www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আকাশ বলতে কিছু নেই

অনেক হয়েছে । আর না ।
সেই পরশু রাত থেকে । এক-দুই-পাঁচ-দশবার নয় । তিরাশিবার ! হ্যাঁ, তিরাশিবার ঈশিতার নাম্বারে ডায়াল করেও কোনো রেসপন্স পায় নি অলক ।
ওপাশ থেকে একটা নারীকণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় এপাশে একটা যান্ত্রিক শব্দ বেজেই যাচ্ছে । সেই পরশু রাত থেকে । বাজছে তো বাজছেই ।
ওপাশে কেউ ফোন তুলছে না ।
এটাই শেষবারের মত । রিসিভ না করলে সব চুকেবুকে যাবে । সব…
চুরাশিবারের মত ঈশিতাকে ডায়াল করে অলক । সাথে সাথে একটা নারীকণ্ঠও ভেসে আসে কানে— আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন, তা এই মুহুর্তে…
ঈশিতার ফোন অফ ।

অনেক হয়েছে, অনেক । আর না ।
পেয়েছিটা কী ও ! চুপচাপ সব সহ্য করতে হবে, সব মেনে নিতে হবে ?
না, না । এভাবে চলে না । এভাবে চলতে পারে না ।
ফ্লোরে ফোন ছুঁড়ে মারে অলক ।
একটা জোরালো ভাঙনের আওয়াজ ।
সঙ্গে সঙ্গেই চৌচির !
হাঁপাতে হাঁপাতে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় অলক । চোখ বুজে নিঃশ্বাস নেয় । ভারী ভারী নিঃশ্বাস । নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ভিতরে একটা আর্তনাদ ফুলেফেঁপে উঠছে ! সেটাকে চেপে ধরা চাই ।
কিছুক্ষণ বুকে বালিশ চেপে দম মেরে থাকার পর দেয়ালে দৃষ্টি মেলে অলক ।
সদ্য চুনকাম করা দেয়ালের ঝলমলে নতুন গোলাপী রঙটা কেমন যেন ক্রমশ স্বচ্ছ থেকে আরো স্বচ্ছ হয়ে উঠছে । এতটাই স্বচ্ছ যে মনে হচ্ছে ওখানে ইট-বালি-সিমেন্ট-পেইন্ট এসবের বিন্দুমাত্র স্পর্শ লাগে নি কখনো, যেন পুরোটাই স্বচ্ছ কাঁচ । স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল । না, না, একেবারি যেন আয়না । কিন্তু এ কী ! আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠার বদলে এটা কার মুখচ্ছবি ! চোখ বিস্ফোরিত করে লাফিয়ে উঠে অলক । মাথার ভিতরে একটা অপ্রতিরোধ্য ক্রোধের ঘূর্ণি নেচে ওঠে । জেগে ওঠে এক অসম্ভব জান্তব জিঘাংসা । ‘স্বার্থপর’ বলে সজোরে প্রতিবিম্বের মুখ বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় অলক ! নারীকণ্ঠের চিৎকার কিংবা আয়না ভাঙার ঝনঝন শব্দ, কোনোটাই শুনতে না পেয়ে দ্বিতীয় আঘাতের জন্য হাত ওঠাতেই বেদনাটা যেন মাথা থেকে হাতে নেমে এল ! চোখ মেলে হাতটাকে উল্টেপাল্টে ঘুরিয়ে-টুরিয়ে ভালো করে দেখে নেয় অলক— না, ফাটে নি । শুধু দেয়াল থেকে কিছুটা রঙ উঠে গিয়ে ব্যর্থ আঘাতের স্মারক হয়ে আঙুলগুলোর গোড়ায় লেগে আছে ! হাত থেকে এবার দৃষ্টি নামে ফ্লোরে । ফ্লোরজুড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে আছে মোবাইল ফোনটা ।
এতক্ষণ মগজে ঘাপটি মেরে বসে থাকা জিদটা হুট করে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে, যেন বৈদ্যুতিক অনুতাপে অবশ হয়ে আসছে শারীরিক স্পন্দন, হু হু করে উঠছে মন !
ভাঙা ফোনের টুকরোগুলো একত্রিত করে জোড়া লাগানোর চেষ্টা চালায় অলক । ব্যর্থ চেষ্টা শেষে আবার বিছানায় ফিরে যায় । আর আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না । জমাট বেদনাগুচ্ছ গলে গলে অশ্রু হয়ে অঝরে ঝরে পড়ছে !

জল শুকিয়ে যায় । বেদনাও নিশ্চিহ্ন হতে থাকে । শুধু স্মৃতিপটে লেগে থাকে কিছু দাগ, কিছু ক্ষত !
শুকনো চোখ মেলে এখন কেন জানি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেই খুব ভালো লাগে অলকের ।
অথচ… এইতো । মাত্র সপ্তা দুয়েক আগে । শেষ বিকেলের আলো তখনো নিভু নিভু জ্বলছিল । সিনেমাহলে গিয়ে একটা ফিল্ম দেখা শেষে ওরা একসঙ্গে বিআরটিসির দু’তলা বাসে করে হোস্টেলে ফিরছিল । ঈশিতার কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তে খুব ইচ্ছে হয়েছিল অলকের । কিন্তু যতবারই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে গেছে ততবারই লক্ষ করেছে— বাসের জানলা দিয়ে ঈশিতা দু’চোখ উর্ধ্বে তুলে আকাশ দেখছে । কেমন আনমনা নিশ্চুপ নিস্তেজ ওই দৃষ্টি ।
বিরক্তিতে অস্বস্তিতে রেগে উঠেছিল অলক ।
‘ওখানে এমন করে কী দেখছো ?’
‘কেন, আকাশ দেখছি ।’
‘আকাশ ! আকাশ বলতে কিছু আছে ?’
ঈশিতা উত্তর দেয় না । শুধু আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে অলকের ঘামেভেজা ক্লান্ত মুখের দিকে নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।
‘চলো অন্যকিছু নিয়ে কথা বলি ।’এই বলে ঈশিতার কাঁধে মাথা রাখে অলক।

এরকম টুকরো টুকরো স্মৃতি আরো অনেক আছে । ক্ষণে ক্ষণে মনের অন্দরে সেসব উঁকি মারে, আবার মিলিয়ে যায়…
স্মৃতির অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো ছাড়া আর কিছুতেই যেন স্বস্তি পায় না অলক । এই স্বস্তিতে আবার যেন একগুঁয়ামি এসে না পড়ে তার জন্য এই কয়দিনের মধ্যে সে একটা নতুন একটা অভ্যাস আয়ত্ত করেছে, সিগারেটের অভ্যাস । গভীর রাত পর্যন্ত নির্ঘুম জেগে জেগে সিগারেট টানে অলক । সিগারেট ফুরিয়ে এলে ঘুমোতে যায় ।
চোখ বুজে থাকে, প্রথমে শান্ত ভঙ্গিতে তারপর দাঁত মুখ খিঁচিয়ে একরকম জোর করে চোখ বুজে থাকে ! কিন্তু ঘুম যেন রূপকথার সেই আলাদিনের চেরাগের চেয়েও দুর্লভ, না বন্ধ চোখে, না অন্ধকার মস্তিষ্কে— কোথাও ঘুম ধরা দেয় না ।
এমনই এক নির্ঘুম মধ্যরাতে অলকের সামনে সব খোলাসা হয়ে গেল !
চোখে ঘুম নামানোর পণ্ডশ্রম শেষে সিমকার্ডটা রুমমেট আতিকের মোবাইলে লাগিয়ে ওপেন করতেই ঈশিতার মেসেজগুলো অলকের চোখে পড়ে—
‘না অলক । আজ আর মিথ্যে বলছি না । সত্যি বলছি, ওসব আমার মধ্যে আর কাজ করছে না । হ্যাঁ, আমিই সে, সকাল-দুপুর-রাত যেকোনো সময়ে তোমার ফোনকল পেয়ে যে মেয়েটি অদ্ভুত রোমাঞ্চে নেচে উঠত; ক্লাসে টিচার আসার অপেক্ষায় যার ক্লান্তি ছিল, রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় যার ক্লান্তি ছিল, পড়ার টেবিলে দুম করে চলে যাওয়া ইলেট্রিসিটি ফিরে আসার অপেক্ষায় যার ক্লান্তি ছিল— অথচ তোমার ফোনকলের অপেক্ষায় যার কোনো ক্লান্তি ছিল না…
বরং উচ্ছ্বাস ছিল, এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ ছিল…
এখন তোমার প্রতিটা ফোনকল যেন এক একটা মর্মান্তিক বিভীষিকা ! হাতে তুলে নিই, কিন্তু রিসিভ বাটন ক্লিক করতে গেলে আঙুল অবশ হয়ে আসে, ভিতর থেকে কে যেন তীব্র স্বরে ধমক মারে, বাঁধা দেয়, ঝাপটে ধরে ! ভয় পেয়ো না । নতুন কোনো বয়ফ্রেন্ড-টয়ফ্রেন্ড না । মৃত্যু ! হ্যাঁ, মৃত্যু আমাকে আলিঙ্গনের প্রতিক্ষায় দুই হাত প্রসারিত করে আছে….
আর লুকোচুরিতে কাজ নেই । তোমাকে ব্যাপারটা খুলেই বলি ।
দুই বছর আগে আমার কিডনিতে প্রথম পাথর ধরা পড়ে । মেডিসিনের মাধ্যমেই ব্যাপারটা সেরে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ডাক্তার । কিন্তু এক বছর গড়াতেই মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতি পারি, আমার একটা কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে ! বাকীটার অবস্থাও খুব শোচনীয় ! ইমার্জেন্সি কিডনি প্রতিস্থাপনের অপারেশন করাতে না পারলে…
বাবার পক্ষে এই মুহূর্তে এই প্রেশার মোকাবেলা করাটা প্রায় অসম্ভব । জনে জনে হাত পাতলে হয়ত অপারেশনের খরচটা ওঠে যাবে । কিন্তু কেন জানি অন্যের করুণা নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে হয় না !
যাক । তোমাকে এইসব বলার অর্থ একটাই— আমাকে ঘিরে তোমার অনেক স্বপ্ন ছিল ! আমারও ছিল । কত কত স্বপ্ন আমাদের…
হল না, আর হল না । বরং স্বপ্নগুলো আমার কাছে এখন চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া শবদেহের মতই মূল্যবান, অথবা মূল্যহীন । যাকে জলের স্রোতে ভাসিয়ে দিলেই স্বস্তি…
মনে পড়ে সেদিনের কথা ? ওই যে, সিনেমাহল থেকে একসঙ্গে ফিরছিলাম । আমাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুমি জিজ্ঞেস করেছিল, আকাশ বলতে কি কিছু আছে ?
না, নেই । আকাশ অস্তিত্বহীন, শূন্য । হ্যাঁ, শূন্য বলেই তাকিয়েছিলাম । তাকিয়ে তাকিয়ে অনুভব করতে চেয়েছিলাম, শূন্যতায় ঘেরা আমার অনাগত মুহূর্তগুলি ।
আজো দেখি, রোজ রোজ বেলা-অবেলায় শুধু আকাশ দেখি । ওই যে সেদিন যেমন দেখেছিলাম, তেমনিভাবে । আর ভাবি, আমার অনাগত নতুন ঠিকানার কথা ভাবি; অনন্ত শূন্যতা ছাড়া যেখানে আর কিছুই নেই, সেখানে সময়গুলো কেমনে কাটাবো তাও ভাবি বার বার…

ভাবছ— এতসব আগে জানাই নি কেন ? জানালে কীই-বা করতে পারতে তুমি ? কাঁদতে পারতে, করুণা দেখাতে পারতে, সান্ত্বনার সঙ্গীত শোনাতে পারতে ! শুনো, আজ আর ওসবে কাজ নেই….
না, অলক, তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই । আক্ষেপও নেই । শুধু একটা ছোট্ট অনুরোধ । যখনই আমাকে তোমার মনে পড়বে । তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকো । ’


বিস্তৃত নীল আকাশ ! কোথাও কোথাও টুকরো টুকরো মেঘের আনাগোনা । যেন শৈশবের মাঠে মেঘগুলো সব জড়ো হয়ে আবার গোল্লাছুট খেলায় মেতে উঠেছে ! আচ্ছা, মানুষ মরে গেলে কোথায় যায় ? নিশ্চয়ই ওখানে, আকাশে । মাটির নীচে তার শরীর পোতা হয় ঠিকই কিন্তু তার আগেই প্রাণপাখিটাকে আযরাইল এসে পিঞ্জরবন্দি করে কই উড়াল মারে ? ওই সুদূর আকাশেই তো ।
ঈশিতা ইদানিং আকাশে দৃষ্টি মেলে এসব ভাবে, আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে থেকে সেই চরম মুহূর্তেটির জন্য, যেই মুহূর্তে বিশাল ডানাওয়ালা আযরাইল এসে তার প্রাণপাখিটাকে পিঞ্জরবন্দি করে উড়াল মেরে চলে যাবে…
ভয়ানক বীভৎস রব তুলে গমগম শব্দে হাওয়াকে কাঁপাতে কাঁপাতে আযরাইল আসছে ! আগমনী বার্তা, মৃত্যুর আগমনী বার্তা আগেই পাঠিয়ে দিয়ে এবার সশরীরে নেমে আসছে সে !
বার্তাটা যেদিন তার কাছে প্রথম পৌঁছায়, সে একটুও দেরি করে নি, সোজাসুজি স্বপ্নটার গলা টিপে ধরেছে !
স্বপ্ন ! স্বপ্ন না ছাই !
শহরের কোনো এক অচেনা গলিতে ওদের একটা ছোট্ট সংসার হবে । সস্তায় দুই রুমের একটা বাসা হলেই চলবে। ছাদটা টিনের হলেও সমস্যা নেই । দুজনেই খেয়ে-পরে বাঁচার মত দুটো চাকরি করবে । ধীরে ধীরে ডালপালা মেলতে মেলতে ওদের সংসারটা একটু একটু করে বেড়ে উঠবে…

ছাই হয়ে গেছে, স্বপ্নটা তার জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে !


হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কি এত সহজে থামে ? কিন্তু থামে, কিছু সময়ের জন্য থামে, আবার শুরু হয় ।
এক-দুবার করে এ পর্যন্ত বহুবার ঈশিতার পাঠানো মেসেজটা পড়ে ফেলেছে অলক ।
প্রতিবারই ঈশিতার উপর জিদ চাপে অলকের ! সবাইকেই মরতে হবে, তাই বলে গোটা জীবনটাকে অস্বীকার করে এইভাবে নৈরাশ্যের অন্ধকারে নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ? যে ঈশিতা নিজের জীবনকেই ঠিকঠাক ভালোবাসতে পারে নি, সে কীসের জোরে বলে অলককে সে ভালোবেসেছিল?
সে যাই হোক । অলক কিন্তু ঈশিতার পাঠানো মেইলের সেই ছোট্ট অনুরোধটা কেন জানি ফেলতে পারে না ।
শোবার খাটটা জানলার পাশে নিয়ে এসেছে । সারারাত সারাদিন রুমের জানলাটা খুলে রাখে । যখনই ঈশিতার কথা মনে পড়ে— আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । আর নিঃশব্দে ঠোঁট নেড়ে কত কী যেন বিড় বিড় করে বলতে থাকে ।

হঠাৎ একরাতে অলকের আধো ঘুমন্ত কানে একটা আওয়াজ ভেসে আসে । না, আযরাইলের কণ্ঠনালি থেকে কোনো ভয়ানক রোমহর্ষক আওয়াজ নয় । এ আওয়াজ মানবীকণ্ঠের মোহনীয় আওয়াজ । এ আওয়াজ তার চেনা । কে ডাকছে তাকে ? কে আবার ! ঈশিতাই ! রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে অলক ! হ্যাঁ, আকাশ থেকেই ভেসে আসছে ডাকটা ! ঈশিতা ! ঈশিতা ডাকছে তাকে !
শোবার খাট থেকে উঠে পড়ে অলক । দুয়ারের সিঁটকানি খোলে, সিঁড়িতে পা ফেলে, এক’পা দু’পা করে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে থাকে । একেকটা সিঁড়ি অতিক্রমের সাথে সাথে আওয়াজটা নিকটবর্তী হচ্ছে ।
সব ফ্লোর শেষে ছাদে পা ফেলতেই— না, কোনো ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে থমকে দাঁড়ানো নয়— দুর্বার মোহে সামনে এগিয়ে যাওয়া । এগিয়ে যাচ্ছে অলক । মোহনীয় ডাকে সাড়া দিতে দিতে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে । ও ডাকছে তাকে ! বহুদিন পরে ! ঈশিতা ডাকছে ! এই ডাকে যতই সে সামনে এগুচ্ছে, ততই এক ছন্দময় নৃত্যের তালে তালে সমস্ত শরীরের রক্তকণা যেন এক নতুন উন্মাদনা নিয়ে নেচে উঠছে ।
এই ডাকে সাড়া দেয়াই যায় ।
উড়ে চলে যাবে সে । আকাশে ঈশিতার কাছে উড়ে উড়ে চলে যাবে সে ।
ছাদের রেলিংয়ের উপর দাঁড়িয়ে হাত দুটি মেলে আকাশের দিকে দৃষ্টি তুলে হাওয়ার তরঙ্গে শরীরটাকে ভাসিয়ে দেয় অলক । কিন্তু একী ! সে উড়ছে ঠিকই, কিন্তু আকাশে ওঠার বদলে সে যে কেবল মাটির দিকে তলিয়ে যাচ্ছে !
অলকের মৃত্যুটাকে সবাই সুইসাইড বলেই সনাক্ত করে ।


কিন্তু ? কিন্তু ঈশিতা ? ঈশিতার কী হল ?
ঈশিতার অপারেশনটা হয়ে গেছে !
ঈশিতার বাবা না পারলেও ঈশিতার হবু বরের বাবার করুণায় সে অল্প ক’দিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার কথা ।
অলকের মৃত্যুসংবাদটা এখনো ঈশিতার কানে আসে নি । হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যে, কিংবা কিছু দিনের মধ্যে, কিংবা কিছু মাসের মধ্যে ঈশিতা সব জানতে পারবে । জানার পর ঈশিতার কী প্রতিক্রিয়া ঘটবে তা এই মুহুর্তে বলা মুশকিল ! কিন্তু যা আমরা কোনোরকম মুশকিল ছাড়াই নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তা হচ্ছে— আকাশ বলতে কিছু নেই, বাস্তব ভূমিতে দাঁড়িয়ে ঊর্ধ্বে চোখ মেলে আমরা রোজ যা দেখি, যা কল্পনা করি, তা এক অনর্থক অন্তহীন মায়া !
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০২/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর
  • ভালই
  • বেশ।
  • ফয়জুল মহী ০৬/০২/২০২৩
    সুন্দর লিখেছেন । ভালো লাগলো পড়তে
 
Quantcast