ভেন্ডিং মেশিন আছে। সব আছে, জলের বোতল নেই ! দেখলাম আইস কিউব আছে। এক ডলারের তাই কিনলাম। তারপর জারে ভরে সারা রাত ধরে অল্প অল্প করে বরফ চুষে আর বরফ জল খেয়ে প্রাণ কোনমতে বাঁচালাম সে রাতে। আমার এয়ারপোর্ট না ফেলে দেওয়া ফ্রুটসের প্যাকেটাও বেশ কাজ দিয়েছিল।

পরের দিন সকালে ওয়েটার কে ডেকে জল দিতে বল্লাম। চমকে দেখলাম ও জার নিয়ে বাথরুম থেকে জল ভরে দিল। আমেরিকায় সবই যে 'পোটেবল' ওয়াটার সেটা জানাছিল না আমাদের। স্নান আর খাওয়ার জল সব একই। আবার ওয়েটার কল করে চা বিস্কুট আনতে বল্লাম। বিস্কুট শব্দ বোধহয় সে প্রথম শুনলো। বুঝল না। রিসেপশনে ফোন করে বললাম সব। জানলাম, বিস্কুটকে "কুকিজ" বলতে হবে। তারপর চা বিস্কুট খেলাম।
ছেলেটা ছিল মেক্সিকান। টিপস পেয়ে খুব খুশি থাকত। বেশ কিছুদিন ছিলাম হোটেলটাতে। বেশ ভাব হয়ে গেছিল। আমাদের জন্য কিছু করতে পারলে খুশি হত। একদিন বিকেলে এসে বল্ল নীচে যেতে, ফ্রীতে বিয়ার দিচ্ছে। আমরা বল্লাম ফ্রীতে কিছু খাইনা। ও বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে চেয়ে হয়ত ভাবল এরা কোন দুনিয়ার লোক, ফ্রী নেয়না !!

খুব সুন্দর ছিল হোটেলটা। মাঝে ওপেন কিন্তু উপরে স্বচ্ছ কভার দেওয়া ডে লাইটের জন্য। একটা ক্যাপসুল লিফ্ট ছিল অ‍্যাট্রিয়ামে। খুব অবাক হয়েছিলাম যখন রিসেপশনিস্ট এর টেবিলে মাঝারি সাইজের মিষ্টি কুমড়ো একটা সুন্দর করে মালা দিয়ে সাজান দেখলাম। কারন কিছু একটা বলেছিল মনে নেই।
ময়েশ্চার কন্ট্রোলের কারনে বোধহয় হোটেলের মাঝে একটা ছোট পন্ড ছিল। সেখানে দেখতাম সাহেবরা কয়েন ছুঁড়ছে যেমন আমরা ধর্ম স্থানের পুষ্করিণীতে ছুঁড়ি। কুসংস্কার ওদেরও আছে। ওই হোটেলেই ইউ এস ভলিবল টিম দেখেছিলাম। এক রাত্রি ছিল। একটা প্লেয়ারকে দেখেছিলাম বোধহয় সাত ফুট হাইট। সে তখন বেস্ট প্লেয়ার। কয়েক দিন ধরে হোটেল ব্যানারে জানাচ্ছিল স্যামন ফিস্ পাওয়া যাবে একটি বিশিষ্ট দিনে। আমার সব সময় হোটেলেই খেতাম তা নয়। সেদিন স্যামন কিন্তু ডিস-অ‍্যপয়েন্ট করেছিল। স্বাদে কিছুটা রুই এর কাছাকাছি, এই যা।

পোর্টল্যান্ড খুব সুন্দর শহর। মাঝে মাঝেই পেঁজা তুলোর মত বৃষ্টি পড়ত। রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে বেরিয়ে কোন সামান্য নোংরা খুঁজে পাইনি। পেডেস্ট্রিয়ান বলতে আমরা কয়েক জন। যে গাড়িগুলো সাইড লেন থেকে বড় রাস্তায় আসছিল, দূর থেকে আমাদের দেখে থেমে যাচ্ছিল। এ দেখতে তো আমরা অভ্যস্ত নই যে গাড়ি পায়ে-চলা মানুষকে রেসপেক্ট করছে। পরে ওদেশে কড়া ট্রাফিক রুলের কথা জেনেছিলাম।
......ক্রমশঃ....
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ২৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৯/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এস এম শাহনূর ০১/১০/২০২১
    চমৎকার।
 
Quantcast