www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিথর কাব্য

কাব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একজন সেচ্ছাসেবী কর্মী। ছেলেবেলা থেকে মানুষের জন্য কিছু করার তার প্রবল ইচ্ছে। ছোটবেলা থেকে সে এলাকার গরীব ছেলেদের তার অতিরিক্ত জামাকাপড় দিয়ে দিত,বৃদ্ধদের রাস্তা পার করিয়ে দিতো,ফকিরদের তার বাড়িতে এনে খাওয়াতো।মানুষের কষ্ট দেখলে তারও কষ্ট হয়।এখন সে বড় হয়েছে। তার কাছে মনে হয় মানুষের প্রতি তার দায়িত্বটা বেড়ে গেল।সে তাই প্রতিনিয়ত নিজেকে সামাজিক কাজে এগিয়ে রাখছে। তার মনে সর্বদা জাগ্রত হয় এত শিক্ষিত হয়ে কি লাভ যদি মানুষের জন্য কিছু না করা যায়। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো
মনুষ্যত্ব ও মূলবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে মানুষের সেবা করা। সেটা অর্থ,শ্রম কিংবা মেধা দিয়ে। তার এমন সেচ্ছাসেবী কাজে তার মা অনেক খুশি।কাব্যের বাবা একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।জন্মের পাঁচমাস পর বাবকে হারিয়েছে সে।তার বাবার প্রিয় ছিল ভাজা ইলিশ। কাব্যেরও ইলিশ ভীষণ প্রিয়। সেদিন বাজার থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ইলিশ কিনে নিয়ে যায় সে। মাকে বলে, মা, আজকে আমার ইলিশ ভাজি খেতে খুব ইচ্ছে করছে তাই নিয়ে এলুম। মা বলল, তোকে আজ সরিষা দিয়ে ইলিশ ভাজি খাওয়াবে। হঠাৎ কাব্যের বন্ধুর ফোন এল তাকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ কর্মসূচীতে যেতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে সে বেরিয়ে পড়লো। সেন্ট্রাল মার্কেট পার হয়েই সে রেল লাইনের পথে হাঁটতে লাগলো।এমন সময় তার দৃষ্টিগোচর হলো কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রেল লাইন দিয়ে দুইটি বালক হেঁটে চলছে। বয়স সাত আট এর মত হবে। পেছন থেকে তাদের দিকে ট্রেণ আসছে দ্রতগতিতে। তার মনে চিন্তা হলো এদেরকে যে করে হোক বাঁচতে হবে, আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। কাব্য দৌড়াতে আরম্ভ করলো, আশপাশে ও তেমন কেউ নেই। একপর্যায়ে সে বালক দ্বয়ের কাছাকাছি পৌঁছল, ইতিমধ্যে ট্রেনও চলে আসলো, তার মাথা কাজ করছিল না,সে তার দু হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে বালকদ্বয়কে একপাশে ঠেলে ফেলে দিল।এমন সময় তার দেহের উপর দিয়ে ট্রেন চলে গেল। বালক দুইটি সামান্য অাঘাত পেলো কিন্তু তারা প্রাণ বাঁচলো।অন্যদিকে কাব্যের নিথর দেহ খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে রইলো। তাঁর আর ইলিশ ভাজি খাওয়া হলো না।চারিদিক থেকে অনেক মানুষ এসে জড়ো হলো। সবাই তার জন্য শোকের জলে ভাসলো। মানুষের জন্য সে তার জীবন উৎসর্গ করে দিলো। নিয়তির আকষ্মিক পরিহাস তার স্বপ্নগুলো নিয়ে এ জগতে বাঁচা হলো না।আসলে মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা আসে যার সমীকরণ মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর ।মানুষ মানুষের জন্য। আমরা একে অপরের উপকারে আসতে পারলে এই ধরনীতে দুঃখ কষ্ট বলে কিছু থাকবে না এতে ধরণী পাপমুক্ত হবে এবং সুখী সমাজ গড়ে উঠবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৫৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৮/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast