www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পানি-বাবা

# পানি-বাবা #
অণুগল্প
(সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)

সালটা ঠিক মনে নেই, তবে ২০০০ কি আশে পাশে হবে। কোলকাতার এক বড় বেসরকারি কনসালটেন্ট অফিসের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করি। তখন আমি মাঝবয়সী। সেই সময় হায়দ্রাবাদে, কম্পানি "ক্লীন রুম ফ্যাক্টরি" তৈরী করার জন্য কনসালটেন্ট হিসেবে একটা বড় প্রেস্টিজিয়াস কাজ পেয়েছে। টপ্-ক্লাস ক্যাটাগরি-১০ ফ্যাক্টরি। মানে এক কিউবিক ফিট বাতাসে দশটার বেশী ধূলোকণা থাকবে না ভেতরে। আর হতে হবে ভাইব্রেশন ফ্রী ফ্যাক্টরি ফ্লোর। মিসাইলকে গাইড করার জন্য "চিপস" তৈরী হবে সেখানে। মালিক হচ্ছেন DRDO (Defence Research and Development Organization)। ভারতের এক বিশিষ্ট সরকারি সংস্থা।

কনস্ট্রাকশনের কাজ আরম্ভ হয়েছে। দূর থেকে ট্যাঙ্কে জল এনে কাজ চলছে। আমি মাঝে মাঝে সাইট ভিজিট করি। এরমধ্যে DRDO চেষ্টা করছে ডিপ্ টিউবওয়েল বসিয়ে সাইটে জলের সমস্যা মেটাতে। এরমধ্যে, সাইটের কয়েক জায়গায় চেষ্টা করে সফল হয়নি কন্ট্রাক্টর টিউবওয়েল বসাতে। অথচ একটু দূরেই DRDO পার্মানেন্ট ক্যাম্পে ডিপ টিউবওয়েলে যথেষ্ট জল পান ওনারা। বেশ বড়সড় অফিস ক্যাম্পাস।

এ রকম সময়ে কন্ট্রাক্টরের একজন লোকাল লোক "পানি-বাবা"-র কথা জানায়। জানা গেল উনি সাইট ঘুরে দেখিয়ে দেবেন কোথায় খুঁড়লে জল পাওয়া যাবে গভীরে। উপায় না দেখে DRDO রাজি হয়ে যায়। একদিন ওনাকে সাইটে নিয়ে আসে কন্ট্রাক্টর। আমি সৌভাগ্যবশত সাইট ভিজিটে সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

ওনাকে দেখে চমকে উঠলাম। খালি পায়ে, হাতে বড় লাঠি, সাদা থান গায়ে জড়ান, উঁচু করে সাদা ধূতি পরা, মুখে কয়েক দিন না কাটা কাঁচাপাকা দাঁড়ি। বয়েস মনে হল ষাটের আশেপাশে। ঠিক যেন গান্ধীজির প্রতিচ্ছবি।

কন্ট্রাক্টর ওনাকে গাড়ি করে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। উনি গাড়ি থেকে নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিলেন। সাইট ক্যাম্পের চা জলখাবার কিছুই খেলেন না। এবার হাঁটতে আরম্ভ করলেন একদিক বরাবর। পেছনে পেছনে DRDO-র সব "বস্" সাথে আমিও আছি। তারপর কন্ট্রাক্টরের লোক জন। মুখে করো কথা নেই। সবাই ওনাকে ফলো করছে।

উনি মাটিতে জোরে লাঠি ঠুকে ঠুকে এগোচ্ছেন, মাঝ মাঝে দাঁড়িয়ে কি সব বিড়বিড় করছেন। এই ভাবে ঘন্টা খানেক ঘোরাঘুরির পর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বল্লেন ঐ জায়গায় টিউবওয়েল বসালে জল পাওয়া যাবে।
ফিরে আসার সময় সাইট অফিসের বারান্দায় রেস্ট নেওয়ার জন্য বসলেন। কন্ট্রাক্টর ওনার পারিশ্রমিকের কথা জিঙ্গাসা করাতে বল্লেন উনি যদি টাকা পয়সা নেন তবে ওনার এই ঐশ্বরিক ক্ষমতা চলে যাবে। কন্ট্রাক্টর ওনাকে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে আসে।

একদিন পর আমিও চলে আসি কোলকাতা। পরে সাইটে ফোনকরে জেনেছিলাম ওখানেই জল পাওয়া গেছে।
সেই ঘটনা দেখিয়ে ছিল বিজ্ঞানের উপর দৈব-শক্তির দাদাগিরি আজো আছে।
*******************************
সুব্রত ভৌমিক ০২-০৯-২০২১ কোল-৭৫
*******************************
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৯/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো
  • ন্যান্সি দেওয়ান ২৭/০৯/২০২১
    Mojar Golpo
  • মাহতাব বাঙ্গালী ২২/০৯/২০২১
    হ্যাঁ সত্যিই মাঝে মাঝে বিজ্ঞানও হার মানতে বাধ্য হয় বিশ্বাস নামক দৈব শক্তির কাছে !
  • ফয়জুল মহী ২১/০৯/২০২১
    ভালো লাগলো
  • আশ্চর্য ঘটনা তো!
 
Quantcast