www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হঠাৎ দেখা


            ঈদের ছুটি কাটিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় রওনা দিলাম । রিক্সায় চড়তেই পিছন থেকে মা দৌড়ে আসলেন । কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, ‘সব ঠিক ঠিক নিয়েছিস তো ?’
বললাম, ‘হ্যাঁ, নিয়েছি ।’ এরপর মা দু’হাত উপরে তুললেন । প্রার্থনা শুরু করলেন প্রভুর নিকট । রিক্সা বাড়ির সীমানা অতিক্রম করতেই মায়ের প্রার্থনারত মুখখানি অস্পষ্ট হয়ে গেল । আমার বুকের ভিতরে কেমন একটা বিষাদের সুর বাজতে শুরু করেছে । রক্তের বন্ধনকে ছেড়ে দূরে যাওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের !

          ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম । অগ্রিম টিকেট কাটা ছিল । যাদের ঈদের পর ঢাকা ফেরার অভিজ্ঞতা আছে, তারা নিশ্চয়ই জানেন তখন এই জিনিষটা কত দুর্লভ ।
পকেট থেকে মোবাইল সেট বের করে সময় দেখতেই চমকে উঠলাম ! গাড়ি ছাড়ার সময় আর বেশি নেই, মাত্র ১০ মিনিট বাকী । ভাবলাম এই সময়টা কাউন্টারে গিয়ে একটু বসা যাক । সঙ্গে অবশ্য ভারী কিছু নেই । শুধু একটা ব্যাগ ।
চেয়ার টেনে দরজার পাশেই বসলাম । প্রচুর ভিড় লেগে আছে এখনো । দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিরক্তিকর মূর্তিগুলোর একটাই প্রতিক্ষা— কখন টিকেট হাতে পাবে ।

আচমকা একটা নারীকণ্ঠ ভেসে আসল । কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে । এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিচিত কাউকেই খুঁজে পেলাম না । হয়ত আমার নামের অন্য কাউকে হতে পারে । আবার একই আওয়াজ । এবার দেখলাম আমার ডানদিকে অদূরে একটা মোটা শরীর বসে বসে হাত নাড়ছে । বোরকা পরা, মুখ অনাবৃত । খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছি না । চেয়ার থেকে উঠে যতই এগোচ্ছি, ততই বিস্ময় বেড়ে যাচ্ছে । কে এই মহিলা !

‘কিরে, কেমন আছিস? আমাকে চিনতে পেরেছিস তো ।’
হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল—  ‘কে, নুসরাত না ?’
‘যাক বাবা, ঠিক ধরতে পেরেছিস । এখন বল , তোর কী হালচাল ?’
আমি অবাক চোখে নুসরাতকে দেখতে লাগলাম । কী অদ্ভুদ ব্যাপার, মাত্র ২ বছরে নুসরাত কী হয়েছে ! কলেজে থাকতে কত সময় আমরা একসাথে কাটিয়েছি । ক্লাসের সবার চেয়ে নুসরাত ছিল একেবারে আলাদা । সবসময় হাসিখুশি ভাবে সবার সাথে কথা বলত । তার সাথে কারো ঝগড়া হয়েছে কখনো শুনি নি । বলতে গেলে সহপাঠীদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল নুসরাত । অথচ আজ তাকে আমার চিনতে কষ্ট হচ্ছে । মনে হচ্ছে ওর বয়স দ্বিগুন বেড়ে গেছে ।
‘ আরে কী ভাবছিস ? আমার প্রশ্নের আন্‌সারটা তো দিলি না ।’
‘ ও হ্যাঁ, তোকে তো আমার সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি । আমার খবর মোটামুটি ভালোই । উত্তরায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ইংলিশ নিয়ে অনার্স করছি । এখন সেখানেই যাচ্ছি । তোর সম্পর্কে কিছু বল ।’
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল নুসরাত । ‘আমার কথা আর কী বলব বন্ধু । নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবা-মার নির্দেশে বিয়ে করতে হল । আশা ছিল পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব, তাও সম্ভব হল না । শ্বশুর বাড়ির কেউ রাজি নেই—
নুসরাতের কথা শেষ না হতেই গাড়ির হর্ন বেজে উঠল । আর এক মুহূর্ত দেরি করলে আজ আর ঢাকা যাওয়া হবে না । ব্যাগটা কাঁদে তুলে বললাম, ‘ এক্ষুনি গাড়ি ছেড়ে দিবে । আমি যাই ।’
দ্রুত গাড়িতে উঠে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম । কেমন অসহায় অপলক দৃষ্টিতে নুসরাত তাকিয়ে আছে । গাড়ি তখন বেশ কিছু দূর চলে এসেছে । নুসরাতের দিক হতে দৃষ্টি সরাতেই বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল । অজান্তেই দুফোটা অশ্রু মুখ বেয়ে ঝরে পড়ল । একটু আগে যাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছিল, পাঁচ মিনিটের আলাপে এখন তার জন্য আমি কাঁদছি ! কেন এমন হচ্ছে ? তার সাথে তো আমার কোন রক্তের বন্ধন নেই ।
          _____________০_____________

( এটাই আমার লিখা প্রথম প্রকাশিত গল্প ।)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মহিউদ্দিন হেলাল ২৩/০৯/২০১৩
    দারুণ! প্রাণ স্পর্শ করল!!
  • রোদের ছায়া ২২/০৯/২০১৩
    খুব ভালো লাগলো। মনে একটা কষ্টের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। তবে আমার মনে হয় ছবিটা এখানে তেমন ভুমিকা রাখতে পারছেনা । গল্পের ঘটনার স্থান কোন রেল স্টেশন হলে না হয় ছবির প্রাসঙ্গিকতা বুঝতাম।
  • Înšigniã Āvî ২২/০৯/২০১৩
    মন ছুঁয়ে গেল
  • সহিদুল হক ২২/০৯/২০১৩
    রক্তের বন্ধনটাই সব নয়,হৃদয়ের বন্ধনও চোখে জল এনে দেয়।ভাল গল্প।
  • jahirul islam ২২/০৯/২০১৩
    awesome hoise@ekdom bastob
  • ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে নুসরাতের জন্য কখনো ভালোলাগা জন্মেছিল তাই তার কষ্টটা স্পর্শ করেছে
  • দেবদাস মৈত্র ২২/০৯/২০১৩
    সালমান আপনার গল্পের থিমটা নিশ্চয়ই ভালো । তবে নুসরাতের সাথে দেখা হওয়ায় আপনার অনুভুতির বিস্তৃতির একটু প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় । নুসরাতও তার জীবনের কিছু আকর্ষণীয় ঘটনা আপনাকে সংক্ষিপ্ত আকারে বিবৃত করতে পারত । আপনাকে দেখে সে যে কেন হঠাৎ ব্যাকুল হল সে জায়গাটা বের করতে হবে তবেই গল্পের সম্পূর্ণতা আসবে । ছবিটার মানেও একটা জায়গা পেত । গল্পের লাইনগুলো আর একবার দেখে নেবেন । ধন্যবাদ, এগিয়ে যান ।
    • সালমান মাহফুজ ২২/০৯/২০১৩
      এমন বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য অনেক সাধুবাদ ।
      এই গল্পে সময়ের হিসাবটা মাথায় রাখতে গিয়ে হয়ত অনেক কথায় বাকী রয়ে গেছে । ফলে পাঠকের এক ধরনের অতৃপ্তি থাকাই স্বাভাবিক । তাছাড়া, আমি ছোট গল্পে একেবারই নতুন । আশা করি সামনের দিনগুলোতে এসব ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে পারব । সঙ্গেই থাকবেন দেবদাস ।
  • ইব্রাহীম রাসেল ২২/০৯/২০১৩
    --ছবি এ্যাড করার বিষয়টা জানাবে। আর গল্প ভালই লিখেছ।--
    • সালমান মাহফুজ ২২/০৯/২০১৩
      এখানে ছবির লিংক যোগ করতে হবে । অর্থাৎ গুগুল থেকে একটি ছবির লিংক কপি করে আপনার ব্লগ লিখার উপরে ছবির লিঙ্ক নামক অপশনে পেস্ট করে দিলেই ছবি যোগ হয়ে যাবে ।
      গল্প ভালো লেগেছে জেনে পুলকিত হলাম ।
 
Quantcast